এতদিন ভাবতাম। এই সুন্দর পৃথিবীটা ছেড়ে মানুষ কেন মরে যায়। আজ নিজেই উপলব্দি করতে পারলাম, এমন কোনো সময় আসে, যখন মরে যাওয়াটা মনে হয় সবচেয়ে ভালো কাজ। এ কারণেই সে বা তারা মরে যায়। যেমনটা আমার এখন মনে হচ্ছে।
কেন আমার এমন মনে হচ্ছে? কেন আমি এই সুন্দর ধরাধাম ছেড়ে অনন্তকালের জন্য বিদায় নেওয়ার চিন্তা করছি। নিশ্চয় কারণ আছে? হ্যাঁ কারণ তো অবশ্যই আছে। ধরুণ, আপনার প্রিয় মানুষটি, যাকে আপনি সত্যিকার অর্থেই অনেক বেশি ভালোবাসেন, সে হোক প্রেমিকা কিংবা আপনার স্ত্রী, সে আপনাকে প্রচন্ড রকম অবিশ্বাস করছে, সন্দেহ করছে, আপনার দুর্বলতা নিয়ে মানসিকভাবে আঘাত করছে, আপনাকে আরো নানা নানা ভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে, তখন আমার ধারণা, আপনার মরে যাওয়াটাই ভালো কাজ মনে হতে পারে।
এই আমার কথাই ধরুণ। আমি প্রেম করে বিয়ে করেছি। একবছরের সম্পর্ক, তারপর বিয়ে, বিয়ের পর সম্প্রতি একবছর পার হয়েছে। বিয়ের আগে কিংবা পর থেকেই আপনার প্রেমিকা কিংবা স্ত্রী আমাকে ডমিনেট করতে চাইছে, ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে, কারণে-অকারণে সন্দেহ করছে, এই নিয়ে দিনরাত হট্টগোল চলছে। কিন্তু তারপরো আমি আমার স্ত্রী কিংবা প্রেমিকা, আপনারা তাকে যাই বলুন, আমি তাকে প্রচন্ড ভালোবাসি। কিন্তু সমস্যা হলো আমার ভালোবাসা অন্যদের মতো দৃশ্যমান নয়, আমি দেখানো ভালোবাসা বাসতে পারি না। কিন্ত ও আমাকে অবিশ্বাস করে। বলে, আমি নাকি তাকে ভালোবাসি না।
ওর এমন কথা শুনতে শুনতে আমার মনে হতো, আসলেই আমি ওকে, মানে আমার প্রেমিকা কিংবা স্ত্রীকে ছাড়াই ভালো থাকব। কিন্তু আমি পারি না, আমার স্ত্রী কিংবা প্রেমিকা যাকে কবিতা নামেই আমি ডাকি, সে যখন দুরে থাকে তখন আমি বিষন্ন হয়ে পড়ি। মনে হয় এ জগতে আমার কেউ নেই, আমি একা, আমি নিঃসঙ্গ, এভাবে আমি বাঁচতে পারবো না।
কিন্তু এত কিছুর পরও আমাকে আজ আমার কবিতাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। অল্প কিংবা বেশি সময়ের জন্য নয়। একবারে চিরদিনের জন্য। আর কোনোদিন আমি আমার কবিতার শূন্যতা অনুভব করবো না। কিংবা কবিতাও আমাকে আর কোনো কিছু বলতে পারবে না।
আজ সন্ধ্যায় আমি যখন অফিসে, তখন ও আমাকে ফোন করেছিল। তারপর দীর্ঘসময় ধরে ও আমাকে যা যা বলেছে, তাতে আমার মরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। অব্শ্য এই চিত্র একদিনের নয়, দীর্ঘ দিন থেকে এই চিত্রটা চলে আসছে এবং আমি তা সাফল্যের সঙ্গে সহ্য করে আসছি। আজ আমাকে আপনারা ব্যর্থ বলতে পারেন। আমি আর সইতে পারছি না। আমি আজ একটা কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছি। অতএব আমাকে করতেই হবে।
কিন্তু সমস্যা হলো, আমি কিভাবে মরতে পারি। বলতে পারেন আত্মহত্যা করতে পারি। আমি প্রচন্ডরকম ভীতু। গলায় ফাঁস দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়, গাড়ির নিচে ঝঁপ দেওয়াটাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়, কোনো পানীয়ের সঙ্গে কীটনাশক পান করা যেতে পারে, কিন্তু আমি নিজে তা মেশাতে পারব না, আমার অগোচরে যদি কেউ তা মিশিয়ে দেয় তাহলে আমি কীটনাশক পান করে মরে যেতে পারি, কিন্তু এই কাজটায় মনে হয় আমাকে কেউ সাহায্য করবে না। পরিচিত কিংবা অপরিচিত কেউ করতে চাইবে না, কেউ নিজে দোষী হওয়ার ভয়ে, কেউ আমাকে ভালবেসে করবে না।
আর কি করা যেতে পারে? ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে, একসঙ্গে অনেকগুলো। দশটি, বিশটি না একসঙ্গে একশটি। তাও তো নিজেকেই করতে হবে। আরেকটা করা যায়, ট্রেন লাইনে গিয়ে শুয়ে থাকা যায়, মাত্র দুটি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে, ঘুমের মধ্যে আমি তিন ভাগে ভাগ হলাম, সেটা হয়তো আমার জন্য ভালো হবে। নিশ্চিন্তভাবে মৃত্যু, ঘুমের মধ্যে।
না.. না.. এত ভাবলে চলবে না... আমাকে মরতেই হবে...আমার হাতে সময় কম। আমি এখন অফিস থেকে বড়িয়ে যাবো। কোনো একটা পথ আমাকে বেছে নিতেই হবে। আর ফেরার কোনো সুযোগ নেই। আমাকে কেউ ফিরতে বলবেন না প্লিজ।
আমি যাচ্ছি...সবাইকে খোদা হাফেজ... সবাই ভালো থাকবেন...সবার জন্য শুভ কামনা...
লেখাটা শেষ করে একটি জনপ্রিয় বাংলাব্লগে পোস্ট করলো অর্ণব। তারপর সত্যি সত্যিই অফিস থেকে সে বেড়িয়ে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১০:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






