somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এভারেস্ট বিতর্ক এবং মধ্যবিত্তের মনোবৈকল্য

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটা আর নতুন করে কিছু বলার নেই যে গত কয়েকদিন ধরে এভারেস্ট জয় নিয়ে তুমুল একটা বিতর্ক চলছে। বিতর্কটা হলো মুসা ইব্রাহিম নিয়ে, তিনি এভারেস্ট জয় করেছেন কি করেন নাই তা নিয়ে। বিতর্কটা প্রথম থেকেই চলছে, যেদিন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মুসা ইব্রাহিম এভারেস্ট জয় করেন। দিন তারিখ ঠিক করে বললে সেটা ২০১০ সালের ২৩ মে।

এই বিতর্কের সমাধান হয়েছিল তখনই। বিতর্কের সৃষ্টিকারীরা তথা ইনাম আল হক, সজল খালেদ, এম এ মুহিত গং নিজেরাই বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছিলেন। ইনাম নিজে মুসাকে হাসিমুখে অভিবাদন জানিয়েছিলেন আর সজল ই-মেইলের মাধ্যমে সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। এবং ধরে নেয়া হয়েছিল বিতর্কের যবনিকাপাত ঘটেছে। কিন্তু না, আদতে তা ঘটেনি। বিতর্ক সৃষ্টিকারীরা উপরে উপরে ভালো মানুষটি সাজবার চেষ্টা করলেও ভেতরে ভেতরে তারা গভীর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। সম্প্রতি তারা আবারো একজোট হয়ে সেই বিতর্ক উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে, সঙ্গে নতুন এক এভারেস্ট জয়ী যোগ হয়েছেন। এবং তারা সফল হলেন। একটি পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়া তাদের সহযোগী হলো এবং আরেকটি মিডিয়া বিতর্ক ছড়িয়ে দিতে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসল। ফলে যা হবার তাই হলো। আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের একটি অংশ এই বিতর্ক লুফে নিল।

এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এভারেস্ট নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তাতে আমাদের সমাজের নিম্নবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। যত আগ্রহ মধ্যবিত্তের। এবং তারা এমন ভাবে মুসা ইব্রাহিমকে আক্রমণ শুরু করেছে যেন পারলে এখনই মুসাকে এভারেস্ট থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে এনে ভূপাতিত করতে পারলে তাদের শান্তি হয়, সুখানুভূতি হয়। কোন যুক্তি প্রমানের ধার তারা ধারতে চান না। ইনাম-মুহিত গংয়ের ছড়িয়ে দেয়া প্রপাগান্ডা আকড়ে ধরে নাচার চেষ্টা করছে তারা। প্রপাগান্ডা যাচাই করার আগ্রহ নেই তাদের। কেবল শুয়ে-বসে-দাড়িয়ে বলতে শোনা যায় তাদের- ‌'মুসা এভারেস্টে ওঠে নাই, মুসা এভারেস্টে উঠতে পারে না, এইটা আমার বিশ্বাস।'

এই যে প্রপাগান্ডার পেছনে দৌড়ে সুখ পাওয়া মধ্যবিত্ত, কেন তারা মুসার সাফল্য কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে সুখানুভব করছেন তার কারণ অবশ্যই আছে। এটি যে এক ধরণের মানসিক বৈকল্য বা বিকৃত মানসিকতার পরিচয় তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে পরে আসছি। তার আগে ইনাম গংয়ের কাছে একটু ফিরে যেতে চাই।

ইনাম-মুহিত গং কেন এই প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে তার কারণ বোঝার ক্ষমতা বোধকরি পাগলেরও রয়েছে। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এভারেস্ট জয় করাটা একটা ইতিহাস। এই ইতিহাসে স্থান না পেয়ে তারা যে এমনটি করছে। মনে পড়ে ২০১০ সালের প্রথম দিকে, মুহিত যেদিন সংবাদ সম্মেলন করেছিল তার দুই কি এক দিন পর মুসার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। ব্যক্তিগত পরিচয় থাকার সুবাদে আমি তার এভারেস্ট জয়ের অদম্য ইচ্ছার কথা জানতাম। সেদিন আমিও তাকে বলেছিলাম- 'প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করাটাই কিন্তু ইতিহাস হয়ে থাকবে, পরেরগুলো নয়।'
এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছি এই ইতিহাস হতে না পারা ইনাম গং কেন এত উঠে-পড়ে লেগেছেন। যতদুর জানি, মুসা ইনাম গং থেকে বের হয়ে এসে আলাদা ক্লাব করেছে। সেই থেকে দুই ক্লাবের রেষারেষি শুরু। ইনাম চেয়েছিলেন তার অনুসারিদের কেউ প্রথম হোক, তাহলে অনুসারী সবসময় তার গুণগান গাইবে, তিনি তাদের ওপর চাইলেই ছড়ি ঘুরাতে পারবেন। আর মুহিত দুর্ভ্যাগের জন্য প্রথম অভিযান থেকে ফিরে আসার কষ্টটা ভুলতে পারছেন না। প্রথম হওয়ার প্রবল বাসনা ছিল তার, হতে পারেন নাই, তাই এখন প্রথম হওয়াটা ছিনিয়ে নেয়ার নোংরা পথ ধরেছেন। কর্দমাক্ত সেই পথে তিনি ক্রমশ নিচের দিকে তলিয়ে যাচ্ছেন, ভাবছেন আরাম লাগছে কিন্তু ডুবে গেলে কিন্তু সব শেষ, মুহিতের তা মনে রাখা উচিত ছিল।

মুহিত যে প্রথম এভারেস্ট জয়ী বাংলাদেশী হবার প্রবল চেষ্টা করেছিলেন তা বোঝা যায় একটি বৈঠকের সার-সংক্ষেপ আলোচনায়। মুহিত অভিযানে যাবার আগে মুসাসহ যৌথ অভিযান করার একটি আলোচনা হয়েছিল, ইনাম নিজেও রাজী হয়েছিলেন কিন্তু মুহিত রাজী হননি। কারণ একাই জয়ের মুকুট পড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি।
ফলে ইনাম-সজল-মুহিত গং প্রথম থেকেই যে চেষ্টাটা করেছে, তা হলো মুসাকে বিতর্ক করার চেষ্টা করেছে, দেশে বিদেশে তদবির করেছে, কাউকে কাউকে টাকা সেধেছে মুসার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে কখনো সফল হয়েছে কখনো হয়নি।

এবার ছেড়ে আসা সেই প্রসঙ্গে আসি। কেন মধ্যবিত্তের একটি অংশের মুসার প্রতি তীব্র এত ক্ষোভ? কেন বস্তুনিষ্ট তথ্য না জেনে যাচ্ছেতাইভাবে মুসাকে আক্রমণ করছে? এর সহজ উত্তর কয়েক ব্যক্তির কথপোকথনেই নিহিত। একজন বলছিলেন, ''...লা মুসা কিন্তু অনেক টাকা-পয়সা কামাইয়্যা ফেলছে।' আরেকজন বলছেন, 'মুসা কিন্তু অস্ট্রেলিয়া থিক্যা আর ফিরবো না। ...লা য়্যুরোপও গেসিল। ....লার কপাল একটা।' '...ও যায় নাই, আমি বিশ্বাস করি না।' এই কথোপকথন এর কারণ হলো মধ্যবিত্তের দীর্ঘ দিনের আকাঙ্খা পুরণ না হওয়ার তীব্র বেদনা বোধ। মুসা পেরেছে এবং সে ইতিহাস হয়ে গেছে আমি কেন পারি নাই। আমি যেহেতু পারি নাই তাহলে মুসা কোনভাবে এভারেস্ট জয় করতে পারে না। এই হলো প্রপাগান্ডায় গা' ভাসানো মধ্যবিত্তের একটি অংশের অর্ন্তনিহিত কারণ। তারা যে সচেতনভাবে মুসার বিরোধিতা করছে তা কিন্তু নয়, তারা আসলে এভারেস্ট জয়টাকে প্রতিপক্ষ ভাবছে। এটা যদি এমন হতো যে মুসার স্থানে ইনাম, সজল কিংবা মুহিত থাকতেন তবুও বিতর্ক উঠলে এই শ্রেণী তাদেরো বিরোধিতা করতেন।

সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই, আমি পারি নাই বা আমি বঞ্চিত বলে অন্য কেউ পারবেন না বা বঞ্চিত হবেন এমন ভাবনা থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। এত সহজেই প্রপাগান্ডায় গা' ভাসানো চলবে না। এটা সংকীর্ণ মনের পরিচয়। এ থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। আর পর্বতারোহীদের মনা পাহাড় সমান হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×