মিনিট দুয়েক হলো আজহার খাঁ-র ঘুম ভেঙেছে। ঘুম ভাঙার পর কিছুক্ষণ ভালো করে তাকানো যায়না। চোখের পাতা জট লেগে থাকে।কিন্ত আজহার খাঁ-র এই সমস্যা হলো না। তার ঘুমই ভেঙেছে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে। ভূত দেখলে যেরকম হয়, ঠিক সেরকম। এভাবে হতচকিত হয়ে ঘুম থেকে উঠার কারণ আজহার খাঁ এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছেন। স্বপ্নে আজহার খাঁ দেখেছেন তিনি একটা কাক, এবং বাসার সামনের ডাস্টবিনের দখলদারিত্ব নিয়ে আরেকটা কাকের সাথে ঝগড়া করছেন। স্বপ্নের এক পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কাক হেরে যায়। আজহার খাঁ মহানন্দে ডাস্টবিন খেতে থাকেন।
আজহার খাঁ-র দৃষ্টি সিলিং ফ্যানের দিকে। হতভম্ব ভাব এখনও বিদ্যমান। অনেক অদ্ভুত স্বপ্ন তিনি আগে দেখেছেন কিন্তু নিজেকে মানুষ হিসেবেই দেখেছেন। যেমন একবার দেখলেন রবীন্দ্রনাথ এবং আইনস্টাইন তার বাড়িতে এসে উপস্থিত। রবীন্দ্রনাথের পড়নে গেরুয়া রঙয়ের আলখাল্লা আর হাতে দুইটা মুরগি অনবরত ডেকে যাচ্ছে। আইনস্টাইন হাওয়াই শার্টের সাথে পড়েছেন লাল রঙয়ের লুঙ্গি। আইনস্টাইন পরিষ্কার আরবীতে আজহার খাঁকে প্রশ্ন করলেন, কাইফা হালুকা?
আজহার খাঁ হাত মুখ ধুয়ে চা খেলেন । কিছুটা দুশ্চিন্তিত । মাথা থেকে স্বপ্নের ব্যাপারটা সরাতে পারছেন না ।"কাক এক প্রকার পাখি। সাধারন আবর্জনাখেকো পাখি। আর কিছুনা। এ-নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। শান্তি শান্তি শান্তি।হে মন শান্ত হও।" আজহার খাঁ নিজে নিজেকে বললেন। কিন্তু এতে কোন কাজ হলো কি? মনে হয়না। আজহার খাঁ জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলেন বাইরের কদম গাছে একটা কাক বসে আছে। আজহার খাঁ-র হার্টবিট বেড়ে গেল। তিনি আরো অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন।
আজহার খাঁ স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন। এক মেয়ে দুই ছেলে। মেয়ে সবার বড় । নাম ইরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য আজহার খাঁ-র স্ত্রী উঠেপড়ে লেগেছেন। মেয়ে চায় পড়াশোনা শেষ করতে, আজহার খাঁ-ও চান। কিন্তু এই সংসারে তার মতামতের দুই পয়সাও দাম নাই। সংসার চলে তার স্ত্রীর অঙ্গুলি নির্দেশে।
ইরাকে দেখার জন্য আজ ছেলেপক্ষ আসার কথা রয়েছে। অতএব আজ একটা বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই গুরুত্বপূর্ণ দিনের শুরুতেই আজহার খাঁ কাক বিষয়ক জটিলতায় আটকা পড়েছেন। স্বপ্নের কথা তিনি কোনভাবেই ভুলতে পারছেন না।
বেলা বারোটা নাগাদ ছেলেপক্ষ আসল। সাত-আটজন লোক। অথিতি আপ্যায়নপর্ব শেষ হবার পর মূল কথাবার্তা শুরু হলো। আজহার খাঁ চুপিচুপি এক কোনায় গিয়ে বসেছেন।তাকে আসার কথা কেউ বলেনি। বলার কথাও না। এই সংসারে তার অবস্থান পশুর একটু উপরে।
ছেলেপক্ষ যৌতুকের ব্যাপারে আকার ইঙ্গিতে কথা বলা শুরু করে। নেপথ্যে ছেলের বাবা। তিনি পানের পিক ফেলতে ফেলতে বললেন তার ছেলের একটা মোটরসাইকেলের বড় শখ। আজহার খাঁ চিন্তিত ভঙ্গিতে ছেলের বাবার কথাবার্তা শুনছেন । যৌতুক নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে এটা বুঝতে তার একটু দেরি হলেও যখন বুঝলেন এক অবাক কান্ড করে বসলেন । তিনি হঠাৎ কাকের মত ডাকতে শুরু করলেন । কা..কা..কা। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতচকিত । আজহার খাঁ অনবরত ডেকেই যাচ্ছেন ডেকেই যাচ্ছেন। কিন্তু কেন তিনি এরকম করছেন তা নিজেও বুঝে উঠতে পারলেন না। ঘটনা কী?
ছেলেপক্ষ চলে যায়। এমন পাগলের মেয়ের সাথে তারা তাদের ছেলের বিয়ে দেবেনা।
আজহার খাঁ হতভম্ব দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। সেই কদম গাছে একটা কাক বসে আছে। তার দৃষ্টি ঠিক আজহার খাঁ-র দিকে ।