somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ আজহার খাঁ এবং একটি কাক

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিনিট দুয়েক হলো আজহার খাঁ-র ঘুম ভেঙেছে। ঘুম ভাঙার পর কিছুক্ষণ ভালো করে তাকানো যায়না। চোখের পাতা জট লেগে থাকে।কিন্ত আজহার খাঁ-র এই সমস্যা হলো না। তার ঘুমই ভেঙেছে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে। ভূত দেখলে যেরকম হয়, ঠিক সেরকম। এভাবে হতচকিত হয়ে ঘুম থেকে উঠার কারণ আজহার খাঁ এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছেন। স্বপ্নে আজহার খাঁ দেখেছেন তিনি একটা কাক, এবং বাসার সামনের ডাস্টবিনের দখলদারিত্ব নিয়ে আরেকটা কাকের সাথে ঝগড়া করছেন। স্বপ্নের এক পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কাক হেরে যায়। আজহার খাঁ মহানন্দে ডাস্টবিন খেতে থাকেন।


আজহার খাঁ-র দৃষ্টি সিলিং ফ্যানের দিকে। হতভম্ব ভাব এখনও বিদ্যমান। অনেক অদ্ভুত স্বপ্ন তিনি আগে দেখেছেন কিন্তু নিজেকে মানুষ হিসেবেই দেখেছেন। যেমন একবার দেখলেন রবীন্দ্রনাথ এবং আইনস্টাইন তার বাড়িতে এসে উপস্থিত। রবীন্দ্রনাথের পড়নে গেরুয়া রঙয়ের আলখাল্লা আর হাতে দুইটা মুরগি অনবরত ডেকে যাচ্ছে। আইনস্টাইন হাওয়াই শার্টের সাথে পড়েছেন লাল রঙয়ের লুঙ্গি। আইনস্টাইন পরিষ্কার আরবীতে আজহার খাঁকে প্রশ্ন করলেন, কাইফা হালুকা?


আজহার খাঁ হাত মুখ ধুয়ে চা খেলেন । কিছুটা দুশ্চিন্তিত । মাথা থেকে স্বপ্নের ব্যাপারটা সরাতে পারছেন না ।"কাক এক প্রকার পাখি। সাধারন আবর্জনাখেকো পাখি। আর কিছুনা। এ-নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। শান্তি শান্তি শান্তি।হে মন শান্ত হও।" আজহার খাঁ নিজে নিজেকে বললেন। কিন্তু এতে কোন কাজ হলো কি? মনে হয়না। আজহার খাঁ জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলেন বাইরের কদম গাছে একটা কাক বসে আছে। আজহার খাঁ-র হার্টবিট বেড়ে গেল। তিনি আরো অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন।

আজহার খাঁ স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন। এক মেয়ে দুই ছেলে। মেয়ে সবার বড় । নাম ইরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য আজহার খাঁ-র স্ত্রী উঠেপড়ে লেগেছেন। মেয়ে চায় পড়াশোনা শেষ করতে, আজহার খাঁ-ও চান। কিন্তু এই সংসারে তার মতামতের দুই পয়সাও দাম নাই। সংসার চলে তার স্ত্রীর অঙ্গুলি নির্দেশে।

ইরাকে দেখার জন্য আজ ছেলেপক্ষ আসার কথা রয়েছে। অতএব আজ একটা বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই গুরুত্বপূর্ণ দিনের শুরুতেই আজহার খাঁ কাক বিষয়ক জটিলতায় আটকা পড়েছেন। স্বপ্নের কথা তিনি কোনভাবেই ভুলতে পারছেন না।

বেলা বারোটা নাগাদ ছেলেপক্ষ আসল। সাত-আটজন লোক। অথিতি আপ্যায়নপর্ব শেষ হবার পর মূল কথাবার্তা শুরু হলো। আজহার খাঁ চুপিচুপি এক কোনায় গিয়ে বসেছেন।তাকে আসার কথা কেউ বলেনি। বলার কথাও না। এই সংসারে তার অবস্থান পশুর একটু উপরে।

ছেলেপক্ষ যৌতুকের ব্যাপারে আকার ইঙ্গিতে কথা বলা শুরু করে। নেপথ্যে ছেলের বাবা। তিনি পানের পিক ফেলতে ফেলতে বললেন তার ছেলের একটা মোটরসাইকেলের বড় শখ। আজহার খাঁ চিন্তিত ভঙ্গিতে ছেলের বাবার কথাবার্তা শুনছেন । যৌতুক নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে এটা বুঝতে তার একটু দেরি হলেও যখন বুঝলেন এক অবাক কান্ড করে বসলেন । তিনি হঠাৎ কাকের মত ডাকতে শুরু করলেন । কা..কা..কা। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতচকিত । আজহার খাঁ অনবরত ডেকেই যাচ্ছেন ডেকেই যাচ্ছেন। কিন্তু কেন তিনি এরকম করছেন তা নিজেও বুঝে উঠতে পারলেন না। ঘটনা কী?

ছেলেপক্ষ চলে যায়। এমন পাগলের মেয়ের সাথে তারা তাদের ছেলের বিয়ে দেবেনা।

আজহার খাঁ হতভম্ব দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। সেই কদম গাছে একটা কাক বসে আছে। তার দৃষ্টি ঠিক আজহার খাঁ-র দিকে ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১১
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×