অনেককাল মুন্সি মিয়ার কোন খবর ছিলনা । সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে একদিন উধাও হয়ে গিয়েছিল। স্ত্রী ও এক কন্যার পরিবারকে ফেলে রেখে মুন্সি মিয়া যখন চলে যায় তখন গ্রামের লোকেরা নানারকম কথা বলত। কেউ কেউ বলত মুন্সি মিয়া হয়তো অন্য কোথাও বিয়ে করেছে। আবার কেউ বলতো এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে। প্রকৃতপক্ষে মুন্সি মিয়ার কি হয়েছিল সেটা জানতনা কেউই। এভাবে কিছুদিন যায়, গ্রামের লোকদের সময় কাটানোর বিষয় হয়ে উঠে মুন্সি মিয়ার গল্প। তারপর সবাই মুন্সি মিয়ার কথা ভুলে যায়। তার স্ত্রীও এক কন্যাকে সাথে নিয়ে আরেকজনের সাথে পালিয়ে যায়।
এর প্রায় কয়েক বছর পর, মুন্সি মিয়া যখন ফিরে আসে তখন গ্রামের সবাই তার কথা ভুলতে বসেছে। এক রবিবার বিকেলে গিয়াসুদ্দিন মোল্লা মসজিদ থেকে আসার সময় মুন্সি মিয়ার বাড়ির সামনে তাকে দেখতে পায়। গিয়াসুদ্দিন মোল্লা একটু সময় নেয় চিনতে। তারপর চিনতে পেরে বলে," আরে আমাগো মুন্সি ভাই যে! এদ্দিন কই আছিলা মিয়া। তোমার বইজ্জাত বউ তো তোমার মাইয়ারে সাথে নিয়া আরেক ব্যাটার লগে ভাগছে। আমরা সবাই কত কইরা বললাম যে মুন্সি ভাই ফিইরা আসব। দেখছ আজকে আল্লা তোমারে ঠিকই ফিরায়া দিছে। "
ততক্ষণে মুন্সি মিয়ার উঠোনে জ্যামিতিক হারে বেড়ে গেছে মানুষ । সবার একই প্রশ্ন, মুন্সি মিয়ার কি হয়েছিল।
এদিকে মুন্সি মিয়া নির্বাক। মস্তিষ্ক কোন প্রশ্নেরই উত্তর করছে না। হয়তোবা করছে, কিন্তু তার বাগযন্ত্র অকেজো হয়ে পড়েছে। উঠোনে জমায়েত সবার দিকে সে একটু করে চোখ বুলিয়ে নেয়। হ্যা, সবাইকেই চিনে সে। এইতো সামনে দাঁড়িয়ে আছে জাহাঙ্গীর আলী। যুবক বয়সে যে পাশের গ্রামের এক যুবতী কে রেপ করেছিল। এখন সে গ্রামের একজন অন্যতম মাতব্বর। বিচার-আচারে তাকে ডাকা হয়। তার ঠিক পাশেই আছে গিয়াসুদ্দিন মোল্লার পঙ্গু ছেলে। কোরবানির ঈদে ষাঁড় ধরতে গিয়ে যে এক পা হারিয়েছিল। এতে বোঝা যায় মুন্সি মিয়ার মস্তিস্ক অকেজো হয়ে যায় নি। যেহেতু সে অনেক কিছুই মনে করতে পারছে।
বিকেল ফুরিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলে অধিকাংশ মানুষই মুন্সি মিয়ার উঠান থেকে প্রস্থান করে। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে শুধু গিয়াসুদ্দিন মোল্লা। " ঘরে গিয়া রেস্ট নেও মুন্সি ভাই। কতদূর থাইকা আইছ কে জানে। আন্ধার পড়া শুরু করছে। যাও মিয়া ঘরে যাও। " এই বলে গিয়াসুদ্দিন মোল্লাও চলে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে শুধু মুন্সি মিয়া।
প্রকৃতপক্ষে মুন্সি মিয়ার কি হয়েছিল অথবা এতদিন কোথায় ছিল সেটা গ্রামের মানুষেরা কখনো জানতে পারবেনা। কেননা মুন্সি মিয়াকে আবারও অপহরণ করবে একদল তেলাপোকা। ঘরে ঢুকার ঠিক পরেই এটা ঘটবে। মুন্সি মিয়া তা জানে। আর সে এটাও জানে যে এই একদল তেলাপোকাকে ভাষা শেখাতে গিয়েই সে নিজে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছে।
তারপর আরো কিছুদিন গ্রামের লোকদের গল্পের বিষয় হয়ে থাকে মুন্সি মিয়া।