কনডম, রসায়ন, ম্যাডাম ব্লাজো, অতঃপর তৎসমরা -১
অতঃপর
কিছু মানুষ আছে যারা আম পাড়তে গেলে আমের চেয়ে বেশি পাতা ধ্বংস করে। আমিও বোধহয় সেই গোছের লোক। লেখাটির প্রসঙ্গের উপর আলোকপাত করার পূর্বের আলোচনা বেশি। আসল কথাটি বলেই ফেলি। গত বেশ কিছুদিন ধরে ফেসবুকে এবং ব্লগে অনেক নোট, স্ট্যাটাস এবং ব্লগ পড়লাম। বলাই বাহুল্য যে লেখাগুলো কিছু নাস্তিক ব্লগার এবং একই দলের কিছু লেখকের লেখা। তাদের লেখাগুলো পড়ে আমি আঁতকে উঠেছি বা শিউরে উঠেছি এটা বলার প্রয়োজন নেই। কারণ যারা ইতিমধ্যে তাদের লেখা পড়েছেন তাদেরও আশা করি একই অভিজ্ঞতা হয়েছে, আর যারা পড়েননি তাদের এই অভিজ্ঞতা লিখে অনুভব করানো সম্ভব নয়। আমার এই লেখাটি সেসব লেখকদের জন্য নয়। কারণ আমি জানি আমার এই লেখা তাদের মনে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারবে না। আমার কিংবা আমার লেখার সেই শক্তি বা ক্ষমতা নেই। আমার এই লেখাটি তাদের জন্য যারা তাদের লেখাগুলো পড়ে রাস্তায় মাদারীদের ডুগডুগি বাজিয়ে বানরের খেলা দেখার মত না বুঝে মজা নিয়ে হাততালি দিয়ে যাচ্ছেন।
স্যার যখন কনডমের গল্পটি বলেছিলেন তখন একটি বিষয় বেশ ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিলাম আর তাহলো, কনডম পড়তে শিখাটা জরুরী। নিজের কনডম পড়তে না জানার কারণে সঙ্গিনী সন্তান প্রত্যাশী হয়ে পড়াটার ভুলটি নিতান্তই আমার নিজের। এর জন্য কনডম কোম্পানি কোনভাবেই দায়ী নয়। তাদের দোষী সাব্যস্ত করা, এমনকি তাদের প্রকাশ্যে কিংবা নিরালায় মনে মনেও কিঞ্চিৎ তিরস্কার করাটাও নিজের বোকামি এবং মূর্খতার বহিঃপ্রকাশ। যেসব নাস্তিক ভাইরা এমন সব লেখা লিখছে তাদের ব্যাপারেও একবার ভেবে দেখুন তো। তাদের এমন হিংসাত্মক বা বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের হেতু কি হতে পারে। অবশ্যই কুরআন এবং হাদিস সঠিকভাবে বুঝতে এবং শিখতে না পারা। তারা কুরআন-হাদিস পড়েছে হয়ত। কিন্তু এর মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারেননি। কুরআন-হাদিস পড়ে যদি কেউ এর মর্মার্থ বুঝতে সক্ষম হতে না পারেন তার জন্য দায়ী কোনভাবেই কুরআন-হাদিস কিংবা এর রচয়িতা আল্লাহ পাক এবং রাসুলাল্লাহ (সঃ) হতে পারেন না। তাদের দেখলে বোঝা যায় কুরআন-হাদিস পড়তে শিখা এবং বুঝতে পারাটা কেন জরুরী। যদি তারা সেটা করতে না পারেন এবং সে কারণে আল্লাহ তায়ালাকে বিষোদগার করাটা তাদের মূর্খতা বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীত্ব প্রকাশ করে।
পাঠক মহাশয় নিশ্চয় মেনে নিবেন যে, জীববিজ্ঞান পড়তে গিয়ে আমি যে দুষ্টচক্রে আটকে পড়েছিলাম তা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে না পারাটা নিতান্তই আমার দুর্বলতা ছিল। আমি চাইলেই তখন এই দুষ্টচক্র ভেঙ্গে ফেলতে পারতাম। তার প্রমাণ এই যে, যদি আমি সেটা করতে না পারতাম তাহলে আমার পক্ষে এখন ফলিত জীববিজ্ঞানের উপর স্নাতক পড়াশুনা করাটা সম্ভব হত না। বোঝাই যাচ্ছে, পূর্বে আমার জীববিজ্ঞান শিখতে না পারার পিছনে একমাত্র দায়ী ব্যক্তি আমিই ছিলাম। এর জন্যে কোন দিক থেকেই অ্যারিস্টটল কিংবা থ্রিওফ্রাস্টাস অবশ্যই দায়ী ছিলেন না। তখন জীববিজ্ঞান বুঝতে পারতাম না বলে বা পড়তে ভাল লাগত না বলে যদি আমিও আমার বন্ধুদের মত অ্যারিস্টটল কিংবা থ্রিওফ্রাস্টাস এর মত বিজ্ঞানীদের চৌদ্দ প্রজন্ম উদ্ধারে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম তাহলে সেটা থেকে কি প্রমাণিত হত? আমি যেহেতু জীববিজ্ঞান বুঝতে পারছি না সেহেতু নিশ্চয় এই লোকগুলো মাথামোটা ছিল নাকি আমিই একটা আস্ত গর্ধভ? কিংবা আমার যেসব বন্ধু রসায়ন বুঝতে পারত না বলে রসায়নবিদদের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা প্রকাশ করত তাতেই বা আমরা কি বার্তা পেতাম? এই রসায়নবিদেরা মহামূর্খ ছিল নাকি আমার বন্ধুগুলো বলদের ধাড়ি ছিল? আমার বন্ধুদের প্রশ্ন শুনে যেমন কিছুটা হলেও বুঝতে পারতাম, তেমনই সেসব নাস্তিক ভাইদের লেখা পড়েও আমি বুঝতে পারছি যে, তাদের অবশ্যই কোথাও বোঝার ভুল রয়েছে। আর সেকারণে যেসব নাস্তিক ভাইরা কুরআন-হাদিসের বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আল্লাহ পাক ও তার মহানবী মুহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে কটূক্তি করছেন তারা অন্যদের কাছে কি বার্তা পাঠাচ্ছেন তা নাহয় আপনাদের বিবেচনাধীন থাকল।
একদিক থেকে চিন্তা করলে ব্লাজো ম্যাডাম শুধু আমারই শিক্ষিকা ছিলেন না; উনি আমার শিক্ষকের শিক্ষকেরও শিক্ষিকা ছিলেন। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, সেরের উপরও সোয়া সের হয় আর বাপেরও থাকে বাপ। সেই হিসেবে ব্লাজো ম্যাডাম আমার প্রপিতামহী ছিলেন। এমনকি যে বড় ভাইয়ার ধার করা জ্ঞানের বলে আমি ম্যাডামেরও ভুল বের করতাম আমার সেই বড় ভাইয়াও যুগপৎ রুডি স্যার এবং ব্লাজো ম্যাডামের ছাত্র ছিলেন। ইংরেজি জ্ঞানের একটি গ্রাফ অঙ্কন করলে হয়ত দেখা যাবে, গ্রাফে আমি পিঁপড়া হলে ব্লাজো ম্যাডাম রীতিমত হস্তি সম। আর সেই আমি একসময় ম্যাডামের ভুল বের করতাম এটা এখন ভাবলেও একসাথে হাসি ও লজ্জা পায়। আচ্ছা আমার এমনটা করার পিছনে কারণ কি থাকতে পারে। সম্ভবত অল্প বিদ্যা। নাহ, অল্প বিদ্যা নয়, মূর্খতা। প্রচলিত কথাগুলো আসলেই সত্যি হয়। প্রকৃত বিদ্যা মানুষকে বিনয়ী করে আর অল্প বিদ্যা করে অহংকারী (এবং ভয়ঙ্করী)। ব্লাজো ম্যাডামের মত একজন শিক্ষিকার নোট থেকে আমার ভুল বের করার নেপথ্য রহস্য যে আমার মূর্খতা সেটা নিয়ে এখন আমার তেমন কোন সন্দেহ নেই। সম্ভবত পাঠকরাও এখন এই বিষয়ে সন্দেহমুক্ত। মাঝে মাঝে যে ম্যাডামের নোট থেকে সত্যিই ভুল বের হত না তা নয়। তবে সেটারও নেপথ্য নায়কের প্রধান ভূমিকা থাকত আমার। ম্যাডাম বোর্ডে যা লিখতেন হয়ত অনিচ্ছাকৃতভাবে আমি নিজেই সেটা ভুলভাল লিখে আনতাম, আর ঘরে এসে সেই নোটের আমার পিণ্ডি ম্যাডাম ব্লাজোর ঘাড়ে। নাস্তিক ভাইদের লেখাগুলো পড়ে আমি তাদের মধ্যে আমার সেই হারানো শৈশব দেখতে পাই। তারা কি সুন্দর কুরান-হাদিস, মহাভারত-রামায়ণের ভুলগুলো আমাদের শুধু চোখে আঙ্গুল দিয়েই নয়, পারলে আঙ্গুলের গুঁতো দিয়ে দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন। তারাও কুরান-হাদিসের ভুল বের করতে পেরে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। তাদের এহেন বালখিল্যতা দেখে কেউ কেউ সাবাসি দিয়ে পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে আর তাতে তাদেরও বুক ফুলে ঢোল হয়ে যাচ্ছে। একাত্তরের পরে দেশে তাদের মত এমন বড় বড় বুদ্ধিজীবী জন্মেছে এটা ভাবতেও ভাল লাগে।
তৎসমরা
এক জঙ্গলে চারটি পিঁপড়া একসাথে হেঁটে যাচ্ছিল। এমন সময় তাদের সামনে দিয়ে একটি হাতি হেলে দুলে হেঁটে গেল। তখন তাদের মধ্যে একটি পিঁপড়া বলল, ব্যাটা কত বড় বেয়াদব দেখেছিস! আমাদের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল একবার কুর্নিশও করল না। আরেকজন বলল, ধর শালাকে। এক্ষুনি শালাকে জ্যন্ত পুঁতে ফেলে একটা উচিত শিক্ষা দিই। অন্য আরেকজন বলল, নাহ। হারামিটার শিক কাবাব বানিয়ে আজকে জঙ্গলে বুফে ডিনারের আয়োজন করব। তখন চতুর্থ পিঁপড়াটি বিজ্ঞের মত বলল, নাহ, এখন কিছু করাটা অন্যায় হবে। কারণ আমরা এখন চারজন আর সে একা।
ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক ভাইদের লেখাগুলো পড়লে আগে খুব রাগ হত। কিন্তু এখন হাসি পায়। কারণ তাদের লেখাগুলো পড়ে আমার উক্ত গল্পটি মনে পড়ে যায়। তখন মনে হয়, ইশ! তারা একবারও যদি বুঝতে পারত আসলে তাদের অবস্থান কোথায়!
পড়ুন - তোমরা সামাজিক অপরাধী