somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শান্তির ধর্মের অনুসারীদের এই কি অবস্থা?

৩০ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঠিক কিভাবে যে এই ভয়াবহ এবং বীভৎস ঘটনাটিকে সমালোচনা করা যায় আমার জানা নেই। কোরান অবমাননা করেছে একজন লোক। তার জন্য তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ইসলাম নামক শান্তির ধর্মের অনুসারী বীর পুঙ্গব তৌহীদি জনতা। তার লাশ পুড়িয়ে দেয় তারা প্রকাশ্যেই। আর তার জ্বলতে থাকা লাশের ছবি লাইন ধরে তুলেছে এবং ভিডিও করেছে তারা। ঘটনাটি যদি পাকিস্তান বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনও দেশে ঘটত তাহলে এক কথা। কারণ তারা বরাবরই ধর্মান্ধ বর্বর টাইপের পাবলিক। কিন্তু না, ঘটনাটি ঘটেছে আমাদের দেশেই। লালমনিরহাটে। আরও খারাপ ব্যাপার এই যে এরকম ঘটনাকে সমর্থন করেছে অসংখ্য মানুষ।

শুধু এই ব্যাপারটিতেই এই শান্তির ধর্মের অনুসারী আশরাফুল মাখলুকাতদের কাহিনী শেষ নয়। ফেসবুকের কল্যাণে বিভিন্ন উপলক্ষে এদের আসল চেহারাটা দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ই। যেকোনো সেলিব্রেটি বিশেষত নারী সেলিব্রেটিদের কমেন্ট বক্সে গিয়ে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক না চলার কারণে ভয়াবহ কদর্য ভাষায় ব্যাক্তি আক্রমণ করা থেকে শুরু করে খিস্তি খেঁউড় করা, গালিগালাজ করে তাদের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার, এসব করা তো এই তৌহীদি জনতার নিয়মিত কাজ।

বিজ্ঞানি ষ্টীফেন হকিং যখন মারা গেলেন তখন তার সম্পর্কে এরা বলেছিল “ব্যাটা কোরান থেকে বিগ ব্যাং তত্ব চুরি করেছিস”, “মুসলিম হয়ে মরতে পারলিনা?”

আমাদের প্রখ্যাত ব্যান্ড শিল্পি আইয়ুব বাচ্চু যখন মারা গেলেন তখনো এরা বলেছিল সে নাকি গানবাজনা করে শরীয়ত বিরোধী কাজ করেছে, সে জাহান্নামে যাবে।

আর শুধু দেশের কথা বললেই তো হবেনা। ফ্রান্সের ঐ শিক্ষক যে কি না মহানবী (স) এর ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিল তাকে তো রীতিমতো জবাই করে হত্যা করল এই শান্তির ধর্মেরই এক অনুসারী। গতকালও ফ্রান্সের নিস শহরে চার্চে ঢুকে তিনজনকে জবাই করে হত্যা করেছে এই শান্তির ধর্মের অনুসারীরাই। তার মধ্যে ছুরি হাতে একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার সময় সে “আল্লাহু আকবর” “আল্লাহু আকবর” বলে সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছিলো। এবং এসব ঘটনাকে যথারীতি বিশ্বের বেশীরভাগ মুসলিমরা প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে নানাভাবেই সমর্থন করেছে। শান্তির ধর্মের অনুসারীরা ঐ শিক্ষককে কেন জবাই করে হত্যা করা হল তার কোনও প্রতিবাদ কিন্তু করেনি। উলটো খেপেছে ফ্রান্সের উপর কারণ তাদের প্রেসিডেন্ট জবাই হয়ে নির্মমভাবে খুন হওয়া ঐ শিক্ষকের পাশে দাঁড়িয়েছে।

এর আগে পাকিস্তানে ইসলাম অবমাননা করার অপরাধে আদালতে এক ব্যক্তির বিচার চলার সময় সেই আদালতেই সবার সামনে তাকে ছুরি মেরে হত্যা করে সেই শান্তির ধর্মের এক অনুসারী। শুধু তাই নয়। তাকে আদালত শাস্তি দেয়ার পর তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তার সাথে রীতিমতো মোবাইলে সেলফিও তুলেছে।

এর আগে আমাদের দেশেও তথাকথিত “নাস্তিক” ব্লগাররা যখন একে একে নির্মমভাবে খুন হচ্ছিলো তখনো সেগুলোকে সোল্লাসে সমর্থন করে বেড়িয়েছে এদেশের তৌহীদি জনতা।

কথায় কথায় তো খুব শুনি ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম নাকি মানুষকে ভালোবাসা শেখায়। দেশের ৯০% মানুষই তো ইসলামের অনুসারী। ইসলাম অনুরাগী। তা এই বুঝি সেই ভালবাসার নমুনা? এই বুঝি সেই শান্তির নমুনা?

এর আগে এক পোস্টে এই শান্তির ধর্মের অনুসারীরা ইউরোপে কি করে বেড়াচ্ছে তার একটা নজীর তুলে ধরেছিলাম। ইউরোপে কেন মুসলিম বিদ্বেষ বাড়ছে, কেন সেখানে উগ্র ডানপন্থী রাজনীতির উত্থান ঘটছে তার কারণগুলো বলেছিলাম। ব্যাপারটা যথারীতি অনেকেরই পছন্দ হয়নি।

কথা হচ্ছে দেশেই হোক কি বিদেশেই হোক গোটা মুসলিম বিশ্বেই গড়পড়তায় মুসলিমদের মানসিকতা প্রায় একই প্যাটার্নের হয়ে গেছে সেটা স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে। সারা বিশ্বেই ঠিক যুদ্ধবিগ্রহ না হোক সাংস্কৃতিকভাবে এই শান্তির ধর্মের অনুসারিরাই সবচেয়ে বেশী সমস্যা সৃষ্টি করছে। ইউরোপ আমেরিকায় অন্যান্য দেশের ইমিগ্র্যান্টরাও যাচ্ছে। তারা গিয়ে ঐসব দেশের কালচারের সাথে মানিয়ে নিচ্ছে। পারছেনা শুধু মুসলিমরা। কেন পারছেনা সেটা বলা বাহুল্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শরিয়া আইনে ধর্মত্যাগীদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশ তো আরেক কাঠি সরেস। সেখানে প্রতি শুক্রবার জুম্মাহর নামাযে গিয়ে রীতিমতো স্বাক্ষর করে হাজিরা দিতে হয়। যদি ধর্মীয় পুলিশ দেখে যে হাজিরা নেই, নামাযে আসেনি তাহলে রীতিমতো তাদের বেত মেরে তাদের শাস্তি দেয়া হয়। এবং ইন্দোনেশিয়ার এই রীতি বেশীরভাগ মুসলিম সোল্লাসে সমর্থন করে। তা এই যদি হয় শান্তির ধর্মের অনুসারীদের অবস্থা তাহলে “ইসলাম সন্ত্রাসীদের ধর্ম” এই অভিযোগ যখন অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা করে তাহলে জোর গলায় তার প্রতিবাদ করবেন কিভাবে? এই যদি হয় শান্তির ধর্মের অনুসারীদের কাজের নমুনা তাহলে এরা কি একসময় সারা বিশ্বের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হবেনা?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৫
১৪টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×