শুক্লা তিথির সহস্র নক্ষত্রের ভেলায় ভেসে আসে কোজাগরী, পূর্ণ শশীর পূর্ণ যৌবন ক্রম ক্ষয়িষ্ণু কৃষ্ণপক্ষের অতল আহ্বানে। বিলীন হবার তরেই কি তবে এত আয়োজন, এত আকুলতা? নীহারিকার কর্ণে, নিমজ্জিত নয়নে হাহাকারী আর্জি তোমার, পৌছালো নাতো ঐ সন্ধ্যাতারার অনাবিল আলোক মালার তরণী বেয়ে, পথ দেখালো না তো কোনো ধ্রুবতারা, ঐ আকাশতরীর নেয়ে। অথচ সৃষ্টির শুরু হতেই যে ছিলো পথভ্রষ্ট পথিকের পথের দিশারী। মুখ ফিরিয়ে রইলো বুঝি সেও,কোন সকরুণ অভিমানে.....
হৃদয় হানে অবিশ্রাম ব্যাথাতুর ...গগণ ব্রতে ধ্যানমগ্ন কালপুরুষ সাতটি তারার ঐ তিমিরের মাঝে অবিচল অতল রাত্রীর অনিদ্র প্রহরী।
ওহে কালপুরুষ-
কোন সে আসন্ন যুদ্ধের প্রস্তুতিতে আজও নিদ্রাহীন রাত্রী জাগরণ- উজ্জ্বল নক্ষত্রের কোমর বন্ধনীতে
লুক্কায়িত রহে কোন সে মায়া? ছায়া ও কায়ার মাঝে তুমি এক অবোধ্য বীর....
কেঁটে যায় প্রহর। কমলিনী রোহিনী কিংবা কৃত্তিকার মুখে শুনি আঁধারের গান। পাপক্লিষ্ট শহর ঘুমিয়ে থাকে পুণঃ জেগে ওঠার মহান ব্রতে। ধূসর হৃদয়ের অপেক্ষার ঘাঁটে, নিস্তব্ধ জলের তরঙ্গিত দেহে স্বপ্নাতুর একটি সোনালী সন্ধ্যার অশ্রুত প্রহর। জনম জনম কাঁদে তৃষিত হৃদয় বিরহী চকোর। কাঙ্খিত স্ব্পনের অংকিত চিত্রকল্পের বাতায়নে জ্বলে একটি চিত্রদ্বীপ এবং এক নীলাভ সবুজাভ ময়ুরকন্ঠি রাত ......
কথাকথি প্রশ্নবোধক চিহ্নের একটি অপ্রকাশিত লেখনীর দন্তভঙ্গ জবাব লিখিতে গিয়ে আমার এ লেখনীর জন্ম হয়েছে। নীচে ~~কথাকথিকেথিকথন~~ এর সেই অপ্রকাশিত বাণীখানি দেওয়া হইলো-
পুঞ্চৎঃ অপ্রস্তুত, বিভোর…। বিভাজিত কর্পূরঘন আবেগ সন্ন্যাসী হয়ে নীহারিকার শেষোক্ত কর্ণে নিমজ্জিত নয়নে আর্জি রেখেছিলাম- আমি সন্ধ্যার সূচালো গগণ ব্রতে যেতে চাই তোমার সমাপনী মধ্য আলয়ে, ঠিক যে গভীরে তুমি স্তমিত!যে আলয় কল্পিত মোর হৃদয়ে-চৌকাঠ ডুমুর নির্যাস, শরৎ কুয়াশা, শিতগ্র কাশফুল, সুবাহারি খাঁচের ডানায় নিশাচর ডাহুক, মৃত্তিক অলংকৃত সূর্যালোক, বহমান জলন্তিম শিহরণ, বৃষ্টি শৌভিত তীর্যক চাদরে মোড়ানো ফুলদেবী, স্নিগ্ধ মৌহব ঝংকার জোনাক বনে….!
একটি অযোগ্য রাত্রি, যার দেহে বিস্বাদ মেখেছে মহাকাল, নিষ্ঠুর ধোঁকা, বিভক্ত সন্ধ্যা, পাপক্লিষ্ট সময় রেখা- এমন এক রাত্রিতে যখন গমন ক্ষণের খবর নিয়ে আসলো ধূসর সৌনালী ঠোঁটে এক বিহঙ্গ লাল নীলাভ্রু খামে হৃদয়ের অপেক্ষার ঘাঁটে তখন আমি লিখেছি নিস্তব্ধ জলের দেহে একটি সুযোগ্য সন্ধ্যার প্রহর।সে আমার আর্জি গ্রহণ করেছে, বিদায় অবিন্যস্ত হৃদয়, স্থিতি হবো তোমার জনম জনম আকাঙ্ক্ষিত অংকিত চিত্রকল্পের ভূবনে।
একটি শত ঘরের বাঁশি নিয়ে কে যেন আসছে এদিকে ! মুখোশে রঙিন ঘুড়ি, কৃষ্ণকালো চোখ, ত্রিকোণাকৃতির ত্রিযুগোল সাতরঙা কাপড় উড়িয়ে, মধুর তারতম্যে সেই সুর খেলা করে চারপাশ, হৃদয় ঘুমিয়ে পড়ে সবুঝ ঘাসের বিছানায়, ঘাসফুল কানে কানে বলে- ওঠো নিষ্পাপ ভোরে, পায়ে পায়ে কুয়াশা মেখে হেঁটে চলো ঐ ঢেউর কাছে, যে তোমাকে ডাকে নিশিতে, অশ্রুসিক্ত স্বপ্নে! আমার চোখ কেঁপে ওঠে, যেন কেউ একজন চোখগুলোকে ছুঁয়ে দিয়েছে অভিমানী হাতে ।চোখের আঙ্গিনায় নীল আকাশ, শ্বেত শুভ্র মেঘগুচ্ছ ঝরে পড়ছে চোখের ইশারায়।আমি আবারও হারিয়ে যাই।অনুভবে গহীনের শিহরণ, কলকলে ধ্বনি, নীরবে বয়ে চলা জলস্রোত। গুণে গুণে শুনছি আমি অজস্র স্রোতের কলকলে ফিসফিস, একফোটা জলে যখন জেগে উঠি তখন দেখি কুঁচি পাথরের বুক চিরে লালপদ্ম ফুটেছে, স্পর্শহীন গুহায় যাদের বসবাস। ঝরে পড়া পাঁপড়িতে আমি আবারও যাই হারিয়ে।এভাবে অজস্র অনুভবে হারিয়ে যেতে যেতে, বাঁশির নিমগ্ন সুরে সুরে কোন এক অসময়ের ঘরে আটকা পড়ে কুক্ষিগত হলো সুবোধ হৃদয়। অতঃপর…..
~~পুঃনশ্চ আমার উত্তর ~~
অতঃপর পাথরেও ফোঁটে ফুল। প্রস্তরীভুত শিলার বক্ষ পিঞ্জর ভেদে প্রস্ফুটিত হয় লালপদ্ম । কাহার যাদুকরী স্পর্শে তাহাতে হয় প্রাণ সঞ্চার! কোন সে সঞ্জীবণী সুধা পিয়ে পাষান হৃদে জাগে তার কলরোল। ছলোছল নিস্তরিণী ঝর্ণাধারার জলস্রোতে গড়িয়ে যায় নব আনন্দধারা? নব প্রভাতের রঙ্গীন শুভ্রালোকে নব আনন্দে জাগে হৃদয়, আঁখির কোনে জাগে সজীব সবুজ ডাঁটের সূচী শুভ্র কাঁশফুল.....
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৪২