
ছোটবেলায় আমার ছোট্ট জামাকাপড়ে ফুটিয়ে তুলতেন মা এক অদ্ভুৎ সুন্দর ডিজাইন। চিরকালের অনুসন্ধিৎসু হৃদয়ের আমি সেই ডিজাইনে হাত বুলাতাম। এক যাদুকরী মায়াস্পর্শ লেগে থাকতো সেই ডিজাইনটার গায়ে। মা বলতেন এই ডিজাইনের নাম হানিকম্ব। এর মানে কি মা বুঝিয়ে দেননি এমনকি আমিও বুঝতে চেষ্টাও করিনি।

বড় হবার পর জেনেছি এই হানিকম্ব মানে মৌমাছির চাক। স্কুলে বাচ্চাদেরকে বলেছি বি হাইভের কথা কিন্তু হানিকম্ব নিয়ে কিছুই বলিনি। তবে হ্যাঁ এবার বলবো কারণ আমি এবারে অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে চোখে পড়েছে হঠাৎ সেই হানিকম্ব!! এর মাঝে আরেকটা কথা আছে তখন আমি সিক্স বা সেভেনে পড়ি আমাদের বাসার সামনের বিশাল গোলাপজাম গাছে বাসা বেঁধেছিলো বিশাল দলের এক ঝাঁক মৌমাছি তারা বানিয়েছিলও বিশালাকৃতি এক মৌচাক। মৌচাক যখন কাটা হলো। মধু নিয়ে নেবার পর সেই হলদে রং এর সেই চাকটা দেখে আমি অবাক!! এত সুন্দর হেক্সাগন শেইপ প্রকোষ্ঠ সেই চাকে। হাজারে হাজারে গাঁথা রয়েছে!!! অত টুকুন মৌমাছিরা কেমনে বানালো এমন সুন্দর এক শৈল্পিক আশ্চর্য্য! মাথায় কত প্রশ্ন আসলে দিত না কেউ জবাব তার। এখনকার বাচ্চাদের কাউকে কিছু জিগাসা করার নেই তাদের হাতেই আছে দুনিয়ার সকল প্রশ্নের উত্তর। এক নিমিষে তারা জেনে যায় সবই আজ।

যাইহোক সেই চাকটাকে মা সাজিয়ে রাখলেন সোকেসের উপরে। ধীরে ধীরে সেটা গলতে শুরু করার পর ফেলা হয়েছিলো। সেই অদ্ভুৎ সুন্দর স্বচোক্ষে দেখা মৌচাকটাকে আমি ভুলিনি। হঠাৎ তেমনি ভাবেই ছোট্ট এক বোতলের মাঝে ঝা চকচকে এক টুকরো মৌচাক দেখতে পেলাম অস্ট্রেলিয়ার কোলস এ। তাড়াতাড়ি নিয়ে নিলাম দু বোতল।

বাসায় এসে খাবো কি খাবো না। বাব্বাহ গলায় যদি মৌমাছির হুল ফুটে যায়! খেয়ে যদি এলার্জী হয় সাত পাঁচ ভেবে বোতল খুলে এক টুকরো কেটে মুখে দিতেই মনে হলো স্বর্গ বা বেহেসতে মনে হয় এমনই হানিকম্ব খেতে পায় মানুষেরা......
যাইহোক অপূর্ব সুন্দর রুপে স্বাদে ও গুনে অনন্যা এই হানিকম্ব না মৌচাকের সম্পর্কে কিছু জানলাম যা সবাইকে জানাতে চাইলাম-

হলদে বাদামী রঙের চাক সহ মধুটাকেই মূলত হানিকম্ব (Honeycomb) বলা হয়। এটা আসলে মৌচাক! আমি শুধু মধুটাকে খাই। মৌচাকটাকে হয়ত অনেকেই খায়নি তাদের জন্যই এই লেখা।
মৌচাক হলো মৌমাছির মৌচাকের ভেতরে তৈরি একটি প্রাকৃতিক কাঠামো। এটি ষড়ভুজাকার বা হেক্সাগন শেইপের মোমের কোষের একটি ভর দিয়ে তৈরি, যা কর্মী মৌমাছিদের নিঃসৃত মোম থেকে তৈরি। এই কোষগুলি মধু, পরাগরেণুর সংরক্ষণাগার এবং মৌমাছির লার্ভা বিকাশের জন্য নার্সারি হিসেবে কাজ করে।
ষড়ভুজাকার আকৃতি: কোষগুলি পুরোপুরি ষড়ভুজাকার, যা মৌমাছিদের সর্বাধিক পরিমাণে মধু সংরক্ষণের সময় সর্বনিম্ন পরিমাণে মোম ব্যবহার করতে দেয় । সে এক অপুর্ব নক্সাদারী! মৌমাছি কোষে অমৃত জমা করে, তারপর তাদের ডানা দিয়ে এটিকে ফ্যান করে যতক্ষণ না এটি মধুতে পরিণত হয়। মানুষ মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে। আড় মোমগুলো মোমবাতি, প্রসাধনী, পলিশ এবং ওষুধে ব্যবহৃত হয়।
মৌচাক সরাসরি খাওয়া যেতে পারে । এর একটি চিবানো গঠন, মিষ্টি মধু এবং মোম রয়েছে যা আঠার মতো চিবানো যায়। অনেকটা চুইংগাম টাইপ, আমি অবশ্য মোমগুলো চিবিয়ে ফেলে দিয়েছি। পেটের মধ্যে গিয়ে যদি আটকে যায় সেই ভয়ে। অন্যরা সেটাও খাই কিনা জানিনা। জানতেও চাই না।

যাইহোক প্রকৃতির ইঞ্জিনীয়ার বিজ্ঞানী মহা বিজ্ঞানী কোন ভাষায় তাদের ডাকবো জানিনা সেই মৌমাছিরা নাকি এই হেক্সাগন শেইপ বানিয়েছে কারণ ষড়ভুজ (hexagon) আকারে কোনো ফাঁকা জায়গা নষ্ট হয় না। এটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল, ফলে বেশি চাপ সহ্য করতে পারে। কম মোম খরচ করে বেশি জায়গা তৈরি করা যায়। বাপরে!!! এত বুদ্ধি কই পেলো অতটুকুন মাথায়!!! এই কারনেই মনে হয় তাদের মানুষের উপর রাগ আর কামড়ে দেয়। ভাবে বেটারা অত বড় মাথা পেয়েও কেনো আমাদের মত কর্মঠ নয়, কেনো মাথা খাঁটিয়ে আরও সব ভালো ভালো বড় বড় কাজ করে না!!
যাইহোক এখানে কিছু হানিকম্বের ছবি দিলাম।। আমি মজা করে খেয়েছি এবং খাচ্ছি!!! অন্যরা চাইলে ট্রাই করে দেখতে পারো....

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




