somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ জীবনও প্রভাত এলো বিদায়ও বেলা

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আজ বাড়ি ফিরে যাব না। ইচ্ছে করছেনা ফিরে যেতে।

চারপাশ অন্ধকার হলে আমি অন্ধকার দেখব খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে। তারপর ফিরে আসব। হেঁটে হেঁটে কতটা দূর চলে এসেছি জানিনা। শুধু এটুকু উপলব্ধি করতে পারছি কোথায় যাচ্ছি সেটাই জানিনা। আর একটুও অবসাদ নেই । এতো সাহস আমি কোথায় পেলাম তাই ভাবছি। মানুষ যখন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তখন আসলেই মাথায় বুঝি কিছু কাজ করেনা। তার মানে কি এখন আমার হিতাহিত জ্ঞান নেই? কি আজগুবি কথাবার্তা ভাবছি, ধ্যাৎ!

আমার এখন এই পথ চলা কেই উপভোগ করা উচিত। অলস দুপুর, সুর্যের প্রখর তাপ , আর এই তাপে মানুষের প্রান যায় যায় অবস্থা। আমার কাছে অবশ্য ছাতা আছে। কিন্তু ব্যাগ থেকে বের করতে ইচ্ছে করছেনা। সুর্যের তাপে গায়ের রংটা আরো পুড়ে যাবে। এমনিতেই আমি একটু কালো। আরেকটু কালো হই না সমস্যা কি? গায়ের রংটাই কি সব? ওতো সুন্দর কই ওর মনটাতো দেখি অনেক ছোট। গায়ের রঙের সাথে কোণ মিল নেই। না এসব চিন্তা বাদ। ওকে নিয়ে ভাববার সময় এখন নেই আমার। এই সময়টুকু শুধুই আমার।

ইস! কি অদ্ভুত সুন্দর নদী। অদ্ভুত ই লাগছে আমার কাছে। জানিনা আজ সব কিছুই কেন এতো অদ্ভুত লাগছে। সামনে একটা ব্রীজ আছে দেখছি। কি সুন্দর টলমল জল বয়ে যাচ্ছে। নদীর জল কেন আমাকে এত কাছে টানছে? কি সুন্দর দুটি প্রজাপতি উড়ে যাচ্ছে জলের উপর দিয়ে। চোখ দুটি জলে ঝাপসা হয়ে আসছে। জলের দিকে তাকিয়ে আমি হারিয়ে যাচ্ছি আমার অতীতে। দুটি আবছা ছায়া জলের উপর। একজন আরেকজনের গায়ে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। কি মধুর সেই দিনগুলো ছিল। নৌকা থেকে জলের ভেতর পা দিয়ে বসে থাকার মজাই আলাদা। শান্ত নদী, মৃদু মৃদু হাওয়া, মিষ্টি বিকেল, আকাশের নীল নীল মেঘ, মাতাল করে দিয়েছিল সবকিছু।


আরে এখানে কি করছেন আপনি? পড়ে যাবেনতো?
নিশ্চয়ই এই মেয়ের কোন মতলব আছে। আত্মহত্যা করবে মনে হয়।
-এই যে শুনছেন?
-সংবিত ফিরে পায় লাবন্য।
-জ্বি আমাকে বলছেন? আরে এখানে এত মানুষ কেন?
-জ্বি ম্যাডাম আপনাকেই বলা হচ্ছে। ব্রীজের নিচে তাকিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কি করছেন? পরে যাবেন তো?
- কেন? নদীর জল দেখতে মানা নাকি?
- এই ভরদুপুরে কেউ নদীর জল দেখে?
- নদীর জল দেখতে কি নির্দিষ্ট কোন সময় আছে নাকি?
-এই মেয়েটা পাগল নাকি?
-হাহাহাহা! ও আপনারা কি মনে করেছেন আমি আত্মহত্যা করব? চিন্তা করবেন না। আমি ও পথের যাত্রি নই ভাই সকল। আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি।


এক ঝাক পাখি উড়ে যাচ্ছে। পাখিদের মত যদি হতে পারতাম। কি ভালই না হত! ইচ্ছে মত এখান থেকে সেখানে উড়ে যেতাম। কাউকে কিছু বলাই লাগত না। বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে। ক্ষুধা লেগেছে কিন্তু খেতেও ইচ্ছে করছেনা। সাইড ব্যাগে ফল আছে , সাথে একটা ছুরিও আছে। কেউ যদি কিছু বলেনা একদম খুন করে ফেলব। খুনের নেশায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। আজতো বাসায় যাব না আমি। রক্ত গরম হতে লাগল। আজ খুব যত্ন করে ওকে খুন করব। একটুও আমার খারাপ লাগছেনা। না একটুও খারাপ লাগছেনা। মাথায় কি সব আজগুবি চিন্তা ভাবনা আসছে, ভাবতে ভালই লাগছে আবার খুব হাসিও পাচ্ছে।

ইস! পড়ন্ত বিকেলের এই সুর্যের আলোটা এত ভালো লাগে আমার। কি অপরুপ সুন্দর এই গ্রাম! সব কিছুই ভালো লাগছে আজ। সন্ধ্যায় যদি জোনাকি পোকা দেখতে পেতাম খুব ভালো লাগত।

সেই দিনটির কথা খুব মনে পড়ছে। আমার জন্মদিনে একটা গিফট পাঠিয়েছিল ও। আমার ভীষণ ভালো লাগছিল। ও বলছিল রাতে ঘুমানোর আগে লাইট অফ করে বক্সটা খুলতে। ঠিক রাত ১১ টায় ঘরের জানালা , দরজা লাগিয়ে দিলাম। লাইট অফ করে দিলাম। আমি একদম আশা করিনি, আমার প্রত্যাশাও ছিল না যে ও এমনটি করবে। বক্স খোলার সাথে সাথেই এক ঝাঁক জোনাকি পোকা বক্স থেকে বের হচ্ছিল। কি যে ভালো লেগেছিল আমার! উফফ! পুরো ঘর জোনাকির আলোয় আলোকিত হয়েছিল। আর ঠিক তখনি ওর ফোন দিল
-কেমন লাগল গিফট?
-আমি শুধু কাঁদছিলাম। কিছুই বলতে পারছিলাম না। শুধু বললাম ভালোবাসি। পাশে থেকো। হারিয়ে যেয়োনা।
ওর সহজ স্বীকারোক্তি
- পাশে রব সারাটি জীবন।



ছয়টা বেজে গেছে । ওর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসছে। ম্যাসেজ আসল ।
‘আপু বদমাইশ টা কে ধরে আনছি , আপনি কখন আসবেন? ওরে থাপড়াইয়া মনের সাধ আগে মিটাই নেই” ।
ম্যাসেজটা পড়ে মাথায় রক্ত উঠে গেছে। সাথে সাথে ফোন দিল লাবন্য ।
-হ্যালো বর্ষন ! একটা টাচও তুমি ওর গায়ে দিবেনা। আমি বলে দিলাম। একটা টাচও না।
- কি বলেন আপু? যেই বদমাইশ আমার আপুর চোখের জল ঝরাইছে তারে এমনে এমনে ছেড়ে দিব? কোনদিনও না।
- প্লিজ বর্ষন। তোমার আপুকে তুমি ভালোবাসতো? তাহলে আমার কসম তুমি ওকে কিছু করোনা।
-আপনি আসবেন কখন?
- আমি আসব না বর্ষন।
- কি বলছেন? ওকে না কি জিজ্ঞেস করবেন? ওর মুখোমুখি না হতে চাইলেন?
-হুম চেয়েছিলাম! এখন আর চাইনা। বর্ষন যেই মানুষ টাকে আমি এত অনুরোধ করেছিলাম শেষ দেখা করার জন্য সেই মানুষটার সামনে যেতে আমার সত্যি ঘেন্না হচ্ছে। ওর কাছেতো আমার আকুলতা ব্যাকুলতার কোন দাম ছিল না। আমার যন্ত্রণার কথা জানার পরও একটা বার ওর মনে হয়নি শেষ দেখা করার কথা।
-আপু আপনি কাঁদছেন? আমার কিন্তু মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। এই গাধার বাচ্চার জন্য কাঁদছেন? যে আপনার ভালবাসার মূল্য দিতে জানেনা, তার জন্য.........। ওর হাত পা আমি ভেঙ্গে দিব। আর আমি চাই আপনি এসে ওর গালে দুইটা চড় দিয়ে যাবেন।
- না প্লিজ না এমন করোনা। যাকে এত ভালোবাসি তাকে আমি মারতে পারবনা। হ্যাঁ আমার মনে হত ওকে চড় দিতে পারলে মনে শান্তি পেতাম। কিন্তু আমি যে ওকে ভালবাসি!
- যে আপনাকে অপমান করেছে মানুষের সামনে তাকে ভালবাসেন?
- বর্ষন মানুষের কাছে বড় হওয়া খুব সহজ, কিন্তু নিজের কাছে কিভাবে বড় হবে? সে একদিন নিজের কাছেই লজ্জিত হবে। আর সেই লজ্জা তাকে শেষ করে দিবে। আমাকে নাহয় মানুষের সামনে ছোট করেছে কিন্তু ওর মনের কাছেতো ও নিজেই ছোট। সেটা কতটা লজ্জার সেটা কি জানো?


আকাশে বিদ্যুৎ চমাকাচ্ছে, একটুও ভয় লাগছেনা। কখন আকাশ এতো কালো মেঘে সাজল ? একটুও বুঝতে পারিনি। ঝম ঝম করে বৃষ্টি ঝরে পড়ছে। পাগলের মত ছুটাছুটি করছি আমি। এত ভালো লাগা কোথায় ছিল? বুকের ভেতর সব কষ্টগুলো কোথায় হারিয়ে গেল? হে বিধাতা! কয়েকশ বছর বাঁচতে ইচ্ছে করছে আমার। বৃষ্টির জলে আমার সব কষ্ট ধুয়ে নিয়ে গেছে। একটা গান খুব মনে পড়ছে

“ আঁচলের ফুলগুলি করুন নয়নে
নিরাশায় চেয়ে আছে
মোর মুখোপানে
বাজিয়াছে বুকে যেনো কার অবহেলা
ভাঙ্গিল খেলা
জীবনও প্রভাত এলো
বিদায়ও বেলা
মোর না মিটিতে আশা
ভাঙ্গিল খেলা
..............................
........................
ফিরিবেনা কূলে মোর
বিরহের ভেলা
মোর না মিটিতে আশা
ভাঙ্গিল খেলা "

সকাল বেলা পুরো গ্রামের মানুষ জড়ো হয়েছে। কারন শাড়ি পড়া কালকের সেই মেয়েটির লাশ পড়ে আছে নদীর কিনারায়। কেউ কিছুই বুঝতে পারছেনা। কে এই মেয়েটি কি তার পরিচয়?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৯
২৯টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×