somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদরের ছোট্ট পরী

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০২ সাল। ঘড়ে আসল নতুন মেহমান। একটা ছোট্ট নবজাতক মেয়ে। বাবা মা আর একটি ছেলের পরিবারের ৪ নাম্বার সদস্য। কারো খুশির সীমা নেই। ভাইটা জেনো সবার থেকে একটু বেশি খুশি। আদরের ধন বোন পেয়েছে। খুশিতে তার ছোটাছুটি কে দেখে।
.
বাবা আবার চাকরী করে আরেক শহরে। যার কারনে আর মেয়ের কাছে থাকা হয় না। মাসে ৩-৪ টা দিন পায় তার রাজকন্যার দেখা। বাবার আদর, ভাইয়ের আদর, মায়ের আদর যেন থামেই না। একটু একটু করে বেড়ে উঠে সেই পরীটা। ভাই টা স্কুল থেকে এসেই বোন টাকে নিয়ে মেতে উঠে। খুনসুটি করে। এসব দেখে বাবা মা হাসে। বাবার কষ্ট সার্থক বলে মনে হয়। বাবা আবার চলে যায় তার কর্মস্থলে। একটাই চিন্তা। আমার রাজপুত্র আর রাজকন্যার জন্যে আমাকে এই অসুস্থ শরীর নিয়েও কাজ করতে হবে। হুম সেই বাবা টা অসুস্থ। অনেক দিনের পুরনো রোগ। ডাক্তার ধরতেই পারে না সমস্যা কোথায়। এক গাদা ঔষধ খায় প্রতিদিন।
.
ভাই টা তো আছে তার মিষ্টি পাখি বোন নিয়ে। তাদের খুনসুটি থামেই না। একটু একটু করে বড় হতে লাগল সেই পরীটা। ভাই এর আঙুল ধরে হাটতে চেষ্টা করে। বার বার পড়ে যায়। আবার তুলে নিয়ে দাড় করিয়ে দেয় তার। একসময় শিখে যায় হাটা। এখন আর আঙুল ধরতে হয় না। সে নিজেই হাটে আবার পরে আবার হাটে। এই নতুন হাটা দেখে বাবা মা ভাইয়ের হাসি থামে না।
.
সেই পরীটার বয়স যখন ৮ বছর তখন জীবিকার তাগিদে বাবার বোঝা হালকা করার উদ্দেশ্যে ভাই টা পাড়ি জমায় প্রবাসে। বাবার সেই বড় চোখ, মায়ের অশ্রুঝরা কান্না আর এই পরীটার দুষ্টু হাসিতেই দেশ ছাড়ে সে।
.
বাবা চলে যায় কর্মস্থল এ। মা আর সেই পরী এখন একসাথে। ভাই টা পরীটার জন্যে প্রবাসে কাদে। মোবাইলেই খুনসুটি করে কিছুটা শান্ত হয়। বাবা তার আগের মতই কাজ করে যায়। এদিকে পরীটা বড় হচ্ছে।
.
ভাইটার চিন্তা পরীটার জন্যে কি পাঠাবে দেশে। সে নিজে জেতে পারছে না নানান জটিলতার কারনে। পরিচিত কেও যাবে শুনলেই আবদার নিয়ে হাজির। ভাই আমার কিছু জিনিস নিবেন? একটু কষ্ট করেন। ভাইয়ের জিনিসগুলার লিস্ট ভরা থাকে পরীটার বিভিন্ন আবদার দিয়ে। ৪৪/৪৫ টেম্পারেচার এ হাড়ভাংা পরীশ্রম করে সাথে ওভার টাইম করে বড় কষ্টের টাকা দিয়ে বোনের চাহিদা আর আবদার পুরন করে চলছে।
.
এখন পরীটা একটু বড় হয়েছে। স্কুল এ যায়। এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসছে। বাবা ভাইয় এসব পাত্তা দেয় না। মাত্র তো ক্লাস এইটে পড়ে। ছোট্ট পরী, কিসের বিয়েটিয়ে। বয়স কম অন্তত এইচ এস সি পাস করুক তারপর ভাবাভাবি। ভাই প্রবাসে, বাবা তার কর্মস্থলে, মা বাড়িতে এভাবে পরীটা বড় হচ্ছে।
.
হঠাত পরীটাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আত্বীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো। সেখান থেকে নিখোজ। বাবা, মা ভাই পেরেশান। কোথায় তাদের রাজকন্যা। নাহ কোথাও নেই। সকলের খাওয়া, ঘুম নেই। খবর পায় এক ছেলের সাথে কোথাও পালিয়েছে।
.
আকাশ টা ভেঙে পড়লো বাবার মাথায়। ভাই প্রবাসে আর কাজ করতে পারে না। পুরা পৃথিবী টা চোখের সামনে ঘুরছে তার। মা কেঁদে বুক ভাষায়। বাবা সব ফেলে আসে বাড়িতে। ভাইটা ত হাজার মাইল দূরে। দেশে আসার মতো ব্যাবস্থা নেই। ৬ টা বছর ধরে প্রবাসে। সে ভাবতেই পারে না তার ছোট দুনিয়ায় এরকম ঝড় আসবে।
.
বাবা মা পাগল প্রায়। শুরু হয় চেষ্টা তদবির। এর মধ্যে পরীটা ফোন করে মায়ের কাছে। বলে আমি ভালো আছি। আমি এই ছেলেকে বিয়ে করবো। আমার জন্যে চিন্তা করো না। বিয়ে করে পরে আসবো। বাবা বলে ঘরে আয় ওখানেই বিয়ে দিবো। পরীটা বলে না আপনাদের বিশ্বাস নেই, যদি কথায় না থাকেন। আমার সোজা কথা আমি এই ছেলেকেই বিয়ে করবো। জানা যায় এতো বিয়ের প্রস্তাব এর ভিরে এ ছেলের প্রস্তাব ও না করে দেয়া হয়েছিল। অথচ পরীটাই এ প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো। যা বাবার অজানা।
.
এসব শুনে বাবা মা আর ভাইটার কান্না থামে না। অঝোরে কেদেযায়। কেও দেশে, কেউ প্রবাসে। ভাইটা কাজ করে আর কাদে। বন্ধুদের লুকিয়ে লুকিয়ে কাদে। যদি দেখে ফেলে কি জবাব দিবে। পরীটার পড়ার টেবিল ঘেঁটে বাবার হাতে তাঁর নিজের লিখা একটা চিঠি ধরা পড়ে। যা রীতিমত আত্বহত্যার নোট। যার কারনে বাবা আর তদবির করতে সাহস পায় না। ছিনিয়ে আনতে পারে কিন্তু পরে???!!!! এখানে এসে থেমে যায় সকল চেষ্টা।
.
পৃথিবী টা যেন থেমে গেছে। সেই ছোট্ট পরীটা কতো বড় হয়ে গেছে। বাবার স্বপ্ন ভালো পাত্রে ধুমধাম করে বিয়ে দিবে তার রাজকন্যার। ভাইয়ের স্বপ্ন আরো কিছু দিন একটু কষ্ট করি। বোনটাকে পড়াতে হবে। বিয়ে দিবো অনেক টাকার দরকার। সকল স্বপ্ন ভাসিয়ে দিয়ে আজ পরীটা নির্দয় ভাবে আঘাত করেছে তাদের উপর।
.
সত্যিই আজ পৃথিবী টা বিরক্তিকর মনে হয় বাবা মা আর ভাইটার কাছে। কি দোষ ছিল তাদের। কি করেনি তারা সবার সুখের জন্যে। এ তো সেই পরীটাই নাকি অন্যকেও???!!! বিশ্বাস হতে চায় না।
.
সেই ছোট্ট পরী নিমিষেই পর করে দিলো। সেই পরী। এখনো কাদে তার মা। তার বাবা এবং তার সেই প্রবাসী ভাই।
হয়ত একদিন মোহ কেটে যাবে। ফিরে আসবে সে। কিন্তু সেই পরী হয়ে নয়।
[ছবি সংগৃহীত]

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×