এ্যাডি,
কি বোকাটাই না ছিলাম আমরা সে সব দিনে তাইনা? মাঝে মাঝে ভাবলেই হাসি পায় আমার। নেট থেকে নামানো একটা ছবি বা ই-কার্ড সেই ছিলো আমাদের ভালোবাসার উপহার। দেখলেই মানে সেটা তোমার থেকে পেলেই অকারণ এক আনন্দে মন আনচান করে উঠতো আমার। আমি জানি আজ থেকে কয়েক যুগ পরে বা এই এখনকার ১২/১৩ বছরের বাচ্চারাও মনে হয় হাসবে এই কথা শুনে কিন্তু আমরা সেই যুগের বুড়া বাচ্চারাও ভালোবাসা প্রকাশের এই মাধ্যম পেয়েও কি না আনন্দেই আত্মহারা হয়েছিলাম!
সারাটাদিন হন্যে হয়েই খুঁজতে বুঝি তুমি একটা পরীর ছবি কিংবা একটা সুন্দর ইউনিকর্ন বা ডানা লাগানো পঙ্খীরাজ ঘোড়া। আমি আসলেই আমাকে দিতে সে সে সব ছবিগুলি। আর আমি তখন এক পলকেই সেই পরীটাই মানে পরীর ছবিটা পেয়ে এক নিমেষেই হয়ে যেতাম সেই স্বপ্নলোকের পরী। রুপকথার গল্পগাঁথা শুনে আজকের ৩/৪ বছরের বাচ্চারাও বিরক্ত হয়। বলে দূর দত্যি দানো পঙ্খীরাজ টাজ এসব আবার কি? হয় নাকি এমন! যত সব বোগাস! কিন্তু আমাদের সেই ভালোবাসাময় রুপকথার দিনগুলোতে আমি ভেসে যেতাম আমাদের সেই কল্পলোকে। ঐ একটা পরীর ছবি আমাকে দেওয়া মানেই ঐ পরীটাই তখন আমি। উড়ে যেতাম পরী হয়ে তখন তোমার কাছেই। তোমার হৃদয়ের মধ্যেই তখন আমি।
সত্যি বলতে আমাদের সেই ফেইরী টেলস লাভ স্টোরীতে ভালোবাসা প্রকাশের দুটি হৃদয়ের আদান প্রদান শুরুই হয়েছিলো ফেইরী টেলসের ছবিগুলি দিয়েই। কি আশ্চর্য্য কথা জানো? এই যে এত বছর পেরিয়ে বুড়ি হতে চলেছি এখনও সেই পরী বা পঙ্খীরাজের ছবিগুলি কথা মনে করে আমার হৃদয়ে ভেসে আসছে সেই এক ঝলক মিষ্টি হাওয়া। সেই অনুভুতির দেখা আর কখনও পাওয়া হয়নি আমার। কত হীরা জহরৎ মানি মানিক্যই পেয়েছি জীবনে কিন্তু সেই নেট থেকে নামানো পরীর ছবির সমমূল্য বা সেই অবুঝ ভালোলাগা বা ভালোবাসার স্বাদ ক'জনে পেয়েছে? বড় জানতে ইচ্ছা করে।
হ্যাঁ ভালোবাসা হয়ত অবুঝই। সিনেমার নাম শুনেছিও এমন। অবুঝ প্রেম, অবুঝ ভালোবাসা বা অবুঝ হৃদয়। ভালোবাসা কোনো নিয়ম নীতি জাঁত পাত মানে না সে আমি জানি। ভালোবাসা তো অবুঝই কিন্ত অবুঝ বলতে সেই ইনোসেন্ট লাভ বা কৈশোর পেরুনো প্রথম ভালোবাসা কোথায় আজ পাবো তারে? কোথাও আর কখনও পাওয়া হয়না। পাওয়াও যায়ও না হয়ত আর তাই সেই ভালোবাসাতেই ভেসে ভেসে কেঁটে গেলো এতটা সময় এতগুলো বছর। সেই ভালোবাসার রেশ ছড়িয়ে গেলো সব খানে সব খানে সব খানে।
মাঝে মাঝে ভাবি তুমি কি দিয়েছিলে আমাকে সেদিন? যার মায়াজাল থেকে আর কখনও বেরই হওয়া হলোনা আমার। সত্যিই ভাবি। চিত্রা সিং এর গান যেন- কি দিলে আমায় তুমি ! এই একটা লাইনই বেঁজেছে আজীবন আমার বুকের মাঝে! কি দিলে তুমি আমাকে? সেই স্বর্গসূধা পানে আজীবন নীলকন্ঠ হয়ে বেঁচে রইলাম আমি জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি।
যাইহোক বলছিলাম আমাদের সেই কিশোর কিশোর ভালোবাসার একটা পরীর ছবি বা পঙ্খীরাজের গল্প। এর সাথে যোগ হয়েছিলো ই কার্ড। আমরা কারণে অকারনে সুন্দর সুন্দর সব ই কার্ড খুঁজে বের করতাম দু,জন দু,জনার জন্য। এই ভালোবাসাময় ইকার্ডের আদান প্রদানও শুরু করেছিলে তুমিই। আমি তো কিছুই বুঝতাম না। জানতামও না। আমার গুরু ছিলে তুমিই। আর তুমিই ছিলে এক আশ্চর্য্য যাদুকর আমার জীবনে। কি করে বুঝে যেতে আমার মনের গভীরের সেই ভালোলাগার অনিভুতিটাই একদম ঠিক ঠাক। ভ্যালেনটাইন ডে, আমাদের জন্মদিন, ঈদ এবং কারণে অকারনে মান অভিমানে সুন্দর সব কার্ড পাঠাতাম আমরা খুঁজে খুঁজে। আর সেই সব কার্ডের সুন্দর সব কথা পড়ে সব মান অভিমান রাগ দুঃখ ভেসে যেত আমার চোখের জলে। আমি ফের চলে আসতাম তোমার বুকের মধ্যেখানে এক নিমিষেই। তুমি এক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। দূরে থেকে কোন অশ্রুত বাঁশির সূরে টেনে আনতে আমাকে। আর তারপর উন্মত্ত নাগিনীর মতই ছুটে আসতাম আমি। সব কিছু ভুলে তুমি টেনে নিতে আবারও আমাকে তোমার বুকের কাছাকাছি।
এমনিতে তোমার শুধু খবরদারিই ছিলো। এত দেরী করলে কেনো? কি করছিলে? এতক্ষন বসে আছি? কেনো কেনো কেনো?? এত রাগ আর খবরদারী বাপরে! আমার উপরে আমার জীবনে আমার মা ছাড়া আর কেউই কখনও এত খবরদারী করেনি জানো? তবুও আমি তুমি যেন একটুও রাগ না করে ফেলো এই ব্যপারে ভীষন উৎকন্ঠিত হয়ে উঠতাম। তুমি যেন সব সময় হ্যাপী থাকো আমি তাই তোমাকে ভুলাতে এটা সেটা বলতে থাকতাম। এই কারনে আসতে পারিনি ঐ কারনে দেরী হলো। কত্ত কত্ত অজুহাত। আমি আজ জানি আমি যখন থাকতাম না তখন তুমি যাই করো আর তাই করো ভেতরে ভেতরে অস্থির থাকতে আমার জন্যই। আসলে মেইন অপেক্ষাটা তো আমার জন্যই ছিলো। আর আমি যতক্ষন থাকতাম না তখন সেই সময় কাটানোটা ছিলো তোমার টাইম পাস। আমি চলে আসলেই রাগ টাগ করে তুমি হয়ে যেতে একটা শান্ত নদী। একদম লক্ষী একটা বাচ্চা। আমার অনেক আদরের । আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে ইচ্ছা করতো আমার তোমার মুখটা।
তুমি তো আর সামনে নেই তাই মেসেঞ্জারেই শুধু ...। আমাদের ভালোবাসার দুইটা সেকরেট শব্দের একটা এই....আরেকটা এই নিলমনি নামে আমাকে তোমার ডাকা। সেকরেটটা সেকরেটই রেখেদিলাম ডট ডট দিয়ে। এইজীবনে কখনও কেউই জানবেনা তুমি আর আমি ছাড়া আর এই জীবনে আর কখনও কাউকে এই নামে ডাকতেও দেবোনা, দেইনিও। দিতেও পারিনি। আর সেই দুটি অক্ষরে লেখা ... সেই আকাঙ্খা বা তীব্র হাহাকার তখন এতটা ছিলো না, এখন আজ লিখতে গিয়ে যতটা হচ্ছে। তখন সেই লেখার মাঝেই আমি দেখতে পেতাম তোমার চোখ বন্ধ মুখটা হয়ত চেয়ারেই বসে আছো আর পাগলী আমি তোমার মাথাটাই চেয়ারের পিছে টেনে টুনে তোমার গম্ভীর রাগ করে থাকা দুই গালেই একশোটা ... দিয়ে তোমাকে হাসিয়ে দিচ্ছি।
চোখ বুজেও আমি আজও তোমার মুখটা দেখতে পাই। হ্যাঁ এই কথা সত্যি যে সত্যিকারের তোমার মুখটা তখনও খুব স্পষ্ট অবয়ব ছিলোনা আমার কাছে তবে আমার মনে গড়ে নিয়েছিলাম আমি তোমার একটা আদল। সেই আদলটা আজ অনেকটাই স্পষ্ট আমার কাছে কারণ এরপর দিন বদলের সাথে সাথে তোমার বদলে যাওয়া, চশমা পরা চেহারাটাও দেখেছি জেনেছি আমি কিন্তু সেই বাবু বাবু আমার কলিজা দিয়ে গড়ে তোলা আদলটা দিয়ে এখনও এক স্বপ্নের চোখেই রাজকুমার হয়ে আছো তুমি আামার জীবনে। থুত্তুড়ে একজন মানুষ হয়ে গেলেও এই বাবুটাই থেকে যাবে আজীবন হয়ত।
তখন আমার প্রায়ই আর্চিজে যাওয়া হত। হঠাৎ একদিন চোখ আটকে গেলো একটা গ্রিটিং কার্ডে। ই কার্ড না সত্যিকারের কার্ড। কার্ডটাতে লেখা আছে। মাই হার্ট ইজ অলওয়েজ রাইটিং লাভ লেটারস টু ইউ। থমকে গেলাম আমি! আমার মনের কথাটা ঠিকঠাক কি করে জানলো এই কার্ডের লোকটা? সেই কার্ডটা কিনে তাতে অনেক অনেক ... দিয়ে পাঠালাম আমি তোমাকে.......
আচ্ছা তুমিও... দিয়েছিলে আমার সেই শত শত..... এর উপরে? তোমার কপালে স্বপ্ন থেকে উড়ে গিয়ে সেদিনই স্পর্শ হয়ে ছুঁয়েছিলো আমার ঠোঁটদুটি.......
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:১৬