somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইন্দ্রনীলা
পৃথিবীও একদিন হয়ে যাবে শেষ আমাদের প্রেম তবু হবে নাতো ক্ষয়

মাই হার্ট ইজ অলওয়েজ রাইটিং লাভ লেটারস টু ইউ

৩১ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এ্যাডি,
কি বোকাটাই না ছিলাম আমরা সে সব দিনে তাইনা? মাঝে মাঝে ভাবলেই হাসি পায় আমার। নেট থেকে নামানো একটা ছবি বা ই-কার্ড সেই ছিলো আমাদের ভালোবাসার উপহার। দেখলেই মানে সেটা তোমার থেকে পেলেই অকারণ এক আনন্দে মন আনচান করে উঠতো আমার। আমি জানি আজ থেকে কয়েক যুগ পরে বা এই এখনকার ১২/১৩ বছরের বাচ্চারাও মনে হয় হাসবে এই কথা শুনে কিন্তু আমরা সেই যুগের বুড়া বাচ্চারাও ভালোবাসা প্রকাশের এই মাধ্যম পেয়েও কি না আনন্দেই আত্মহারা হয়েছিলাম!

সারাটাদিন হন্যে হয়েই খুঁজতে বুঝি তুমি একটা পরীর ছবি কিংবা একটা সুন্দর ইউনিকর্ন বা ডানা লাগানো পঙ্খীরাজ ঘোড়া। আমি আসলেই আমাকে দিতে সে সে সব ছবিগুলি। আর আমি তখন এক পলকেই সেই পরীটাই মানে পরীর ছবিটা পেয়ে এক নিমেষেই হয়ে যেতাম সেই স্বপ্নলোকের পরী। রুপকথার গল্পগাঁথা শুনে আজকের ৩/৪ বছরের বাচ্চারাও বিরক্ত হয়। বলে দূর দত্যি দানো পঙ্খীরাজ টাজ এসব আবার কি? হয় নাকি এমন! যত সব বোগাস! কিন্তু আমাদের সেই ভালোবাসাময় রুপকথার দিনগুলোতে আমি ভেসে যেতাম আমাদের সেই কল্পলোকে। ঐ একটা পরীর ছবি আমাকে দেওয়া মানেই ঐ পরীটাই তখন আমি। উড়ে যেতাম পরী হয়ে তখন তোমার কাছেই। তোমার হৃদয়ের মধ্যেই তখন আমি।

সত্যি বলতে আমাদের সেই ফেইরী টেলস লাভ স্টোরীতে ভালোবাসা প্রকাশের দুটি হৃদয়ের আদান প্রদান শুরুই হয়েছিলো ফেইরী টেলসের ছবিগুলি দিয়েই। কি আশ্চর্য্য কথা জানো? এই যে এত বছর পেরিয়ে বুড়ি হতে চলেছি এখনও সেই পরী বা পঙ্খীরাজের ছবিগুলি কথা মনে করে আমার হৃদয়ে ভেসে আসছে সেই এক ঝলক মিষ্টি হাওয়া। সেই অনুভুতির দেখা আর কখনও পাওয়া হয়নি আমার। কত হীরা জহরৎ মানি মানিক্যই পেয়েছি জীবনে কিন্তু সেই নেট থেকে নামানো পরীর ছবির সমমূল্য বা সেই অবুঝ ভালোলাগা বা ভালোবাসার স্বাদ ক'জনে পেয়েছে? বড় জানতে ইচ্ছা করে।

হ্যাঁ ভালোবাসা হয়ত অবুঝই। সিনেমার নাম শুনেছিও এমন। অবুঝ প্রেম, অবুঝ ভালোবাসা বা অবুঝ হৃদয়। ভালোবাসা কোনো নিয়ম নীতি জাঁত পাত মানে না সে আমি জানি। ভালোবাসা তো অবুঝই কিন্ত অবুঝ বলতে সেই ইনোসেন্ট লাভ বা কৈশোর পেরুনো প্রথম ভালোবাসা কোথায় আজ পাবো তারে? কোথাও আর কখনও পাওয়া হয়না। পাওয়াও যায়ও না হয়ত আর তাই সেই ভালোবাসাতেই ভেসে ভেসে কেঁটে গেলো এতটা সময় এতগুলো বছর। সেই ভালোবাসার রেশ ছড়িয়ে গেলো সব খানে সব খানে সব খানে।

মাঝে মাঝে ভাবি তুমি কি দিয়েছিলে আমাকে সেদিন? যার মায়াজাল থেকে আর কখনও বেরই হওয়া হলোনা আমার। সত্যিই ভাবি। চিত্রা সিং এর গান যেন- কি দিলে আমায় তুমি ! এই একটা লাইনই বেঁজেছে আজীবন আমার বুকের মাঝে! কি দিলে তুমি আমাকে? সেই স্বর্গসূধা পানে আজীবন নীলকন্ঠ হয়ে বেঁচে রইলাম আমি জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি।

যাইহোক বলছিলাম আমাদের সেই কিশোর কিশোর ভালোবাসার একটা পরীর ছবি বা পঙ্খীরাজের গল্প। এর সাথে যোগ হয়েছিলো ই কার্ড। আমরা কারণে অকারনে সুন্দর সুন্দর সব ই কার্ড খুঁজে বের করতাম দু,জন দু,জনার জন্য। এই ভালোবাসাময় ইকার্ডের আদান প্রদানও শুরু করেছিলে তুমিই। আমি তো কিছুই বুঝতাম না। জানতামও না। আমার গুরু ছিলে তুমিই। আর তুমিই ছিলে এক আশ্চর্য্য যাদুকর আমার জীবনে। কি করে বুঝে যেতে আমার মনের গভীরের সেই ভালোলাগার অনিভুতিটাই একদম ঠিক ঠাক। ভ্যালেনটাইন ডে, আমাদের জন্মদিন, ঈদ এবং কারণে অকারনে মান অভিমানে সুন্দর সব কার্ড পাঠাতাম আমরা খুঁজে খুঁজে। আর সেই সব কার্ডের সুন্দর সব কথা পড়ে সব মান অভিমান রাগ দুঃখ ভেসে যেত আমার চোখের জলে। আমি ফের চলে আসতাম তোমার বুকের মধ্যেখানে এক নিমিষেই। তুমি এক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। দূরে থেকে কোন অশ্রুত বাঁশির সূরে টেনে আনতে আমাকে। আর তারপর উন্মত্ত নাগিনীর মতই ছুটে আসতাম আমি। সব কিছু ভুলে তুমি টেনে নিতে আবারও আমাকে তোমার বুকের কাছাকাছি।

এমনিতে তোমার শুধু খবরদারিই ছিলো। এত দেরী করলে কেনো? কি করছিলে? এতক্ষন বসে আছি? কেনো কেনো কেনো?? এত রাগ আর খবরদারী বাপরে! আমার উপরে আমার জীবনে আমার মা ছাড়া আর কেউই কখনও এত খবরদারী করেনি জানো? তবুও আমি তুমি যেন একটুও রাগ না করে ফেলো এই ব্যপারে ভীষন উৎকন্ঠিত হয়ে উঠতাম। তুমি যেন সব সময় হ্যাপী থাকো আমি তাই তোমাকে ভুলাতে এটা সেটা বলতে থাকতাম। এই কারনে আসতে পারিনি ঐ কারনে দেরী হলো। কত্ত কত্ত অজুহাত। আমি আজ জানি আমি যখন থাকতাম না তখন তুমি যাই করো আর তাই করো ভেতরে ভেতরে অস্থির থাকতে আমার জন্যই। আসলে মেইন অপেক্ষাটা তো আমার জন্যই ছিলো। আর আমি যতক্ষন থাকতাম না তখন সেই সময় কাটানোটা ছিলো তোমার টাইম পাস। আমি চলে আসলেই রাগ টাগ করে তুমি হয়ে যেতে একটা শান্ত নদী। একদম লক্ষী একটা বাচ্চা। আমার অনেক আদরের । আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে ইচ্ছা করতো আমার তোমার মুখটা।

তুমি তো আর সামনে নেই তাই মেসেঞ্জারেই শুধু ...। আমাদের ভালোবাসার দুইটা সেকরেট শব্দের একটা এই....আরেকটা এই নিলমনি নামে আমাকে তোমার ডাকা। সেকরেটটা সেকরেটই রেখেদিলাম ডট ডট দিয়ে। এইজীবনে কখনও কেউই জানবেনা তুমি আর আমি ছাড়া আর এই জীবনে আর কখনও কাউকে এই নামে ডাকতেও দেবোনা, দেইনিও। দিতেও পারিনি। আর সেই দুটি অক্ষরে লেখা ... সেই আকাঙ্খা বা তীব্র হাহাকার তখন এতটা ছিলো না, এখন আজ লিখতে গিয়ে যতটা হচ্ছে। তখন সেই লেখার মাঝেই আমি দেখতে পেতাম তোমার চোখ বন্ধ মুখটা হয়ত চেয়ারেই বসে আছো আর পাগলী আমি তোমার মাথাটাই চেয়ারের পিছে টেনে টুনে তোমার গম্ভীর রাগ করে থাকা দুই গালেই একশোটা ... দিয়ে তোমাকে হাসিয়ে দিচ্ছি।

চোখ বুজেও আমি আজও তোমার মুখটা দেখতে পাই। হ্যাঁ এই কথা সত্যি যে সত্যিকারের তোমার মুখটা তখনও খুব স্পষ্ট অবয়ব ছিলোনা আমার কাছে তবে আমার মনে গড়ে নিয়েছিলাম আমি তোমার একটা আদল। সেই আদলটা আজ অনেকটাই স্পষ্ট আমার কাছে কারণ এরপর দিন বদলের সাথে সাথে তোমার বদলে যাওয়া, চশমা পরা চেহারাটাও দেখেছি জেনেছি আমি কিন্তু সেই বাবু বাবু আমার কলিজা দিয়ে গড়ে তোলা আদলটা দিয়ে এখনও এক স্বপ্নের চোখেই রাজকুমার হয়ে আছো তুমি আামার জীবনে। থুত্তুড়ে একজন মানুষ হয়ে গেলেও এই বাবুটাই থেকে যাবে আজীবন হয়ত।

তখন আমার প্রায়ই আর্চিজে যাওয়া হত। হঠাৎ একদিন চোখ আটকে গেলো একটা গ্রিটিং কার্ডে। ই কার্ড না সত্যিকারের কার্ড। কার্ডটাতে লেখা আছে। মাই হার্ট ইজ অলওয়েজ রাইটিং লাভ লেটারস টু ইউ। থমকে গেলাম আমি! আমার মনের কথাটা ঠিকঠাক কি করে জানলো এই কার্ডের লোকটা? সেই কার্ডটা কিনে তাতে অনেক অনেক ... দিয়ে পাঠালাম আমি তোমাকে.......

আচ্ছা তুমিও... দিয়েছিলে আমার সেই শত শত..... এর উপরে? তোমার কপালে স্বপ্ন থেকে উড়ে গিয়ে সেদিনই স্পর্শ হয়ে ছুঁয়েছিলো আমার ঠোঁটদুটি.......



সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:১৬
৫৮টি মন্তব্য ৫১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×