somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু আমার বুকের মাঝে বিসর্জনের ব্যথা

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পৃথিবীতে একছত্র আনন্দ, ভালো লাগা বা ভালোবাসা আসলেই নেই। এর মাঝে কাঁটা থাকবেই। একইভাবে মানুষের জীবনে দুঃখ বেদনা বা ব্যথাও চিরস্থায়ী নয়। হয়ত প্রতিটা জিনিসেরই একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বা স্থায়িত্বকাল আছে বা থাকে। আমাদের সেই ফেইরী টেলস ভালোবাসা বা লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প, তারপর ভালোবাসা অল্প থেকে যখন তা গভীর সমুদ্রে হাবুডুবু। তখনই ঘটলো বিপর্জয়। আমাদের সেই সুনির্মল মুক্ত বাতাসে প্রান ভরে শ্বাস টেনে নেওয়া ভালোবাসায় হঠাৎ এসে পড়লো এক প্রগাঢ় কালো ছায়া। সারা পৃথিবী আঁধারে ঢেকে গেলো।

সেই কালোছায়ার কালো স্মৃতি আমি আসলে কখনও ভাবতেই চাইনি। ভাববোও না ভেবেছিলাম। সত্যি বলতে ভাবিওনি অনেকদিন। আর এটাও সত্যি আজ এতগুলো দিন পরে সেই ঘটনা লিখতে বসে এখনও দ্বিধা ও দ্বন্দে ভুগছি লিখবো কি লিখবো না ভেবে। আমি বস্তুত অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ। সে আমি ভালো করেই জানি। সে কথা কেউ মানুক বা মানুক আমি তো জানি। আমাকে আমার থেকে কে আর চিনবে বলো? কিন্তু তুমি দাবী করো আমাকে নাকি তুমি আমার থেকেও বেশি জানো, বেশি বোঝোও। আমি নাকি তোমার আয়না। আয়নায় তো মানুষ নিজেকেই দেখে। আর তুমি দেখো আমার হাড্ডি মাংস, মজ্জা পর্যন্ত। এতই জানো, এতই বোঝো আমাকে তুমি।

আর তাই তো আমি আজও বুঝে পাইনা। তাহলে সেদিন কেনো বুঝলে না? নাকি ইচ্ছা করেই ওমন ভুলের অভিনয় করেছিলে? তোমার কোনো চিরায়ত দুষ্টুমী স্বভাবের কারণেই? নাকি তখনও জানার, চেনার বা বোঝারও আরও বাকী ছিলো। কতখানি ভালোবাসি তোমাকে? কোনো ঊত্তর পাইনা খুঁজে আমি আজও। এতই যদি চেনো আমাকে, এতই যদি জানো তাহলে সেদিন কেনো ভাবলে না তোমার এই ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে আমার হৃদয়ে সেদিন ঠিক কি ঝড় উঠেছিলো। গল্প কবিতায় শুনেছি হৃদয় ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাওয়া। ঠিক সেদিন তাই হয়েছিলো আমার জানো? আমি জানি তুমিও সে কথা খুব ভালোই জানো। তুমি খুব ভালো করেই জানো তোমার সেই ভুলের কারণেই আমার ভেতরে যত না তছনছ হয়ে গিয়েছিলো তার চাইতেও বেশি জেদ চেপেছিলো।

সেই জেদ আমি বার বার কন্ট্রোল করে ফেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। তুমি আমাকে অনেক অনেকবার জিগাসা করেছো তুমি নাকি ভেবেই পাও না আমার ঐ ছোট্ট বয়সেও আমি কি করে এতকিছু ভাবলাম! কি করে এমন কঠিন ডিসিশন নিলাম। এই প্রশ্ন তোমার মনে মাথা কুটে মরে । কিন্তু আমি জানি ঠিক কি পরিমান কষ্টে সেদিন আমার হৃদয় ছেয়েছিলো। ঠিক কি পরিমান গ্লানিতে আমি মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলাম সেদিন। কি পরিমান আঘাতে পুস্প-কোমল হৃদয় কঠিন প্রস্তরে পরিনত হয় সেদিনই জেনেছিলাম আমি। আজ আরও জানি পৃথিবীতে যে কোনো কিছুই অসম্ভব না আসলে তা সেদিনই আমি বুঝেছিলাম।

আসলে আমাদের সেই দুটি হৃদয়ের কঠিন বন্ধনের কোনো ক্ষুদ্র ফাঁক ফোকরেও যে এতটুকু বাতাসও প্রবেশের সুযোগ নেই এই আস্থাতে বড় বেশি নিশ্চিৎ হয়ে পড়েছিলাম আমি। আমি ভাবতাম আমাকে ছাড়া তোমার পৃথিবী অচল। চারিদিকে কোথাও কেউ নেই। চারিদিক তোমার আঁধারে ঢাকা। সেখানে আমিই একমাত্র আলো নিয়ে রোজ রোজ চলে আসি তোমার হৃদয়ের মনিকুঠুরে। দ্বীপ জ্বেলে দিয়ে যাই তোমার হৃদয়ের অলিন্দে। আমার সেই আলোকিত ভালোবাসার সঞ্জীবনী সুধায় তুমি জেগে ওঠো প্রতিদিন। বেঁচে থাকো এই ধরিত্রীতে অনেক মায়ায়, অনেক ভালোবাসায়।

আমি চাইনি তবুও তুমি কেনো যে তোমার আইডিগুলোর পাসওয়ার্ড দিয়েছিলে আমাকে আমি জানিনা। এমনকি তার কারণ আজও খুঁজেই পাই না আমি। তুমি খুবই চুপচাপ বদরাগী থাকলেও কিছু কিছু পাগলামীতে আমাকে উতল করে দিতে। তোমার এই সব পাগলামী তাই আমার কাছে কিছু নতুন ছিলো না। পাসওয়ার্ড জানার পরেও আমি কখনও তোমার কোনো মেইল আইডিতে ঢুকিনি । কারণ তোমার
কি অভিসন্ধি ছিলো বা কি দুষ্টামী বা কি তার কারণ ছিলো আমি জানতাম না মোটেও, এমনকি আজও জানিনা। কিন্তু একদিন হঠাৎ তোমাকে একটা মেইল লিখে পাঠিয়ে দেবার পর সেই মেইল পছন্দ না হওয়ায় তুমি আসার আগেই মুছে ফেলতে চেয়েছিলাম। আর সে কারণেই তোমার ইমেইলে ঢুকলাম আমি।

আর তারপর! আমার চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়তে লাগলো। আমি হতভম্ভের মত বসে রইলাম। এই কথা লিখতে গিয়ে আজও আমার কোনো রাগ বা ক্রোধ বা ক্ষোভ জাগছে না মনে। সেদিনও কোনো রাগ ক্ষোভ বা ক্রোধ জাগেনি। শুধু জেগেছিলো এক রাশ হাহাকার। হৃদয়ভাঙ্গা কষ্ট। জানিনা মানুষের হার্ট এটাক হলে কতটা ব্যথা হয় কিন্তু আমার সেদিনের হৃদয়ের সেই ব্যথার চাইতেও কি বেশি সেটা? জানা নেই আমার।

তখন সন্ধ্যা নামছিলো। মায়ের আসার সময় হয়ে আসছিলো। অন্যদিন এই সময়ের দিকে খুব নজর থাকতো আমার। মায়ের আসার সময় হলেই পালাতাম। কিন্তু সেই সন্ধ্যায় এক বুক অবসন্নতা ও বিষাদ নিয়ে ঠায় বসে ছিলাম আমি। কোনো দিকেই খেয়াল ছিলো না। সকল ভয় ভীতি, ব্যথা বেদনার উর্ধেই চলে গিয়েছিলাম হয়ত। মনে হচ্ছিলো সেদিন পৃথিবীর শেষ দিন। ধ্বংসস্তুপে বসে আছি আমি একা। চারিদিকে কেউ নেই। নীরব নিস্তব্ধ চারিধার। আমার আর কোথাও যাবার নেই। কিচ্ছু বলার নেই। কিন্তু কোথাও কোনো গানওয়ালা বাঁজায়নি সেদিন বাঁশি আমার ঐ দুঃখ সায়াহ্নে। আমি পাথর চোখের দৃষ্টি নিয়ে বসে রইলাম নির্বাক। চারিদিকে কি হচ্ছে বা আমি কে বা কি কারণে এমন স্থবির বসে আছি কিছুক্ষণের জন্য সম্পূর্নই ভুলে গিয়েছিলাম আমি।

আমার সামনে খোলা পড়ে ছিলো অন্য একটি মেয়ের তোমাকে লেখা শত শত চিঠি। সেই মেয়েটিও বুঝি তোমাকে অনেক ভালোবাসে? তুমি বুঝি তারও এক স্বপ্নের রাজপুত্র। সেই মেয়েটিও স্বপ্নে ভাসে। তুমি তাকে স্বপ্নে ভাসাও। সেও জানে একদিন তুমি পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়ে উড়িয়ে নিয়ে আসবে তাকে এক দৈত্যপুরী থেকে। তার কাছে তুমিও এক ফেইরী টেল প্রিন্স।

আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না এও কি করে সম্ভব! পৃথিবীতে এত বড় মিথ্যাও কি হয় কখনও? নিজের উপর নিজেই তখন আস্থাহীন আমি।
এই পৃথিবীর সব কিছুই তখন আমার কাছে মূল্যহীন। জানো আমি অনেক ভেবে দেখেছি আমার এই এত বছরের জীবনে এর চাইতে বড় কষ্টের ক্ষন আর কখনও আসেনি। আমি যখন মনে করি আমার জীবনের সবচাইতে কষ্ট বা দুঃখের দিন কোনটা? তখনই আমি দেখতে পাই একটা মেয়ে, একটা সন্ধ্যা আর সামনে খোলা পড়ে থাকা সেই ঢাউস কম্পিউটারটা।

হঠাৎ তুমি আসলে। অন্যদিন আমি চিৎকার করে উঠি তোমাকে দেখলেই এক রাশ আনন্দ নিয়ে। কিন্তু সেদিন তুমি আমাকে চুপ দেখে নিজেই অবাক হলে। বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলে কি হয়েছে? জানো নিজের কাছেই নিজে এত ছোট হয়ে গিয়েছিলাম আমি যে আমি কোনো কথাই বলতে পারছিলাম না। তুমি বারবার জানতে চাইছিলে কি হয়েছে? আমি নিরুত্তর ছিলাম। তুমি অধৈর্য্য হয়ে উঠলে। শেষ বারের মত জানতে চাইলে কি হয়েছে বলছি না কেনো?

আমি বললাম,
- এই মেয়েটা কে?
তুমি বললে,
-ওহ

আমি তোমাকে আর কোনো কথা বলারই সুযোগ দিলাম না। শুধু বললাম,
- আমাকে আর কোনোদিন তুমি দেখতে পাবে না কোথাও কোনোখানে। এই পৃথিবীর কোথাও আর কখনও খুঁজে পাবেনা আমাকে তুমি আর। আমি সাইন আউট করলাম। তোমাকে কোনো কথা বলারই সুযোগ দিলাম না আমি।

আমার কলিজা ভেঙ্গে যাচ্ছিলো।
তখন সন্ধ্যা পুরোপুরি নেমে গেছে। সন্ধা নামার পরের সেই কালো রাত্রীর গাঢ় আঁধার ক্ষনে তোমাকে আমি বিসর্জন দিলাম।

কৃষ্ণকলির গানের লাইনটির মত বুকের মাঝে বাঁজছিলো নিজের অজান্তেই-

বন্ধু আমার বুকের মাঝে বিসর্জনের ব্যাথা

শুধু বলা হলো না -
বন্ধু তুমি অমন করে যেয়ো না আর একা ..

আমিই নিজেই চলে এলাম। একা হয়ে.....

একাকী আমি.....

হারিয়ে গেলাম......

আমি হারিয়ে গেলাম তোমার থেকে চিরতরে....
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৬
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×