somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

*** বেদনাদায়ক দুটি মৃত্যু ***

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মৃত্যু একটি নির্মম সত্য । যে মৃত্যুবরন করে সে তো চলে যায় , আপনজন যারা থাকে তারাই এর কষ্ট , যন্ত্রনা অনুভব করে। এসময় অনেকেই সমব্যাথী হলেও এটা আসলে কতটা কষ্টকর, কতটা যন্ত্রনাদায়ক যার যায় সেই বুঝে । আমার আম্মু মারা যাবার পর কারো মৃত্যু খবর শোনার পর আমার ভিতর কোন অনুভূতি কাজ করে না কিন্ত এ মাসে দুটি মৃত্যুর খবর আমাকে ভীষন ভাবে নাড়া দিয়েছে ।

১ : রমজানের প্রায় মাস খানেক আগে আমাদের এখানে বাংলা মসজিদে একজন ইমাম নিয়োগ দেয়া হয়। উনি বাংলাদেশী হলেও উনি ইটালীতে ছিলেন । ওখানেও উনি একটা মসজিদে ইমামের জব করতেন। মসজিদের ইমাম হলেও উনি জেনারেল লাইনেও উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন।

রামাদানের এক মাস আগে উনি প্রেগন্যান্ট স্ত্রী, ও তিন বছরের ছেলেসহ এখানে চলে আসেন।অল্প কিছুদিনেই সবাই উনাকে পছন্দ করে আগের ইমামের তুলনায়।
রামাদানের এক সপ্তাহ পর উনার পেটে ব্যাথা হলে উনি হাসপাতালে যান। প্রাথমিক টেষ্টের পর বলা হয় উনার গলব্লাডারে স্টোন আছে। আরো কিছু টেষ্টের পর বলা হয় উনার ক্যানসার। ক্যানসার গলব্লাডারে শুরু হয়ে এখন উনার সারা শরীরে ছড়িয়ে পরেছে । উনি বড়জোর তিন, চার মাস বাঁচবেন।
এরপর উনাকে প্রায় এখানে একমাস হাসপাতালে রাখা হয় কিছু আইনগত কারনে এখানকার হাসপাতাল উনাকে ইটালীতে হাসপাতালে ফেরত পাঠান।

দিন দিন উনার অবস্থা খারাপ হতে থাকে কারন উনার ক্যানসার যে অবস্থানে ছিল তার কোন চিকিৎসা ছিল না। এদিকে উনার স্ত্রীরও ডেলিভারীর সময় ঘনিয়ে এসেছে।উনার স্ত্রীকে একই হাসপাতালে উনার পাশের রুম দেয়া হয়।

সবই আল্লাহর ইচ্ছা, গত সাত তারিখে উনার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তার সাত মিনিট পরই উনি মারা যান।
আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি আবার আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব খুবই সত্যকথা, কিন্ত যতবারই ভাবি পাশাপাশি রুমে, একরুমে স্বামী মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছে আরেক রুমে স্ত্রী প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে এই সংকটময় মূহুর্তে কেউ কারো পাশে থাকতে পারলো না, কেউ কাউকে দেখতে পেল না
।মেয়ের জন্ম হল বাবার মৃত্যু হল। বাবা দেখে যেতে পারলেন না প্রিয় সন্তানের মুখ আর মেয়েটা কখনো দেখতে পাবে না তার জন্মদাতা বাবাকে। যতবারই একথা গুলো ভাবি আমার চোখে পানি চলে আসে।

২য় : এটা আপনারা সবাই আমার চেয়ে ভালো জানেন কারন আমি এই ব্লগ থেকেই জেনেছি, আর কিছুটা আমাদের বাসার খাবার টেবিলের আলোচনা থেকে । সেটা হল আবরার ফাহাদের মৃত্যুর ঘটনা ।
বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে আমার তেমন জানা নেই খুব একটা জানার আগ্রহও নেই ।কিন্ত যতবারই ভাবি একটা ছেলেকে কয়েকটা ছেলে মিলে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেই ফেল্ল। মানুষ কতটা নির্মম নিষ্ঠুর হলে এটা করতে পারে। একটা ছোট পোকা পিপড়া মারতে গেলে ও ভয় হয় এই পিঁপড়াটাকে আমার আংগুলের ডগা দিয়ে কয়েক সেকেন্ডেই মেরে ফেলতে পারব কিন্ত তার জীবনটা কি আমি শত চেষ্টাতেও ফিরিয়ে দিতে পারব! আর একটা ইয়ং ছেলেকে ওরা পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেল্ল। একটু পানি খেতে চেয়েছিল তাও তাকে দেয়া হয়নি। আহারে- না জানি কত আকুতিই না আবরার ওদের কাছে করেছিল আমাকে মেরো না, আমাকে ছেড়ে দাও, কত কান্নাই না করেছিল, কত কষ্ট না জানি সে পেয়েছে। সে আমার আপন কেউ না,তাকে চিনিও না জানিও না তবু যতবার এই নির্মম হত্যার কথা মনে হয় চোখের পাতা ভিজে যায়।

মানুষ মরনশীল, কোন না কোন ভাবে মানুষ মরবেই কিন্ত এরকম মরন যেন কারো না হয়।যদি আবরারের এই মৃত্যু তাকে অমর করেছ শুধু দেশ নয় বিদেশেও মানুষ তার জন্য চোখের পানি ফেলছে তার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া কামনা করছে।
আর তার হত্যাকারীরা এই দুনিয়াতে তাদের বিচার হোক বা না হোক, বিচারে তারা শাস্তি পাক বা না পাক, তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করেছে, এই জীবন নিয়ে বেঁচে থাকলে তাদের জন্য আছে ল্যান্ছনা, গন্জনা আর পরকালে তো আছেই ।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ভোর ৫:৪৫
১৮টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×