somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ওমেরা
আমার আল্লাহ আমাকে একজন নারী হিসাবে সৃষ্টি করেছেন আর আল্লাহর সিন্ধান্তে আমি সন্তুষ্ঠ আছি।

——- একটি ক্রিয়েটিভ উপস্থাপনা : আইস হোটেল——-

০৩ রা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

.

সুইডেনের আর্টিক সার্কেল থেকে 200 কিলোমিটার উত্তরে, প্রাচীন পাহাড় এবং গভীর অরণ্যেঘেরা টর্নে নদীর পাশে একটা গ্রাম ইয়ুক্কাসইয়ারভি ( Jukkasjärvi) । কযেখানে গ্রীষ্মের সময় মধ্যরাতে সূর্য আলোকিত হয় এবং শীতের দুই সপ্তাহের মধ্যে দিগন্তের উপরে উঠে যায়। যেখানে অরোরা বোরিয়ালিস রাতের আকাশকে আলোকিত করে।

বিশ্বের প্রথম ও সবচেয়ে বড় আইস হোটেল এখানেই অবস্থিত আবাসিক এই হোটেলটি বরফ আর তুষারের শক্ত গাঁথুনী দিয়ে তৈরি৷ অতিথিদের আকর্ষন করার জন্য হোটেলটি প্রতি বছর একবার নতুন করে নতুন ডিজাইন দেওয়া হয়। শীর্ষস্থানীয়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান শিল্পীরা এর ডিজাইন করেন বাইরে দেখতে মেরু অঞ্চলের বাসিন্দাদের বাড়ি ইগলুর মতো৷ এই হোটেলটি তৈরী করতে প্রতি বছর 30,000 টন তুষার এবং 4,000 টন বরফের ব্যাবহার করা হয়। যা সুইডেনের ইয়ুক্কাসইয়ারভিতে টর্নে নদী থেকে নেয়া হয়।
বাইরের তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও হোটেল রুমের তাপমাত্রা রাখা হয় মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি৷

হোটেলের ৪৪ টি রুমের প্রতিটি প্রতিবছর আলাদাভাবে ডিজাইন করা হয়৷ বিছানার জাজিম আর বলগা হরিণের চামড়া ছাড়া অন্য সমস্ত অভ্যন্তর - দেয়াল, বার, আসবাব, শিল্প এবং পানীয় চশমা - প্রাকৃতিক বরফ দিয়ে তৈরি। হোটেলটির ভিতরে বার, আর্ট গ্যালারি এসব তো রয়েছেই আরও আছে ১০টি অভিজাত বিলাসবহুল স্যুইট৷ এবং ভোজনবিলাসীদের জন্য একটি রেস্টুরেন্ট। এছাড়া আরো আছে তিনটি সেমিনার কক্ষ , বিবাহের জন্য গীর্জা, প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি স্যুইট, তিনটি স্টীম বাথ ও ২৮টি উষ্ণ রুম।

এটি ১৯৯০ সাল থেকে জনসাধারণের জন্য উপেন করা হয়েছিলো।তখন এটা চালু থাকতো ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। ২০১৬ সাল থেকে, বরফের তৈরি এই হোটেলটি স্থায়ীভাবেই সৌর-চালিত কুলিং প্রযুক্তি ব্যাবহার করে বরফ তৈরী করা হয়, তাই অতিথিদের সারা বছর ধরে ঠান্ডা তাপমাত্রা অনুভব করার সুযোগ দেয়। তবে কোভিড -১৯ এর কারণে, হোটেলটি এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। 1 লা জুলাই ৩০ বছর পূর্ত উপলক্ষে “ "এক্সপেরিয়েন্স রুম" উদ্বোধনের মাধ্যমে উপেন হবে ।

এক্সপেরিয়েন্স রুম" এ অতিথিরা মার্জোলিন ভনক (এনএল) এবং মাউরিজিও পেরোন (আইটি) শিল্পীদের দ্বারা নির্মিত, অভিজ্ঞতার বর্ণনা করবেন যারা বহু বছর ধরে আইসহোটেলের সাথে সহযোগিতা করেছেন। অতিথীদের একটি টাইমলাইনের সাহায্যে আইসহোটেলের ৩০ বছরের ইতিহাসের গাইডেন্স দেওয়া হবে, বিগত বছরগুলি থেকে রক্ষিত শিল্পের কয়েকটি নির্বাচিত অংশগুলি প্রর্দশিতহবে এবং একটি ব্যক্তিগত চলচ্চিত্রের প্রতিকৃতির মাধ্যমে আইসহোটেলের প্রতিষ্ঠাতা ইংভে বার্গকভিস্টকে সম্পর্কে জানানো হবে।


টর্নে নদীতে জমে থাকা বরফ কেটে নান্দনিক ডিজাইনে বানানো এই হোটেলটি কিভাবে তৈরী হল তা জেনে নেয়া যাক।

ইঙ্গভে বেরীকুভিষ্ট (Yngve Bergqvist) একজন ইন্জিনিয়র কিরোনার খনন সংস্থা এলকেএবি কোম্পানীতে জবের অফার পেয়ে ১৯৭০ সালে প্রথম ইয়ুক্কাসইয়ারভিতে আসেন হুলসিংল্যান্ড থেকে। তিনি এলকেএবির পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে কাজ করেছিলেন।
ইঙ্গভে এবং তার কয়েকজন সহকর্মী টর্নে নদীতে ক্যানোইং ও মাছ ধরার সম্ভাবনা দেখে একটি ক্যানোইং কেন্দ্র শুরু করেছিলেন। এখানেই ( ইয়ুক্কাসইয়ারভি) সুইডেনের এবং ইউরোপের প্রথম রাফটিং স্থান গুলির মধ্যে একটি। উজ্জ্বল গ্রীষ্মের মাসগুলি ইয়ুক্কাসইয়ারভি পর্যটকদের ভীরে পূর্ণ থাকে - তবে শরত্কাল এবং শীত এলে, এখানে প্রচন্ড শীত ও গারো অন্ধকারের জন্য এলাকা জনশূন্য হয়ে যায় ।
ইঙ্গভে বেরীকুভিষ্ট একটা সাক্ষাতকারে বলেন, আমি ভাবতে শুরু করি
ইয়ুক্কাসইয়ারভিকে কীভাবে বিকাশ করতে পারি সে সম্পর্কে ভাবতে শুরু করি, আমাদের আছে ( ইক্ভকাসইয়ারভি) ভয়াবহ, ঠান্ডা আর অন্ধকারের মাঝে - উত্তরের আলো, ক্যামোস লাইট এবং সমস্ত উজ্জ্বল সাদা তুষার এদের কাজে লাগিয়েই কিছু করতে হবে” ।

তবে তিনি যাদের সাথেই এই ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলেছেন কারো কাছে থেকে,এমনকি পর্যটন ব্যবস্থাপকও তাকে পজেটিভ উৎসাহ দেননি। এতে তিনি দমে যাননি ।
তিনি অভিজ্ঞতার জন্য পৃথীবির সব চেয়ে শীতল এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন ।তিনি আইস হোটেল তৈরীর প্রথম ধারনা পান একদল কুকুরকে মাইনাস ডীগ্রি তাপমাত্রায় ঘুমাতে দেখে , তারপর 1989 সালে, জাপানি বরফ শিল্পীরা ইয়ুক্কাসইয়ারভি পরিদর্শন করে এবং বরফ শিল্পের একটি প্রদর্শনী তৈরি করে। এতে অনুপ্রনিত হয়ে বরফের ভার্ষ্কজ তৈরীকারী শিল্পী জ্যাননট ডেরিডকে ১৯৯০ সালে আর্টিক হল নামে একটি বিশেষভাবে নকশাকৃত ইগলু নির্মাণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।অত:পর 1989 - 1990 এর শীতে, 250 বর্গফুট ফুট ইগলু আর্টিক হল,তৈরী করেন ও বরফ এবং তুষারের শিল্পের একটি আর্ট হল খোলা হয়।
সেই প্রদর্শনীর দিন সমস্ত উষ্ণ কেবিনগুলি রাতের জন্য পুরোপুরি বুক করা ছিল। তবে আগত অতিথিদের কয়েকজন তখনো বাকী রয়ে যায়। ইঙ্গভে তাদের পরামর্শ দেয় তোমরা চাইলে শীতল আর্টিক হলে ঘুমাতে পারো। অতিথিরাও তাকে আশ্চর্য করে হ্যাঁ বলে। তখন তাদের রেইনডিয়ার স্কিনের উষ্ণ স্লিপিং ব্যাগ দেয়া হয় এবং শীতে কীভাবে ঘুমোতে হবে তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। পরদিন
সকালে, তারা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আইসহোটেলের প্রথম অতিথি হিসাবে।
আর সেই থেকেই জন্ম হল “আইস হোটেল"।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেকেই এই উদ্যোগের নকল করছে৷ যেমন নরওয়ের উত্তরে ‘সোরিসনিভা ইগলু ,তৈরি হয়েছিল ফিনল্যান্ডের ‘লাইনিয়ো স্নো ভিলেজ'৷ সেখানে বরফের তৈরি একটি রেস্তোরাঁও রয়েছে৷
শুধু সুমেরু অঞ্চলে নয়, আল্পস ও পিরেনিস পর্বতেও এমন শীতল হোটেল রয়েছে৷ যেমন অ্যান্ডোরা-র ‘গ্রান্ডভালিরা স্নো হোটেল' সেখানে অতিথিদের জন্য বরফের মধ্যে হোয়ার্লপুল-এর ব্যবস্থা করেছে৷
তবে প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও ইয়ুকাসইয়েরভি-র আইস হোটেল এখনোও সবচেয়ে বেশি দর্শক আকর্ষণ করে চলেছে৷ প্রায় ৭০,০০০ অতিথি প্রতি বছর আইসহোটেলটি পরিদর্শন করেন। অতিথিদের হিমায়িত পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য শীতল রুমের পাশাপাশি এখানে উষ্ণ কেবিন রয়েছে – তাই অতিথিরা ঠান্ডা কক্ষে থাকার পর যদি চায় তবে তারা উষ্ণ কক্ষে ঘুমানোর জন্য স্যুইচ অন করতে পারে ।

ইঙ্গভে বেরীকুভিষ্ট সফলতার জন্য একটা টিপস্ দিয়েছেন “ “ Dig where you stand – the most is not done yet.
“ যেখানে দাঁড়িয়েছেন সেখানে খনন করুন - সর্বাধিক এখনও সম্পন্ন হয়নি”

আমার ধারনা এটা আমাদের ভাষায় “ যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই । পাইলেও পাইতে পারো মানিক, রতন “


এবার কয়েকটা ছবি দেখেন :



















ছবি ও তথ্য : Click This Link

ছবির চেয়ে ভালো লাগবে যদি ভিডিও দেখেন ।


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১৩
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×