২০১৮ এর জানুয়ারীতে শেষবার দেশে গিয়েছিলাম। দেশে যাওয়া মানেই আত্বীয় স্বজনের বাড়িতে দাওয়াতে যাওয়া কোন উপলক্ষ বা উপলক্ষ ছাড়া। আমি অবশ্য খাওয়া দাওয়া হৈচৈ খুব পছন্দ করি না, নিরিবিলি ঘরে থাকতেই আমার ভালো লাগে আর সবার ছোট হওয়াতে অনেক সময় বেঁচে যাই না যেয়ে। কিছু আত্বীয় আছে না গেলে মাইন্ড করে আবার আমার আব্বুও চায় আমি সবার সাথে দেখা করি, ছোট বেলায় দেশ থেকে এসেছি অনেক কাছের আত্বীয়কেই চিনি না, তারাও আমাকে চিনে না। তাই ভালো না লাগলেও প্রতিবারই কিছু আত্বীয়ের বাসায় যেতেই হয় ।
সে বার গিয়েছিলাম আমার এক চাচাতো বোনের বাসায় উনার চতুর্থ সন্তানের আকীকার অনুষ্টানে। ছেলের বয়স তখন প্রায় এক বছর হয়ে গিয়েছে। আপুদের যৌথ ফ্যামেলী দুলাভাইরা চার ভাই একই বাসায় আলাদা আলাদা ফ্লাটে থাকলেও তাদের খাওয়া দাওয়া সবই একসাথে হয়। আমার দুলাভাই সবার বড় উনিই বাড়ির হর্তা কর্তা শুনেছি বেশ রাগী। এর আগে উনার সাথে আমার একবারই দেখা হয়েছিল আমার আম্মুর অসুস্থ্যাতার সময় । আপুর বিশেষ অনুরোধে আমি আমার আপুর সাথে আগের দিন বিকালেই গিয়েছি উনাদের বাসায়। দুপুরে দাওয়াত উনাদের গ্রাউন্ড ফ্লোরেই রান্না ও খাবারের ব্যাবস্থা করা হয়েছে,সেগুলো সব ডেকোরেশনের লোকজনই করেছে। শুধু ঘনিষ্ট লোকজনদেরই বলেছে তবু অনেক। উনারা ভাই এর শশুরবাড়ি লোকজন, তিন বোনের শশুর বাড়ির আত্বীয় আর দুলাভাই এর চাচা,মামা, খালা। এরা সবাই ঢাকাতেই থাকে। বারোটার দিকে উনার খালা, খালু,তাদের পরিবারের আরো কয়েকজন এলে, তখনো বাসার কেউ নিচে নামেনি দেখে উনারা উপরে চলে আসে আপুর ফ্লাটে। আপু তখন ভিতরের রুমে কাজে ব্যাস্তছিল, দুলাভাই উনাদের ওয়েলকাম জানিয়া ড্রইংরুমে বসতে দিয়েছে, আপু কাজের মেয়েকে দিয়ে চা নাস্তাও পাঠিয়েছে, আপু একটু পর এসে মেহমানদের কুশল জানতে চাইলে ( আপুর দেরী কেন হল এজন্য)দুলাভাই রেগে গিয়ে উনাদের সামনেই আপুর সাথে উচ্চস্বরে রাগারাগি করে। আপু কোন কথা না বলে , ভিতরের রুমে এসে খাটে বসে কাঁদতে ছিল, আমি সেখানেই ছিলাম। কিছুক্ষন পর দুলাভাই এসে আপুকে বলে, পেয়েছ তো এক অস্র চোখের পানি, এটা দিয়েই পুরুষ মানুষকে ঘায়েল করতে পারো তোমরা মেয়েরা! দুলাভাই একথা গুলো অবশ্য হেসে হেসেই বলেছিল ।
আপু তখন বলেছিল ,” তুমি তো মুখের কথা দিয়ে তোমার ভিতরের রাগ ঝেড়েছ। আমি যদি তোমার কথার প্রতিবাদ করতে পারতাম তাহলে আমারও কষ্ট থাকতো না কান্নাও আসতো না । আমি মুখে প্রতিবাদ করতে পারিনি তাই চোখের পানি দিয়ে আমি আমার রাগ,কষ্ট দুর করলাম”।
কয়েক দিন আগে এক ব্লগার একটা পোষ্টে বলেছিল “ পুরুষের দূর্বল জায়গা হল মেয়েদের কান্না”।
তখন আমার এই ঘটনাটা খুব মনে পরেছে , আসলেই কি তাই !! কিন্ত ভেবে ভেবে এটাই মনে হয়েছে ,মেয়েদের কান্না পুরুষের দূর্বলতা নয় মেয়েদের কান্না হল মেয়েদের অসহায়ত্ব, আর অসহায়ত্বের অবলম্বন হল কান্না।
প্রিয় ব্লগার আপনারা কি মনে করেন?
মেয়েদের কান্না যদি পুরুষের দূর্বলতা হত তাহলে পুরুষেরা মেয়েদের বার বার কাঁদাতে পারতো না। যদিও দিন অনেক পরিবর্তন হয়েছে আর আপুর কথাটা শুনে, তখন মনে মনে বলেছিলাম, অন্যায় না করার চেষ্টা করবো,তবে কেউ আমার সাথে অন্যায় করলে প্রতিবাদ করবো কেঁদে বুক ভাসাবো না। তবে সব সময় প্রতিবাদ করা যায় না সামগ্রিক কল্যানের চিন্তা করে কখনো চোখের জলই হয় অবলম্বন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:১০