somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

*** প্রবাস জীবন *** (দুটো ছোট গল্প)

০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১।
মোবাইলের রিংটোনে ঘুম ভেঙে যায় অনুর। চোখ মেলে দেয়াল ঘড়িতে দেখে রাত দুইটা বাজে। এতরাতে কে ফোন করেছে! অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটা রিসিপ করে ঘুম জড়ানো কন্ঠে “হ্যালো” বলে অনু।
-“কেমন আছো সোনা মা”? ওপাশ থেকে অনুর মা বলে।
- “ মা আমরা ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো মা? আমাদের তো এখন অনেক রাত,এত রাতে ফোন করেছ কেন মা “? অনু বলে।
- “ আহারে - সোনা ভুলে যাই,তুমি প্রতি শনিবার ফোন করো, গতকাল সারাদিন আমি তোমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম তুমি ফোন করনি, সারারাত আমার দু:চিন্তায় ভালো ঘুম হয়নি, তাই ফজরের নামাজ পরেই তোমার আব্বুকে বল্লাম তোমাকে একটা ফোন দিতে’ অনুর মা বলে।
- “ মা আমরা ভালো আছি ,গতকালকে বাসায় কিছু মেহমান দাওয়াত করেছিলাম সারাদিন রান্না,বান্না নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম, সবাইকে বিদায় করে সব কিছু গোছগাছ করতে করতে রাত এগারোটা বেজে গেল, তাই ফোন করা হয়নি” অনু বলে।
-“সোনা মা তোমরা দেশে আসবে কবে? প্রায় তো দুই বছর হয়ে গেল, মনে হয় কত যুগ তোমাকে দেখিনা , তোমার মুখটা দেখার জন্য আমার মনটা খুব পুরছে সোনা” অনুর মা বলে।
- “ মা, আসবো কিন্ত এত ঢাকা - সিলেট না, ইচ্ছা হল আর চলে আসলাম।”অনু বলে।
-“ তাতো জানি সোনা মা, কিন্ত মনতো বুঝে না রে মা”। অনুর মা আরো কিছু বলতে চায় অনু তার আগেই বলে,
- “ এখন রাখি মা, তোমাকে পরে ফোন করবো, আমি আর একটু ঘুমাবো “অনু বলে।
- “ আচ্ছা ঘুমাও সোনা।তুমি যখন ফ্রী থাকো তখন ফোন করো মা,” অনুর মা বলে।
অনু ফোন রেখে ঘুমিয়ে যায়। ঘুমের মাঝেই হঠাৎ অনুর বুকের ভিতর খুব অস্থিরতা করে অনুর ঘুম ভেংগে যায় ও ধর মর বিছানায় উঠে বসে, নিজের বুকে হাতদিয়ে মনে মনে বলে আমার এমন লাগছে কেন! ল্যান্ড ফোন বেজে উঠে অনু কাঁপা হাতে ফোন তুলে হ্যালো বলে ,
- “ হ্যালো” মা অনু আমি তোমার মামা বলছি, কাঁপা কাঁপা গলায় ওপাশ থেকে অনুর মামা বলে।
অনু শুনতে পায় ওপাশে অনেক মানুষের গ্যান্জাম ও কান্নার আওয়াজ,
- “হ্যা মামা, কি হয়েছে বল ”?অনু অস্থির হয়ে বলে।
- “ মা তোমাকে কেমন করে বলি, আবার না বলেও তো পারছি না, এই কিছুক্ষন আগে তোমার মা মারা গিয়েছে” বলে অনুর মামা কান্না করে বলে”
- “ অনু চিৎকার করে বলে কি”———- অনুর হাত থেকে ফোনটা ছিঁটকে পরে নিচে।



মুরাদ রেষ্টোরেন্টে তান্দুরী বানানোর কাজ করে। লাঞ্চ আওয়ারে খুবই ব্যাস্ত থাকে সে । তার প্যান্টের পকেটে সেলফোন ক্রমাগত স্পন্দিত হচ্ছে । কিন্তু রিসিপ করার মত সময় এখন তার নেই। সিগারেটের তেষ্টায় সেই কখন থেকে মনটা আনচান আনচান করছে, তাই বের হতে পারছে না। তান্দুরী চুলার গনগনে আগুনে সে ঘেমে নেয়ে একাকার খুব অস্থিরও লাগছে।

কিছুক্ষন পর একটু শান্ত হলে সে রেষ্টোরেন্ট থেকে বের হয়ে পাশের রাস্তায় দাড়িয়ে সিগারেট ধরায়, তার ফোন আবার আন্দোলিত হয় মুরাদ মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রীনে তাকিয়ে আপু নামের ঝলকানি দেখে তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে ” আপু আসসালামু আলাইকুম,” বলে।
- “ওয়া আলাইকুম আসসালাম , কেমন আছো ভাই”।সেই কতক্ষন ধরে কল করছি তুই ফোন ধরছিস না। মুরাদের বোন হালিমা বলে।
- “ আমি ভালো আছি আপু, আমি কাজে ব্যাস্ত ছিলাম তাই ধরতে পারিনি,”মুরাদ বলে।
- “ সে যাই হোক যেজন্য ফোন করেছি সেটা বলি, তানিয়া তোর একমাত্র ভাগ্নির বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামী মাসেই বিয়ে। অনেক অনেক খরচের ব্যাপার , তোর দুলাভাই বলেছে তোকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে । একমাত্র ভাগ্নির বিয়ে, বিদেশী মামার কাছে পাঁচলাখ টাকা তো দিবেই আমার শশুর বাড়ির লোকজন সবাই বলে, তোর দুলাভাই এর ভাইবোনেরা সবাই টাকা দিবে,”হালিমা বলে।
- “ আপু এই মূহুর্তে এতগুলো টাকা দিব কেমন করে? গত মাসে ছালিমাকে (ছোট বোন) ফ্লাট কেনার জন্য তিনলাখ টাকা দিলাম। আবার এখনই আমি এতগুলো টাকা কি ভাবে দিব”!
- “ পাঁচ লাখ টাকা তো তোর ওখানকার টাকায় খুববেশী না। তুই টাকাটা না দিলে আমি শশুর বাড়ির লোকজনের কাছে খুব ছোট হয়ে যাবো,” ভাই তুই কোন ভাবে ম্যানেজ কর,” হালিমা বলে।
-“ আপু তোমরা তো দিন তারিখ ঠিক করার আগে আমার সাথে কথা বলতে পারতে, আর কয়েক মাস অপেক্ষা করলে আমিও আসতে পারতাম, একমাত্র ভাগ্নির বিয়েতে আমারও তো থাকতে মন চায়” মুরাদ বলে।
- তোকে আসতে বলছি না, তুই আসতে গেলে তো এক দেড় লাখ টাকা প্লেনের টিকিটেই চলে যাবে। তাছাড়া মেহেদী সন্ধ্যা,হলুদ সন্ধ্যা বিয়ের অনুষ্ঠান সবই ফেসবুকে লাইভ দেখানো হবে, তুই ওখান থেকে সবই দেখতে পাবি”। ভাই আমার অনেক কাজ এখন রাখি তুই টাকাটা তাড়াতাড়ি পাঠাস কিন্ত,” হালিমা এক নিঃস্বাসে কথাগুলো বলে লাইন কেটে দেয়।
বোনের কথা শুনে মুরাদ হাসবে বা কাঁদবে ভেবে পায়না শুধু খোলা আকাশের দিকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, পৃথিবীতে টাকাই কি সব!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:৫৬
২৪টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×