১।
মোবাইলের রিংটোনে ঘুম ভেঙে যায় অনুর। চোখ মেলে দেয়াল ঘড়িতে দেখে রাত দুইটা বাজে। এতরাতে কে ফোন করেছে! অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটা রিসিপ করে ঘুম জড়ানো কন্ঠে “হ্যালো” বলে অনু।
-“কেমন আছো সোনা মা”? ওপাশ থেকে অনুর মা বলে।
- “ মা আমরা ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো মা? আমাদের তো এখন অনেক রাত,এত রাতে ফোন করেছ কেন মা “? অনু বলে।
- “ আহারে - সোনা ভুলে যাই,তুমি প্রতি শনিবার ফোন করো, গতকাল সারাদিন আমি তোমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম তুমি ফোন করনি, সারারাত আমার দু:চিন্তায় ভালো ঘুম হয়নি, তাই ফজরের নামাজ পরেই তোমার আব্বুকে বল্লাম তোমাকে একটা ফোন দিতে’ অনুর মা বলে।
- “ মা আমরা ভালো আছি ,গতকালকে বাসায় কিছু মেহমান দাওয়াত করেছিলাম সারাদিন রান্না,বান্না নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম, সবাইকে বিদায় করে সব কিছু গোছগাছ করতে করতে রাত এগারোটা বেজে গেল, তাই ফোন করা হয়নি” অনু বলে।
-“সোনা মা তোমরা দেশে আসবে কবে? প্রায় তো দুই বছর হয়ে গেল, মনে হয় কত যুগ তোমাকে দেখিনা , তোমার মুখটা দেখার জন্য আমার মনটা খুব পুরছে সোনা” অনুর মা বলে।
- “ মা, আসবো কিন্ত এত ঢাকা - সিলেট না, ইচ্ছা হল আর চলে আসলাম।”অনু বলে।
-“ তাতো জানি সোনা মা, কিন্ত মনতো বুঝে না রে মা”। অনুর মা আরো কিছু বলতে চায় অনু তার আগেই বলে,
- “ এখন রাখি মা, তোমাকে পরে ফোন করবো, আমি আর একটু ঘুমাবো “অনু বলে।
- “ আচ্ছা ঘুমাও সোনা।তুমি যখন ফ্রী থাকো তখন ফোন করো মা,” অনুর মা বলে।
অনু ফোন রেখে ঘুমিয়ে যায়। ঘুমের মাঝেই হঠাৎ অনুর বুকের ভিতর খুব অস্থিরতা করে অনুর ঘুম ভেংগে যায় ও ধর মর বিছানায় উঠে বসে, নিজের বুকে হাতদিয়ে মনে মনে বলে আমার এমন লাগছে কেন! ল্যান্ড ফোন বেজে উঠে অনু কাঁপা হাতে ফোন তুলে হ্যালো বলে ,
- “ হ্যালো” মা অনু আমি তোমার মামা বলছি, কাঁপা কাঁপা গলায় ওপাশ থেকে অনুর মামা বলে।
অনু শুনতে পায় ওপাশে অনেক মানুষের গ্যান্জাম ও কান্নার আওয়াজ,
- “হ্যা মামা, কি হয়েছে বল ”?অনু অস্থির হয়ে বলে।
- “ মা তোমাকে কেমন করে বলি, আবার না বলেও তো পারছি না, এই কিছুক্ষন আগে তোমার মা মারা গিয়েছে” বলে অনুর মামা কান্না করে বলে”
- “ অনু চিৎকার করে বলে কি”———- অনুর হাত থেকে ফোনটা ছিঁটকে পরে নিচে।
২
মুরাদ রেষ্টোরেন্টে তান্দুরী বানানোর কাজ করে। লাঞ্চ আওয়ারে খুবই ব্যাস্ত থাকে সে । তার প্যান্টের পকেটে সেলফোন ক্রমাগত স্পন্দিত হচ্ছে । কিন্তু রিসিপ করার মত সময় এখন তার নেই। সিগারেটের তেষ্টায় সেই কখন থেকে মনটা আনচান আনচান করছে, তাই বের হতে পারছে না। তান্দুরী চুলার গনগনে আগুনে সে ঘেমে নেয়ে একাকার খুব অস্থিরও লাগছে।
কিছুক্ষন পর একটু শান্ত হলে সে রেষ্টোরেন্ট থেকে বের হয়ে পাশের রাস্তায় দাড়িয়ে সিগারেট ধরায়, তার ফোন আবার আন্দোলিত হয় মুরাদ মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রীনে তাকিয়ে আপু নামের ঝলকানি দেখে তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে ” আপু আসসালামু আলাইকুম,” বলে।
- “ওয়া আলাইকুম আসসালাম , কেমন আছো ভাই”।সেই কতক্ষন ধরে কল করছি তুই ফোন ধরছিস না। মুরাদের বোন হালিমা বলে।
- “ আমি ভালো আছি আপু, আমি কাজে ব্যাস্ত ছিলাম তাই ধরতে পারিনি,”মুরাদ বলে।
- “ সে যাই হোক যেজন্য ফোন করেছি সেটা বলি, তানিয়া তোর একমাত্র ভাগ্নির বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামী মাসেই বিয়ে। অনেক অনেক খরচের ব্যাপার , তোর দুলাভাই বলেছে তোকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে । একমাত্র ভাগ্নির বিয়ে, বিদেশী মামার কাছে পাঁচলাখ টাকা তো দিবেই আমার শশুর বাড়ির লোকজন সবাই বলে, তোর দুলাভাই এর ভাইবোনেরা সবাই টাকা দিবে,”হালিমা বলে।
- “ আপু এই মূহুর্তে এতগুলো টাকা দিব কেমন করে? গত মাসে ছালিমাকে (ছোট বোন) ফ্লাট কেনার জন্য তিনলাখ টাকা দিলাম। আবার এখনই আমি এতগুলো টাকা কি ভাবে দিব”!
- “ পাঁচ লাখ টাকা তো তোর ওখানকার টাকায় খুববেশী না। তুই টাকাটা না দিলে আমি শশুর বাড়ির লোকজনের কাছে খুব ছোট হয়ে যাবো,” ভাই তুই কোন ভাবে ম্যানেজ কর,” হালিমা বলে।
-“ আপু তোমরা তো দিন তারিখ ঠিক করার আগে আমার সাথে কথা বলতে পারতে, আর কয়েক মাস অপেক্ষা করলে আমিও আসতে পারতাম, একমাত্র ভাগ্নির বিয়েতে আমারও তো থাকতে মন চায়” মুরাদ বলে।
- তোকে আসতে বলছি না, তুই আসতে গেলে তো এক দেড় লাখ টাকা প্লেনের টিকিটেই চলে যাবে। তাছাড়া মেহেদী সন্ধ্যা,হলুদ সন্ধ্যা বিয়ের অনুষ্ঠান সবই ফেসবুকে লাইভ দেখানো হবে, তুই ওখান থেকে সবই দেখতে পাবি”। ভাই আমার অনেক কাজ এখন রাখি তুই টাকাটা তাড়াতাড়ি পাঠাস কিন্ত,” হালিমা এক নিঃস্বাসে কথাগুলো বলে লাইন কেটে দেয়।
বোনের কথা শুনে মুরাদ হাসবে বা কাঁদবে ভেবে পায়না শুধু খোলা আকাশের দিকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, পৃথিবীতে টাকাই কি সব!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:৫৬