somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি আজ দরদী জাপানিজদের কথা বলতে এসেছি আর বলতে এসেছি আমার দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের কথা

১৮ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নৈসর্গিক মানবতার দেশ জাপান। এই দেশের ছোট্ট একটা শহরে আমার বাস। দরদী জাপানীরা সবসময় নীরবে নিভৃতে মানবতার গান গায়। বিশ্ববিধাতার নিষ্ঠুর আক্রোশের শিকার হয়ে এই নীরব মানবতাবদী জাপানীজরা আজ হতবিহবল। ভয়াভহ ভুমিক্ম্পের কম্পন আমার শহরকেও আঘাত করেছে তার সর্বশক্তি দিয়ে। সেই ভয়ভহ কম্পনের সময়টিও আমাকে একবিন্দু বিচলিত করেনি, জাপানের আর আট দশটা ভূমিকম্পের মতই অতিভৌগলিক এই ঝাকাঝাকি জাপানিজরা অনেকটাই জয় করে ফেলেছে। ভূকম্পনে আমার কম্পিউটার মনিটর টেবিল থেকে উল্টিয়ে পড়ল, আলমারির জিনিসপত্র উলটপালট হলো তবু আমি ঘর থেকে বের হইনি। এই কম্পনের মাঝেই আমি আমার ঘরের টিভি টা অন করলাম। এই টিভিটা ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে আনা। সব চ্যনেলই জাপানিজ ভাষার। টিভি খুলেই অদ্ভুদ একটা বিষয় খেয়াল করলাম। একজন ভুমিকম্পের খবর বলে যাচ্ছে আর তার আশেপাশের টেবিল থেকে কম্পিউটার বই খাতা উল্টিয়ে পড়ছে। এরই মাঝে আরেকজন এসে খবরপাঠকের মাথায় একটি হেলমেট পড়িয়ে দিল। পাঠক খবর পড়েই যাচ্ছে। তখনো আমার বাসার কম্পন থামেনি। রিখটার স্কেলে ৮.৯ মাত্রার বিরাট ভূমিকম্প। ভূমিকম্পকে প্রতিহত করার প্রযুক্তি ওদের দালানকোঠা সহ সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থায়। তাই আমি তখনো জানতাম এত বড় ভুমিকম্পেও জাপানকে টলানো যাবে না। তখন টিভিতে সুনামি সতর্কতা প্রচার হচ্ছিল। ভুমিকম্প ওদের টলাতে পারেনি সত্য তবে ভূমিকম্প থেকে যে সুনামী সৃষ্টি হয় তার রাহুগ্রাস থেকে বাঁচার পদ্ধতি ওরা এখনও উদ্ভাবন করতে পারেনি। সুনামীর জলোচ্ছ্বাসের থাবা যে কী হিংস্র তা না দেখলে বিশ্বাস করার উপায় নেই। প্রকৃতির আদিম লীলায় নির্লিপ্ত হিংস্রতায় ঝাপিয়ে পড়েছে উপকূলের সহজ সরল নিরীহ মানুষগুলোর উপর। হ্য এখানেও প্রকৃতি দুর্বলকেই গ্রাস করল সহজে। দরদী জাপানীজদের উপর প্রকৃতির এই নির্মম আক্রোশ বড়ই বেমানান। অথচ বাংলাদেশের সিডর কিংবা অন্যান্য ঘুর্নিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশীদের দুরাবস্থার চিত্র টেলিভিশনে দেখে এই জাপানীদের হৃদয় বিগলিত হয়। কোন এক জায়গায় পড়েছিলাম যে ১৯৮৩ সালে জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্তাব্যক্তি দয়ালু জাপানীদের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন যে ওরা গাড়ী থামিয়ে বাংলাদেশের দূতাবাসের মেইল বক্সে ইয়েনের বিল ঢুকিয়ে চলে যায়। ভাবে কোন বিপন্নের যদি কাজে লাগে। ওরা স্বপ্নেও ভাবে না ওই ক্যাশ বাংলাদেশে কখনই পৌছে না। সেই দরদী জাপানীরা আজ বিপন্ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এত বড় বিপর্যয় ঘটে নি। এই বিপদের মূহুর্তে কষ্টবোধ ছাড়া কিছুই করতে পারছি না।

এর অনেক প্রমান আমরাও দেখি। বাংলাদেশে সিডরের সময় আমরা কজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যন্টিনের সামনে একটি বাক্স আর ব্যনার নিয়ে দাড়িয়েছিলাম সিডর আক্রান্তদের জন্য সাহায্য তুলতে। ক্যন্টিনে দুপুরের খাবার শেষে যাওয়ার সময় অনেক ছাত্রকে দেখেছি মানিব্যাগ উল্টিয়ে সবগুলো টাকা পয়সা বাক্সে ফেলে গুমেন নাসাই (দু্ঃখিত) বলে মাথা নিচু করে চলে যেতে, কারন তার কাছে এর বেশি টাকা নাই তাই সে লজ্জিত! প্রকৃতির নির্মম খেলায় ওরা আজ বিপন্ন, বাধভাংগা অশ্রুর বদলে শুধুই পাথরে শোক ওদের চোখে মুখে। এই ভালমানুষগুলোর জন্য মর্মান্তিক দুঃখবোধ ছাড়া আমরা কিই বা করতে পারি।

চার বছর আগে জাপান এসে জানতে পারি আমার প্রফেসর নাকি পুরান কাপড়ের ব্যবসা করে। পরে দেখেছি আসল ঘটনা। একজন প্রফেসর হয়েও সে জাপানের বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরান কাপড়, আসবাব, থালাবাসন সংগ্রহ করে এবং বছরের একটা দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেট বসায়। সারা দিন কম দামে এইসব জিনিসপত্র বিক্রি হয়। এই মার্কেট থেকে যে লাভ হয় সেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন সময় বিপদে পড়া বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য কিংবা স্কলারশিপ দেয়া হয়। অবাক বিস্ময়ে দেখি এই সব অতিদরদী মানুষগুলোর অতিমানবিক দিকগুলো। অথচ আজ বিপন্ন এই মানুষগুলোর জন্য ব্যথিত হওয়া ছাড়া কিই বা করতে পারি!

হ্য পারি, ব্যক্তি আমি কিছু করতে না পারলেও আমার রাস্ট্র পেরেছে। তার আগে আমি ব্যক্তি জাপানিজদের বদলে একটু রাস্ট্র জাপানের কথা বলি। জাপানের পতাকার সাথে আমার দেশের পতাকারও অদ্ভুদ একটা মিল, আর সেই সাথে জাপানও স্বাধীনতার পর থেকে আমার দেশের সাথে মিলেমিশে এগিয়েছে নিস্বার্থভাবে। স্বাধীনতার পর থেকে এপর্যন্ত জাপান বাংলাদেশকে ৬০ হাজার কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছে৷ সর্বশেষ এক বছরেই এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার কোটি টাকা৷ পদ্মা সেতুসহ ৪টি বড় প্রকল্পে জাপান সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷এই একটি দেশই মসজিদ মন্দির বানাতে হবে টাইপের শর্ত ছাড়াই বাংলাদেশের পাশে ছিল অবিরত। এই দেশটি যখন সুনামিতে বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত তখনও ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত টমোটসু বলেছেন বাংলাদেশের ব্যাপারে জাপান ইতোমধ্যেই যে আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা থেকে তারা সরে আসবেনা এবং পদ্মা সেতুসহ অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে যে আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা অপরিবর্তিত থাকবে।
অদ্ভুদ আমার দেশ, অদ্ভুদ আমার রাস্ট্রযন্ত্র। জাপানের এই চরম দুর্যোগের সময় জাপানের রাষ্ট্রদূত যখন সাহায্য বন্ধ না করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তখন আমার রাস্ট্র বন্ধুপ্রতিম এই দেশটির প্রতিও চরম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। হ্য আমি তাই বলছি। যখন জাপান সরকার অযথা প্যানিক সৃস্টি করে জনমনে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর জন্য আহবান জানাচ্ছে তখন সবার আগে আমার রাস্ট্র টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাস বন্ধ করে দিয়ে চ্যম্পিয়ন হয়েছে। অথচ টোকিওতে প্রায় ১০০ টি রাস্ট্রের দূতাবাসের অবস্থান, তাদের সবাইকে আমরা পিছনে ফেলে চ্যম্পিয়ন। বাহ বাহ!এইতো বিপদের প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়। অথচ আমার বাস টোকিওর কাছেই, আমি জানি টোকিওর অবস্থা কোন অবস্থাতেই অতটা খারাপ না। মাননীয় পররাস্ট্রমন্ত্রী, আপনি একবার যদি ঢাকা শহরে রেডিয়েশনের মাত্রাটা মাপেন, হয়ত টোকিওর চেয়ে বেশি মাত্রার তেজস্ক্রিয়তা সন্ধান পাবেন। টোকিওতে কোটির উপর জাপানিজের বসবাস, এখানে একটা স্কুল কলেজ আজো বন্ধ ঘোষনা করেনি, অথচ এই মানুষগুলোর চরম দুর্দিনে আমরা কি সুন্দরভাবেই না পাশে দাড়িয়েছি। কি চমৎকার! পরশু মনজুরুল হকের প্রথম আলোর রিপোর্ট টিতে বাংলাদেশের দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার প্রতিক্রিয়ায় এক জাপানিজ সাংবাদিক বলেছিল যে "ওদেরকে বলবেন ওরা যেন এই দেশটি ছেড়ে একেবারেই চলে যায়, আর ফিরে না আসে!" কথাটি আমার জন্য, আমাদের জন্য কতটা অপমানজনক, লজ্জাকর, তা কি আপনি বোঝেন মাননীয় পররাস্ট্রমন্ত্রী!
মাননীয় পররাস্ট্রমন্ত্রী, এই কথাটি যদি একজন জাপানীজ না বলে একটি রাস্ট্র জাপান বলে তবে কি আপনি অপমানিত হবেন? যাই হোক, আমার কথা আপনার কানে পৌছবে না জানি, এই লেখার হয়ত কোন মানেও নেই কিন্তু তবুও এই দরদী জাপানীজদের জয়গান, মানবতার জয়গান গাইতেই হবে। তোমায় অভিবাদন হে মানবতা, তোমরাই করবে জয় প্রকৃতির নিস্ঠুর নৃশংসতা.............জয় হোক মানবতার..........।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৩:৪৬
২৬টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×