somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়ের পরম আদরের চরম বাদরের কিছু কথা

১০ ই মে, ২০০৯ ভোর ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মায়ের একমাত্র আদরের বাদর ছেলে হলে যা হয়, তার এক কঠিন উদাহরন আপনাদের সামনেই উপস্হিত হয়েছে ...আমার আম্মু যাকে এখনো সবার সামনেই আমাকে বাদর বলেই ডাকে :(( ....

যে মা তার ছেলেকে এক সপ্তাহ না দেখে থাকতে পারত না; একদিন কথা না বলে থাকতে পারত না আজ সেই মা বছরের পর বছর তার ছেলেকে না দেখে থাকে প্রতিদিন কথার বদলে কয়েকদিন পর পর কথা বলে, এ কিভাবে সম্ভব ... সৃষ্টিকর্তার এ কেমন সৃষ্টি পৃথিবীতে ? ... ভাবতেই বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয় ...

ছোটবেলা থেকে বড় বেলা পর্যন্ত এমন সময় নাই যখন আমি আমার আম্মুকে জ্বালাতন করিনি --

যখন আমি অনেক ছোট ছিলাম, তখন নাকি কলা শেপ এর ফিডার ছাড়া দুধ খেতাম না, একবার আমার আপুনির ওটা পরিষ্কার করতে গিয়ে ভেঙ্গে ফেললে আমি নাকি সেই অবুঝ বয়সেই বুঝদারের মতো ওর চুল ধরে টারজান হতে চেয়েছিলাম ... অনেক কষ্টে সেদিন আম্মু আমাকে ছাড়িয়ে আনলেও কলা ফিডার ছাড়া আমার অন্য কোন ফিডারে দুধ খেতে ভাল্লাগতো না ... তাই নিয়ে ছোট বেলাতেই আম্মুর সাথে আমার ক্যাতা শুরু হয় ...

আরেকটু বড় হয়ে সবাইকে দেখতাম একলা একলা বাইরে যেতে, আমি খালি পারিনা , আব্বু কয়েকদিনের জন্য রাজশাহী গেলে, আমাকে না নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘরের বহুত কিছু ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলেছিলাম ... কিন্তু আম্মুর (এবং আব্বুর ও) চরম আদরের বাদর হওয়াতেই সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিলাম ....

আপুনির সাথে ফাইটিং তো রেগুলার ঘটনা ছিল ... ক্লাস থ্রি থেকে যখন কুংফু শিখতে গেছি তখন ক্লাবের বালির বস্তায় যত না ঘুসি মেরেছি, তার চেয়ে বেশী মেরেছি আপুনির উপরে ... আর আম্মু সামনে আসতেই আমার মত ভদ্র পাবলিক দুনিয়াতে হয়না টাইপ চলাফেরার কারনে প্রথমে আম্মু বুঝতেই পারতো না সেখানে কিছু একটা ঘটেছে , এর পরে যখন আপুনির ভেজা গোলাপী ফোলা ফোলা চোখ আর হাতের ফোলা গুলো দেখতো ততক্ষনের আমি কিছু না কিছু করে তার মন গলিয়ে ফেলতাম ...

একবার ক্লাস ওয়ানে থাকতে , আমার ছুটি হয়ে গিয়েছিল এক ঘন্টা আগে ... আপুনি আমাকে সাথে করে বাসায় নিয়ে যেতে আমার ক্লাসে যেতেই দেখে আমি নাই ... কারণ আমি ততক্ষনে আমাদের নিচতলার ভাইয়া যে উপরের ক্লাসে পড়তো তার সাথে গিয়ে বসে ছিলাম, একসাথে বাসায় যাবো বলে .... সেদিন আম্মু পাগলের মতো আমাকে খুজতে খুজতে ঐ ক্লাস থেকে বের করেছিল .... এমন ভুলের পরেও যে আদর আমাকে সেদিন করেছিল, তা আজো আমার পরিষ্কার মনে আছে ....

তখন হাইস্কুলে পড়ি ... ছুটির পরে ফুটবল খেলে বাসায় আসতাম ... এ জন্য আম্মু আমাকে ১ ঘন্টা বরাদ্দ করেছিলেন, একদিন অন্য স্কুলের ছেলেরা চ্যালেন্জ করে বসলো, সেই ম্যাচ খেলতে গিয়ে বাসায় আসতে প্রায় ৩ - ৪ ঘন্টা লেট হওয়াতে বাসায় এসে প্রায় আধা ঘন্টা আমাকে বাইরে দাড়িয়ে কলিংবেল চাপতে হয়েছে (রাগ করে আম্মু দরজা খোলেনি)... এর পরে রাগী রাগী মুখে দরজা খুলে আমার রোদে পোড়া, ক্ষুধায় ম্রিয়মান পাংশু টাইপ মুখ দেখে সেই রাগী মুখের আম্মুটা যে কি আদর করেছিল তা আজো মনে পড়ে ....

এমন হাজারো ঘটনায় ভরা আমার জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আম্মু এসে হাজির হয়েছে এক পরম মমতাময়ী জননীর স্বরূপে যে তার ছেলের সব ধরনের অকাজকে পরম মমতায় চুপটি করে সামলে নিয়েছিলেন ... আজ যখন হাজার মাইল দুরে আমাকে ওয়েব ক্যামে দেখেন, সেদিন উনি নাকি খাবার খেতে পারেন না .... ঘরে ভাল কিছু রান্না করলে আর খেতে পারেন না ... ঘর ভর্তি মানুষের মাঝে মনমরা হয়ে বসে থাকেন ... এসব শুনলে নিজেকে আর সামলাতে পারি না ... তাই আজ শুধু একটাই কথা মাথায় ঘুরে ফিরে আসছে ... আম্মুর আদরের বাদরটা এখনো সত্যিকারের মানুষ হতে পারল না ... যদি পারত তবে আম্মুর এই মন খারাপ, সে কখনোই হতে দিতো না .... কোনোদিন ও না।






সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০০৯ ভোর ৪:২৯
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×