আমিও জানতাম না। জানলাম যখন, ভাবলাম শেয়ার করি সবার সাথে।
আমার এই ছোট্ট জীবনে মাত্র দুজন বাংলাদেশী ভাই পেয়েছি, যারা কলেজ লাইফ পর্যন্ত জানতেন তাদের রক্তের গ্রুপ (ধরুন) ০+ এবং সে হিসেবেই রক্ত দান করেছেন। পরবর্তী জীবনে আবার রক্ত দান করতে গিয়ে দেখেন, রক্তের গ্রুপ অন্য। আজব ব্যাপার না?
মেডিক্যাল সাইন্স বলছে, এটা অবাস্তব কিছু না। তবে আজীবন মানুষের রক্তের গ্রুপ একই থাকে, থাকার কথা। তারপরেও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে দেয়া যায় পরিবর্তিত ব্লাড টাইপ/গ্রুপ। কোন সমস্যাও তারা বুঝতে পারেন না।
কথন হয়? যদি কারও ক্যান্সার হয়, যদি বোনম্যারো পবিবর্তন করা হয়, বিশেষ কোন ড্রাগ শরীরে প্রভাব ফেলে, খাদ্য অভ্যাস, লিউকোমিয়া, রেডিও একটিভ এরিয়াতে থাকলে বা অজানা কোন কারনে সেটা হতে পারে। সৌভাগ্যবশত: আমার সেই পরিচিত দু'জনের কারও কোন ক্যান্সার বা অসুখ নেই। সাধারন স্বর্দি কাশি ছাড়া তেমন কিছু হয়নি কখনও।
এখন আসুন, রক্তের রঙের ব্যাপারে। আমরা সবাই জানি, মানব দেহের রক্তের রং লাল। তবে কারও কারও রক্ত গাঢ় লাল, কারও আবার লাল। কেউ কেউ রক্ত সবুজ বা নীল দেখেন বিশেষ পরিস্থিতিতে। তবে মানুষের রক্ত লাল। কারন হিমোগ্লোবিন নামক এক প্রোটিনের কারনে যেটা যথেষ্ট পরিমানে আয়রন বহন করে।
মানুষের চোখ ৭টি মৌলিক রং আলাদা করতে পারে তরঙ্গ ভেদে। কাজেই যে কেউ তার রং লালের পরিবর্তে সবুজ / নীল দেখতে পারে তার চোখে প্রতিফলিত আলো কিভাবে পৌঁছাচ্ছে, তার ওপর। যদি কেউ ৩০ফুট গভীর সাগরের পানিতে ডুব দেয়, তাহলে সে নিজের শরীরের রক্ত সবুজ দেখবে। কারও কারও চামড়া এতটাই পাতলা যে, শিরা উপশিরায় প্রবাহিত রক্ত নীল দেখায়। আসলে তার রক্তও লাল। তবে রক্তে অ্ক্সিজেনের উপস্থিতির উপরে গাঢ় বা উজ্জ্বল লাল দেখাতে পারে। আবার রক্ত শুকিয়ে গেলে কাল দেখাতে পারে।
তবে বিশেষ কোন উপাদান রক্তে বেশি থাকলে, সেটা রক্তের রং বাহ্যিকভাবে কিছুটা অন্য রঙের দেখাতে পারে। বরং সেটা মানুষের চামড়ায় ফুটে ওঠে। যেমন, জন্ডিস হলে হলুদাভ হয়, ব্লাড ক্যান্সার বা এনিমিয়া হলে চামড়া ফ্যাকাসে বা অনুজ্জ্বল দেখায়। আবার এমন একজন মানুষ পাওয়া গেছে তার চামড়া নীল। কারন তিনি (ক্যারাসন) পানিতে সিলভার মিশিয়ে খেতেন। আবার একজন মানুষ পাওয়া গেছে, যার স্ত্রী জোর করে অতিরিক্ত গাজর জুস খাওয়ানোতে চামড়া সুবজাভ হয়ে গিয়েছিল।
এত কিছুর পরেও কেউ কিন্তু প্রমান করতে পারেনি যে, মানুষের রক্তের রং লাল থেকে পরিবর্তিত হয়ে পোকামাকড়ের মত সবুজ বা নীল বা সাদা হয়ে গেছে।
আমাদের দেশে বেশ কিছু রক্ত দানের বড় বড় ফেসবুক গ্রুপ আছে। সন্ধানী বা রেডক্রিসেন্টেরও বড় ব্লাড ব্যাঙ্ক আছে দেশ জুড়ে। এগুলো ছাড়া লোকাল ডোনার রা তো আছেন অবশ্যই। কিন্তু সচেতন নাগরিক হিসেবে জানা দরকার কে কাকে রক্ত দান করতে পারবেন, কাকে পারবেন না। আবার উল্টা করে বললে, কে কোন টাইপের রক্ত গ্রহন করতে পারবেন বা পারবেন না।
এখানে একটা চার্ট দিলাম কে কাকে ব্লাড দিতে বা নিতে পারবে:
সহজ করে বললে
০- (ও নেগেটিভ) সবাইকে দিতে পারবে, কিন্তু নিতে পারবে শুধু নিজের গ্রুপের। সর্বজন দাতা
AB+(এবি পজেটিভ) সব গ্রুপের রক্ত নিতে পারবে, কিন্তু দিতে পারবে শুধুই নিজের গ্রুপে। সর্বজন গ্রহীতা
এছাড়া বিপদের সময় উপরের চার্ট মোতাবেক দেয়া নেয়া করা যেতে পারে। তবে আমার মতামত হল, যার যে গ্রুপ, সেই গ্রুপের রক্ত আদান প্রদান করাই ভাল।
তবে মতব্বরি করে ব্লাড দেয়া নেয়া করবেন না। কারন ক্রস মাচিং বা rH ফ্যাক্টর চেক খুব গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার। এগুলো নিশ্চিত না হয়ে ব্লাড দিলে রুগী মারাও যেতে পারে।
ব্লাড ডোনেটের মত প্লাজমা ও ডোনেট করা যায়। তবে প্লাজমার চার্ট টা ব্লাড ডোনেটের চেয়ে , কিছুটা উল্টা :
যেমন:
০ গুপের মানুষ সব গ্রুপের প্লাজমা নিতে পারবে কিন্তু দিতে পারবে শুধু নিজের গ্রুপে।
আবার AB গুপের মানুষ সব গ্রুপের প্লাজমা দিতে পারবে কিন্তু নিতে পারবে শুধু নিজের গ্রুপে। এক্ষেত্রে পজিটিভ নেগেটিভের ব্যাপার নেই।
পুর্ন বয়স্ক পুরুষের শরীরে হিমোগ্লোবিন ১৪-১৬ g/dl (গ্রাম পার ডেসিলিটার) রক্তে থাকা প্রয়োজন। নারীর শরীরে সেটা ১২-১৫। জাতিগত ভাবে বা অঞ্চলভেদে এই রেন্জ কিছুটা কম বেশি হতে পারে। তবে কোন পুরুষের যদি ১৬ বা তার ওপরে হিমোগ্লোবিন থাকে দীর্ঘি দিন ব্যাপী অথবা রক্ত রস কম, তাহলে দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত। ইরেগুলার বা আন-ইউজিয়াল যে কোন কিছু কোন না কোন অসুখের সূচনা। খেয়াল রাখবেন নারীদের ক্ষেত্রে সেটা ১০ এর নীচে।
১৫ থেকে ৪৫ বছরের যে কেউ ৪ মাস অন্তর অন্তর ব্লাড দিতে পারে। তবে যদি পুষ্টিকর খাবার এবং বিশ্রাম নিশ্চিত না করা যায়, তবে ডাক্তারের পরমর্শ ক্রমে দেয়া যায়। সুস্থ্য অবস্থায় ব্লাড দিলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। বরং শরীর ফুরে ফুরে লাগে, মানব সেবায় নিজেকে জড়ানোর কারনে মনটাও ভাল থাকে। আয়রন ব্যালেন্স থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, লিভার সিরোসিস হয় না।
তবে আপনি যদি ব্লাড ডোনেট করতে যাবার পূর্বের ১ মাসের ভেতরে, জ্বর, টাইফয়েড বা জন্ডিসে ভোগেন বা এন্টিবাইয়োটিক নিয়ে থাকেন, তবে না দেয়াই ভাল। যেহেতু পূর্নবয়স্ক পুরুষের শরীরে সাধারনত: ৫-৬লিটার রক্ত থাকে এবং নারীর শরীরে ৪-৫ লিটার, কাজেই সর্বোচ্চ ২ লি. দেয়া যেতে পারে ডক্টরের পরামর্শ ক্রমে। ৩ লিটারের কম বা হিমোগ্লোবিন লেভেল ৮ এর নিচে থাকলে মানুষকে বাঁচানো কষ্ট সাধ্য।
আমি দেখেছি এবং অনেকের কাছে শুনেছি, ট্রেন, বাস বা যে কোন এক্সিডেন্টের সময় বেশির ভাগ মানুষ ছুটে যায় পকেট হাতানোর জন্যে, ফেসবুক লাইভে যাবার জন্যে। এটা ঠিক না। কেউ করলেও বাধা দেয়া উচিত। যে ভিকটিম সে হয়ত আপনার কেউ না, কিন্তু অন্যের কলিজার টুকরা বা একমাত্র উপার্জন ক্ষম ব্যক্তি। আপনার ১০মিনিটের সাহায্য তার জীবন মরনের ব্যাপার। মনে রাখবেন, আল্লাহ ন্যায় বিচারক। আপনি যদি এক্সিডেন্টের রুগীর পকেট হাতান বা সাহায্য না করেন, কাল হয়ত আপনি বা আপনার কলিজার টুকরা অন্য কোন রোডে একই পরিস্থিতির শীকার হতে পারে।
সবাই সচেতন থাকবেন। মানুষের সেবাই এগিয়ে আসবেন। ধন্যবাদ।
Ref. Link
রক্ত দিলে ক্ষতি হয় না লিঙ্ক
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৭