২০১৪ সালের ২৪ তারিখ আমার মেয়ে জন্ম নেয়। ওর জন্মে সময় আমার মা বাবা ছিল। তারা চলে যাবার দিনে শাশুড়ি, শালা আর এক শালি আমার বাসায় আসে। সবকিছু ঠিক ঠাক চলছিল। আমি পিতৃত্বকালীন ৭ দিনের ছুটি কাটিয়ে নিয়মিত অফিস করি। মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে জেগে রাজকন্যাকে দেখি। আর অব্যক্ত শান্তি পাই।

দিন দশেক পরে বাসায় একটা অঘটন ঘটলো। আমি সেদিন রাত ১০টার দিকে ফিরি। ঘটনা ঘটে মাগরিবের পরপর। এখানে বলে রাখি, আমার শালার রাশি খারাপ। সে কোন জায়গায় গেলে, প্যারানরমাল এক্টিভিটির দ্বারা প্রভাবিত হয়। আউট অব কন্ট্রোল হয়ে পড়ে। ঝাড় ফুকে ভাল হয়।
যারা আমার আগের "আমার ১৮ নম্বর বাসা পর্ব .." সবগুলো ব্লগ পড়েছেন, তারা জানেন এই বাসাটা কতটা হন্টেড। যাই হোক, একতো আতুরে ঘর, তার উপর শালার অতিপ্রাকৃত সমস্যা। সে গলায় মোটা দড়ি লাগিয়ে ফাস দিয়ে দিল আমার বেড রুমের পাশের ঘরে। কাজের মহিলা গিয়ে দেখে চিৎকার করে ওঠে। সবাই মিলে তাকে সে যাত্রায় দড়ি থেকে নামিয়ে আনে এবং সৌভাগ্য বসতো বেঁচে যায়।
শালাবাবুকে যখন জিজ্ঞেস করলাম পরের দিন যখন সে স্বাভাবিক হয়: কি হয়েছিল?
ওর উত্তর ছিলো এরকম: একটা সাদা জুব্বা পড়া লোক বিকেল থেকে ওর চোখের সামনে মাঝে মাঝে দেখা দিচ্ছিল আর বলছিল, "চলে যা"। মাগরিবের পরপর সে নামায পরে বাম পাশে ঘাড় ঘোড়ালে দক্ষিণের জানালায় কালো পোশাক পড়া কাউকে দেখতে পায়। এরপর সেটা ঘরের ভেতরে নাকি উড়তে থাকে। মাঝে মাঝে ভ্যানিস হয়ে যায় আবার দেখা দেয়। শেষে সেই কালো আলখেল্লা পরা জিনিসটা নাকি বলে আমার সাথে চল। এরপর ঐটা তার গলা টিপে ধরে। আর কিছু নাকি ওর মনে নেই...
সে যাত্রায় শালাবাবু বেঁচে গেলেও, জন্মের ৩৯ তম রাতে কোন কারণ ছাড়াই রাত ১২ টা ৪৫ এ আমার কোলের মেয়ে মারা যায়। যেদিন মারা যায়, সে দিন সন্ধ্যা রাত থেকে নন স্টপ কাঁদছিল। দোয়া পড়া পানি ছিটিয়ে, আয়তুল কুরসি পড়ার পর সে থামে। রাত ৮টা থেকে খাচ্ছিল আর সুন্দর ঘুমাচ্ছিল। রাত সাড়ে বারটার দিকে হঠাৎ ঘুমের ভেতরে কেঁদে ওঠে। বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। কিছুতেই মুখে নেয় না। ছোট বাচ্চা, অথচ গলার কাছে হাত নিয়ে যাচ্ছিল। তারপর আল্লাহ আল্লাহ বলে কয়েকবার চিৎকার দেয়। আমি স্ত্রীর কোল থেকে আমার মেয়েকে নেই এবং মুখে আঙ্গূল দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি গলায় কিছু আটকেছে কি না। এর ফাঁকে সে কাদতে কাদেতে আমার আঙ্গুলে একটা কামড় দেয়। মড়ন কামড়-- শেষ কামড়। আমার কলিজার টুকরা আমার মামনি নিস্তেজ হয়ে যায়। সব যেন ৫-৭ মিনিটের মধ্যে ঘটে। ১২ মিনিটে হসপিটাল নিয়ে পৌঁছাই। ততক্ষণে সব শেষ।

পরবর্তীতে শুনলাম, যে জানালায় আমার শালা কালো কিছু দেখেছিল, সে জানালার পাশের অন্য বাসার লাগোয়া ফ্লাটে পরপর দুটো বাচ্চা মারা যায় আমি আমার এই ১৮ নং ভাড়া বাসায় ওঠার আগে। কিন্তু সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না। আরও জানলাম, এই বাড়ির ভিত খোড়ার সময় নাকি মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে। বাড়ির মালিক নিজেও রাতের বেলা থাকে না। তার ফ্লাটের ইলেকট্রনিক্স নাকি যখন তখন নষ্ট হয়।
আল্লাহ সবার সন্তানদের জান মালের হেফাজত করুন। আমিন।
আমার ১৮ নম্বর বাসা পর্ব: ১
আমার ১৮ নম্বর বাসা পর্ব: ২
আমার ১৮ নম্বর বাসা পর্ব: ৩
আমার ১৮ নম্বর বাসা পর্ব: ৪
আমার ১৮ নম্বর বাসা পর্ব: ৫
আমার ১৮ নম্বর বাসা পর্ব: ৬
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২৫ রাত ১:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




