
একটা রাবার বাগানকে বলা হয় সবুজ মরুভূমি। কারন এতে কোন পোকা মাকড় জন্মায় না, পাখি বাসা বাধে না, খাদ্য শৃঙ্খল থাকে না। এমনকি মাটিও দূষিত করে। যে মাটিতে একবার রাবার বাগান করা হয়, বাগান তুলে ফেললেও পরের ২০ বছর আর কিছু হয় না। শুধু বাঁশ আর ঘাস ছাড়া।

অন্যদিকে একটা চা বাগান হল একটা সবুজ বনসাই বাগান। ১৫০ বছরের পুরোন একটা চা গাছ হাটু সমান। খাদ্য চেইন রাবার বাগানের চেয়ে অনেকটা ভাল। মাটির ক্ষয় রোধ করে। ভাল মানের চা পেতে প্রচুর ইনভেস্ট করতে হয়। বাংলাদেশে চা কিছুটা লাভজনক, শ্রমিকের হিস্যা শোষনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে তাই।
আসুন একটি সার সংক্ষেপ দেখি:
প্রতি হেক্টরে প্রতি বছর হিসেবে

উপরের টেবিল থেকে স্পষ্ট যে, কোন ফসলটি বেশি অর্থকরী বা কম সময়ে বেশি উৎপাদন মুখী একই সাথে পরিবেশ বান্ধব, সেটি হল বাঁশ।

এখন দেখি বাঁশের চাহিদার ক্ষেত্র কোথায়:
১. কুটির শিল্পে এবং চাষাবাদে
২. বাসা বাড়ির বেড়া বা সিলিং দিতে বা পাটি হিসেবে বহুবিদ ব্যবহারে
৩. মাটির ক্ষয়রোধে বা বিরান ভূমি বা ভিটে জমিকে অর্থনৈতিক ভাবে উপযোগিতা বাড়াতে
৪. পাহাড় টিলা কে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ মুনাফা পেতে এবং চা শ্রমিকদের সারা বছর কাজের সুযোগ সৃষ্টিতে।
৫. বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে। জাপানে কিছু পার্ক আছে, শুধু বাঁশের। প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে তারা নির্মল বিনোদনের জন্যে যায়। আমরা ব্যাম্বু ফরেস্ট করে যদি বাঁশের চা, বাঁশের পাহাড়ি মেনুর ব্যাবস্থা করি বা বাঁশ থেকে তৈরী জিনিস বিক্রির ব্যবস্থা করি, তাহলে মনে হয়, শুধু চা বাগান বা রাবার বাগানের চেয়ে বেশি উপার্জন হবে।

দেখুন, একটা খুঁটির বাঁশ যদি বাজারে ক্রয় করতে যান, তবে ৪০০টাকা মত লাগে। ঢাকা শহরে বাড়ি তৈরীতে বাঁশ সরবরাহ দিতে দিতে উত্তর বঙ্গ আর দক্ষিণ বঙ্গ ন্যাড়া হয়ে গেছে। এদিকে ৪০০টাকার একটা রেঙ্গুন বাঁশ (কঞ্চি বিহীন) বাঁশ থেকে একটা সোফা স্টাইলের চেয়ার বানানো যায়, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৬০০০টাকা। কুটির পন্য যদি হয়, তাহলে বৈচিত্র এবং ফিনিসিঙের উপর ১৫হাজার টাকাতেও বিক্রি হতে পারে।

এছাড়া যদি মাছ ধরার টোপা বলি, সেটা ৭০০টাকায়, কুলা, ঝাড়ু সহ কত শত-সহস্র জিনিস আছে, যেগুলার চাহিদা আছে, যোগান নেই। বাধ্য হয়ে মানুষ আজ প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার করছে যেটা শরীরের জন্যে খারাপ বা ক্যান্সারের জন্যে বহুলাংশে দায়ী।
বাইরের দেশ বাঁশ থেকে তক্তা বা পার্টিশন উড তৈরী করছে, যেগুলো কাঠের চাইতে মজবুত। আজ আমরা প্লাস্টিকের চপিং বোর্ড ব্যবহার করি। সেই ছোট ছোট প্লাস্টিক কনা আমরা দেদারছে গিলছি। অথচ তার অর্ধেক দামে বাঁশের চপিং বোর্ড দেয়া সম্ভব। এটা একটা উদাহরন মাত্র।
জাপানে সবচেয়ে দামি মাছ ধরার হুইল রড বানানো হয়, সেটাও রেঙ্গুন বাঁশ থেকে। ওরা অন্যান্য প্রজাতির বাঁশ থেকে বাঁশি, ধনুক, ফার্নিচার বানাচ্ছে। ইনডোর ডেকোরেশনে ব্যাপক হারে বাঁশ ব্যবহার করছে। বাঁশের ফার্নিচার বেতের চেয়ে সস্তা। যারা বছর বছর ফার্নিচার চেন্জ করতে চান, তাদের জন্যে বাঁশের ফার্নিচারের বিকল্প নেই।

যদি বাঁশের রস এবং ওয়াইন বানানোর প্রক্রিয়া জানেন, তাহলে ধরে নিন চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াতে প্রডাক্ট দিয়ে শেষ করতে পারবেন না। এত এত চাহিদা।
অন্যদিকে বাঁশের ছায়ায় বিশেষ ধরনের মাশরুম চাষ করা যায়। মাশরুম পুরো বর্ষায় ২-৩বার হার্ভেস্ট করা যায় বাঁশের কোন ক্ষতি ছাড়াই। মানে হল, এক জমিতে ২ ফসল। চাইনিজ ব্যাম্বো মাফরুম যদি ৩ হাজার টাকা কেজি হয়, তাহলে ১ হেক্টরে মোটামুটি ১২লক্ষ টাকা আসবে শুধু মাশরুম থেকে।
চাইনিজরা ব্যাম্বু রাট বানিজ্যিক ভাবে পালন করে, সেটার কথা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাদ দিলাম। এরকম বহু স্কোপ আছে বা সুযোগ আছে। আফসোস আমাদের দেশে বাঁশ নিয়ে বড় কোন উদ্দ্যোক্তা নেই। টিলা পাহাড় গুলো জঙ্গলে ভরে থাকে, অথচ ব্যবহার নেই।

বাঁশ নিয়ে কিছু তথ্য:
১. বাঁশ বিশেষ ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। পৃথিবীতে প্রায় ১ হাজারের বেশি প্রজাতির বাঁশ আছে।
২. বাঁশ পারমানবিক রেডিয়েশন রোধ করে। অন্যান্য উদ্ভিদের তুলনায় ৩৫%বেশি অক্সিজেন ছাড়ে। ধুলোবালি আটকায়।
৩. প্রজাতি ভেদে বাঁশ ৩ফুট পর্যন্ত বাড়ে এবং ১৮ থেকে ৮০ বছর পরপর বাঁশ ঝাড়ে ফুল ফোটে।
৪. বাঁশের কোড়ল বা মোচা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। বাঁশের চাল ক্লোরেস্ট্রল কমায়।
৫. বাঁশের ফার্নিচার জাপান, চীন সহ বিভিন্ন দেশে প্রচুর ব্যবহৃত হচ্ছে। এটার একটা ট্রেন্ড তৈরী হয়েছে।
৬. কুটির শিল্পে বা চাষাবাদে বিভিন্ন কাজে পরিবেশ বান্ধব উপাদান হিসেবে বাঁশের বিকল্প নেই।
৭. বাঁশ মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে, কম পরিচর্যায় বেড়ে ওঠে, একবার লাগানোর পর রাইজোমের মাধ্যমে নতুন চারা বের হয়। নতুন করে চারা সংগ্রহের খরচ নেই। একবার লাগালেই হল।
৮. বাঁশের ফেব্রিকস বিভিন্ন জিনিস তৈরীতে ব্যবহার হচ্ছে। তাই প্রচুর চাহিদা।
৯. বাঁশের চা প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক ও ওষূধি গুন সন্পন্ন। চীন ও ইন্দোনেশিয়াতে নিজস্ব পদ্ধতিতে চা এবং অন্যান্য খাদ্য তৈরী তাদের সংস্কৃতির অন্তর্গত।
১০. বাঁশ প্রচুর জলীয় বাষ্প উদগীরন করে আশপাশের পরিবেশের তাপমাত্রা সহনশীল রাখে।
***বাঙ্গালী বাঁশ দিতে ও খেতে অভ্যস্ত। কমেন্টে আমাকেও বাঁশ দিতে পারেন সুপরামর্শ দিয়ে। আসুন কম সময়ে বেশি প্রফিট করতে বেশি বেশি বাঁশ গাছ লাগাই। পরিবেশ বাঁচাই...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



