
পরিবারের সাথে অদ্ভূদ ঘটনা কম বেশি সবারই ঘটে। আমার পরিবারেও অল্প বিস্তার ঘটেছে। আজকের পর্বে শুধু দুটো ঘটনা লিখব। না লিখলে সময়ের তাড়নায় এক সময় স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাবে।
ঘটনা ১.
আমার খালার বাসায় এক ছোট্ট মেয়ে কাজ করত। সারিয়াকান্দির কোন এক গ্রাম থেকে তার মা রেখে গিয়েছিল। কোন ভারি কাজ করতে হত না। খালা চাকরি করত, বাসায় না থাকার সময়ে বাচ্চার সাথে খেলা করা, বিছানা থেকে যাতে পরে না যায় খেয়াল রাখা, কাদলে ফিডার মুখে দেয়া এইসব। বেবি সিডারদের মত কাজ। সে নিজেও আসলে বাচ্চা। ৮-৯বছরের মেয়ে। ওর নাম মাজেদা। সেই মাজেদা মেয়েটি বড় হলে পরে তার মা গ্রামে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেয়। তখন হয়ত ১৬-১৭ বছর বয়স হবে। খুবই বিশ্বস্ত আর ভাল ছিল মাজেদা। ছোট অবস্থা থেকে খালার বাসায় বড় হওয়াতে সেভাবেই গড়ে উঠেছিল। খালা বাসা আর আমাদের বাসা কাছাকছি হওয়ায়, মাজেদা প্রায়ই আসতো। ঈদের বা অন্য অনুষ্ঠানের সময় খবর দিলে ওর মাও আসতো। ভাল বকশিস পেতো। ওর বাবা নৌকায় করে দূর দূরান্তে ঘাটে ঘাটে মাটির হাড়িপাতিল বিক্রি করে বেড়াত। সংসারে মাজেদার দাদি ছিল যে কিনা আবার কবিরাজ এবং চুলে জটা ধরা।
এখন মূল ঘটনায় আসি। তখন ২০১৬ এর ঘটনা। মাজেদার বিয়ের পরের বছর। ওর মা প্রায় প্রায় আমার খালা বা আমাদের বাসায় আসতো। পুরো দিনের কাজ করত। নিজেদের মানুষের মত। নিখুঁত কাজ, কোন ফাঁকি নেই। কিন্তু মাজেদার মা আসলেই বাসায় ভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকল। আলমারি বা পার্টস থেকে টাকা নেই হয়ে যেত। যেহেতু ৯-১০ বছরের চেনা জানা, তাই শুরুতে কোন সন্দেহ হয়নি। ভাবা হত যেন, নিজেদের ভুল। কোন এক ভাবে হয়ত খরচ করে ফেলা হয়েছে।

মাজেদার মা ঘনঘন আসত যদিও মাজেদা আর থাকে না। আর বাসায় আসলেই কারও না কারও গুনে রাখা টাকা হাওয়া হয়ে যেত। বড় অংকের টাকা নিত না, মানে লাখ টাকার বান্ডেল ঠিক থাকতো। ৪-৫হাজারের নিচের অংকে যে টাকা ব্যাগে বা আলমারিতে থাকত , সেগুলোতে ঝামেলা হত। মা শেষে উপায় না পেয়ে তার ব্যাগে / আলমারিতে টাকার সাথে কাগজে নোট রাখত কত টাকা রাখা হয়েছে। ডায়াবেটিকসের রুগি ভুলও হতে পারে।
পরবর্তীতে মা সন্দেহ থেকে মাজেদার মা বাসায় আসলেই তাকে চোখে চোখে রাখত। তারপর এমন হল যে, মাজেদার মাকে কোন কাজ করতে না দিয়ে গাড়িভাড়া দিয়ে বিদায় দেয়া হত। তবুও টাকা গায়েব।
এসবের পর মা খালা নিজেরা পরামর্শ করে বুঝল, কিছু একটা মাজেদার মায়ের সাথে রিলেটেড। পরের বার আসলে মাজেদার মা কে আটকে রেখে জেরা করা হয়। তখন সে বলে, তার শ্বাশুড়ি মানে মাজেদার দাদী কবিরাজ ছিল। তিনি মারা গেলে তার পালিত জ্বীন মাজেদার মােকে দিয়ে যায়। মাজেদার মা তো সব প্রক্রিয়া জানে না। তাই রুগিরা কম আসত বা ফেরত যেত। ইনকাম কম হত। তাই সে নিজের শরীরের ভেতরে জ্বীন নিয়ে ঢুকে শহরের পরিচিত লোকদের বাসায় বাসায়। জ্বীনের মাধ্যমে সে টাকা হাতিয়ে নিত। সে নিজ হাতে কিছু করত না। তাই তার শরীর চেক করলেও কিছু পাওয়া যেত না।
খুব আজব ব্যাপার। মানুষের কত বুদ্ধি। এরপর তাকে আমাদের বাসায় আসতে বারন করে দেয়া হয়। তখন থেকে আর টাকা গায়েব হয় না। করোনার ভিতরে একবার এসেছিল মাজেদার মা। তখন অবশ্য কোন সমস্যা হয়নি। তবে বলেছিল, সে খারাপ কাজ করায়, জ্বীন নাকি ছেড়ে চলে গেছে।
আমি জানি না, এখানে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা কি ? আমাদের সামু ব্লগে কিছু বিজ্ঞান মনস্ক ব্যক্তি আছেন, হয়ত বলবে ১৫০০ বছরের পুরোন বেদুইনদের চিন্তা মাথায় চেপে বসছে। হতে পারে, তবে এই বস্তবতার সাথে ওটার কোন সম্পর্ক নেই।

ঘটনা ২.
আমার ১৮ নং বাসায় সমস্যা বেড়ে যাওয়াতে শহরের শেষ প্রান্তে নতুন এক বাসায় উঠি। নতুন বাসা নতুন তৈরী হয়েছে আমি ওঠার প্রায় ২ বছর আগে। আমার আগে মাত্র ২জন ভাড়াটিয়া ছিল। একজন ২১ মাস, পরের জন এক মাস। তারপর আমি উঠি। শুরুতে আমি বুঝিনি, কেন প্রায় প্রায় আমার বাড়ির মালিক এসে বলত, স্যার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো? কোন সমস্যা হলে বলবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্য ভাড়াটিয়াদের বলে না, আমাকেই শুধু বলে।
বছর তিনেক হল আছি সেখানে। কিছু মজার ঘটনা, বলা ভাল আমাদের জন্যে ভয়ের বা আজব ঘটনা ঘটতে থাকল। ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে বাড়িতে ওঠার মাস দুয়েক পর থেকে। কখনও রান্না ঘরে, কখনও মাস্টার বেড রুমে, আবার কখনও আমার ইন্টারটেইনমেন্ট/কম্পিউটার রুমে খুটখাট শব্দ, বা মানুষের কথা বলার শব্দ। ধরেই নিতাম, অন্য ফ্লাটের বা রাস্তার মানুষের কথা বার্তা শুনছি বা বাতাসে জিনিসপত্রের শব্দ হচ্ছে। এসবে অভ্যস্থ হয়ে গেলাম।
একধাপ এগিয়ে শুরু হল এমন যে, পুরো বাড়ি অন্ধকার শুধু আমার কম্পিউটার রুম ছাড়া। দরজা হয়ত খোলা। আড় চোখে দেখতে পেতাম সাদা কিছু অন্ধকারে হাটাহাটি করছে বা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সরাসরি তাকালে সেগুলো চোখের পলকে সরে যেত। আমি চশমা পড়ি না যে, গ্লাসের রিফ্লেক্ট আলো পড়ে ভুল কিছু দেখছি। আমার মিসেসও দু একবার দেখেছে এমন।
এরপর মোট ৪ দিন বাথরুম থেকে বেরিয়ে, আমার মিসেস বলল: এই আমি সাওয়ারে গেলেই তুমি নক করো কেন? সে নাকি আমার গলার আওয়াজ শুনেছে।
আমি শুধু বলতাম, আমাদের তো দুই বাথরুম। তোমাকে নক করার দরকার কি আমার। আমি তোমাকে নক করিনি। এটা একটা ব্যাপার গেল।
এরপর শীতের ভেতর, সব দরজা জানালা লাগানো। পাক ঘরের পাতিলে ওপর পাতিল রাখা এবং দেয়ালে কিছু হালকা জিনিস ঝুলিয়ে রাখা। আমরা সকালে শ্রীমঙ্গল গিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি দেয়ালের একটা জিনিস (নুডুলসের ছাকনি) মেঝেতে পড়া, থালা বাসন হাড়ি-পাতিল ছড়ানো ছিটানো। বাসায় কোন বেড়াল ইঁদুর নেই যে সেগুলো ফেলে এলোমেলো করবে। সে না হয় মানলাম, কিন্তু দেয়ালে ঝোলানো একটা বড় ছাকনি কি করে আংটার ভেতর থেকে বেরিয়ে মেঝেতে পড়ল। মাথায় ঢোকে না। আমার ফ্লাটে দরজা বরাবর সিসি ক্যামেরা সেট করা। সেটার সারাদিনের ক্যাপচার দেখলাম, কিছু নেই। মানে বাইরের মানুষ রুমে ঢোকেনি। আর বাসাতে অন্য কেউ ছিলও না।
এর কিছুদিন পর আমার ডাইনিং স্পেসের ঘড়িটা মাঝ রাতে দেয়াল থেকে খসে পড়ল। ৪টা ঘড়ির ভেতরে সেটাই বেশি টিকটিক সাউন্ড করত। এটা অবশ্য ওয়াল গাম দিয়ে সাটান ছিল। ধরেই নিলাম, গামের টেমপার চলে গেছে, তাই পড়ে গেছে। এদিকে ফ্লাটের ঢোকার মুখে আয়াতুল কুরসির একটা সুন্দর ফ্রেম ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম। সেটা দিনের বেলায় ঠিকঠাক থাকলেও রাত পেরিয়ে পরের সকালে দেখতাম বাকা তেড়া হয়ে আছে। ধরেই নেই তেলাপোকা বা টিকটিকি হয়ত এটার উপর দিয়ে গেছে। কোন দিন ডানে তো কোন দিন বামে কাৎ হওয়া। কিন্তু এটা যখন নিয়মিত ঘটনা হয়, তখন একটু অন্যরকম সন্দেহ হয় আর কি !
গত সেপ্টেম্বরের ঘটনা। আমার বেডরুমের ফ্যানে আগুন লেগে গেল। ১ সপ্তাহ পরে আমার কাপড় ইস্ত্রি করার ইস্ত্রিটা পুড়ে গেল। হতেই পারে বৈদ্যুতিক সমস্যা কারনে নষ্ট হয়েছে। এরপর আমার নতুন LG 27 inch monitor এর প্যানেল নষ্ট হল। তাও ভাল কথা। ইলেক্ট্রিক জিনিসের ভরসা নেই।
এরপর এক রাতে মানে রাত প্রায় ২টা তখন। আমি মোবাইল ঘাটছিলাম। আমার ব্যাড হাবিট হল, কোন জিরো লাইট থাকলে ঘুম ভাল হয়না। তাই জিরো লাইট অফ থাকে। আবার রুমের বাতাস ভ্যাবসা হলেও ভাল লাগেনা। তাই শীত ছাড়া সারা বছর আমার শোবার ঘরে দরজা জানালা খোলাই থাকে।
আমার মিসেস বেড রুম থেকে বের হয়ে ওয়াশ রুমে যাবে। আমি একটা আলোর ঝলকানি দেখলাম এবং সেই সাথে ওর একটা চিৎকারও শুনলাম। সে দৌড়ে আমার কাছে চলে আসছে এবং কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে। আমি লাইট জালিয়ে পুরো ফ্লাট চেক করে আসলাম। কোথাও কিছু নেই।
ওর কথা হল এরকম: (আমার কম্পিউটার রুম আমার বেড রুমের পাশে।) আমি যখন বেড রুম থেকে বের হচ্ছিলাম, তখন কম্পিউটার রুম থেকে একটা গোল ফুটবলের সমান আগুনের গোলা বের হয়ে ডাইনিং স্পেসে চক্কর দিয়ে যখন আমার কাছে উড়ে আসছিল, আমি তখন ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি। এক মুহূর্তের মধ্যে সেটা ডাইনিং স্পেস থেকে থেকে ড্রইং রুমের ভেতর দিয়ে বেলকুনি হয়ে বেরিয়ে যায়। আমি যদি চিৎকার না দিতাম, হয়ত ওটা আমার ভেতরে ঢুকে যেত বা আক্রমন করত।
আমি শুধু একটা আলোর ঝলকানি দেখেছি বেডে শুয়ে শুয়ে। তাই পুরো ঘটনার সাক্ষী হতে পারিনি। ওকে শুধু বললাম, ওটা কিছু না, কোন গাড়ির হেডলাইটের হয়ত আলো পড়েছে। সে আরও রেগে গেল, বলে: হুম ! তোমার খেয়ে কাজ নেই, ৭ তলায় গাড়ির হেড লাইটের আলো রুমের ভেতর পড়বে, তাও এদিক সেদিক লাফায়ে লুফায়ে ঐ ড্রয়ইং রুম দিয়ে বেরিয়ে যাবে।
আসলে আমার কাছে কোন লজিক ছিল না। অত রাতে আর কথা বাড়ালাম না। দোয়া পড়ে, দরজা লাগিয়ে সে রাতে ঘুমালাম।
এরপর থেকে আমরা ইবাদত বন্দেগি বাড়িয়ে দিলাম। মাঝে মাঝে তাহাজ্জুৎ নামাযও পড়া শুরু করলাম। এরপর থেকে বেড রুমে ডিসটার্ব শুরু হল। আমার মিসেস, রাতে কোন ভাবেই ঘুমাতে পারে না। আমি ক্লান্তিতে ঘুমাই কিন্তু ঘুম ক্লিয়ার হয় না। বাজে বাজে স্বপ্ন দেখি সারারাত।
এক সময় ড্রইং রুমে আমি মোবাইলে কুরআনের অডিও ছাড়লাম, হালকা সাউন্ডে। পুরো বাড়িতেই শোনা যেত এমন। সারারাতই চলত। ফজরের সময় অফ করতাম। কিছুদিন পর, একদিন মোবাইল অফ, অথচ রাতেও ব্যাটারী ফুল ছিল। এরপর একদিন দেখলাম অডিও সাউন্ড কমে গেছে। তখন ব্লুটুথ স্পিকার ব্যবহার করলাম। এক সপ্তাহ পরে সেটা পুড়ে গেল। এরপর ২য় আর একটা স্পিকার লাগিয়ে ছাড়তাম। সেটা একবারেই নতুন। কিন্তু কোন কোন রাতে সেটা ডিসকানেক্ট হয়ে যেত। যদিও অটো কানেক্ট হবার কথা, হয় না। টেকনিক্যাল ইস্যু থাকতেই পারে।
আচ্ছা, এরপর মোবাইল থেকেই ডাইরেক্ট ছাড়তাম। দুই দুই বার রাতে এমন হল যে, কুরআন অডিও টা পজ মারা। আমি মিসেস কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি কি পজ মারছিলা? সে বলে যে সে মারেনি। ভোরে উঠে সে অডিও পজ দেখছে। সে ভাবছে, আমি পজ বা অফ রাখছি। সেই মোবাইলে কোন সিম কার্ড নেই যে, কল ঢোকার কারনে অফ হয়েছে বা পজ হয়েছে। এক সময় অন্য মোবাইল দিয়ে ট্রাই করি। তখন আবার সেটা চার্জার পুড়ে গেল। এখন আর কুরআন তেলওয়াত ছাড়িনা।
এদিকে পাশের ফ্লাটের ছোট বাচ্চা নাকি আগের বাসায় থাকতে টুকটাক কথা বলত। এই বাসায় আসার পর থেকে সে আর কথা বলে না। ডক্টরের কথা মত সাড়ে ৩ বছরের বাচ্চাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়েছে।
বাড়ি ওয়ালা এখনও দেখা হলেই বলে, কোন সমস্যা হচ্ছে না তো? আমি মনে মনে বলি, সমস্যা তো হচ্ছে। কিন্তু কেমন বলি...

আজ রাতেও ঘুম ধরছে না। তাই বসে বসে স্মৃতি চারন করে সত্য ঘটনা লিখছি। (শুভ রাত্রি)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২৫ রাত ২:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




