somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছিঃ পুরুষ, ছিঃ, নারীকে ধর্ষিতা বলতে তোদের লজ্জা করেনা?

১১ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হঠাৎ ক্ষণিকের চিন্তা থেকে একটা পাত্র -পাত্রী গ্রুপে, অনাকাঙ্খিত ধর্ষণের শিকার মেয়েকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক বলে, পোস্ট করলাম।

পরিচিত- অপরিচিত অনেকেই তাদের নানান রকমের রিয়েক্ট ও কমেন্টসের মাধ্যমে নেগেটিভ, পজিটিভ মন্তব্যের পাশাপাশি প্রশংসাসূচক বাহ্ বাহ্ মন্তব্য করে গেল।

তিনঘণ্টা হয়ে গেল, ভিক্টিম টাইপের কেউ মন্তব্য করলো না। হঠাৎ, ফোন স্ক্রিনে ইমেইলের নোটিফিকেশন আমাকে উৎফুল্ল করে তুলে। আমি ইনবক্স চেক করলাম, একটা pdf আর বেশ কয়েকটি ছবি চোখে পড়লো।

ছবিকে ছবি বলার সুযোগ নেই, জাস্ট এক নির্মমতা আর বীভৎসতা প্রতিচ্ছবি। আমি সব ছবি না দেখে, pdf টা অপেন করলাম। এটা একটা সচিত্র বায়োডাটা। পড়ছি আর চোখের সামনে, নির্মমমতার চিত্র ভেঁসে উঠছে। ঘটনাটির সারমর্ম তুরে ধরার চেষ্টা করছি,

২০১০ সালের মার্চের কোন এক সময়, মেয়েটি দশম শ্রেণীর ছাত্রী থাকাকালীন এক ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরে। যৌবনে পদার্পনের শুরুতে আবেগ, অনুভূতি অনেক উচ্চ পর্যায়ে থাকে। সামান্য অভিমান অনেক কষ্ট দেয়। সত্য মিথ্যার প্রশ্নে নিজের শরীর দেখানো কে প্রধান প্রমাণ হিসেবে দেখা হয়। বেড শেয়রিংকে ভালোবাসার মূল মন্ত্র মনে করা হয়।

যাহোক, এভাবে বেশ চলছিল। একদিন শুক্রবার সন্ধ্যাবেলা তাকে তার সো কল্ড বয়ফ্রেন্ড সাথে দেখা করতে যায়। তার বয়ফ্রেন্ড তাকে দেহভোগের প্রস্তাব দেয়, সে নাকচ করে দেয়। শেষ মুহূর্তে বয়ফ্রেন্ড তাকে জোর-জবরদস্তি শুরু করে। দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।পরবর্তীতে তথাকথিত বয়ফ্রেন্ডের সহযোগীরা এসে জোর করে ধরে নিয়ে তের দিন আটকে রেখে গন-ধর্ষণ করে।

বয়স কম ছিল, এই ভার বহনের শক্তি তার ছিল না। মরে যেতে ইচ্ছে করছিল।শত চেষ্টা করেও মৃত্যুকে কাছে পায় নি। কে বলে মৃত্যু এত সহজ? বেঁচে থাকা যতটা না সহজে , মৃত্যুকে বরণ করা, বা কাছে পাওয়া তার চেয়ে শতগুণ কঠিন।

ঠিক তেরদিন পর তাকে, নরকের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দেয়া হয়।রাতের অন্ধকারে, তার খালার বাড়ির পাশে, ডোবার ধারে সেন্সলেস অবস্থায় রেখে যায় পিশাচের দল।সকাল বেলায় লোকজন তাকে উদ্ধার করে, হসপিটালে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করে বাসায় নিয়ে আসে।

এই ঘটনার জন্য কোন অভিযোগ বা মামলা দায়ের করতে ইচ্ছুক ছিল না তার পরিবার। ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে সামাজিক সম্মান রক্ষা করতেই তারা মনোনিবেশ করছিলেন। মেয়েটিও তার ভালোবাসার পরিণাম, নৃশংসতা ও বিশ্বাসের ঘাতকতাকে নীরবে মেনে চুপ হয়ে গেছিল। প্রাণপণ চেষ্টা করে স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছিল।

কিন্তু বিপত্তি বাধে, ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে। কুলাঙ্গার, নর-পিশাচরা, তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা ফাঁস করে, মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলের আশ্রয় নেয়।শেষপর্যায়ে সেটা ভাইরাল করে দেয়।

মামলা-মোকদ্দমার আশ্রয় নিয়েও কোন লাভ হয়নি। আইনের ফাঁক-ফোকরে তারা বেরিয়ে আসে।( যদিও মেয়েটি এসব মামলার ব্যাপারে উদাসীন ছিল)।

ঘটনাটি জানাজানি হয়। তার বিয়ের পথ বন্ধ হযে যায়। সামাজিক ভাবে তারা নানান হেয় প্রতিপন্নতার শিকার হন।

এখন সে ২৭ বছরের নারী, বিয়ে করেন নি। বিয়ে হচ্ছিল না বলে নিজের পরিবারের সদস্যর হাতে অপমান, অপদস্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত অবচেতন ধর্ষণের শিকার হন। প্রেগন্যান্ট হয়ে যান। আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে,ফিরে আসেন।নিচের গালে নিজেই ছুড়ি চালিলে মুখটিকে ক্ষত-বিক্ষত করেছেন।নিতম্বেও ক্ষতবিক্ষত করে বাচ্চা ধারণের পথ বন্ধ করেছেন।

(ঘটনার এখানেই অপূর্ণ সমাপ্তি...........)

এবার একটু অন্য দিকে নজর দেইঃ

এরকম ঘটনা আমাদের সামাজে অহরহ ঘটে যাচ্ছে। নারীর সমস্ত মান- সম্মান আর মর্যাদা, জাস্ট ভ্যাজাইনাতেই সীমাবদ্ধ মনে করে হচ্ছে। আর নারীরাও সেটা রক্ষার প্রাণপন চেষ্টাই করে। কিন্তু শত চেষ্টার পরও যখন এরকম অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে তখন একজন নারীর কি বা করার থাকে?

আমাদের মানসিকতার দ্রুত পরিবর্তন জরুরী। ধর্ষণ মানে, ধর্ষিত হলেই কেন নারীকেই দায়ী করা হয়? ভার্জিনিটির প্রশ্নে কেন নারীকেই দোষারোপ করা হয়? ছেলেদের দিকে একবারের জন্যও এই প্রশ্নটা কেন করা হয় না? অথচ একটা মেয়ে ধর্ষিত হয়,অন্য কোন পুরুষ দ্বারাই। তারপরও নারীকে কেন একাই এটার কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে হয়?

বিল ক্লিনটনের " গিভিং" বইটাতে পড়েছিলাম "সেতাকা" (পুরো নাম মনে নেই) নামে এর মেয়েকে চারজন কুখ্যাত ব্যক্তি গণ-ধর্ষণ করে৷ এমনকি ধর্ষণ পরবর্তী সময়ে মেয়েটির AIDS এ আক্রান্ত হয়।

যদিও মেয়েটির কোন ইচ্ছাও ছিল না, সম্পূর্ণ জোরপূর্বকভাবে তার উপরে এই পাশবিকতার স্টিম রোলার চলানো হয়, এমনকি মরণব্যাধী রোগটি ট্রান্সফার করা হয় তার শরীরে।

আফ্রিকার মত দেশে হওয়ার জন্য, সামাজিক অত্যাচার থেকে কিছুটা রেহাই পেলেও, বাংলাদেশে কোন মেয়ের উপরে এরকম হলে, মেয়েটির এবং মেয়েটির পরিবারের যে কি পরিণতি হতো, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মেয়েদের নিজেরা যতক্ষণ না পর্যন্ত এসবের বিরোদ্ধে কথা বলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে ধর্ষণ বা ধর্ষিতার চরম অবমাননা, সহ্যই করতে হবে মে বি।

আমি মনে করি, মেয়েরা, মেয়েদের দ্বারাই প্রথম পায়ে শিকল পরে। কেননা, মা, খালা, দাদী, উনারা নারী হওয়া সত্ত্বেও একটা মেয়েকে বড় হওয়ার সাথে সাথে নানান শর্তারোপ করে, চলাচল, পোশাক-আশাক, কথাবার্তা রেস্ট্রিকড করে দেয়।

আর নারীরা আত্মনির্ভরশীল হলে, ক্ষমতায়নের দিকে নজর দিলে, পুরুষ নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিলে, তারা এসবের বিরোদ্ধে কথা বলতে পারবে। তার আগে কোন কথা বলতে গেলে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তার গলা চেপে ধরবে।

আমাদের পুরুষদেরকে মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। নারীর মান- সম্মান, মর্যাদা যে শুধু ভ্যাজাইনা কেন্দ্রিক না, সেটা বুঝার ক্ষমতা রাখতে হবে। প্রত্যেকটিই ধর্ষিতা নারীই এক একটি প্রতিবাদী চরিত্রকেই ইঙ্গিত করে।

ছিঃ পুরুষ, ছিঃ নারীকে ধর্ষিতা বলতে তোদের লজ্জা করেনা?


(ছবিঃ সংগৃহিত)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:৫৩
৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×