somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণজাগরণ মঞ্চ আওয়ামীকরণ

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গণজাগরণ মঞ্চ আওয়ামীকরণ
(কালের কণ্ঠ)

শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারের প্রতি আলটিমেটাম ও নতুন কর্মসূচি দেওয়া হলেও প্রজন্ম চত্বরের অবস্থান কর্মসূচির কী হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। এতে ১৭ দিন ধরে শাহবাগে অবস্থানকারী আন্দোলনকর্মীরা পড়েছেন অন্ধকারে। গণজাগরণের সংগঠক ও নেতৃস্থানীয়দের কাছে খোঁজখবর করেও তাঁরা কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। নতুন কর্মসূচিও তাঁদের কাছে ১৭ দিনের আগুনঝরা লড়াই-সংগ্রামের তুলনায় অনেক কমজোরি মনে হয়েছে। এ নিয়ে অসন্তোষও দেখা গেছে তাঁদের মধ্যে। মূলত আওয়ামী লীগকে বাঁচাতেই এমন কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারেও যে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, তাও বেশ নমনীয়। বলা হয়েছে, আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অথচ অনুসন্ধানে জানা যায়, গতকালের মহাসমাবেশে যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করার কথা ছিল ডা. ইমরান এইচ সরকারের, সেখানে স্পষ্ট করে বলা ছিল- ২৬ মার্চের মধ্যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এভাবে মূল লিখিত বক্তব্যের অনেক কিছুই পাল্টে গেছে বলে কথা উঠেছে।
অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ছাড়াই সর্বসাধারণের এ আন্দোলনের শাহবাগে অবস্থান পর্বের আপাত সমাপ্তি দিবস গতকালের মহাসমাবেশ ছিল আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দখলে। মহাসমাবেশ আওয়ামীকরণের বিশেষ চেষ্টাও ছিল স্পষ্টই দৃষ্টিকটু।
গতকাল গণজাগরণের মঞ্চ থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার। তিনি তিন পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য দিলেও আজ শুক্রবার থেকে জাগরণের মঞ্চ শাহবাগে থাকবে কি না সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি। জানা যায়, মঞ্চ থেকে নেমে উধাও হয়ে যান ডা. ইমরান এইচ সরকার।
কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে তাঁর বক্তব্য নেওয়ার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। তবে বিডিনিউজ জানায়, বক্তব্যের পর ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, শাহবাগ মোড়ে অবস্থান না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী সড়কে অবস্থান নিয়ে ছয় দফা দাবিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গণস্বাক্ষর অভিযান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু হবে, বিকেল ৩টা থেকে হবে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তবে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ও ছাত্রলীগ সূত্র নিশ্চিত করেছে, আজ থেকে স্থায়ীভাবে জাগরণের মঞ্চটি শাহবাগে থাকছে না। এর পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডা. ইমরান গণজাগরণ মঞ্চে ফিরে এসে সমবেতদের বলেন, 'শাহবাগে লাগাতার অবস্থান আজ (কাল) থেকেই সমাপ্ত। আপনারা বাড়ি চলে যান। কাল (আজ) সকাল ১০টা থেকে প্রজন্ম চত্বরে গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু হবে। অন্যান্য ঘোষিত কর্মসূচিও চলবে। সেখানে সবাই অংশ নেবেন।'
পাল্টে গেছে লিখিত বক্তব্য : গতকালের মহাসমাবেশের বক্তব্য গত বুধবার রাতে ঠিক করেন ব্লগার নেতারা। কিন্তু যে লিখিত বক্তব্যটি ডা. ইমরান এইচ সরকার পাঠ করেছেন, তা গত বুধবার রাতে লেখা বক্তব্যের হুবহু নয়। বুধবার রাতে বক্তব্যটি লেখার সময় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের একজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছিলাম, ২৫ মার্চের মধ্যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যদি সরকার ২৫ মার্চের মধ্যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করে, তাহলে ২৬ মার্চ শাহবাগে মহাসমাবেশের মাধ্যমে দেশবাসীকে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানো হবে।' তবে গতকালের দেওয়া কর্মসূচিতে এসবের কিছুরই উল্লেখ নেই। জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি না এসে বরং জামায়াতের বিচারের দাবি এসেছে। বিষয়টি আদালতের ওপর ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গণজাগরণের মঞ্চ যে থাকছে না শাহবাগে, এ বিষয়ে সমাপ্তি সমাবেশে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। সব মিলিয়ে বিষয়টি আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর চেষ্টা বলেও ওই নেতা জানান।
আওয়ামীকরণের চেষ্টা : গতকালের মহাসমাবেশ আওয়ামী লীগের দখলে নেওয়ার চেষ্টা ছিল স্পষ্ট। গণজাগরণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে ডা. ইমরান এইচ সরকার যখন কর্মসূচি পড়ছিলেন তখন তাঁর বাঁ পাশে ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, তাঁর পাশে ছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ। ডা. ইমরান এইচ সরকারের ডান পাশে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রকার ও আওয়ামীপন্থী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
সমাবেশে উপস্থিত একাধিক মানুষ জানিয়েছে, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুলের ভূমিকা খুবই দৃষ্টিকটু লেগেছে। কারণ, যখন ডা. ইমরান তিন পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পাঠ করছিলেন, তখন পাশ থেকে বেশ জোরে জোরে নাজমুল নির্দেশ দিচ্ছিলেন তাঁকে। এমনকি 'একটু আবেগ দিয়ে কর্মসূচি পড়া'র জন্য ডা. ইমরান এইচ সরকারকে নির্দেশ দেন ছাত্রলীগ সম্পাদক নাজমুল। এই ছাত্রলীগ নেতার ভাব দেখে মনে হচ্ছিল- তিনিই সব কিছু চালাচ্ছেন। তাঁর নির্দেশমতো, তাঁর কথাই পড়ে যাচ্ছেন ডা. ইমরান।
এ বিষয়ে জানার জন্য ডা. ইমরান এইচ সরকারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোনেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বক্তব্য দেওয়ার পরই তিনি অদৃশ্য হয়ে যান।
রক্ষা পেল আওয়ামী লীগ : আন্দোলনে যোগ দিতে আসা সাধারণ জনগণ মনে করে, সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের ঘূর্ণিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পুলিশ যখন ক্রমে মার খাচ্ছিল, আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন মাঠে টিকতে পারেনি, ঠিক তখন শাহবাগের গণজাগরণ আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। জামায়াত-শিবির ছাড়াও আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, পদ্মা সেতু, বিশ্বব্যাংক, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার, কুইক রেন্টাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো চাপা পড়ে গেছে শাহবাগের আন্দোলনে। এ পরিস্থিতিতে যদি যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে অনড় কর্মসূচি না দেওয়া হয়, তাহলে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ শঙ্কার মধ্যে পড়বে।
অনেকে বলছে, আওয়ামী লীগ জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে চায় না। এ কারণে আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর জন্যই গতকালের কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, জামায়াত নিষিদ্ধের জন্য ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইনের অধীনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ গঠন করতে হবে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ তরুণ মনে করেন, আওয়ামী লীগকে বাঁচাতেই জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারকে কঠোর কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি এ মঞ্চ থেকে।
ছাত্র ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক সোহান সোবহান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা চাই না এ আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের পকেটে যাক বা কারোর ভোট বাড়াক। আমরা চাই যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধী দলগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক।'
এক প্রশ্নের জবাবে সোহান বলেন, 'আমরা চেয়েছিলাম ২৫ মার্চের মধ্যে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করুক সরকার। ব্যক্তি হিসেবে কেউ যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। এটা দলগত সিদ্ধান্ত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের দল নাৎসি পার্টি এ কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জামায়াতকেও নিষিদ্ধ করতে হবে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে। এখানে কোনো আপস করা চলবে না।'
আন্দোলনে ১৭ দিন অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মীর ফাহিম সাবি্বর উদয় বলেন, 'সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারবে না। এ জন্যই এ রকম একটি কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। অথচ জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের জন্য আমরা সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার জন্য নেতাদের বলেছিলাম। তাঁরা আমাদের কথা রাখেননি।'
জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনের ভেতরকার বিভিন্ন সংগঠন সোচ্চার থাকলেও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে যাওয়ার কারণে আদৌ জামায়াত নিষিদ্ধ হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 'ফাঁসির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়' শিরোনামে একটি লিফলেট দেওয়া হয়- সেখানেও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে স্পষ্ট দাবি তোলা হয়।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×