১ম পরিচ্ছেদ-
ম্যাকটান - চিবু ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট , ফিলিপাইন । ছোট একটি ব্রেঞ্চে বসে আছি । ঘড়ির সময়টা আমার জানা নেই । ঘড়িটা বন্ধ হয়ে গেছে । অনেক দিন হলো চার্জ দেইনি । তবে এতটুকু বলতে পারি এখনো রাতের আঁধার কাটেনি । হয়তো কিছুক্ষণ পরেই আলো ফুটবে , শুরু হবে নতুন দিন । জীবন থেকে আরো একটি দিন চলে গেল । মানুষের জীবনে কখন কি ঘটে যায় কেউ বলতে পারে না । আমরা আসলে কি চাই হয়তো আমরা নিজেরাই জানি না । তবে যাই হোক , দিন শেষে ভাল থাকার অভিনয়টা পারি ।
একদম নিরিবিলি এয়ারপোর্ট । হয়তো বাহিরে বৃষ্টি তার কারন । তাছাড়া কোন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এমন হয় না । অনেক মানুষের সমাগম হয় , ছুটে চলে মানুষ তার গন্তব্যে । একদিন আমিও অনেক ছুটেছি এক এয়ারপোর্ট থেকে আরেক এয়ারপোর্টে । কিন্তু আজ আমার কোন গন্তব্য নেই । ২৭ ঘন্টা ভাসমান থাকার পরও চোখে কোন ঘুম নেই , কোন ক্ষুধা নেই । জীবনে প্রতিটি অধ্যায় গুলো যেন আজ পরোতে পরোতে মনে পড়ছে । চোখের পাতা গুলো বাড়ে বাড়ে কেপেঁ উঠছে । হয়তো আর দুটিদিন আগে এখানে থাকলে আজ আমার গন্তব্য থাকতো । ঠোঁটের কোনে হাসি থাকতো !!!
২য় পরিচ্ছেদ-
শিকাগো শহরে আমি একদম নতুন । এখনো কোন কিছু চিনি না । সবে মাএ ৫ দিন । এই কদিনে ভাত চোখেও দেখিনি । তিন বেলা পাস্তা চলে । আমি একজন প্রকৃত বাঙালি , ৫ দিন ভাত না খাওয়া যে কি কষ্টের ব্যাপার তা বলে বোঝাতে পারবো না । তবে আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি তাদের এর থেকেও বাজে বাজে অভিজ্ঞতা আছে । তবে সে যাই হোক, জীবনের প্রথম দেশের বাইরে এসে মনের মধ্য যে উষ্ণ আনন্দ রয়েছে তাতে এতটুকু কষ্ট করাই যায় ।
দেশের বাইরে আসার পর থেকে যেন মোবাইল হাত থেকেই নামে না । কত ধরনের এ্যাপ , গ্রুপ , আরো কত কিছু । হঠ্যাৎ একটা গ্রুপ পেলাম ।যেখানে নাকি এড হলে তারা আপনার সঙ্গী খুঁজে দিবে । আচ্ছা গ্রুপ মামা কোন সমস্যা নাই । আমিই আপনাদের খুঁজছি ।
আমার চৌদ্দ গুষ্টির ইনফরমেশন নেবার পরে তারা আমাকে বলে অপেক্ষা করতে, আমার জন্য নাকি উপযুক্ত বন্ধু খুঁজছেন ।তাদের কিছু সময় প্রয়োজন । শালার ধান্দা বাজি ।জীবনে আর কত ধরনের ধান্দাবাজি যে দেখবো ?
মনে মনে ভাবছি আজকে গোসলটা করা দরকার । মনের তীব্র ইচ্ছা নিয়ে গোসলের প্রস্তুতি নিতে নিতে মোবাইলে ম্যাসেজ এসে হাজির !!! মনে হয় গ্রুপ মামা ঘটকালি করে ফেলেছে !
যেমনটি ভেবেছিলাম তাইই হল । গ্রুপ থেকে এক রমণীর ম্যাসেজ এসেছে ।
-হাই
-*হ্যালো
-কেমন আছ ?
-*আমি ভাল । তুমি কেমন আছ ?
-আমিও ভাল । তুমি কোথায় থাক ?
-*আমি শিকাগোতে থাকি , জন্মসূএে বাংলাদেশী । আর তুমি ?
-আমি ফিলিপাইন থাকি , জন্মসূএেও তাই ।
-* আমি কি তোমার নাম জানতে পারি ?
-হ্যাঁ , আমি জেনিন । আর তুমি ?
-* আমি পবিত্র ।
-তুমি কি মুসলিম ?
-* হ্যাঁ । কেন ভয় পাও ?
-নাহ্ !! ভয় পাওয়ার কি আছে ।
-*আমরা কি ভাল বন্ধু হতে পারি ?
-হ্যাঁ কেন নয় । তোমার হোয়াসএ্যাপ নাম্বারটা চাইলে দিতে পার ।
জেনিন আর আমি যুক্ত হই হোয়াসএ্যাপে । শুরু হয় আমাদের কথা ।
-*জেনিন !!
-হ্যাঁ
-* আমি তোমার ছবি পেতে পারি ?
-অবশ্যই ।
প্রথম যেদিন জেনিনের ছবি দেখেছিলাম আমার বুকের কম্পন, রিক্টার স্কেলকে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছিল । তারপর থেকে আমার কোন কিছুতে মন বসতো না । শুধু মাথায় জেনিন থাকতো । নতুন চাকরি , নতুন জীবন , নতুন ঠিকানা , সব কিছু তুচ্ছ লাগতো ।
৩য় পরিচ্ছেদ-
কিং খালিদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট , রিয়াদ সৌদিআরব । দুটি ব্যাগ হাতে এয়ারপোর্টের গেটের সামনে দাড়িয়ে আছি একটি গাড়ীর জন্য , যা আমাকে আমার গন্তব্যে নিয়ে যাবে । অফিস থেকে একটি প্রজেক্টের কাজে ৬ মাসের ভিসাতে আমাকে শিকাগো থেকে এখানে পাঠানো হয়েছে । আর আমিও এখানে আসার জন্য রাজি ছিলাম কারন প্রতিটি মুসলিমের স্বপ্ন থাকে মক্কা - মদিনা দেখার । সব মিলিয়ে আমি অনেক খুশি ছিলাম । কিন্তু খুশি ছিল না জেনিন !! কারন তার মনে একটি ভয় সব সময় কাজ করতো সৌদি আরবের আইন অনেক শক্ত , তার মধ্যে অন্যতম ডেথ প্লান্টি !!
চলবে ...
আমি এসেছি -(২য় পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪৭