আমি এসেছি - ( ১ম পর্ব )
আজ জেনিনের ১৯তম জন্মদিন ছিল । সাথে আমাদের সম্পর্কের ২ বছর পূর্ণ হল । অর্থাৎ , ১৭ বছর বয়সী এক বালিকার সাথে আমার প্রেমের সূএপাত হয়েছিল বছর দুয়েক আগে । বিষয়টা নিয়ে আমি জেনিনকে বলতাম “ তুমি পিচ্ছি একটা মেয়ে প্রেমের কিছু বোঝ “???
এটা বললে জেনিন অনেক লজ্জা পেত । সত্যি কথা বলতে জেনিনের মত লাজুক মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি ।আমাদের দু-বছরের সম্পর্কের মধ্যে জেনিন আর আমার কখনো ঝগড়া হয়নি । সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল আমরা একে অপরকে ভাল বুঝি । দুজন সবসময় একটি কথাই বলতাম - যাই হোক আর তাই হোক আমরা আলাদা হব না । এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়েছে । জেনিনের সাথে পরিচয় না হলে হয়ত জানতাম না ধৈর্য্য কি জিনিষ । জেনিনের ধৈর্য্য ক্ষমতা দেখে আমি মাঝে মাঝে অবাক হই । একটা মানুষ কিভাবে এত ধৈর্য্যশীল হতে পারে ?
জেনিন পূর্বজন্ম সূএে ক্যাথলিক ছিল, পরবর্তীতে ওদের পরিবার পূর্ন খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহন করে । আমার জানা মতে এই দুই ধর্মের মধ্য কোন যোগসূএ আছে । এটা সম্পর্কে এত ভাল বলতে পারব না । জেনিন যতটুকু বলেছে ততটুকু বললাম । এটা নিয়ে ওর কোন মাথা ব্যাথা নেই কারন জেনিন সবসময় ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে রাজি।
শিকাগো আর ফিলিপাইনের সময়ের পার্থক্য ১৪ ঘন্টা !! বলা চলে একদিন আগে পরে । তবে সৌদিতে আসার পরে সেটি কমে ৫ ঘন্টা হয়েছে । জেনিন আর আমার মেসেজ আদান-প্রদান বেশী হতো । মজার ব্যাপর হল আমরা ভিডিও কলে কথা বলতে পারতাম না , শুধু একে অপরকে দেখতাম । আমি সেই আবেগ বোঝাতে পারবো না । চোখের সাথে চোখের কথা , মনের সাথে মনের কথা । জেনিনের কয়েক হাজার ছবি আমার কাছে আছে । সে কিভাবে ঘুমায় , কিভাবে ওর বিড়ালের সাথে দুষ্টমি করে , গাছে পানি দেয়, ওর বন্ধু সমাজ , সব ছবি । জেনিনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু রিসেলা । রিসেলার সাথে আমার বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে । তার একটাই কথা , আমি যেন জেনিনকে কখনো ছেড়ে না যাই ।
জেনিন সবসময় বলে -তুমি যখন আমার শহরে আসবে , আমার শহরের মায়া তুমি ছাড়তে পারবে না , একটি সুঘ্রান তোমার পিছু ছাড়বে না । একথা বলার পর জেনিনের মন খারাপ হতো । এ মন খারাপের কারন আমি জানি।
জেনিন যে গোত্রের অন্তরভূক্ত ,সে গোত্রের মানুষ নিজেস্ব গোত্রের বাইরে বিয়ে করতে পারে না । আর এটাই জেনিনের সবচেয়ে ভয়ের কারন ।
৩য় পরিচ্ছেদ-
আমাদের দিন গুলো খুব ভাল চলতে থাকে । শত ব্যস্ততার মাঝেও জেনিনকে সময় দিতে হয় । দিন শেষে একবার হলেও ভিডিও কলে বলতে হয় আমি ভাল আছি , আমি খেয়েছি , আমার কেন সমস্যা হচ্ছে না । সৌদি আরবে আসার পর থেকে জেনিন আমার জন্য অনেক চিন্তা করে । প্রতিটি দিন সে গুনতে থাকে কবে ৬ মাস শেষ হবে আর আমি আবার শিকাগোতে ফিরে যাব ।
আমি জেনিনকে কথা দিয়েছি আমি সৌদি থেকে ফিরলে তাকে নিয়ে মালদ্বীপ যাব । আমাদের প্লান, আমাদের প্রথম দেথা মালদ্বীপে হবে । জেনিন বিড়াল অনেক পছন্দ করে এজন্য তার সাথে সাথে আমাকেও বিড়াল পুষতে হয় । ও সব সময় বলত - তুমি আমার বিড়াল বাবু । একথা শুনলে আমি এক-অশ্লীল হাসি হাসতাম ।
তখন জেনিন বলত-
-এই তুমি এভাবে হাসো কেন ?
-প্রিয়তমা , তুমি সেটা বুঝবে না !!!
-বললে তো বুঝব ।
-বুঝবে না , বুঝবে না , হা হা হা !!!
আসলে বিড়াল যে মাছের সাথে সাথে অন্য কিছুও পছন্দ করে এটা মনে হয় শুধু বাঙালি ছেলেরাই জানে ।
একরাতে জানতে পারি জেনিন খুব অসুস্থ । তাকে হাসপাতালে এডমিট করা হয়েছে । এগুলো বৃষ্টিতে ভেজার ফলাফল । বৃষ্টিতে ভিজলে সে নাকি আমাকে অনূভব করতে পারে ।
-তোমাকে না বলেছি বৃষ্টিতে ভিজবা না ! তুমি আমার কথা শুনবা না কখনো ?
-বৃষ্টিতে না ভিজলে তোমাকে ছুঁব কিভাবে ?
-আর তো কিছুদিন !! তারপরেই আমি শিকাগো শিফট করলে আমরা মালদ্বীপ ঘুরতে যাব । তখন ছুঁতে পারতে না ? এখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আমার সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে ভাল লাগছে ?
-তুমি আমাকে কবে নিয়ে যাবে ?
-পড়াশুনা তো শেষ করবা ! আর আমিও একটু স্থির হই । আচ্ছা শুনো !!! এখন ঘুমাও তো , কাল তোমাকে ফোন দিব ।
-সকালে ফোন দিবা কিন্তু !!!
-আচ্ছা ঠিক আছে ।
সকাল থেকে কোন ভাবেই জেনিনের খবর নিতে পারছি না । ওর হোয়াসএ্যাপ , লাইন , মেসেঞ্জার , সব ডিসকানেক্ট । লোকাল নাম্বারেও ফোন যাচ্ছে না । রিসেলার সাথেও যোগাযোগ করতে পারছি না ।
কি করব !!! দুশ্চিন্তায় নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে !!!
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪২