আমি বড় একটা পরিবারের গর্বিত সদস্য। বিলুপ্তপ্রায় যৌথপরিবারের সরগরম উচ্ছ্বাসে এখনো আমদের সকাল হয়। দিনশুরুর তাড়ায় বড় ভাইরা যখন ব্যস্ত হয়ে উঠে তারও পূর্বে নাশতার টেবিলের চারদিকে ঠাসাঠাসি করে লাগানো টুল চেয়ারগুলো কয়েক দফা ভরেউঠে আবার খালি হয়ে যায়। মাত্র বর্ষ পেরুনো মেয়েটা আমার এই ঢাকায় সকালবেলা টায় একদমই উঠবে না। অফিস যাওয়ার সময় কপালে চুমু দিয়ে যখন মা বলে ডাকি তখন একটু খানি চোখমেলে একটা মিষ্টি হাসি দিয়েই আবার আলস্যে দুই চোখ বন্ধ করে ফেলে। এখন শুনি ভোরের আলো ওর চোখ জোড়া ছুঁয়ে দিলেই তার বিছানা থেকে উঠা চাই। জানালার পাশেই নাশপতি গাছগুলোর ডগায় ডগায় চন্চল চড়ুই আর বাবুই গুলো মেয়েটাকে আমন্ত্রণ জানায়। বিছানা ছেড়েই নাকি..এক অদ্ভুদ উচ্চারনে পাখি গুলোর সাথে সে বকবক করে। পাখি গুলোও যেন ওকে পেয়ে আরো বেশি কলোরবে মেতে উঠে! অতঃপর স্কুল যাওয়ার আগপর্যন্ত ‘ আমি আগে নিয়ে ঘুরবো.. মেয়েটাকে ঘিরে তার তিন পিচ্চি আপুর প্রানপন্ত কোলাহল । ওখানে আমার চঞ্চল মেয়েটা নাকি ভোরের মিষ্টি আলোয় ছাগল ছানার সাথে নিজেও তিড়িংবিড়িং করে লাফায়। উঠোনটা পেড়িয়েই মা দাদুর লাগানো জামরুল গাছটার মগডালে, থেকে যাওয়া শেষ কটা জামরুল তার যখন তখন চাই। তার ঠিক পাশে পুরানবাড়ির দেয়ালটায় কুবতর গুলোর বাসা। মেয়েটা তার ছোট্ট পায়ে উঠোনে নামলেই, দাদুবাড়ির এই ঝুঁটি দোলানো কবুতর দল কি মনেকরে যেন.. গুমুর-গুমুর আওয়াজ তুলে তার পায়ে পায়ে সারা উঠোন জুড়ে হেঁটে বেড়ায়।যেন বলতে চায় “ও নবীন, বাবার কাছে গিয়ে আমাদের ভুলনা ”
# দুটা দিন হল, এখানে (ঢাকা) নিরব বাসাটায় মেয়েটার শূন্যতা কি ভয়ানক ভাবে না বুকে বাজছে । অথচ এই কিছুকাল আগেও দুর্লব একাকী মুহর্তগুলো নিজের কাছে উপভোগের একটা অন্যরকম মাত্রা নিয়ে আসত।
# মাগো, বাবা তোমায় ভীষণ মিস করছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:০৩