somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উৎসর্গঃ যারা বাবা-মায়ের ভালবাসা উপেক্ষা করে নিজেকে জঙ্গী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ঈদ উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লাম। বাবা মায়ের কাছে যাচ্ছি। কিন্তু গুলশানে বর্বরতার দরূন সেসব বাবা মায়ের কথা মনে করে শীতল বাসেও মনটা ব্যাথায় পোড়াচ্ছে। ছোটবেলার একটি দিন খুউব মনেপরে গেল। তাই বাসে বসেই লিখছি।


আমার আব্বার জন্যই দিনটি জীবনে কখনো ভুলবনা। স্মৃতিময় দিনটার আগের দিনটিতে ৫ম শ্রেনীর বৃত্তির রেজাল্ট প্রকাশ পেয়েছিল। সেবার নিজ উপজেলায় টেলেন্টপুল বৃত্তি কোঠায় আমি প্রথমস্থান পেয়েছিলাম। কিন্ত মাত্র ২দিন হল ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে আব্বা তখন রংপুর থেকে অনেক দুরে ময়মনসিংহ জেলায়। ব্যবসার তদারকির জন্য সাধারনত বছরে দুবার তাকে যতে হত। আর একবার গেলে প্রায় মাসাধিক কাল অবস্থান করত। পরে আমি জেনেছি, আব্বা আমার রেজাল্ট শুনে এতই খুশি হয়েছিলেন যে, ময়মনসিংহ গাংগিনা পাড়ের স্বদেশী রোডস্থ প্রত্যেক ব্যাবসায়ী, কর্মচারীদের মিষ্টি বিতরন করেছিলেন। অতঃপর আমার জন্য ময়মনসিংহের বিখ্যাত মিষ্টি নিয়ে ঐ সন্ধ্যতেই ট্রেন ধরে রংপুর রওয়ানা দিয়েছিল। পরদিন ভোরে বাসায় উপস্থিত। তিনি তো শুধু আমার বাবা ছিলেন না, বিশেষ করে এতিম, তাছাড়াও গরীব আত্বীয়স্বজন, গ্রামবাসি আরও দূরদূরান্তের কতজন বিপদে আপদে তাকে সবসময় পিতার অবস্থানেই পেত। শুধুমাত্র আমারজন্য তার এই অপ্রত্যাশিত আগমন তাই সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। কিন্তু আগেরদিন একটা ভাল রেজাল্টের সুবিধা নিয়ে আমি মায়ের কাছ থেকে এক বন্ধুর বাসায় রাত কাটানোর অনুমতি পেয়েছিলাম। অন্তরাল উদ্দেশ্য ছিল ভিসিবি, টিভি ভাড়া করে কয়েক বন্ধু মিলে সিনেমা দেখা। আব্বা যখন জানল আমি বাসায় নেই এবং বড় ভাইয়া বাইক বের করেছে আমায় নিয়ে আসবে। বড় ভাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে, সবাইকে আরো অবাক করে দিয়ে, এক প্যাকেট মিষ্টি সহ সরকার চাচাকে সাথে নিয়ে তিনি নিজেই রিকশা করে আমার ঐ বন্ধুর বাসায় হাজির। সেদিন সকালবেলাটা আমার কাছে এখনও জ্বলজ্বলে। বন্ধুটির বাবা মা যেন বুঝে ওটতে পারছিলনা, এতবড় মানুষটাকে কিভাবে খাতির যত্ন করা যায়। আব্বার আগমনে দেখতে দেখতে ঐ পাড়ার সব মুরুব্বী এসে হাজির হয়েছিল। সেই সকালে আমায় তো নিজ হাতে মিষ্টি খাইয়েছিলেন সাথে ময়মনসিংহ থেকে আনা মিষ্টিগুলো সব বাসা থেকে এনে, ঐপাড়ার উপস্থিত সবাইকে খাওয়ানো হয়েছিল। এইতো সেদিন, বন্ধুর বাবাটি আমায় পেয়ে স্মৃতিচারন করছিল ২৩বছর আগের সেই সকালটির কথা। গ্রামের সব মুরুব্বী ঐ সকালে তার উঠানে বসে চা মিষ্টি খেয়েছিল। আমার সাথেসাথে তার কাছেও ঐ সকালটা ভোলবার মত নয়। সেই বাবার ছেলে হয়ে আজ আমি যদি জঙ্গিগোষ্টির সাথে হাত মিলায়ে এমন অমানবিক, জঘন্য একটা হামলায় নিজেকে জড়াতাম..আর ভাবতে পারছিনা। শুধু জানি আমার নিজ মৃত্যুও তার অসম্মানের ক্ষত এতটুকুও দূর করত না।
আমাদের মাতৃভুমি টা এমন যেখানে এক হিন্দু কলিগ রমজান মাসে ওপেনে খাবার খায় না কারন তার মুসলিম কলিগটি রোজা রেখছে। এটা সেই দেশ, যেখানে বন্ধুরা বিফ অর্ডার করেনা কারন তাদের সাথে হিন্দু বন্ধুটি বিফ খায়না। এটা সেই অন্যন্য জাতি যারা Eid' moon and Buddha's flowing lantern' এক সাথে উদযাপন করে। কিছুকিছু ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটু লাগলেও, এই দেশেরই নাগরিকরা বিদেশী মাত্রই মালিক ন্যায় সম্মান করে। কিন্তু যা ঘটে গেল, Holey Artisan Bakery Cafe তে। এটা কখনই বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করেনা। এটা আমরা নই।
আমি বাবা হিসাবে গত দেড় বছর ডাইরি,ফেসবুক এদানিং ব্লগে আমার মেয়ের জন্য কিছু কিছু লিখি। মেয়ে বড় হলে যেন বুজতে পারে, এই দেশটা, এই দেশের মানুষগুলো তার বাবার কাছে কতই না আপন। আমার মেয়ের প্রথম জন্মদিনে মেয়েকে লেখা একটি পত্র সেসব মানুষদের জন্য আপলোড করলাম যারা বাবা-মায়ের ভালবাসা উপেক্ষা করে নিজেকে জঙ্গী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। পৃথিবীর প্রতিটা বাবা-মা তার সন্তানকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসে। কেউ চাইবেনা তার সন্তান সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গী হোক।

মাগো,
গতকাল ছিল তোমার প্রথম জন্মদিন ! আজ থেকে এক বছর আগে বাঙালি বিজয়ের ঐতিহাসিক দিনটিতে পরমকুরুনাময় তোমাকে আমদের কোলে পাঠিয়ে আমাদের জীবন কে পরিপূর্ণ করেছেন । বিজয়ের এই দিনটিতে আমার বাঙালি সত্তায় যেমন গর্ব হয়, গতকাল বাবা হিসাবে আমার কাছে দিনটি আরও রঙিন আরও আনন্দময় হয়ে উঠেছিল। তোমার দুটি চঞ্চল চোখে, ঠোটের কোনে একটুকরা মিষ্টি হাসিতে, ছোট্ট দুটি এলোমেলো পায়ে তোমার অভয়ে হেঁটে বেড়ানো, নতুন একটা বাংলা শব্দ শিখেগেলে পাখির মত আনন্দে বারবার বাবাকে শোনানো, এ সবকিছুই আমাদের মুক্তিযুদ্দে বিজয়ের রক্তে কেনা। তুমি যখন আরও বড় হবে বাবা তোমায় জানাবে কিভাবে দেশ কে ভালবেসে তাদের রক্তের ঋণের কিছুটা শোধ করা যায়।
গতকাল তোমার প্রথম জন্মদিনে চোখ ধাঁধানো কোন সেলিব্রেশন এর আয়োজন ছিলনা ! উপাদেয় কোন কেক এ তোমার নাম জ্বলজ্বল করেনি, বাবার কাছ থেকে নতুন কোন ড্রেস বা উপহার ও তুমি পেলে না... অথচ প্রতিদিনের মত বাবার কাঁধে প্রথম শৈশবের দুরন্তপনায়, কত কত আনন্দময় অভিবেক্তিতে সারাদিন আমাদের জরিয়ে রাখলে। যখন তুমি আরও বুজতে শিখবে, দেখবে মানবসভ্যতার ধুয়ো তুলে পৃথিবী টা কেমন মোহগ্রস্ত হয়ে অশালীন উন্নয়নের নামে ছুটছে্‌, তখনো জৌলুশের মোহ তোমার মনের কাছে পরাজিত হউক । স্বভাবে মননে আজকের দিনগুলির মতো মোহহীন আনাবিলশান্তির অসীমতায় তুমি বড় হও।
১৬ই ডিসেম্বর, এই দিনটিতে তুমি আমাদের জীবনে এক স্বর্গীয় আনন্দ নিয়ে এসেছ তাই গতকাল তোমার প্রথম জন্মদিনে আমরা তোমাকে তোমার সেইসব বোনদের কাছে নিয়ে গেছিলাম (Visit and Spent time at Ath-Takowa Girls Orphan Madrasha, 16th December 2015) যাদের বাবা মা নেই তোমার যেমন আছে। গতকাল তুমি তাদের জীবনে এক টুকরা আনন্দ উপহার দিয়ে এসেছ। তোমার হয়ে আমরা তাদের সাধ্যমত আপ্যায়ন করেছি।তোমার আম্মু রোজা থেকে পরমস্নেহে মাথায় হাতবুলিয়ে তাদের কাছে টেনেছে, নিজ হাতে খাইয়েছে। তুমিও এত এত আপু পেয়ে কি খুশি। মাগো, আমি আজীবন তোমার দাদুকে দেখেছি তার বিশাল এক পরিবার থাকা সত্ত্বেও যারা অনাথ তাদের প্রতি কি গভীর মমতা নিয়ে পাশে দাঁড়াত । তোমার এই জন্মতিথিতে পরম করুণাময়ের কাছে দোয়া করি এতিম দের প্রতি আল্লাহ জেন তোমার মনে মোহাব্বত সবসময় জারি রাখে। দুনিয়ার সব অনাথ-এতিম দের আশ্রয়ে-সহায়ে আগ্রপথিক হওয়ার সুযোগ করেদেয়।
তুমি অনেক বড় হও।
//
বাবা

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:০৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×