
বিশিষ্ট পদোগলক ‘বিশেষ অজ্ঞ’ নির্মলেন্দু গুন প্রথম আলুতে ‘হল্যান্ড, তোমার চোখের জল আমার চোখে দাও’ শীর্ষক নিবন্ধে যা বলেন,” ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে যেমন ভয় পায়, আমিও তেমনি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা পরিচালনার জন্য ফিফা-মনোনীত ব্রিটিশ রেফারির কোজাক-মার্কা চেহারা দেখে, সত্যি বলতে কি, কিছুটা ভয়ই পেয়েছিলাম। ব্রিটিশ রেফারি সম্পর্কে পত্রিকায় সদর্থক প্রচারণা পাঠ করার পরও আমার সন্দেহ কাটেনি। আমার কাছে ওই রেফারি সম্পর্কে তাঁর স্ত্রীর মন্তব্যটি অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য বলেই মনে হয়েছিল। ১১ জুনের বিকেলে প্রচারিত চ্যানেল আই-এর একটি লাইভ অনুষ্ঠানে ওই রেফারি সম্পর্কে আমি আমার সন্দেহের কথাটি বলেও ছিলাম। রেফারি সম্পর্কে তাঁর স্ত্রীর মন্তব্যটি ছিল এ রকম : ‘ও তো ওর ছেলেপুলেদেরই সামলাতে পারে না, বিশ্বকাপ ফাইনালের ২২ জন খেলোয়াড়কে ও সামলাবে কীভাবে?’
বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দেখার সময় ওই ব্রিটিশ রেফারি সম্পর্কে তাঁর বিদুষী স্ত্রীর নির্ভুল ভাষ্যটি আমার বারবার মনে পড়ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই, সম্ভবত প্রথম পনেরো মিনিটের মধ্যেই, তাঁর হলুদবাণে বিদ্ধ হলেন হল্যান্ডের তিন আর স্পেনের দুই খেলোয়াড়। স্পেনের চেয়ে ডাচদের বিরুদ্ধে হলুদের প্রয়োগ যখন ক্রমশ বাড়তেই থাকল, তখন আমি স্মরণ করলাম সার্বিয়া বনাম জার্মানির খেলা পরিচালনাকারী রেফারির কথা। তাঁরা দুজন কি একই ব্যক্তি? আমি তো পেশাদার ক্রীড়ালেখক নই, তাই ওদের ঠিকুজি স্মরণে রাখি না। দেহে এক না-ও যদি হন, অন্তরে যে তাঁরা এক, তাঁদের মাঠের আচরণ দেখে আমি তা বেশ বুঝতে পেরেছি। এই দুই রেফারিকে নিয়ে গবেষণা করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। ক্রীড়াসাংবাদিকতায় যাঁরা নিয়োজিত আছেন, আমি তাঁদের ওপর এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালানোর দায়িত্ব দিতে চাই। ইউরোপের দুটি দেশের মধ্যকার ফাইনালে ইউরোপিয়ান রেফারি কেন দেওয়া হলো, সেটিও অনুসন্ধানের বিষয় হতে পারে। অন্য কোনো মহাদেশের রেফারি হলে ফাইনালটা আরও বৈশ্বিক রূপ পেত। এ ছাড়া আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপে আফ্রিকান কোনো রেফারিকে ফাইনাল পরিচালনার দায়িত্ব দিলে আফ্রিকার প্রতিও সম্মান দেখানো হতো।
স্পেনের ডিফেন্ডার (দূর থেকে বুনো শূকরের মতো ছুটে এসে জার্মানির জালে বল পাঠিয়ে যিনি বিখ্যাত হয়েছেন) পুয়োল যে বাংলাদেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা রোবেনের কমলা জার্সি টেনে ধরেছিলেন, রহস্যজনকভাবে রেফারির কাছে তা অশোভন বা অসংগত বলে মনে হয়নি। বরং প্রতিবাদ করতে গিয়ে রেফারির রক্তচক্ষু দেখলেন রোবেন। কিন্তু কিছুক্ষণের ব্যবধানে তার চেয়েও কম অপরাধের দণ্ড মাথায় নিয়ে জার্মানির ক্লোসার মতোই দুই হলুদের চিপায় (২ হলুদ = ১ লাল) পড়ে নেদারল্যান্ডের একজন ডিফেন্ডারকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়। ১২০ মিনিটের খুব কাছাকাছি পৌঁছেও টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকে যাওয়া নেদারল্যান্ড পরিণত হয় দশজনের দলে। তার পরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের মতোই স্পেনের ইনিয়েস্তাও খুঁজে পান নেদারল্যান্ডের গোলের জাল। তার আগে নয়। ”
একজন হল্যান্ড সমর্থক হিসাবে দুঃখ তিনি করতেই পারেন, কিন্তু একটি উলটাপালটা জিনিস বলতে পারেন না। তার খোড়াঁ যুক্তিগুলো খন্ডন না করা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না। প্রথমেই বলতে চাই ইউরোপের সেরা লীগ ইপিএল, তাই ওখানকার রেফারী যে সেরা হবেন এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া ওই লিগেই শরীর নির্ভর খেলা বেশী হয় (স্প্যানিশ লীগের তুলনায়), তাই এই রেফারীদেরই ওই রকম খেলা পরিচালনায় অভিজ্ঞতা বেশী।
বিশিষ্ট পদোগলক ‘বিশেষ অজ্ঞ’ নির্মলেন্দু গুন রেফারীর কার্ড প্রীতি দেখলেন, কিন্তু ভ্যান ভোম্বল আর ডি জং মারপিট দেখলেন না। হল্যান্ড স্পেনকে স্বাভাবিক খেলা খেলতে দিবে না এইটা অনুমেয়ই ছিল কিন্তু এভাবে মাইরপিট করবে এটা কিভাবে বুঝা যাবে... ডি জং জাবি আলন্সোকে বুক বরাবর ঝেড়ে লাথি মেরে শুধু হলুদ কার্ড খেলেন, তাতে বলাই যায় রেফারী গুরু পাপে লঘু দন্ড দিয়েছেন। হল্যান্ড মাত্র একটি লাল কার্ড খেলো, কিন্তু সংখ্যাটা আরো বেশী হওয়া উচিত ছিল।
নির্মলেন্দু গুন বার্সা দলপতি কার্লোস পুয়োলকে যেভাবে সম্বোধন করলেন আমি বাকরুদ্ধ। কার্লোস পুয়োলই সেইসব খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম যারা ক্লাব ও জাতীয় উভয় পর্যায়ই সর্বোচ্চ সাফল্য পেয়েছেন (২০০৯ এর বার্সার হয়ে ৬টি শিরোপা, ২০০৮ এ ইউরো এবং সর্বশেষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন)। তার সম্পর্কে শব্দচয়নে একটু শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।
আর আমি যতটুকু জানি বাংলাদেশের কোন গার্মেন্টসই বিশ্বকাপের খেলোয়ারদের জার্সি তৈরীর কাজ পায়নি (ইপিলিয়ন গ্রুপ দর্শক জার্সি বানানোর কাজ পেয়েছিল সম্ভবত)।
নিজেরদল সমর্থন করা খারাপ কিছু নয়, কিন্তু এভাবে অযক্তিকভাবে বিজয়ীদের ধুয়ে দেওয়াটা কি ঠিক?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




