somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুলে ভরা বাংলাদেশের ইসলামন্থী রাজনীতি

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ ভোর ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা এক মিলিয়নের উপরে। তারা মিয়ানমারে টিকতে পারেনি। সরকারী নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। মিয়ানমার ছাড়তে তাদের বাধ্য করা হয়েছে।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের অসহায় মুসলিম জনগোষ্ঠি। সেখানে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন। তাদের কোনো নাগরিক অধিকার নেই। রাজনৈতিক অধিকার নেই। শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরী কোনো অধিকারই দেয়নি তাদের সরকার। খুন, ধর্ষণ, হত্যার মুখে তারা কোনো মতে জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে পেরেছে, কারন বাংলাদেশের সরকার তাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে। আকাশের মতো বিশাল উদারতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। মানবতার অনবদ্য নজির স্থাপন করেছেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিরোধী দল কোথায় যাবে? কে তাদের জন্যে সীমান্ত খুলে দেবে? কে তাদের জন্যে মানবতার নজির স্থাপন করবে?

মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের বিশেষ সরকার বিদায়ের পরে থেকে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের উপর, নেতাকর্মীদের উপর যে পরিমানে নির্যাতন হয়েছে, হচ্ছে, তা মিয়ানমারের সরকারী নির্যাতন থেকে কোনো অংশে কম নয়। বাংলাদেশে মিয়ানমারের মতো গণহত্যা করা হচ্ছে না, কিন্তু গণনির্যাতন করা হচ্ছে। সরকার বিরোধী রাজনীতির হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলখানায় বন্দি। হাজার হাজার নেতাকর্মী সারা জীবনের জন্য পঙ্গু। হাজার হাজার নিখোঁজ, গুম। যারা পেরেছে বিদেশে পালিয়ে গেছে। রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছে। যারা পারেনি তারা দেশের মধ্যে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বছরের পর বছর তারা নিজের ঘরে ঘুমাতে পারে না। নিজের মহল্লায় ঢুকতে পারে না। বিবাহিতরা বউ বাচ্চার মুখ দেখতে পারে না। ছাত্ররা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারে না। অঘোষিত ভাবে তারাও নাগরিক অধিকারের বাইরে।

বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা চাকরী পায় না। ব্যাবসা বাণিজ্য করতে পারে না। ছেলে মেয়েকে ভালো স্কুল কলেজে ভার্তি করতে পারে না। কথায় কথায় সরকারী নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়। জেলখানায় যেতে হয়। শারিরীক নির্যাতন ভোগ করতে হয়। বড় বড় নেতারা হাস্যকর মামলায় গ্রেপ্তার হয়। রিমান্ডের নামে ভয়ানক নির্যাতন ভোগ করে। এর পরেও কি বাংলাদেশের বিরোধী দলকে, নেতাকর্মীকে রোহিঙ্গাদের সাথে তুলনা করা যায় না?

রোহিঙ্গারা তো ভাগ্যবান। মিয়ানমারের পাশে বাংলাদেশের মতো একটা দেশ আছে। মানবিক একজন রাষ্ট্র প্রধান আছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার বিরোধী রাজনীতিকদের জন্য কে আছে? কোথায় যাবে তারা? কোন দেশে আশ্রয় নেবে? কে তাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেবে?



বাংলাদেশে সব চেয়ে বেশি সরকারী নির্যাতনের মুখে রয়েছে ইসলামপন্থীরা। কারন তারা ইসলামের রাজনীতি করে। প্রচলিত শাসনব্যবস্থার বাইরে তারা ইসলামি শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। তারা ইসলামি ভাবাদর্শে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায়। মোদ্দা কথা হলো তারা তাদের মুসলমানিত্ব কায়েম করতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে খুন, রাহাজানি, হত্যা, ধর্ষণ, দূর্নীতির বিশেষ কোনো অভিযোগ নেই, অথচ তারা বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত জনগোষ্ঠি। রাজনৈতিক ভাবে বিপন্ন জনগোষ্ঠি। কারন একটাই- তারা ইসলামের কথা বলে। প্রচলিত শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলে। যেমন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি, তাদের অপরাধ একটাই, তারা মুসলমান। তারা ধর্মীয় পরিচয়ের কারনে সে দেশে বিপন্ন। আর বাংলাদেশের ইসলামপন্থীরা বিপন্ন কারন তারা ইসলামি আদর্শের রাজনীতি করে।

বাংলাদেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক জনগোষ্ঠির মধ্যে সব চেয়ে বেশি নির্যাতনের মুখে রয়েছে জামায়াতে ইসলামি এবং তাদের ছাত্র সংগঠন শিবির। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের বর্ষিয়ান প্রায় সব নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। শিবিরের নেতৃত্ব দেয়া হাজার হাজার নেতাকর্মীকে পাখির মতো গুলি করে মারা হয়েছে। গুম করা হয়েছে। সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। বিনা বিচারে জেলখানায় আটকে রাখা হয়েছে। জামায়াতের নির্বাচনী নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বোঝা যায় সরকার বাংলাদেশ থেকে জামায়াত শিবির মুছে ফেলতে চায়। জামায়াতের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে চায়। তাদের নেতৃত্বশূন্য করতে চায়।

এতে সরকারের অনেক লাভ। প্রথম লাভ হলো দেশের ইসলামপন্থীদের দমন করা। কারন সরকারী রাজনীতিকরা মনে করেন, ধর্ম এবং রাষ্ট্র ভিন্ন দুটি বিষয়। একটির সাথে অন্যটি মেলানো যাবে না। ধর্ম থাকবে মসজিদ, মন্দিরে। রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায়, শিক্ষায় ধর্মের কোনো প্রভাব থাকবে না। অর্থাৎ তারা ‘ইসলাম’ মানেন বা পালন করেন ‘ধর্ম’ হিসাবে, আদর্শ হিসাবে নয়। ইসলামকে তারা আদর্শ হিসাবে বরদাস্ত করতে রাজি নন। কিন্তু দেশের ইসলামপন্থী রাজনীতিকরা ‘ইসলাম’ কে শুধুমাত্র ধর্ম নয়, আদর্শ হিসাবে মানতে চায়। রাষ্ট্রে ইসলামি আদর্শের শাসন কায়েম করতে চায়। এখানেই সরকারের সাথে ইসলাপন্থীদের মূল বিরোধ।

দ্বিতীয় কারন হলো- সরকারী দল রাজনীতির সরলাঙ্ক মিলিয়ে দেখেছে, বাংলাদেশে বিএনপি জামায়াতের রাজনৈতিক বা নির্বাচনী ঐক্য অব্যাহত থাকলে ক্ষমতার মুখ দেখা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়ায়। এ হিসাব মিলাতে বেশি দুরে যাওয়ার দরকার নেই, একানব্বই থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে কটি নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোর ফলাফল এবং জোটের দিকে নজর দিলেই পরিস্কার বোঝা যায়।
বিএনপি জামায়াতের জোট ভাংতে সরকার সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করেছে বিএনপির উপর। নানা উপায়ে প্রলোভন দেখিয়েছে জামায়াতকে। অবশেষে সরকার জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করার নীতি গ্রহণ করেছে। জামায়াতকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখার জন্য তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে। কিন্তু তাতে কি খুব বেশি লাভ হয়েছে? হয়নি। স্থানীয় সরকার, মেয়র বা ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় নিবন্ধন বাতিল করে জামায়াতকে দলীয় ভাবে নির্বাচন থেকে দুরে রাখা গেলেও মাঠ পর্যায়ে বিএনপির সাথে তাদের ঐক্য ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি। সুতরাং আশানারুপ ফলাফলও সরকারের ঘরে ওঠে নিই। আগামী ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া দেশের ছয় বিভাগীয় শহরের মেয়র নির্বাচন এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার আগের নীতিতে ফিরে গিয়েছে। জামায়াতকে নতুন করে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য, নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য সম্প্রতি জামায়াতের আমীর, নায়েবে আমীর এবং জেনারেল সেক্রেটারীসহ প্রথম সারীর নেতাদের আটক করেছে। রিমান্ডে নিয়েছে, নির্যাতন করেছে।



জামায়াতের পরে দেশের সব চেয়ে বড় ইসলামি দল হলো ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ। এই দলটি এখন পর্যন্ত তুলনামূলক কম নির্যাতনের মুখে পড়েছে। বরং অনেক রাজনৈতিক দল থেকে তারা বেশ খানিকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সরকারের বাঁধা বিপত্তি তুলনামূলক কম। এর পেছনেও অনেকগুলো কারন আছে, প্রধান কারন হলো- ইসলামি আন্দোলনকে এখনো গোনায় ধরা হয় না। দেশের জাতীয় রাজনীতিতে তারা বিশেষ কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত রাজনীতির জন্য যোগ্য নেতার অভাব আছে। তাদেরকে যতোটা রাজনৈতিক দল মনে করা হয় তার থেকে অনেক বেশি মনে করা হয় খানকা কেন্দ্রীক ‘পীর-মুরিদী’ সংগঠন হিসাবে। তারাও নিজেদের রাজনৈতিক নেতা হিসাবে পরিচয় দেয়া থেকে ‘পীর’ পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করে বা স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। যে কারনে অনেক সময় দেশের জাতীয় রাজনীতিতে ইসলামি আন্দোলনের চেয়ে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।

দ্বিতীয় কারন হলো- ইসলামি আন্দোলন কট্টোর ভাবে জামায়াত বিরোধী। তারা এতটাই জামায়াত বিরোধী যে জামায়াতকে ইসলামি দল বলেই স্বীকার করে না। বাংলাদেশের কওমিপন্থী অধিকাংশ নেতা এবং দল ঐতিহ্যগত ভাবে জামায়াত বিরোধী। কিন্তু ইসলামি আন্দোলনের মতো এতটা সোচ্চার অন্য কাউকে দেখা যায় না। আরো একটা কারন হলো দেশের রাজনৈতিক জোট বা নির্বাচনী জোটে ইসলামি আন্দোলন কারো সাথে নেই। তারা একক ভাবে ভোট করে। এতে বেশি লাভবান হয় সরকারী দল। কারন সারা দেশে ইসলামি আন্দোলনের হয়তো ১০ লাখ ভোট আছে। ছড়ানো ছিটানো এই ১০ লাখ ভোট দিয়ে তারা কোথাও বিজয়ী হতে পারে না। আবার কারো সাথে ঐক্যও করে না। ফলে ভোটের চুলচেরা হিসাব কষলে দেখা যায় তাদের একক নির্বাচনে লাভবান হয় সরকারী দল। সুতরাং আওয়ীলীগ সরকারের আমলে তারা যদি কিছুটা আনুকুল্য পায় এতে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। কিন্তু সমস্যা হলো- আপাতো দৃষ্টিতে ইসলামি আন্দোলন সুবিধা জনক জায়গায় থাকলেও ভবিষ্যতে এই দলটি জন্য জামায়াত থেকেও বহুগুন বেশি কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। হয়তো এমন একটা সময় আসেবে যখন আওয়ামীলীগ-বিএনপি এক হয়ে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়বে, নির্যাতন করবে।

মজার বেপার হলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামিপন্থীরা এত নির্যাতিত, বিপন্ন শুধুমাত্র তাদের ভুল রাজনীতি এবং অহংকারের কারনে। দেশের জাতীয় রাজনীতিতে তারা মূলত একা। একক ভাবে তারা রাজনীতি করে, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই করে। যুগযুগ ধরে তারা এভাবেই চলছে। জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী দল। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা দলীয় ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে। তাদের কারনেই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ দাড়ি-টুপি দেখলেই বলে রাজাকার, আলবদর। দেশ স্বাধীনের পরেও তারা তাদের ভুল সুধরে নেয়নি। তারা যে সংগঠন নিয়ে স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল সেই সংগঠন নিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করে। তাদের যে নেতারা স্বাধীনতার বিরোধীতায় নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদেরকেই স্বাধীন দেশে নেতৃত্বে রেখেছে। এই ভুলের মাশুল এখন তারা গুনছে। তাদের ভুল রাজনীতি, অহংকার এবং নেতৃত্বের লোভের কারনেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখনো ইসলামি দলকে, ইসলামের রাজনীতিকে বাকা চোখে দেখে। তাদের ভুলের কারনে দেশে হাজার হাজার ইসলাম প্রেমি যুবকের জীবন আজ বিপন্ন। তাদের সামনে কোনো আলো নেই, উজ্জল ভবিষ্যত নেই।

জামায়াত শিবিরের অনেকেই হয়তো মন খারাপ করবে, কিন্তু এটাই কঠিন সত্যি- জামায়াতের কারনেই ইসলামি রাজনীতির জন্য বাংলাদেশের সমতল ভূমি সবচেয়ে বেশি বন্ধুর হয়েছে। তারা কেনো স্বাধীনতা বিরোধী দল (জামায়াত) নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করলো? কেনো তারা স্বাধীনতা বিরোধী নেতাদের নেতৃত্ব থেকে সরালো না? কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন, জামায়াত না থাকলে বা স্বাধীনতা বিরোধী নেতারা নেতৃত্বে না থাকলে কি দেশের ইসলামপন্থীরা নির্যাতনের মুখে পড়তো না? বিরোধীতার মুখে পড়তো না?

হয়তো পড়তো, কিন্তু নির্যাতকরা এতটা জনসমর্থন পেতো না। সরকারী নির্যাতনে পড়লে দেশের সাধারণ জনগণের কাছে তারা আনুকুল্য পেতো। সহানুভুতি পেতো। এতটা অসহায় হতো না।

১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ইসলামি ছাত্র শিবিরের একদল মেধাবী যুবক সে সময়ের তুখড় শিবির নেতা আবদুল কাদের বাচ্চুর নেতৃত্বে সংগঠত হয়েছিল। তারা জামায়াতের স্বাধীনতা বিরোধী নেতাদের নেতৃত্ব থেকে সরে দাড়ানোর আহবান জানিয়ে বলেছিলেন, আপনারা নেতৃত্বে থাকলে এক সময় কঠিন মাশুল গুনতে হবে। জামায়াতের সে সময়ের নেতারা ছাত্র নেতাদের কথা কানে তোলেন নিই। বরং আবদুল কাদের বাচ্চুসহ প্রায় দুই শতাধিক মেধাবী শিবির নেতাকে এক সাথে দল থেকে বহিস্কার করেছিলেন। পরে তারা যুব শিবির নামে আলাদা সংগঠন করেছিল, কিন্তু জামায়াতের অসহযোগিতায় বেশি দুর এগুতে পারেনি। জামায়াতের ক্ষমতা লোভী নেতারা সেদিন বুঝে গিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভুমিকার দায় নতুন প্রজন্ম নিতে চায় না। যুব সংগঠন করার সুযোগ দিলে নতুন করে ওই বিষয় আবার সামনে চলে আসতে পারে। এতে তাদের নেতৃত্বে থাকা কঠিন হয়ে দাড়াবে। তাদের নেতৃত্ব চ্যালেন্জের মুখে পড়বে। যা তারা কোনো দিনই চাননি। ফলে এখন পর্যন্ত জামায়াতের কোনো যুব সংগঠন নেই। আর এভাবেই মাশুল গুনতে হয়েছে, হচ্ছে জামায়াত কে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হচ্ছে দেশের ইসলামপন্থী রাজনীতি।



জামায়াতের বাংলাদেশে কোনো বন্ধু নেই। থাকবে কি করে? তারা সমমতের মানুষদের বাদ দিয়ে, সমআদর্শের দল বাদ দিয়ে ঐক্য করেছে বিএনপি-আওয়ামীলীগের সাথে। দেশের অন্যান্য ইসলামপন্থী দলের সাথে তাদের সুসম্পর্ক নেই। ঐক্য নেই, জোট নেই। এই চরম দুসময়ে বিএনপি কতোটা দাড়িয়েছে তাদের পাশে? কতোটা, কি ভুমিকা রেখেছে?

ঘোড়ার সাথে ঘোড়ার পালের বন্ধুত্ব হয়, শিংহর সাথে শিংহ পালের। নিজের গোত্র ছাড়ে অন্য গোত্রে কেউ বেশি দিন টিকতে পারে না। স্বার্থের জন্য সাময়িক বন্ধুত্ব হতে পারে, স্থায়ী হয় না। বিপদের সময়ে পাশে পাওয়া যায় না। এ হিসাব তো পাগলেও বোঝে, জামায়াত কেনো বুঝলো না? জামায়াত বিএনপির সাথে ঐক্য করে, আওয়ামীলীগের সাথে ঐক্য করে, কিন্তু দেশের ইসলামপন্থীদের সাথে করে না। বরং সচেতন ভাবে বিরোধ জিয়িয়ে রাখে। দুরত্ব বজায়ে রাখে। কারন কি? কারন একটাই, অহংকার। তারা অন্যদের গোনায় ধরে না। এখানেই জামায়াতের রাজনীতির বড় ভুল। জামায়াত দেশের ইসলামপন্থীদের মধ্যে বড় দল, অভিজ্ঞ দল। তাদের দায়িত্ব বেশি। উদারতাও বেশি হওয়া উচিত ছিল, যা তারা কোনো দিনই দেখাতে পারেনি।

অভিন্ন ভুল রাজনীতি করছে দেশের দ্বিতীয় বড় ইসলামিপন্থী দল ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ। তারাও আত্ম অহমিকায় ভুগছে। দেশের রাজনীতিতে তাদেরও কোনো বন্ধু নেই। কারো সাথে বিশেষ কোনো সখ্যতা নেই। জোট নেই, ঐক্য নেই। তারা একলা চলো নীতিতে চলছে। এই নীতির পক্ষে তাদের যুক্তি হলো- দেশের ইসলামি শক্তিকে তারা কারো ক্ষমতার শিড়ি হতে দিতে চায় না। অন্যের তলপিবাহক হতে দিতে চায় না। তারা ইসলামপন্থীদের আলাদা প্লাটফর্ম গঠন করতে চায়। দেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের স্বতন্ত্র শক্তি তুলে ধরতে চায়। তাদের এই চিন্তা, ইচ্ছা খুবই যৌক্তিক। খুবই পজেটিভ। দেশের ইসলামপন্থীদের স্বতন্ত্র প্লাটফর্ম থাকা দরকার। যা গোড়া থেকে হয়ে আসলে এতদিনে দেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থীরা হয়তো চালকের আসনে থাকতে পারতো। কিন্তু দেখার বিষয় হলো তাদের কথা এবং কাজের সাথে মিল আছে কতোটুকু? দেশের ইসলামপন্থীদের স্বতন্ত্র প্লাটফর্ম গঠনে ইসলামি আন্দোলনের ভুমিকা কি? চেষ্টা কি? সফলতা কি? তারা কি উপায়ে ইসলামপন্থীদের স্বতন্ত্র শক্তি দেখাতে চায়? ইসলামি আন্দোলনের মরহুম নেতা সৈয়দ ফজলুল করীমের নেতৃত্বে সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল। বেশি দিন টেকেনি। কারন ওই একটাই, সংগ্রাম পরিষদে ইসলামপন্থী থেকে অইসলামপন্থীদের আধিক্য বেশি ছিল। নেতৃত্বের যোগ্যতা অভিজ্ঞতায় ঘাটতি ছিল। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ইসলামি ঐক্য জোটে ছিল। সেখানে টিকতে পারেনি। বেরিয়ে আসতে হয়েছে। সেখানে টিকে থাকার মতো রাজনৈতি দক্ষতা যোগ্যতা তারা দেখাতে পারেনি। মতপার্থক্যের পরাজয় বরণ করে বেরিয়ে এসেছিল। এরশাদের জাতীয় পার্টির সাথে নির্বাচনী জোট হয়েছিল, টেকেনি। এখন তারা একলা পথে হাটছে। কিন্তু একলা পথে হেটে কি ইসলাপন্থীদের স্বতন্ত্র প্লাটফর্ম তৈরী করা যাবে?

অন্যান্য দলের কথা বাদ দিলাম, দেশের ইসলামপন্থী দলগুলোর সাথেও তাদের সুসম্পর্ক নেই। কওমিপন্থী ছোট দলগুলো তাদের ভালো চোখে দেখে না। তাদের মধ্যে ঐক্য নেই। তারা এক স্টেজে বসতে পারে না। এমন কি হেফাজতের মতো অরাজনৈতিক দলেও তাদের কোনো প্রভাব নেই। জায়গা নেই। তাদের নেতাকে হেফাজতের স্টেজে উঠতে দেয়া হয় না। তারা যদি কখনো অন্যান্য কওমিপন্থী দলগুলোর সাথে ঘরোয়া মিটিং করে, সমাবেশ করে সেখানে তাদের সাথে কারো ঐক্যমত হয় না। বিরোধ বাড়ে। এমন কি হাতাহাতির পর্যায়েও গড়ায়। কারন হয়তো তারা এখনো রাজনীতিতে সেই মানের কৌশলী হয়ে উঠতে পারেনি। অন্যকে প্রভাবিত করার মতো যোগ্যতা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেনি। তারা তাদের জনসমর্থন নিয়ে ফখর করে। অহমিকায় ভোগে। তারা হয়তো বোঝে না অথবা বুঝতে চায় না, ফখর করার মতো কোনো অর্জন তাদের নেই। এত বড় জনসমর্থন নিয়েও তারা কোনো আলোচনা সমালোচনায় থাকে না। থাকতে পারে না। কোথাও কোনো ভোটে তাদের নিজস্ব কোনো অর্জন নেই।

জামায়াতের কথা বাদ দিলাম, দেশের অন্যান্য ইসলামপন্থী দলের মধ্যেও তাদের কোনো প্রভাব নেই। ঐক্য নেই। আজ পর্যন্ত তারা ইসলামপন্থীদের আলাদা একটা নির্বাচনী জোট পর্যন্ত গঠন করতে পারেনি। দৃশ্যমান কোনো চেষ্টাও চোখে পড়েনি। তারা নিজেদের মধ্যে ‘খলবল’ করে। আর ইসলামপন্থীদের স্বতন্ত্র শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখে।

এই হলো বাংলাদেশের প্রধান ইসলামপন্থী দলগুলোর অবস্থা। ছোটগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। যা আলোচনায় আনা বেশ কঠিন। তাদের সম্পর্কে শুধু একটা কথাই বলা যায়, তা হলো- কোলাব্যাং এক ঝুড়িতে রাখা যায়, কিন্তু তাদের যায় না।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৭:১৮
১৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×