somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সূর্যাস্তের সেই ১৪ই ডিসেম্বর

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/
ভয় নাই ওরে ভয় নাই/
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’
_____________কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর পঙ্ক্তির চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতি আজ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে শ্রদ্ধাবনত হবে।ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে তাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ।জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তে বাঙালি জাতি যখন আসন্ন বিজয়ের আনন্দে উৎসুক, ঠিক তখন দখলদার পাকিস্তানিদের এদেশীয় দোসর আলবদর, রাজাকার,আলশামস-ঘাতকরা রাতের অন্ধকারে মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞে।তারা হত্যা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ
সন্তানদের।৪৩ বছর পর সেই ঘাতকদের একজন ‘মিরপুরের কসাই’ নামে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসিসহ কয়েকজনের কার্যকর হয়েছে। তাই শ্রেষ্ঠ
সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের এ বছর
প্র্রথমবারের মতো জাতি স্মরণ করবে কিছুটা ভিন্ন ভাবে। অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের র দু’দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর সারা দেশ থেকে সহস্রাধিক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে তারা। অনেকের লাশই পাওয়া যায়নি।এভাবে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন চক্রান্তে মেতে ওঠে নির্মম ঘাতক-দালালরা। দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নিজ কর্মের মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রভূত প্রেরণা জুগিয়েছিলেন।মুক্তিকামী জনগণকে উদ্দীপ্ত
করেছিলেন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে।হানাদাররা সেদিন কেবল ঢাকাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক,চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী,শিল্পী, সাহিত্যিক,সংস্কৃতিসেবী,
পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী-কৃতী সন্তানকে অপহরণ করে মিরপুর ও রায়েরবাজার
বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বর এক শোকাবহ দিন।এ শোকাবহ দিনটি ৪৩ বছর কেটেছে হত্যার বিচার না পাওয়ার আক্ষেপে। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।কয়েকজনের বিচার হয়েছে।তাই এবারের বুদ্ধিজীবী দিবসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সর্বস্তরের মানুষ নতুন করে শপথ নেবেন, কলংকমোচনের
প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ঘাতকদের সব
ধরনের ষড়যন্ত্র ও সহিংসতা প্রতিহত করে বাকি ঘাতকদের বিচারের রায় কার্যকর করার। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।হানাদাররা সে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকসহ সাধারণ
মানুষকে নির্বিচারে হত্যার মাধ্যমে শুরু করে বাঙালি নিধনযজ্ঞ।মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস
হানাদাররা বাংলাদেশে গণহত্যা,নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রাখে।ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই নিজেদের পরাজয় অনিবার্য
জেনে দখলদাররা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য
করার গোপন নীলনকশা গ্রহণ করে।কৃতী বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি করে তা তুলে দেয়
তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডার গ্রুপ আলবদর,আলশামস ও রাজাকার বাহিনীর হাতে। ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই হিটলিস্ট অনুযায়ী পাক
বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার
ঘৃণ্যতম অপকর্মে এ তিনটি ঘাতক গ্রুপ মেতে ওঠে।কারফিউর মধ্যে রাতের অন্ধকারে বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে ধরে এনে চোখ
বেঁধে রায়েরবাজার ও মিরপুরের
বধ্যভূমিতে নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যা করে।১৩ ডিসেম্বর মধ্য রাতের পর
সারা দেশে একযোগে সর্বাধিক সংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়।মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত সারা দেশে ৪৬৭টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। কেবল ঢাকা ও এর আশপাশে ৪৭টি বধ্যভূমি চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে দখলদার
বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন-
অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব,অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী,অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক
গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা.ফজলে রাব্বী, ডা. মোহাম্মদ! মোর্তজা, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান,ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য, ডা.মোহাম্মদ শফি, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, নিজামউদ্দিন আহমেদ,খন্দকার আবু তালেব, আনম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, সৈয়দ
নাজমুল হক, চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান, আলতাফ মাহমুদ, ড.আবদুল খায়ের, ড. সিরাজুল হক খান,ড. ফয়জল মহী, ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, হবিবুর রহমান, মেহেরুন্নেসা, গিয়াস উদ্দীন
আহমদ প্রমুখ।
*আমরা তাঁদেরকে জানাই লাল সালাম*
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×