তিথি,
গত জুনের পর অনেককিছুই পাল্টে গেছে। জুন এর কোন সময়টা, বুঝতে পারছো? সেই যে আমার প্যানিক এ্যাটাক হলো অনেকদিন পর! সেটা নিয়ে আমি কবিতা লিখেছি বেড়ালতমা উপন্যাসের প্রথম অধ্যায়েও সে কথা এসেছে। কেন বারবার ফিরে আসে সেই দিনের কথা? সেই দিনই জেনেছি তুমি আমার পরম ত্রাতা! মৃত্যু, ভয়, আর প্রস্থানের মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলে তুমি। আমার যতবার প্যানিক এ্যাটাক হয়েছে, তুমি কাছেই ছিলে। সেদিন ছিলে ফোনের ওপাশে। আমি তোমার স্পর্শ থেকে দূরে ছিলাম, আমি তোমার গন্ধ পাচ্ছিলাম না, শুধু একটা ফোনকল আর কিছু শব্দতরঙ্গ। আমাকে বাঁচাতে তোমার মায়ার স্পর্শ কোন এক প্রযুক্তি কোম্পানি পরিণত করছিলো কম্পনে। তোমার কি মনে পড়ে ২০১৩ সালের এক প্যানিক এ্যাটাকের কথা? সেইদিন আমি গোসল করে এসে ভয়ের সমুদ্রে ডুবে গেলাম। তুমি প্রেসার মেপে দেখলে অনেক বেশি। আমি মামনিকে ডাকলাম। তিনি আমাকে বাঁচালেন। এখন এই কাজটা তুমিই করতে পারো! আমার সৌভাগ্য, আমি তোমাকে বলতে পারি, “তুমি মায়ের মতই ভালো”!।
তুমি মায়ের মতই ভালো বলে আমি আর একলাটি পথ হাঁটবো না। তুমি মায়ের মতই ভালো বলে ঘুমোনোর সময় তোমার নরম ওড়না জড়িয়ে ঘুমোই। মায়ের শাড়ি আর তোমার ওড়না, একদম একইরকম লাগে গন্ধটা, স্পর্শটা, অনুভবটা জানো! তোমাকে আমি নানা নামে ডাকি। তুমি আমার দুধসেমাই, গোলাপ ফুল, রাশিয়ান বেড়াল, প্রিয় ভাল্লুক! তুমি আমার দীপ্তিময়ী! ইদানিং তোমাকে ভাল্লুক বলে ডাকতে ভালো লাগছে। ভাল্লুক বলে ডাকলে যে তুমি রেগে যাওয়ার ভান করো, এটাও ভালো লাগে দেখতে! আচ্ছা, তোমাকে কি কখনও When I see you smile গানটার কথা বলেছি? এই গানটা যতবার শুনি, ততবার তোমার কথা মনে পড়ে। তুমি যখন হাসো, বিশেষ করে যখন আমার কারণে হেসে ওঠো, তখন একটা আশ্চর্য নির্ভরতার অনুভূতি আমাকে আপ্লুত করে। রাশিয়ান বেড়াল নামটা কেন দিয়েছিলাম মনে পড়ছে না। তোমাকে হয়তো কোন একদিন খুব সাদা লেগেছিলো, তখন রাশিয়ান মহিলাদের কথা মনে হয়েছিলো। আর তুমি তো একটা বেড়ালই! সেই থেকে তুমি রাশিয়ান বিড়াল! তুমি যখন সাদা জামা পড়ো, তখন তোমাকে দুধ সেমাইয়ের মত লাগে। রসে জবজবে। এই দেখো, শুরু হয়ে গেলো অশ্লীলতা! আমাদের ভালোবাসাতে অবশ্য অশ্লীলতার সাথে কোন বিরোধ নেই! কী বলো? তুমি যখন গোসল করে আসো, তখন তোমাকে গোলাপ ফুল মনে হয়। তখন মনে হয় তোমার পাঁপড়ি আছে, বৃন্ত আছে, পাতা আছে, আর আছে লাল রঙ। এখন এমন স্নিগ্ধতায় কেউ লাল হয়ে বসে থাকলে তাকে গোলাপ ফুল না ভেবে উপায় কী!
কাব্য আসছে না, উপমা আসছে না, অথচ আমাকে লিখতে হবে পৃথিবীর সুন্দরতম প্রেমের উপন্যাস বেড়ালতমা! কীভাবে কী করি বলো তো! অনেক দিন ধরে কিছু লেখা হয় না। ঘুমে আর কামে পর্যুদস্ত। অফিস শেষে সময় বের করে কি-বোর্ডের ওপর অত্যাচার চালানো। ওদেরও হয়তো বা ভালো লাগছে না এসব। সময় বেঁধে দেয়া। আর ৩২ মিনিট লিখবো, এরপর বের হয়ে যাবো। এর মধ্যে যা হওয়ার হবে।
এই দেখ, এক মিনিট কেটে গেলো, কিচ্ছু লেখা হলো না। টেনশন হচ্ছে। কত দূর যেতে হবে তারপরে, বলো! কেক, হাঁসের মাংস, দই, পোলাও নিয়ে আমাদের এইসব আয়োজন। আমার না এর বাইরেও কিছু একটা খুঁজে পেতে ইচ্ছে করে। কী সেটা? জানি না। আমার কাছে তোমার একটা বিমূর্ত রূপ আছে। মানুষের বিমূর্ততাই তাকে মূর্ত করে। মৃত্যুর পরের জীবনে বিশ্বাস করি না, কিন্তু তোমার আর আমার ভালোবাসা জীবনের এই সীমিত সময়ে সীমাবদ্ধ থাকবে, এটা মেনে নিতে পারি না একদম। আর এজন্যেই আমাদের একজন ঈশ্বর দরকার। আমি তো, তুমি জানো Kind of Deist. মনে করি, ঈশ্বর আছে, তবে সে কেয়ার করে না কিছু। ঈশ্বর আছে, তবে ধর্ম নেই। তো এই কেয়ারলেস ঈশ্বরকে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে তুলতে হবে, বুঝেছো! বলতে হবে, আমাদের ভালোবাসিবার আরো অবসর দাও! আমাদের জন্যে গড়ে দাও অসীমের ঘর! মানুষের গন্তব্য কোথায় আমার জানা নেই। মানুষ কোথা থেকে এলো, কোথায় যাবে, এ নিয়ে ভাবতে পারি ঘন্টার পর ঘন্টা। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, এর মধ্যে তুমিও কীভাবে যেন চলে আসো! তোমাকে কি তবে আমি বিমূর্ততায় ভাঙতে পারছি ঠিকঠাকমত? এজন্যেই কি তুমি নানা রূপে আসো আমার কাছে? কখনও দুধ সেমাই, কখনও গোলাপ ফুল, কখনও বেড়ালতমা!
চলো ফিরি আবার জাগতিকতায়! এখন তুমি ইশরাত জাহান ইসলাম। এখন তোমার গায়ে রসুনের গন্ধ। এখন তোমার মেজাজ তিরিক্ষি ভীষণ। এখন তুমি মিতিন রুহিনের রাগান্বিতা মা। আমিও ক্লান্ত। তারপরেও তোমার পেছনে পেছনে ঘুরছি। বখাটে কিশোরের মত ফন্দী ফিকির খুঁজছি স্পর্শের!
তিথি, বিয়ের ৯ বছর হয়ে গেছে। Where the fuck is that seven years itch? It never existed for us. আরো বয়স বাড়বে, আমরা ধূসর হবো, একটা সময় আমাদের রঙ মিলিয়ে যেতে থাকবে, আমাদের কামভাব স্তিমিত হয়ে আসবে। তখন আমরা কী করবো? আমাদের ভালোবাসা নতুন রূপে পরিবর্তিত হবে।
তখন তোমার মাতৃরূপ আরো প্রবল হবে। তখন হয়তো তোমাকে আমি নতুন কোন নাম দেবো। তখন হয়তো তুমি দুধসেমাই বা রাশিয়ান বেড়াল থাকবে না। কিন্তু নতুন কিছু না কিছু তোমাকে হতেই হবে। কারণ, তুমি আমার কাছে কখনই ইশরাত জাহান ইসলাম নামক একটি নারীচরিত্র নয়। আমি তোমাকে বিভিন্নরূপে আক্ষরিক অর্থেই দেখতে পাই।
তবে সবকিছুর ওপরে তোমার মাতৃরূপ। এর কোন নাম নেই। এর কোন বর্ণনা নেই, এর কোন সংজ্ঞা নেই। শুধু আছে একটা আশ্বাস, একটা নির্ভরতা, একটা কৃতজ্ঞতার অনুভূতি। তোমার বিছানায়, বালিশে, তোমার ওড়নায়, তোমার বুকে আমি শুধু একটা শব্দ খোদাই হতে দেখি,
তুমি মায়ের মতই ভালো…
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২৬