somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাহাদুর শাহের সমাধি, ইতিহাসের দীর্ঘশ্বাস

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাহাদুর শাহ জাফরের একটি বিখ্যাত কবিতার পঙক্তি :
কী দুর্ভাগ্য জাফরের,
যে জমিন সে ভালোবাসতো
সেই জমিনে তাঁর সমাধির জন্য দুই গজ জায়গা হলো না।

সত্যি, ভারতের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহের ঠাঁই হয়নি ভারতের মাটিতে। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়ে ব্রিটিশ শাসকেরা তাঁকে মায়ানমারে নির্বাসনে পাঠান।
সিপাহি বিদ্রোহ যখন শুরু হয় তখন বাহাদুর শাহ দিল্লির একটি বাড়িতে ছিলেন। মিরাট থেকে ৩০০ জনের একটি বিদ্রোহী দল এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে, যার মধ্যে সিপাহি ও অন্যান্য পেশার মানুষ ছিল। তারা তাঁকে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে বললে তিনি রাজি হন। এরপর বাহাদুর শাহ হয়ে ওঠেন ভারতের কোটি কোটি মানুষের বিদ্রোহ ও ঐক্যের প্রতীক। ১৮৫৭ সালের জানুয়ারিতে মিরাট ও ব্যারাকপুরে শুরু হওয়া বিদ্রোহ সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পরে।
কিন্তু চার মাসের মাথায় ব্রিটিশরা বিদ্রোহ দমন করে এবং তারা কবি ও যুবরাজ মোল্লা ও কামাক্ষা, সুফি ও পণ্ডিত -সবাইকে পাকড়াও করে ফাঁসি দেয়, ধ্বংস করে প্রাসাদ, মসজিদ,ঈদগাহ, বাগান ও বাড়ি। ২১ সেপ্টেম্বর বাহাদুর শাহ আত্মসমর্পণের পরদিন মেজর উইলিয়াম হাডসন তাঁর দুই পুত্র মির্জা মোগল ও মির্জা খিলজি সুলতানকে গুলি করে হত্যা করে।

১৯৫৮ সালের ২৭ জানুয়ারি দিল্লিতে বাহাদুর শাহের বিচার শুরু হয় এবং শেষ হয় ৯ মার্চ। আদালত তাকে মিয়ানমারে নির্বাসনে পাঠানোর সুপারিশ করে। প্রথমে দিল্লি থেকে কলকাতা এবং কলকাতা থেকে জাহাজে করে তাঁকে ইয়াঙ্গুনে পাঠানো হয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জিনাত মহল, দুই পুত্র জওয়ান বখত ও আব্বাস বখত, পুত্রবধূ রওনক জাহান ও এক নাতনি।

১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর, শুক্রবার ভোর পাঁচটায় বাহাদুর শাহ মারা যান। ওই দিন বিকেল ৫টায় তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হয় ইসলামি রীতি অনুযায়ী। তার কবরের চারপাশে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয় এবং উপরে ঘাসের আচ্ছাদন। ১৮৬৭ সালে বাহাদুর শাহের পরিবারের সদস্যদের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
১৯০৫ সালে ইয়াঙ্গুন এর মুসলমানরা বাহাদুর শাহের সমাধি চিহ্নিত করার দাবি জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০৭ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁর সমাধির উপর পাথরখচিত ফলক বসায়। যাতে লেখা ছিল : বাহাদুর শাহ, দিল্লিরর সাবেক রাজা ১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর এর কাছেই মারা গেছেন।

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিমপনের ভাষায়, বাহাদুর শাহ ছিলেন একজন ক্যালিওগ্রাফার, সুফি, ধর্মতত্ত্ববিদ, মিনিয়েচার পেইন্টিংয়ের পৃষ্ঠপোষক ও আধ্যাত্মিক কবি। 'খুল্লিয়াতে জাফর' নামে তার একটি কবিতার সংকলন আছে। তিনি ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি সমুন্নত রেখেছিলেন।

স্থানীয় মুসলিমরা বাহাদুর শাহকে ক্ষমতাবান সুফি বাদশাহ হিসেবে সম্মান করেন এবং এখনো তার কাছে দোয়া নিতে আসেন।
অবিভক্ত ভারতের মানুষের কাছে বাহাদুর শাহের সমাধি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৪১ সালে বাহাদুর শাহের সমাধিতে ফুল দিয়েই 'দিল্লি চলো' প্রচারণা শুরু করেছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' মিয়ানমার পার হয়ে ভারতের ইস্ফল পর্যন্ত দখল করে নেয়।

বর্তমান সমাধি ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৯৯১ সালে ভারত সরকারের সহায়তায়। এর দেয়ালে লেখা আছে, 'এই হলটি সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের স্মৃতির প্রতি উতসর্গিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×