somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারীর সৌন্দর্য আর দুজন পুরুষ মানুষের গল্প: ২

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"তুমি চেয়ে আছ তাই আমি পথে হেঁটে যাই
হেঁটে হেঁটে বহু দূর , বহু দূর যেতে চাই


কামাল মিয়া তার বউ এর দিকে তাকায় । কালো বোরখায় ঢাকা বউ । বড় পুরাতন রং চটা বোরখার আড়ালে পুরাতন একটা বউ । বোরখার মলিনতার আড়ালে তার বউ এর হীন রুগ্ন , ভগ্ন স্বাস্থ্য যেন ঢাকা পড়েনা ।

বউরে তবুও তুই বেঁচে থাক ।বউ চোখে কাজল দিয়েছে । তাকে বেশ সুন্দর লাগছে ।


মোমেনার স্বামীর দিকে চোখ পড়ে । এতটা বছর পরও চোখে ভালবাসার দৃষ্টি নববিবাহিতার মতই তাকে লাজুক করে দেয় । সে হাসে মুখ টিপে ।নেকাবের আড়ালে । কিন্তু চোখে হাসির ঢেউ কামাল মিয়ার কাছে অধরা থকেনা ।

দুজনে পা বাড়ায় । সকালের সোনালী রোদের ভিতর দিয়ে । সুন্দর বাতাস । রাস্তার দুপাশে অযত্নে বেড়েওঠা ডোল কলমি ফুলে পুরো বেগুনি হয়ে আছে । তারপরই বিশাল ধান ক্ষেত । বাতাস বয়ে চলেছে , যেন মেঘনার ঢেউ । ঝাঁকে ঝাঁকে চড়াই পাখি সাঁই করে ধানের উপর পড়ছে । আবার আরেক ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে । ধানে শিষ এসে গেছে । ধানের ফুল গুলিও ধানের মত হয় দেখতে । সেই ফুলে দানা বেঁধে যাচ্ছে । তারা যাচ্ছে শহরে । শহরের শেষ প্রান্তের হাসপাতালে । কামাল মিয়ার হাতে একটা বাজারের ব্যাগে সেই হাসপাতালের ডাক্তার আপার জন্য কিছু পিঠা ।


(২)

তারপরের ঘটনার আকস্মিকতায় ডাক্তার আয়শা বিব্রত । মেয়েটি দৌড়ে এসে মা মা বলে তাঁকে জড়িয়ে ধরল । এই মেয়ে তার জন্য নানা পদের পিঠা , জাম্বুরা , আমড়া নিয়ে এসেছে । শুধু তাই নয় টাকা খরচ করে আবার আপেল মাল্টা ও নিয়ে এসেছে । বেশভুসায় গরীব এরা ।
এই খরচান্ত ভালবাসার প্রকাশ দেখে লজ্জিত হয়ে পড়েছেন ।

তিনি আরও লজ্জিত রোগীটাকে চিনতে না পারার কারণে । চিনতে না পারার কারণ আছে । রোগী গুলো অসুস্থ অবস্থায় থাকে একরকম । সুস্থ হয়ে গেলে চেহারা পালটে হয়ে যায় অন্যরকম । রোগীটার কি সমস্যা ছিল ? কবে ভর্তি ছিল এখানে ?

তারপরই কামাল মিয়াকে দেখে মনে পড়ে যায়, মোমেনার স্বামী কামাল মিয়া । মোমেনা রাপচার ইউটেরাস নিয়ে এসেছিল প্রায় মরণাপন্ন অবস্থায় । সে ও অনেকদিন আগে ।

" আপনার ওয়াইফের অবস্থা খুব খারাপ , তাকে বাঁচাতে হলে তার জরায়ু ফেলে দিতে হবে । তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছে পেটের ভিতরে । বাচ্চা টা মারা গেছে । মাকে বাঁচানোর জন্য এ ছাড়া আর উপায় নেই ।
' আপা , আপনার আল্লাহর দোহাই লাগে , যা করা লাগে করেন , শুধু তাকে জ্যান্ত ফেরত দিন । সে শুধু আমার সংসারের দিকে শুধু চেয়ে থাকতে পারলেই হবে , আমার আর কিচ্ছু চাইনা । "

তারপর আবারো সে একই কথা বলেছিল , যখন তাকে জানানো হয় , এই অপারেশনের পর রোগীর বিশ্রাম দরকার । দেড় মাস তার সাথে মেলামেশা করা যাবে না ।
" আমি তার সব কাজ করে দিব , সে ফিরে আসছে , আল্লাহর কাছে আমি লাখ লাখ শুকরিয়া জানাই , আমি আর কিচ্ছু চাইনা । "

একটা প্রকৃত ভালবাসার সুমিষ্ট ঢেউ এখানেও এসে আছড়ে পড়েছিল । তাঁর মনে হল পৃথিবী অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেত , যদিনা এই মায়া , দয়া , ভালবাসা না থাকত । তিনি মনে মনে বললেন , তোমার বউ এর প্রতি তোমার এই ভালবাসা আমি হৃদয়ে রেখে দিলাম । কারণ আমাকে এই পুঁজি দিয়ে কিছু কিছু দয়া হীন ঘটনা দেখতে হবে ।

এই ঘটনা অনেকদিন আগের হলেও আজ দুজনকে দেখে সেই ভালবাসার সুরভী পেলেন ।

(১)

' ওরে ওরে হাওয়া থাম নারে
বন্ধু আসছে বহুদিন পরে


রোজীর বয়স ২৩
তার হাসবেন্ড বিদেশ থেকে এসেছে অনেক দিন পর ।
গোছানো ছিল অনেক স্বপ্ন । সব ছারখার । রোজীর হাসবেন্ড নানা রকম কমপ্লেইন করছে রোজীর শরীর নিয়ে ।
' আচ্ছা আপা আপনিই বলেন , একটা বাচ্চা হয়ে গেলে ব্রেস্ট কি আগের মত থাকবে ?
তাছাড়া সে মেলামেশা করতে গেলেও আমাকে নিয়ে অভিযোগ তুলছে । "
এবার মেয়েটার চোখে পানি । সে কাঁদছে যেমন মায়ের কোলে এসে সন্তান দুঃখের কথা বলে ।
মায়ের মতই ডা; আয়শার মন অস্থির হয়ে ওঠে । রোজীর স্বামী রোজীর ব্রেস্ট আর ভেজাইনা নিয়ে কমপ্লেইন করছে ।

"আচ্ছা আমি দেখছি সমস্যা কোথায় । আমি সলভ করে দেয়ার চেষ্টা করব । আচ্ছা চোখ মোছ । "
রোজী যে বিবাহিত আর ৩ বছরের বাচ্চার মা , না বলে দিলে বোঝা সম্ভবনা । নিখুঁত বি, এম, আই এর নিখুঁত মেয়ে । লম্বা , শ্যাম বর্ণ , দীঘল চুলে বেণী করা । রোজীর কোন সমস্যাই দেখতে পেলেন না ।

সমস্যা কি নাই ? রোজীর যদি সমস্যা না থাকে তাহলে সমস্যাটা কার ?

ডাঃ আয়েশা মনে মনে বললেন , এখানে রোগী রোজী , নাকি রোগী তার স্বামী?
সুস্বাস্থ্য তাকেই বলে যদি কোন ব্যক্তি শারীরিক ভাবে ভাল থাকবেন তা না , মানুষিক ভাবেও ভাল থাকবেন । এখানে রোগী তাহলে রোজীর স্বামী । স্বামীটা মন বৈকল্যে ভুগছে । বেচারা তার স্ত্রী কে নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেনা , নিজের সমস্যার কারণে ।

তার পর স্বামী এলেন । ডাঃ ভেবেছিলেন , মেয়েটার স্বামী না জানি কত স্বাস্থ্য সচেতন সুন্দর পুরুষ কিন্তু দেখলেন বেচারা ভুঁড়িওয়ালা , টাক ওয়ালা এবং টাকাওয়ালা । টাকার জোর মনে হয় বেড়েছে ।

আহারে যুগের হাওয়ায় আজ ভাল ভাল মেয়েগুলোর সংসারে অশান্তি । ২ বছর পর জামাই টা এলো , আর স্বামী যদি এভাবে ব্লেম দিতে থাকে , মেয়েটা মনে মনে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকবে ।

খুবই সাবধানে স্বামীটাকে কাউন্সেলিং করতে হবে । কিন্তু কোনভাবেই অনেক তিতা কথাকে মিষ্টি বানানো যায়না ।

"রহমান সাহেব,২ বছর আপনি আপনার ওয়াইফ কে দেখেন নি , মহিলা বলতে আপনার সামনে ছিল টিভি সিনেমার নায়িকা , মডেল রা । আপনার ওয়াইফ মডেলদের মত ফিগার হোক এটাই ছিল আপনার কল্পনায় । দোষ যতনা আপনার , তারচেয়ে বেশি মিডিয়ার । টিভি খুললেই শরীর প্রদর্শন করা মেয়েরা । আসলে তারা ভাল মেয়ে না । ভাল মেয়ে হলে শরীর দেখিয়ে বেড়াতনা ।ওই সব মেয়েদের কারণেই আজ আপনার বউ সার্বিক ভাবে ভাল থাকার পরও আপনার ভাল লাগেনা ।

আর , আপনি কি আয়নায় নিজেকে দেখেছেন ? আপনার মাথায় চুল প্রায় পড়ে গেছে । আপনার একটা বিশাল ভুঁড়ি আছে । আপনার ওয়াইফ এর কথা একটু ভাবেন । সে ও যখন টিভি খোলে তখন জন আব্রাহাম আর সালমান খানের ফিগার দেখে । সেও ত ভাবতে পারে সুন্দর চুলের ভালো ফিগারের সুপুরুষ হয়ে থাকুক তার স্বামী ।

সব মেয়ের কথা বলবনা , কিন্তু অনেক মেয়েই আছে শুধু একটু ভালবাসা পেলে স্বামী সংসারের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে পারে । আল্লাহর রহমতে আপনি তেমন বউ পেয়েছেন ।

একই দিনে দুটি ঘটনা । দরিদ্র ঘরের মেয়ে মোমেনা । গায়ে একরত্তি মাংস নাই । কোন দিন ই তেমন মত মোটা গাটা ছিল বলে মনে হয়না । অথচ উপচে পড়া ভাল বাসায় আছে সে । অনেকদিন আগে ভাল হয়ে গিয়ে আজ এসেছে কৃতজ্ঞতা জানাতে স্বামীকে সংগে নিয়ে ।

আর রোজী সব ঠিক থাকার পরও তার সমস্যার অন্ত নাই । আচ্ছা যদি ঠিক নাও থাকে , ধরা যাক একদিন রোজী মোমেনার মত হয়ে গেল । এরকম লীন এন্ড থিন , সেদিন কি হবে ? রহমান সাহেবের সংসারে তার সারা জীবন দিয়ে দেয়াটা কাজের স্বীকৃতি কি পাবে ?

এরকম প্রায় ঘটে । এরা একধরনের পারভার্ট পুরুষ ।প্রায়ই ভিমরতি ধরা পুরুষের বউ গুলো এ সমস্যা নিয়ে আসে । পুরুষগুলো কেউ কেউ আরেকটা শাদি মোবারক করে ফেলে , কেউ কেউ খারাপ এরিয়ায় যায় ।



আসলে ভালবাসার বাসা কোথায় ? কোথায় ধরা দেয় সেই সোনার হরিণ ? বড়ই জটিল প্রশ্ন ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৫৭
৬৯টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×