যুগ যুগান্তরের পুরাতন নিয়ম মেনে পৃথিবী সূর্যটাকে আরো এক পাক ঘুরে এসেছে আজ , সেই সাথে আমরাও। জানিনা পৃথিবীর মতো আর কোন গ্রহ আছে কিনা যেখানে জীবনের জন্য সময়ের প্রস্থানে এতো প্রচণ্ড ব্যাকুলতা দেখা যায়। জানিনা সেখানে সমাজ থেকে অনেক দূরে কোন এক নির্জনে পাহাড়ের গুহায় কিংবা প্রাচীন বৃক্ষের নিচে,আমাদের সাধু পুরুষদের মতোই কেউ গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী হয়ে জীবনের মূল উৎসের অনুসন্ধান করছেন কিনা! হয়তো সেখানে প্রথম আদম এখনো প্রথম হাওয়া কে খুঁজে পায়নি। হয়তো মহাপ্রলয়ের আগে নুহের নৌকা ভাসানোর আর মাত্র কিছুক্ষণ বাকী!
জীবন আসলে কি? এর কি সত্যিই কোন অর্থ আছে? যদি জীবন অর্থহীনই হয় তবে আমরা কেনো বাঁচবো? কেনো আমাদের মধ্যে এতকাল ধরে কাজ করছে বেচে থাকার প্রচণ্ড সংগ্রাম? হয়তো ডারউইনের মতো কোন আগন্তুকের সাগরে জাহাজ ভাসানোর অপেক্ষায় সময় সেখানে রেখে গেছে প্রাগ-ঐতিহাসিক প্রাণীর ফসিল। আর এসব প্রশ্নের একটি দার্শনিক উত্তরের প্রদানের জন্য হয়তো সাঁৎরে, নিৎসে কিংবা ফুকোরা মতো কেউ সেখানে এখনো জন্ম নেননি।
হয়তো এসব কিছুই সত্য নয়। হয়তো সেই ভীনগ্রহী প্রাণীরা আমদের চাইতেও অনেক বেশি উন্নত জীবন দর্শন খুঁজে পেয়েছে আমদের অনেক আগেই। এখানে, এই পৃথিবীতে যখন একজন নিরীহ মানুষ শুধুমাত্র ধর্মীও মৌলবাদ, ধর্ম ব্যবসা, ক্ষমতার লোভ এইসকল অহেতুক কারণে মারা যাচ্ছে, শুধুমাত্র নারী একারণে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনার স্বীকার হতে হচ্ছে একজন রক্ত মাংসের মানুষকে ঠিক সেই সময়টিতে অনেক দূরের ঐ ধূসর গ্রহটিকে ওরা হয়তো নামকরণ করেছে "চিরন্তন শান্তির গ্রহ" নামে , ওরা হয়তো ওদের অর্থহীন জীবনের একটি শাশ্বত অর্থ দিতে সক্ষম হয়েছে। ওদের সীমান্তে কাঁটাতার দিয়ে পৃথিবীর মানুষের মতো বিভেদ টানতে হয়নি, নিজেদের মধ্যে গণহত্যা কিংবা খুনের অপরাধের বিচার করতে হয়নি। মানবতা, মানবিকতার এইসব শব্দ গুলোর সাদৃশ্যপূর্ণ যে সকল শব্দের ব্যবহার ওদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে তার এক ও অভীন্ন অর্থই ওদের সবার মধ্যে কাজ করে। আমরা যেটা কল্পনা করি স্বর্গ-রূপে তা হয়তো ওদের কাছে বাস্তব সত্য।
একটি নতুন বছরের শুরুতে ওদের মধ্যে কেউ হয়তো মনে মনে এমনটাই চিন্তা করতো একসময়। হয়তো গভীর রাতে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে সে কোন এক অজানা গ্রহের মধ্যে খুজতে থাকতো নিজের কল্পনার সেই স্বর্গরাষ্ট্রকে। এভাবেই হয়তো সব কিছু বন্ধ করে, সকল বাধা বিপত্তি কাটিয়ে অবশেষে ওরা শান্তির পথ বেছে নিতে সক্ষম হয়েছিলো শুধুমাত্র নিজেদের কল্যানের কথা চিন্তা করে। মানব প্রজাতিকে রক্ষার জন্য মানুষকেও এমন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আমরা কি পুরাতন হিসেব চুকাতেই ব্যাস্ত থাকবে? নাকি ঘৃণার পরিবর্তে জ্ঞানচর্চা এবং মুক্তালোচনার মধ্য দিয়ে সভ্যতাকে সুসভ্যতার দিকে নিয়ে যাবো? আমরা কি কেবল সভ্যই থেকে যাবো নাকি নিজেদের সুসভ্য করার চেষ্টাও করবো?
নতুন একটি দিনের অপেক্ষায় সবাইকে ইংরেজি শুভ নববর্ষ।
"জ্ঞান হোক হাতিয়ার, প্রজ্ঞা হোক ঢাল"
আজ নতুন দিনের অপেক্ষায় সকলের প্রাণে বেজে উঠুক রবিঠাকুরের এই গানটি... এই হোক আমাদের প্রার্থনা সংগীত।
"আনন্দ লোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর !
মহিমা তব উদ্ভাসিত মহা গগন মাঝে
বিশ্ব জগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে !
গ্রহ তারক চন্দ্র তপন ব্যাকুল দ্রুতবেগে
করিছে পান ,করিছে স্নান অক্ষয় কিরণে !"
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৫