প্রতিদিন কত মানুষ মারা যাচ্ছে। মানুষ নিজেও কত মানুষ হত্যা করছে। সে মৃত্যুতে আবার আমারাই মানুষেরা শোকাহত হওয়ার ভান করছি। সবাই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের তদুপরি মহান নেতার মত মৃত্যুর প্রতি গভীর নিন্দা প্রকাশ করছে। মায়াকান্না। পৃথিবীর কোন হত্যাকারীকে হত্যা করতে দেখে পৃথিবীর মানুষদের কান্না যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে কেনো পৃথিবীতে খুনের সংখ্যা কমছেনা এইটুকুও? সেন্টমার্টিনে ঢুবে মরবে কেনো সম্ভাবনাময় একটা জীবন? সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবে কেনো মানুষ? ড্রাগ এডিক্টস হয়ে অর্থ অথবা নারীর পেছনে ছুটতে ছুটতে বখাটে বাস্টার্ডদের হাতে মারা পরে যখন আমার বন্ধুটি তখন আমার তার প্রতি ভালোবাসা বাড়ে। আমার কান্না যদি কোনদিন সত্যি হতো আমি আমার বন্ধুদের সবচাইতে ভালোবাসতে পারতাম ওদের প্রতি দায়িত্ববান হওয়ার চেষ্টা করতাম। আমি প্রতারনা করি, আমি প্রতারক, সবচাইতে প্রতারনা করি নিজের সাথে। নাহ! সম্ভবত আমি প্রতারণা করিনা আমি সুপ্ত ষড়যন্ত্রকারী। বন্ধুর মৃত্যুতে আমার অবচেতনে লুকিয়ে থাকে এক ভয়াবহ আনন্দ। তাই ফেসবুকে বন্ধুর মৃত্যুর সংবাদ শুনলেই ভাবনা চিন্তারও আগে আমি শোকাহত হই। আমি শোকাহত হই। Miss you বন্ধু! Miss you ভাইয়া! Miss you! বলতেই থাকি। অথচ যে মানুষটা বেঁচে আছে যে মানুষটা নিঃশ্বাস নিচ্ছে এখনো তার দিকে ফিরে তাকাতে আমাদের কতো কুন্ঠা। আমাদের এমন দুর্বোধ্য জটিল আচরন প্রমান করে আমরা কেমন মানুষ। আমরা কেমন মানব সমাজ গড়ে তুলেছি। মানুষ আসলে এমনই। বিবর্তন সত্য বলেই আমরা বরং কান্নার ছলে খুশি হই। কুমিরের কান্না।
যেই বন্ধুটা বেচে আছে আমাদের কত অবহেলা তার প্রতি। আমি হয়তো বলতে পারতাম, ওই কাজটা করিস নে বিপদ আছে! ওই পথে যাসনে বন্ধু! জীবনটা অনেক সুন্দর। তার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে কত কষ্ট হয় আমাদের। আমাদের দায়িত্ববোধ মৃত মানুষের প্রতি সবচাইতে বেশি। অথচ এখন পর্যন্ত জীবত ব্যক্তিটি, তার জীবনের জন্য কোন নিরাপত্তা আমরা কেউ দিতে পারিনা।
সেন্টমার্টিনে ভেসে যাওয়া ছেলেটার মৃত্যুর সংবাদ আমাদের মনে দুঃখ বয়ে নিয়ে আসে। মৃত্যুর আগে তার মৃত্যু নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস আমাদেরকে ভাবায়। অথচ আমরা ভাবতে পারিনা এভাবে আমাদের খুব কাছের বন্ধুও মারা যেতে পারে। আমরা তাকে সতর্ক করিনা। বরং ঠাট্টা করে আমরা তাকে বলি ডুইবা মর! সাঁতার পারিস না! সমস্যা নাই ঝাপ দে মরার পর আমরা তোকে তুলবো। মৃত্যু এভাবেই ঘটে। আমাদের চোখের হিংসা, বিদ্বেষ, জিঘাংসা নিয়ে আমরা আমাদের বন্ধুর মৃত্যু দৃশ্য দেখতে থাকি। আমাদের অদ্ভুত আনন্দ হয়। সেই সময় আমরা বুঝতে পারি জীবন কত অমূল্য। আমরা বেচে থাকার উপলব্ধিতে আনন্দে কাদতে থাকি। আমরা নিজে বেচে আছি আর সবাই মারা যাচ্ছে। কি অদ্ভুত! কি সুখ! আমার অবচেতনে লুকানো আছে।
এই যে আমাদের জীবনটা আসলে কী ? এই মহাবিশ্বে এইটুকুই তো প্রানের অস্তিত্ব যেখানে বিবেক বলে কিছু আছে বলে আমরা আশা করি। যেখানে মায়া, বন্ধুক্ত, প্রেম, ভালোবাসা আছে বলে আমাদের ধারনা। তবু আমরা কেনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি। নাহ! সম্ভবত শুরু থেকেই আমরা যেমন আছি ঠিক তেমনই আছি। সভ্য হয়েছি এবং সভ্য উপায়েই এখনো আমরা নিজেকে নিয়েই শুধু চিন্তা করছি। নিজের জন্য স্বার্থপরের মত অপরের মৃত্যুতে শুধু শোকাহতই হই। জীবনের প্রতি দায়িত্ববোধ হয়তো ছোট্ট শিশুটির নেই, হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেটিরও নেই তবু শিখতে হবে না এমন কোন কথাও ছিলোনা। মানুষ থেকে সত্যিকারের মানুষ হতে হবেনা এমন কোন প্রতিশ্রুতি আমরা কখনো দেইনি আমাদের বর্বর পূর্বপুরুষকে। আমরা কোন চুক্তি করিনি আমাদের বন্ধুদের অনেকেই আমাদের মনে মনে ঘৃনা করলেও আমরা তাদেরকে ভালোবাসবোনা।
বন্ধুর হৃদয়ে এতো কষ্ট কেনো? কেনো সে বলবে, চলে যাচ্ছি দোস্ত, নেটওয়ার্কের বাইরে?
আমাদের কান্না যদি সত্যি হতো এমনটা শুনতে হতোনা। মানুষ চায় মানুষ মারা যাক তাই মানুষ মারা যায়। তাই অহেতুক কারনে বন্ধু মারা যায়, আত্মীয় মারা যায়। চলে যায় নেট ওয়ার্কের বাইরে।