somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলে যাচ্ছি দোস্ত, নেটওয়ার্কের বাইরে

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিন কত মানুষ মারা যাচ্ছে। মানুষ নিজেও কত মানুষ হত্যা করছে। সে মৃত্যুতে আবার আমারাই মানুষেরা শোকাহত হওয়ার ভান করছি। সবাই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের তদুপরি মহান নেতার মত মৃত্যুর প্রতি গভীর নিন্দা প্রকাশ করছে। মায়াকান্না। পৃথিবীর কোন হত্যাকারীকে হত্যা করতে দেখে পৃথিবীর মানুষদের কান্না যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে কেনো পৃথিবীতে খুনের সংখ্যা কমছেনা এইটুকুও? সেন্টমার্টিনে ঢুবে মরবে কেনো সম্ভাবনাময় একটা জীবন? সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবে কেনো মানুষ? ড্রাগ এডিক্টস হয়ে অর্থ অথবা নারীর পেছনে ছুটতে ছুটতে বখাটে বাস্টার্ডদের হাতে মারা পরে যখন আমার বন্ধুটি তখন আমার তার প্রতি ভালোবাসা বাড়ে। আমার কান্না যদি কোনদিন সত্যি হতো আমি আমার বন্ধুদের সবচাইতে ভালোবাসতে পারতাম ওদের প্রতি দায়িত্ববান হওয়ার চেষ্টা করতাম। আমি প্রতারনা করি, আমি প্রতারক, সবচাইতে প্রতারনা করি নিজের সাথে। নাহ! সম্ভবত আমি প্রতারণা করিনা আমি সুপ্ত ষড়যন্ত্রকারী। বন্ধুর মৃত্যুতে আমার অবচেতনে লুকিয়ে থাকে এক ভয়াবহ আনন্দ। তাই ফেসবুকে বন্ধুর মৃত্যুর সংবাদ শুনলেই ভাবনা চিন্তারও আগে আমি শোকাহত হই। আমি শোকাহত হই। Miss you বন্ধু! Miss you ভাইয়া! Miss you! বলতেই থাকি। অথচ যে মানুষটা বেঁচে আছে যে মানুষটা নিঃশ্বাস নিচ্ছে এখনো তার দিকে ফিরে তাকাতে আমাদের কতো কুন্ঠা। আমাদের এমন দুর্বোধ্য জটিল আচরন প্রমান করে আমরা কেমন মানুষ। আমরা কেমন মানব সমাজ গড়ে তুলেছি। মানুষ আসলে এমনই। বিবর্তন সত্য বলেই আমরা বরং কান্নার ছলে খুশি হই। কুমিরের কান্না।

যেই বন্ধুটা বেচে আছে আমাদের কত অবহেলা তার প্রতি। আমি হয়তো বলতে পারতাম, ওই কাজটা করিস নে বিপদ আছে! ওই পথে যাসনে বন্ধু! জীবনটা অনেক সুন্দর। তার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে কত কষ্ট হয় আমাদের। আমাদের দায়িত্ববোধ মৃত মানুষের প্রতি সবচাইতে বেশি। অথচ এখন পর্যন্ত জীবত ব্যক্তিটি, তার জীবনের জন্য কোন নিরাপত্তা আমরা কেউ দিতে পারিনা।

সেন্টমার্টিনে ভেসে যাওয়া ছেলেটার মৃত্যুর সংবাদ আমাদের মনে দুঃখ বয়ে নিয়ে আসে। মৃত্যুর আগে তার মৃত্যু নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস আমাদেরকে ভাবায়। অথচ আমরা ভাবতে পারিনা এভাবে আমাদের খুব কাছের বন্ধুও মারা যেতে পারে। আমরা তাকে সতর্ক করিনা। বরং ঠাট্টা করে আমরা তাকে বলি ডুইবা মর! সাঁতার পারিস না! সমস্যা নাই ঝাপ দে মরার পর আমরা তোকে তুলবো। মৃত্যু এভাবেই ঘটে। আমাদের চোখের হিংসা, বিদ্বেষ, জিঘাংসা নিয়ে আমরা আমাদের বন্ধুর মৃত্যু দৃশ্য দেখতে থাকি। আমাদের অদ্ভুত আনন্দ হয়। সেই সময় আমরা বুঝতে পারি জীবন কত অমূল্য। আমরা বেচে থাকার উপলব্ধিতে আনন্দে কাদতে থাকি। আমরা নিজে বেচে আছি আর সবাই মারা যাচ্ছে। কি অদ্ভুত! কি সুখ! আমার অবচেতনে লুকানো আছে।

এই যে আমাদের জীবনটা আসলে কী ? এই মহাবিশ্বে এইটুকুই তো প্রানের অস্তিত্ব যেখানে বিবেক বলে কিছু আছে বলে আমরা আশা করি। যেখানে মায়া, বন্ধুক্ত, প্রেম, ভালোবাসা আছে বলে আমাদের ধারনা। তবু আমরা কেনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি। নাহ! সম্ভবত শুরু থেকেই আমরা যেমন আছি ঠিক তেমনই আছি। সভ্য হয়েছি এবং সভ্য উপায়েই এখনো আমরা নিজেকে নিয়েই শুধু চিন্তা করছি। নিজের জন্য স্বার্থপরের মত অপরের মৃত্যুতে শুধু শোকাহতই হই। জীবনের প্রতি দায়িত্ববোধ হয়তো ছোট্ট শিশুটির নেই, হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেটিরও নেই তবু শিখতে হবে না এমন কোন কথাও ছিলোনা। মানুষ থেকে সত্যিকারের মানুষ হতে হবেনা এমন কোন প্রতিশ্রুতি আমরা কখনো দেইনি আমাদের বর্বর পূর্বপুরুষকে। আমরা কোন চুক্তি করিনি আমাদের বন্ধুদের অনেকেই আমাদের মনে মনে ঘৃনা করলেও আমরা তাদেরকে ভালোবাসবোনা।

বন্ধুর হৃদয়ে এতো কষ্ট কেনো? কেনো সে বলবে, চলে যাচ্ছি দোস্ত, নেটওয়ার্কের বাইরে?

আমাদের কান্না যদি সত্যি হতো এমনটা শুনতে হতোনা। মানুষ চায় মানুষ মারা যাক তাই মানুষ মারা যায়। তাই অহেতুক কারনে বন্ধু মারা যায়, আত্মীয় মারা যায়। চলে যায় নেট ওয়ার্কের বাইরে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×