সাঈদের " কাভারিং ইসলাম" বইটির পাঠ পরবর্তি আলোচনা আমি একটু অন্যভাবে শুরু করছি। আজ শুরুতে আলোচনা করছি প্রচ্যতত্ব ( Oriental-ism) এবং প্রাচ্যতাত্বিক ( Orientalists) সম্পর্কে। যার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা বইটি বোঝার জন্য আবশ্যক।
প্রাচ্যতত্ব ( Oriental-ism) কী?
এককথায়, প্রচ্যতত্ব হচ্ছে প্রাচ্যের মানুষ এবং তার সংস্কৃতি সম্পর্কে পাশ্চাত্যের ধারণা সৃষ্টির প্রয়াস। ধারণ সৃষ্টি, অধ্যয়ন কিংবা গবেষণা প্রাচ্যতত্বের বিষয় হিসাবে ভাবলে তেমন কিছু ধরা পরে না, সমস্যা সৃষ্টি হয়না । কিন্তু এর মাধ্যমে যখনই প্রাচ্য তার নিজের এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে সীমারেখা টানতে চায় তখনই সমস্যার সূত্রপাত, সেখান থেকেই সাঈদের আলোচনার যাত্রা শুরু । তার মতে, প্রাচ্যকে হাজির করা হয় এমন এক অঞ্চলে যা তুলনামূলক ভাবে বিলাসবহুল, নিকৃষ্ট,রহস্যময়ী, সভ্যতার দিক থেকে পশ্চাতপদ এবং একইসাথে ভয়ংকর। আর এইসব বিষয় গুলো পাশ্চাত্য তার শিল্পকর্ম, সাহিত্য, চলচ্চিত্র প্রভৃতির মধ্যে সচেতন কিংবা অচেতন যেভাবেই হোক ফুটিয়ে তুলতে আগ্রহী হয়। সাঈদের মতে, প্রাচ্য সম্পর্কে পাশ্চাত্যের ধারণা, অভিজ্ঞতা সবকিছুই গড়ে উঠেছে উপনিবেশিকতার পরিকাঠামোর উপর ভিত্তি করে। তাই পাশ্চাত্য প্রাচ্যের প্রতি সবসময়ই অধিপত্য সৃষ্টি করেছে, করতে সক্ষম হয়েছে। সবচাইতে বড় কথা, প্রাচ্য সম্পর্কে প্রাচ্যের নিজের কোনো ধারণা প্রাদান করতে দেখা যায়না। প্রাচ্য যেনো কেবল পাশ্চাত্যের চোখেই ধরা পরে অথবা নিজেকে সে বুঝতে চায়না। সে মহৎ কিছুর ক্ষেত্রে নিতান্তই অলস এবং নিকৃষ্ঠ। পাশ্চাত্যের কাছে প্রাচ্য তাই আপন কেউ নয় বরং সে বিরক্তি ও ভীতিকর অন্য ( other) যার মাধ্যমে পাশ্চাত্য মূলত নিজেকে সমৃদ্ধ করে।
সুতরাং, এতোটুকু আলোচনার পর নতুনভাবে সংজ্ঞা প্রদান করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়, যা মূলত আগের কথা গুলোর পূনরাবৃত্তি হলেও কিছুটা সুসংবদ্ধ ভাবে আরেকবার বলার প্রয়োজন অনূভব করছি।
"প্রাচ্যতত্ব হচ্ছে প্রাচ্য সম্পর্কে ধারণা বা ছাচ তৈয়ার করা, যার মধ্যমে প্রাচ্যকে হাজির করা হয় এমন এক অঞ্চলে যা তুলনামূলক ভাবে বিলাসবহুল, নিকৃষ্ট,রহস্যময়ী, সভ্যতার দিক থেকে পশ্চাতপদ এবং সেইসাথে ভয়ংকর।"
প্রাচ্যতাত্বিক(Oriental-ism) কারা?
প্রাচ্যতাত্বিক হলেন এমন যে কেউ যিনি প্রাচ্যসম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। তিনি হতে পারেন প্রাচ্য-বিষয়ক চিত্রিশিল্পী; কবি-সাহিত্যিক; সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন কিংবা টেলিভেশনের
(প্রচার মাধ্যমের) সাংবাদিক কিংবা রিপোর্টার। অর্থাৎ প্রাচ্য বিষয়ে আগ্রহী যে কেউই প্রাচ্যতাত্বিক(Orientalists)।
বইয়ের প্রচ্ছদে,স্পষ্টতই পাশ্চাত্য মিডিয়া কিভাবে প্রাচ্যকে সন্ত্রাসের সাথে এক করে " ইসলাম " কে সাড়া পৃথিবীর কাছে উপস্থাপন করেছে তার ধারণা প্রাপ্ত হয়।
ফার্নান্দ করমোন, এই ফ্রেঞ্চ চিত্রশিল্পীর ১৮৭২ সালে আঁকা "দ্যা ডিপোসড ফেভারিট"। প্রাচ্যতাত্বিক এই চিত্রকর্মটিতে, পাচ্যকে কিভাবে হেয় ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে তার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ। খুজলে আরো অনেক ছবি পাওয়া যাবে। নেতীবাচক চিত্রের প্রদর্শনী থাকলেও ইতিবাচক কোনো চিত্র যেনো শিল্পীর চোখে ধরা দেয়না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৫২