somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধূসর অন্ধকার

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ছোট বোনের মৃত্যুর পর মা শারীরিক ও মানসিকভাবে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।তবে বেশীদিন যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়নি, কিছুদিন পর হুট করে তিনিও মারা যান।

বাড়ীতে আমি আর বাবা থাকি, আর কাজের একজন লোক আছে যে একাই গৃহস্থলীর সব কাজ করে থাকে।বাবা ব্যস্ত ব্যবসা নিয়ে, খুব কমই তাঁর সাথে কথা হয়।আমরা দু’জনই চাপা স্বভাবের, এ কারণে অতোটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।খাবার টেবিলে টুকটাক যা কথা-বার্তা হয়ে থাকে।আমার ব্যাপারে বাবাকে কখনো চিন্তা করতে দেখিনি। প্রতি মাসের শুরুতে আমাকে হাতখরচ দেয়া হয় যা দিয়ে আমার দিব্যি চলে যায়।

আমার জন্ম হয় দূর্বল হৃৎপিন্ড নিয়ে, প্রায়ই বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করি।ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেছিলেন খুব দ্রুতই অপারেশন করাতে হবে।আমি তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাইনি, বাবাকে জানানোর প্রয়োজন ও বোধ করিনি।
আমি আমার মতো করে থাকি।ভার্সিটি তে যাই, এক কোণায় বসে ক্লাস করি।কারো সাথে মিশতে পারিনা বলে আমার কোন বন্ধু হয়নি, ক্লাসমেটরাও আমার সাথে কথা বলার আগ্রহ দেখায় না। বাসায় এসে চুপচাপ বসে থাকি।বই পড়ে, টিভি দেখে সময় কাঁটাই। রাত একটু গভীর হলে আমি হাঁটতে বের হই।নানা চিন্তা করতে করতে হাঁটতে থাকি- এ সময়টা আমার খুব প্রিয়।
আজ আকাশটা মেঘলা, বৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা আছে।নির্জন একটা জায়গা বেছে নিয়ে আমি হাঁটা শুরু করি। একটু এগুতেই দেখি রাস্তার এক পাশে একটা কুকুর নেতিয়ে মরে পড়ে আছে, বিশ্রী দূর্গন্ধ এলাকা জুড়ে।

সেদিন দুপুরেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল, কিছুক্ষন আগে বৃষ্টি থেমেছে।ঘুমানোর জন্য আদর্শ আবহাওয়া।খাওয়া-দাওয়ার পর আয়েশে বিছানায় এলিয়ে পড়ি।বিকট চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে আমার, হুড়মুড় করে বিছানা থেকে উঠি-ধাতস্থ হতে সময় লাগে।বাইরে এসে দেখি মা চিৎকার করে কাঁদছেন, পুরা উঠোন রক্তাক্ত।এক কোণে আমার বোনের ছোট্ট দেহটি থেঁতলে পড়ে আছে।মার চোখ ফাঁকি দিয়ে বোন ছাদে ওঠে।বৃষ্টির কারণে শ্যাওলা জমা ছাদ পিচ্ছিল হয়ে ছিল।এর মধ্যে হাঁটতে গিয়েই এ বিপত্তি।
আমার মধ্যে কোন অনুভূতি কাজ করছিলোনা, আমি বোধশক্তিহীন হয়ে বোনের নিথর দেহটিকে কোলে তুলে নিয়ে আমার ঘরের খাটে এনে রাখি।কিছুক্ষন বাদে বাবা আসলেন, তিনি একদিকে বসে বোনের মৃতদেহের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে ছিলেন।বাবাকে কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি, কিন্তু আমি জানি আমার মত তাঁর চোখ দিয়েও এক ফোঁটা পানি গড়ায়নি সেদিন।

টিপ টিপ করে বৃষ্টি পরা শুরু হলো।

ছোট বোনের মৃত্যুর ধকল মা সহ্য করতে পারেননি, তাঁর ব্রেইন স্ট্রোক হয়।হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে তিনি পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিলেন।তীব্র অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে খাওয়ানো, পরিষ্কার করানো- এ কাজগুলো আমাকেই করতে হতো, কি বীভৎসই না ছিল সে দিনগুলো।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কি প্রবল বিতৃষ্ণা নিয়েই না তিনি বেঁচে ছিলেন ! তাঁর মৃত্যুর পর আমি আর বাবা কিছুটা হলেও কি স্বস্তি বোধ করিনি ?

আমার বুকের ব্যথাটা বাড়তে থাকে, নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি পথের ধারে মরে পড়ে থাকা কুকুরটার মতো নেতিয়ে পড়ি।
আমার জগৎ ধূসর অন্ধকারে ছেঁয়ে যাচ্ছে।
বৃষ্টির বেগ ক্রমশ বাড়ছে॥
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:১৬
৬৪টি মন্তব্য ৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×