আসুন আল-কুরআনকে নিরেপক্ষ দৃষ্টিতে বিবেচনা করে দেখি এটা আল্লাহর রচিত গ্রন্থ না মনুষ্য রচিত গ্রন্থঃ
আমরা একে একে বিবেচনা করবো আল-কুরআনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে।
১। কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? (আল কুরআন ২১ঃ৩০)
অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম। (আল কুরআন ৪১ঃ১১)
আপনারাই বলুন একজন মক্কার নিরক্ষর রাখাল বালক কীভাবে ৫৭০ সালের পরেই এই থিউরি বলে দিলো ?? সেটা বর্তমানের আধুনিক বিগব্যাং থিউরি নামে বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে ১৯৬০ সালে । এতে অবশ্যই বুঝা যায় কুরআনের এই আয়াত মক্কার মুহাম্মাদের নয় ।
কুরআনের এই আয়াত সাক্ষ্য দিচ্ছে পৃথিবীর সকল প্রাণকে পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে যা বর্তমান বিজ্ঞান আধুনিক কালে এসে পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে ঘোষণা দিয়েছে। একজন মরুভুমির বালক কীভাবে এই ঘোষণা দিতে পারে।কুরআন তার নিজের কথা হলে হয়তো সে বলতো,সমস্ত কিছু বালু থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ।সুতরাং এই আয়াত কোন সাধারণ সত্তার হতে পারেনা।
২। তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। এরা সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করছে। (আল কুরআন ২১ঃ৩৩)
কুরআনের এই আয়াত স্পষ্টভাবে বলছে সূর্য ও চন্দ্র এরা সবাই গতিশীল।এবং এরা কোন বস্তুকে কেন্দ্র করে অনবরত ঘুরছে। কিন্তু ১৬০০ শতকেও সৌরকেন্দ্রিক থিউরি অনুসারে সূর্যকে স্থির বিবেচনা করতো পৃথিবীর সকল বিজ্ঞানীরা। তাহলে রাখাল মুহাম্মাদ ৬০০ শতকেই কীভাবে বলতে পারে সূর্য গতিশীল ??
৩। এমনকি আমি তাদের অংগুলিগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম। (আল কুরআন ৭৫ঃ০৪ )।
এ আয়াতে আল্লাহ্ এমন কিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে আমি এমন কিছু পদার্থ দিয়ে মানুষের আঙ্গুলিগুলো আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব। এমনকি বিজ্ঞানীরা এটা সম্ভব করেও দেখিয়েছেন। এখন বিশ্বের সব জায়গায় এই প্রযুক্তি ব্যবহারিত।একজন নিরক্ষর মানুষ কীভাবে বিজ্ঞানের এতো বড় সত্য বলে দিতে পারে এই প্রযুক্তি সৃষ্টি হওয়ার আগেই ??
৪। (১৩)অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। (১৪) এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়। (আল কুরআন ২৩ঃ১৩,১৪ )
আধুনিক বিজ্ঞানীরা এই মানব ভ্রূণের সৃষ্টির ধারাবাহিকতা বর্ণনা করেছেন ।প্রথমে শুক্রানু থেকে শিশু একটি চাবানো মাংসের টুকরার মত থাকে, যা জরায়ুর গায়ে ঝুলে থাকে, তারপর প্রথমে হাড় তৈরি হয় এবং তারপর হাড়ের উপর মাসল তৈরি হয়। লক্ষ্য করুন এমন বর্ণনা মুহাম্মাদ(সাঃ) বর্ণনা করেছেন ৭ম শতাব্দীতে। তিনি তো চিকিৎসক ছিলেন না !! তাহলে এটা কার বাণী হতে পারে ???
৫। তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি সূর্যকে বানিয়েছেন আলোকজ্জল করে এবং চন্দ্রকে বানিয়েছেন প্রতিফলিত আলো বিতরণকারীরূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনযিল সমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এই সমস্ত কিছু এমনিতেই সৃষ্টি করেননি, বরং যথার্থ কারণে সৃষ্টি করেছেন। তিনি প্রকাশ করলেন তার নিদর্শনসমূহ যাতে জ্ঞানী সম্প্রদায় এসব বুঝতে পারে। (সুরা ইউনুস, ১০ঃ০৫)
কুরআনের এই আয়াত সাক্ষ্য দিচ্ছে সূর্য আলো প্রদানকারী কিন্তু চন্দ্রের কোন আলো নেই। চন্দ্র আলো প্রতিফলন করে মাত্র,অথচ আদিকাল থেকে মানুষ বিশ্বাস করে আসছে সূর্য-চন্দ্র এরা সকলেই আলো প্রদান করে থাকে। তাহলে কি এমন পেলো মক্কার যুবক যে এই প্রচলিত বিশ্বাসের বাইরে এই তথ্য দিলো ??
৬। আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। (আল কুরআন ২১ঃ৩২)
কুরআন বলছে আকাশমণ্ডলী মানব সম্প্রদায়ের জন্য ছাদ বা ঢাল স্বরূপ। আমরা বর্তমান বিজ্ঞানের বদৌলতে জানি সূর্য ও বিভিন্ন নক্ষত্র থেকে আসা বহু ক্ষতিকর রশ্মি আমাদের মাথার উপরে ওজোন স্তরে বাঁধা প্রাপ্ত হয় এটা ছাড়া মানব সম্প্রদায় পৃথিবীতে টিকতে পারতো না । এই তথ্য মুহাম্মাদকে কে দিলো ??
৭। (১৯)তিনি পাশাপাশি দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন। (২০)উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না। (আল কুরআন ৫৫ঃ২০,২১ )
আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক সাগরের মধ্যে লবনাক্ততার পার্থক্য রয়েছে। এইজন্য ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক সাগরের পানি মিশে যায়না। এমনকি দুই সাগরে দুই ধরনের উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বসবাস লক্ষ্য করা যায়। এই তথ্য সমুদ্র না দেখা একজন মরুভূমির বালক কীভাবে জানলো ??
৮। (৬)আপনি কি লক্ষ্য করেননি, আপনার পালনকর্তা আদ বংশের ইরাম গোত্রের সাথে কি আচরণ করেছিলেন? (৭)যাদের দৈহিক গঠন স্তম্ভ ও খুঁটির ন্যায় দীর্ঘ ছিল। (আল কুরআন ৮৯ঃ ৬,৭)
এই ইরাম গোত্রটি পৃথিবীর কোন ইতিহাসে খুজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। বাইবেলে,হিন্দু ধর্ম গ্রন্থেও এর কোন বর্ণনা নেই। এইটি ১৯৯২ সালে চ্যালেঞ্জার মহাকাশ যানের রাডার ব্যবহার করে মাটির নিচ থেকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে ।তাহলে মক্কার বালক কীভাবে এই মাটির নিচের শহরের কথা বলে দিলো যদি সৃষ্টিকর্তা তাকে না জানিয়ে থাকেন ?
৯। তারপর আমি পাকড়াও করেছি-ফেরাউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে এবং ফল ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। (আল কুরআন ৭ঃ১৩০)
কুরআনের এই আয়াতের বহু পরে ১৭৯৯ সালে মিশরীয় চিত্রলিপি আবিষ্কার হয় এবং জাঁ ফ্রাঁসোয়া শাঁপোলিয়ঁ এবং টমাস ইয়ং এর পাঠোদ্ধার করেন। এবং সেখানেও কুরআনের অনুরুপ মিশরীয়দের ঘটনা বর্ণনা পাওয়া যায়। এটা ৫৭০ সালে জন্ম নেওয়া যুবক কীভাবে বর্ণনা করতে পারে যদি তার সৃষ্টিকর্তা তাকে না বলে থাকে ??
এবার বলবো কুরআনের কিছু গাণিতিক জলন্ত মিরাকলঃ
কুরআনে ইয়াওম (অর্থ একদিন) শব্দ ৩৬৫ বার আছে। এক বছর =৩৬৫ দিন।
সেহর (অর্থ এক মাস) আছে ১২ বার। এক বছর= ১২ মাস
কমার (অর্থ চন্দ্র) শব্দটি এসেছে ২৭ বার। চাঁদ ২৭ দিনে একটি চক্র সম্পন্ন করে।
ভূমি (আল-বের) ১২ বার এবং সমুদ্র (আল-বাহর) ৩২ বার। এদের অনুপাত: ১২/৩২ = ০.৩৭৫। পৃথিবীতে ভুমির মোট আয়তন ১৩৫ মিলিয়ন বর্গ কিমি, সমুদ্র ৩৬০ মিলিয়ন বর্গ কিমি। এদের অনুপাত হুবহু মিলে যায়: ১৩৫/৩৬০ = ০.৩৭৫।
দুনিয়া ১১৫ বার এবং আখিরাত ঠিক ১১৫ বার আছে।
শয়তান এবং ফেরেস্তা ঠিক ৮৮ বার করে আছে।
উন্নতি (নাফ) এবং দুর্নীতি (ফাসাদ) ঠিক ৫০ বার করে আছে।
এছাড়াও বহু কুরআনের মুজিজা বা ঐলোকিকত্ব রয়েছে। যা একটি মানুষকে বলতে বাধ্য করে এটা অবশ্যই কোন মানুষের রচিত গ্রন্থ নয় । এরপরেও কি বলবেন এটা ব্যক্তি রচিত কিতাব ??
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৭