somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ন্যাড়া পাহাড়ের দেশেঃ পর্ব ১ ( খারদুংলা,নুব্রা,পাংগং লেক)

২৫ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লেহ শহরের হোস্টেলাভি তে আমরা উঠি, এখানে এক ভিন্ন পরিবেশ। ডরম সিস্টেম হওয়াতে পৃথিবীর ভিবিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ট্রাভেলার রা রুম ভাড়া নিয়েছে। বলা যায় লেহ শহরে এটি একটি ট্রাভেলারস বেজ ক্যাম্প। আজ লেহ শহরের অফিস আওয়ার শেষ, পারমিশন নেওয়া হবেনা আজ। ২ দিনের ৪৭৫ কিলো রাস্তা জার্নি শেষে সবায় এখন আমরা বিশ্রাম করে নিলাম। রাতে খাবারের জন্নে পুরো লেহ শহর টা একটু ঘুরে নিলাম আমরা। রাতে জলদি ঘুমিয়ে গেলাম, আমাদের রুমেই ছিলো ভিন্ন দেশের ৬ জন। কেও ইন্দো, কেও ব্রিটিশ,কেও ফ্রান্স এর। ভোর হলো হোস্টেলাভি তে। বারান্দায় বসে চা এ এক চুমুক দিয়ে দিনের শুরু।


আমি বের হয়ে গেলাম পুরো টিমের জন্নে গাড়ি ও পারমিশন ঠিক করতে। পুরো শহর ঘুরে ৪ দিনের জন্নে একটা কোয়ালিস ঠিক করে নিলাম। আজকের গন্তব্য ডিস্কিট শহর। ডিস্কিট হলো নুব্রার রাজধানি। লেহ মল রোডের মুসলিম হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে আমাদের পথচলা শুরু।শহর ছাড়িয়ে আকা বাকা ক্রমশ উচু পথে উঠতে শুরু আমাদের।


প্রায় ২ ঘন্টা রিগজিন গাড়ি চালিয়ে আমরা পৌছাই সেই খারদুংলা পাসে(১৭৫৮২ ফিট) যাকে এখনো অনেকেই পৃথিবীর সবচেয়ে উচু মটোরেবল পাস বলে থাকে। কিন্তু না আসলে এটি ভারতের সবচেয়ে উচু মটোরেবল পাস হলেও তিব্বত এর সেমো লা পাস(১৮২৫৮ ফিট) পৃথিবীর সবচেয়ে উচু মটোরেবল পাস। এখানে এসে আমরা প্রথম বরফের ছোয়া পেলাম, পাহাড়ের গায়ে জরিয়ে ছিলো বরফ!


এবারে অনেকক্ষণ ধরে শুধু নিচেই নামলাম। আরো বহু পথ পেরিয়ে রাত ৮ টা নাগাদ আমরা পৌছাই ডিস্কিট এ। এখানে এন্ট্রি করে আমরা আমাদের ক্যাম্প সাইট খুজতে শুরু করি। ততক্ষনে ছোট এই শহরের সকল দোকান পাট বন্ধ। একটা খাবারের দোকান পেয়ে আমরা কোনোমতে কিছু খেয়ে নিলাম ।


রাতে আমরা ক্যাম্প করি ডিস্কিট এর বাস টারমিনাল এ। পরদিন ভোর হলো, আমরা চলে যাই পানামিক এ। পানামিক এ হট ওয়াটার স্প্রিং এ ফ্রেশ একটা গোসল দিয়ে সবার দিন শুরু। তারপর আমরা যাই হুন্ডার এ। হুন্ডার এক ভালোবাসার নাম! মরুর দেশের মতো। এখানে দেখা পেয়েছিলাম দু কুজের উট গুলোর।


এখান থেকে আমরা পথ ধরি পাংগং লেকের। অসাধারণ রাস্তা ধরে আমাদের চলাচল। এক এক টা পথ যেন স্বর্গে যায়।


পথেই পরে আরেক নুব্রা ভ্যালি, যার জন্নে এই পথে পাংগং লেক যাওয়া। শিয়ক নদির তীরবর্তী একটি সভ্যতা।


শিয়ক গ্রামের কাছে পৌছিয়ে গেলো আমাদের গাড়ির ব্রেক টাইট হয়ে :-p অনেকক্ষণ গুতাগুতি করে তারপর ঠিক করা গেলো। ততক্ষণে শাওন একটু ফটোগ্রাফি করে নিলো আপনাদের সবার জন্নে।


শিয়ক পেরুলেই হাতের বা পাশে পরে ইন্ডিয়ান আরমির একের পর এক ক্যাম্প। কাম্পের পরেই তো ভারত-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী কারাকোরাম রেঞ্জ এর পাহাড়। টাংস্টে তে রাতের খাবার খেয়ে আমরা আবারো ছুটলাম লেকের পথে। ৮ টা নাগাদ পৌঁছেছি লেকের পাড়ে, গুছ কালো অন্ধকারে লেক আর আমরা দেখতে পাইনি। লেকের পারেই ক্যাম্পসাইট নির্ধারণ করি। তাবু সেট করার পর তিব্র বাতাসে কিছুতেই তাবু ঠিক রাখতে পারছিলাম না। শেষমেশ উপায় না পেয়ে একটি তাবু আমরা সরিয়ে ফেলি,আরেকটি তাবু গাড়ি দিয়ে বর্ডার দেই। রাতে তাপমাত্রা ক্রমশ ও কমতে থাকে। একই তাবু তে ৪ জন থাকায় আরামের একটা ঘুম হয়েছিলো আমাদের।

ভোর হলো,এ এক অমায়িক সৌন্দর্য। বর্ণনা করে বুঝানো যাবেনা কোথায় রাত কাটিয়েছিলাম আমরা।


এই এক ট্রিপে আমাদের ভাগ্য কতটুকু প্রসন্ন ছিলো আরো একবার আমাদের মনে করিয়ে দিলো সিজনের প্রথম তুষারপাতে। নাস্তা খেয়ে রউনা দিলাম সো মোরিরি এর উদ্দেশে। বাইরে তুমুল তুষারপাত হচ্ছে,এক অন্যরকম ভালোলাগা! ১২ টা নাগাদ পৌছালাম চাং লা পাসে। পৃথিবীর অন্যতম ডেঞ্জারাস পাস যাকে বলা হয়, গতকালই এখানে ফ্রান্স এর ২ জন নিহত হয়েছিলো। আজ আবহাওয়া আরো খারাপ, তুষারে ঢাকা পুরো পথ! যেদিকে তাকাই শুধুই ধ্বংসাবশেস! হয়ত প্রটিতা মানুষের বুক এই পাসে এসে কাপে,তাই আমাদের ও!!


আকিয়ে বাকিয়ে প্রায় ১ ঘন্টা লেগেছিলো এই পাস শেষ করে শক্তি গ্রামে পৌছাতে। শক্তি তে পৌঁছেই ফোনে নেটওয়ার্ক, প্রায় ৩ দিন পর আবারো পরিবারের মানুষের সাথে এক ঝলক কথা হয়েছিলো। শান্ত হয়েছিলো মন টা!

চলবে......
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:২৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×