রাজপুত্র আর এক রাখাল, দুইজনে বন্ধু। রাজপুত্র প্রতিজ্ঞা করলেন, যখন তিনি রাজা হবেন, রাখাল বন্ধুকে তার মন্ত্রী করবেন।
রাখাল বললো,-"আচ্ছা ঠিক আছে।"
দুইজনে মনের সুখে থাকেন। রাখাল মাঠে গরু চরিয়ে আসে,তারপর দুই বন্ধুতে গলাগলি ধরে গাছতলে বসে। রাখাল বাঁশি বাজায়, রাজপুত্র শোনেন। এইরূপে খুব মজায় দিন গুলো কাটছিল।
একসময় রাজপুত্র রাজা হলেন। বিয়ে করলেন সুন্দরী কাঞ্চনমালাকে। ঘরে অপরূপা রানী, রাজভান্ডার ভরা মানিক.........একসময় রাজপুত্রের আর তার রাখাল বন্ধুর কথা মনেই রইলো না!!
একদিন রাখাল এসে রাজদুয়ারে ধর্ণা দিল-"বন্ধু রাণী কেমন, দেখালে না তো!!"
এই কথা শুনে দারোয়ান তাকে "দূর, দূর" করে তাড়িয়ে দিল। তখন রাখাল মনের কষ্টে কোথায় যে দেশান্তরি হয়ে গেল, কেউই জানিলো না।
এই ঘটনার পরদিন ঘুম হইতে উঠে রাজা চোখ মেলতে পারেন না। কি হলো, কি হলো, সবাই তো ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো!!
শোরগোল শুনে এসে রাণী দেখেন, সকলে দেখে, রাজার সারা শরীরে সুঁচ,-মাথার চুল পর্যন্ত সুচ হয়ে গেছে!!-
এ কি হলো!-
রাজপুরীতে কান্নাকাটি ধুম পড়ে গেলো!
রাজ খেতে পারেন না, শুতে পারেন না, কথা বলতে পারেন না। তখন তিনি রাজা মনে মনে বুঝলেন, রাখাল বন্ধুর কাছে প্রতিজ্ঞা করে প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গার কারণেই তার আজ এই দশা। কিন্তু মনের কথা তো আর কাউকে বলতে পারেন না।
সূঁচরাজার রাজসংসার অচল হয়ে পড়লো।
মনের দুঃখে রাজা মাথা নামিয়ে বসে থাকেন আর রাণী কাঞ্চনমালা দুঃখে কষ্টে কোন রকমে রাজত্ব চালাতে লাগলেন।
একদিন রাণী নদীর ঘাটে স্নান করতে গেছেন, এমন সময় অচেনা এক পরমাসুন্দরী মেয়ে এসে বললো,-"রাণী যদি দাসী কিনেন, তো, আমি আপনার দাসী হব।"
রাণী বললেন-"তুমি যদি সূঁচরাজার সূঁচ খুলে দিতে পার, তাহলে তোমাকে আমি কিনবো।"
দাসী স্বীকার করলো, যে সে কাজটা করতে পারবে। তখন রাণী তার হাতের কাঁকন দিয়ে দাসী কিনলেন।
দাসী বললো,-"রাণী মা, তুমি বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছো; কতদিন না-জানি ভাল করে খাও না, নাও না। গায়ের গহনা ঢিলা হয়ে গেছে, মাথার চুলে জটা লেগে গেছে। তুমি গহনা খুলে রাখ, আমি তোমাকে ভাল করে ক্ষার-খৈল দিয়া স্নান করিয়ে দেই।"
রাণী বলিলেন,"না গো, কি আর স্নান করবো,এসব থাক।"
দাসী তা শুনলো না, বলে-"মা, এখনই ডুব দাও।"
রাণী গলা-জলে নেমে ডুব দিলেন। আর এই ফাকে দাসী রাণীর কাপড় পড়ে, গহনা গায়ে দিয়ে ঘাটের উপর উঠে ডাকলো-
"দাসী লো দাসী পান্ কৌ।
ঘাটের উপর রাঙ্গা বৌ!
রাজার রাণী কাঁকনমালা;-রাজার রাণী কাঁকনমালা;-
ডুব দিবি আর কত বেলা?"
রাণী ডুব দিয়ে দেখেন, দাসী রাণী হয়ে গেছে আর, তিনি বাঁদী হয়ে গেছেন।
রাণী কপালে চড় মেরে, ভিজা চুলে কাঁপতে কাঁপতে কাঁকনমালার সঙ্গে চললেন।
রাজপুরীতে গিয়া কাঁকনমালা পুরী মাথায় করল।
মন্ত্রীকে বলে,-"আমি স্নান করে আসছি আর তোমরা হাতি ঘোড়া সাজাওনি কেন?"
পাত্রকে বলে,-"আমি স্নান করে আসবো, তোমরা দোল-চৌদোলা পাঠাওনি কেন?"
মন্ত্রীর, পাত্রের গর্দান গেল।
এই ঘটনায় সবাই চমকে উঠলো, এ আবার কি!
কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারল না। কাঁকনমালা রাণী হয়ে জাকিয়ে বসলো আর কাঞ্চনমালা দাসী হয়ে রইলেন!
রাজা কিছুই জানিতে পারলেন না।
To be continued