somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট !

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পায়ের নখ কাঁটা দরকার । বাড়তি নখের জন্য সু পড়া যাচ্ছে না । গুহা মানবদের মতো নখ বেড়ে উঠায় মোজো পায়ে গলাতেই কেমন বাঁধো বাঁধো ঠেকছে ।
- মা নেইলকাটার কোথায় ?
- তোর বাবার ড্রয়ারে দেখ তো , কাল রাতে ওইখানে দেখেছিলাম । মা রান্না ঘর থেকে জবাব দেন ।

নেইলকাঁটার বাবার ড্রয়ারেই পাওয়া গেল । বাবার ঘুম না ভাঙিয়ে খুব ধীরে ধীরে নেইলকাঁটার নিয়ে চলে আসতে চাইলেও সম্ভব হল না ।
--খোকা !
ইশশ , শব্দ হয়ে গেছে ! বাবার তীব্র ইনসমনিয়া । তিনি সারা রাত জেগে থাকেন । হয়তো বই পড়েন , লেখালেখি করেন ,গুনগুন গান ধরেন অথবা একদম চুপচাপ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন । ভোরের দিকে বিছানায় যান । একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠেন । এমনটাই হয়ে আসচ্ছে দীর্ঘদিন । শব্দ করে আজ বাবার সকাল সকাল ঘুমটা ভেঙ্গে দিলাম ।

--আপনার ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম বাবা ! আমি নতমুখে বললাম
--আরে না রে ! চোখ কি আর এখন এতো সহজেই জোড়া লাগে যে ঘুম ভাঙবে । শীতের মিষ্টি রোদটা জানালা গলে বেশ কিছুক্ষন যাবত গালে এসে পড়ছে । রোদটা গালে পুষে রাখছি । ভালো লাগছে , জানিস !
--বারান্দায় বসবেন ?
বাবা উজ্জ্বল মুখে বলে উঠলেন - সেই সাথে এককাপ গরমাগরম চা ! আহা ! হুইল চেয়ারটা দে তো খোকা ।

আলমারির সাথে ঠেস দিয়ে রাখা হুইল চেয়ারটা বিছানার কাছে নিয়ে আসলাম । বাবা আমার দু কাঁধে ভঁর দিয়ে ধীরে ধীরে চেয়ারে বসলেন । নিজেই চাকা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বারান্দায় গেলেন । আমি যাচ্ছি বাবার পিছন পিছন ।

বাবা মোটেও চান না তাঁর হুইল চেয়ার পিছন থেকে অন্য কেউ ঠেলে নিয়ে যাক । সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসচ্ছি । দীর্ঘদিন পোষ্ট অফিস মাস্টার হিসেবে চাকুরী করেছেন । কিন্তু কক্ষনো শুনিনি কাউকে বলেছেন - “ আমাকে বাড়ি পৌঁছে দাও । “
দু পা হারাবার পর নিজের হুইল চেয়ারের চাকা তিনি নিজেই ঘুরিয়ে পথ চলেছেন । সুদীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর । ক্লান্তিহীন । কিন্তু আজ লক্ষ্য করলাম শোবার ঘর থেকে বারান্দা এইটুকু পথ চলতেই বাবা বড্ড হাপিয়ে গেলেন ।

--আমাদের মাস্টারনী কি চলে গেল ? ডান চোখে সরু করে অল্প কৌতুকের আদলে বাবা কথাটি বললেন ।
আমি হেসে জবাব দিলাম ।
- মা রান্নাঘরে । আজ উনার বেশ তাড়াহুড়ো । স্কুলে আজ থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে । এক্সাম হলে মা’র ডিউটি পড়েছে ।
--গেল ! তাহলে তো আর চা’য়ের কথা মাস্টারনীর কানে তোলা যাবে না । ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু করে দিবেন ।

এখনো বাবার চোখে মুখে কৌতুক । বাবাকে আমি কখনো কৌতুক মেশানো ভঙ্গি ছাড়া মা প্রসঙ্গে কথা বলতে দেখিনি ।
বাবা মিটিমিটি হাসচ্ছেন । মিষ্টি রোদটাও এখন বাবার কোলে । রোদটাও মিটিমিটি হাসচ্ছে ! একটা ক্যামেরা যদি থাকতো ছবি তুলে রাখতাম ! কি সুন্দর লাগছে বাবাকে ।

আমি রান্নাঘরের চৌকাঠে দাড়াতেই মা কপট বিরক্তিতে আমার হাতে চায়ের চাপ তুলে দিলেন ।
--তাড়াতাড়ি যা ! উনাকে দিয়ে আয় । তোদের গলার আওয়াজ শুনেই বুঝেছি সে উঠে পড়েছে । এখন এক কাপ চা না পেলে তো চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিবে ! খুব যন্ত্রণা দেয় বুড়োটা ।
আমি চায়ের কাপ হাতে নিলাম । গত ছাব্বিশ বছরে আমি এই দুই তুমুল প্রেমময়ী নরনারীর তীব্র ভালোবাসা বুঝতে শিখে গিয়েছি । এবং বিস্মিত হয়েছি বাবা মা’র পরস্পরের প্রতি ভালবাসতে পারার ক্ষমতা দেখে ।

বাবার হাতে চায়ের তুলে তুলে দিয়ে আমি রুমে আসলাম । ১১ টায় আমার ইন্টার্ভিউ । একটু আগেভাগেই অফিসে পৌছাতে চাই । দেরীতে রওনা দেয়ার কারনে এরআগে বেশ কয়েকটা ইন্টার্ভিউ মিস হয়েছে । এখন থেকে আর দেরী নয় ।

পায়ের নখ দ্রুত কেটে বাথরুমে ঢুকে গেলাম । গোসল দিলাম । বের হয়ে ফিটফাট বাবু সাজলাম । চাকুরীর ইন্টার্ভিউ অনেকটা কন্যা দেখার মতো । চাকুরী প্রত্যাশী মানুষটি এখানে কন্যা আর চাকুরীদাতা খুঁতখুঁতে পাত্রের মা , বোন অথবা বড় খালা ! এ এক কঠিন পরিস্থিতি ! ছেলে মেয়ে প্রায় সবাইকে এই ভয়ঙ্কর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় । তারপরও কেন যেনো সমাজ থেকে কন্যা দেখা প্রথা বিলোপ হয় না ! চাকুরীর ক্ষেত্রে না । মেয়েদের ক্ষেত্রেও না ।

এজুকেশন সার্টিফিকেট ফাইলটা অভ্যাসমতো দেখে নিলাম । যদিও জানি দেখার কিছু নেই । এই পর্যন্ত বহুবার ঠিক এইভাবেই ফিটফাট বাবু সেজে ফাইল চেক করেছি । কাগজপত্র যার যেখানে থাকার সেখানেই আছে কিন্তু চাকুরী নামের সোনার হরিণ আজ পর্যন্ত হাতে ধরা দেয়নি । তাই বলে ইন্টার্ভিউ দেয়া বন্ধ থাকছে না । দিয়ে যাচ্ছি । একদিন হয়তো পেয়ে যাবো সেই অমূল্য রতন ।

সব গোছগাছ করে যখন রুম থেকে বের হয়ে আসলাম শুনি বাবা গুনগুন করে গান গাইছে । মা ইতিমধ্যে চুপিচুপি দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন । আমি মা’র পাশে দাড়াতেই আমার কাঁধে মা মাথা রাখলো । আমরা মুগ্ধ হয়ে বাবার গান শুনছি –

“ আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা // কারোর দানে পাওয়া নয়

চমৎকার ভরাট গলায় গান করেন বাবা ! বিয়াল্লিশ বছর আগে একুশ বছরের টগবগে এই তরুণ স্টেনগান হাতে দেশ স্বাধীন করেছিল । আর কণ্ঠে ছিল গান । যেদিন ভোরে বাবা তার দুটো পা হারায় তারআগের মধ্যরাতেও তিনি তাঁর সঙ্গীদের শুনিয়েছিলেন - “ মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি // মোরা একটি ফুলের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি “
স্মৃতির সিন্ধুক থেকে বহুবার আমাকে সেদিনগুলোর গল্প তিনি শুনিয়েছেন ।

গুনগুন গান শেষ হবার পর আমি বাবার কাছে এগিয়ে গেলাম ।
--বাবা , আমি বের হচ্ছি
--কোথায় যাচ্ছিস রে ?
--একটা ইন্টার্ভিউ আছে বাবা !
ঘাড় ঈষৎ বাঁকা করে বাবা আমায় দেখতে দেখতে বললেন--চাকুরীর বাজারটা বড় কঠিন হয়ে যাচ্ছে তাই না খোকা , খুব অবাক লাগে এতো ভালো রেজাল্ট নিয়েও চাকুরীর হচ্ছে না দেশে ! চাকুরী গুলো পায় তবে কারা ।
মা বাবার দিকে আজকের পত্রিকা বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল
--যারা চাকুরিদাতাদের পকেট ভরে দিতে পারে , মামা চাচার ক্ষমতার দাপট দেখাতে পারে অথবা সঠিক সময়ে সার্টিফিকেট ব্যবহার করতে পারে চাকুরী তাদের হয় ।

সার্টিফিকেটের কথা শুনে বাবা হাসতে লাগলেন । এইটা বাবার প্রতি মায়ের খুব কমন একটা অভিযোগ । তিনি প্রায়শই বলেন আজও বললেন
--আমাদের তো মামা চাচা দাপট নেই কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যে সার্টিফিকেট তোমার আছে সেটা তো তুমি কোন দিন আমাদের ব্যাবহার করতে দিলে না ।
বাবা পত্রিকা এক হাত হতে অন্য হাতে নিলেন । উনার মুখ কিছুটা অন্যমনস্ক । কিছু ভেবে বলবার আগে বাবার এমনটা হয়

-- রেখা , তুমি ভুল বললে । আমার সার্টিফিকেট ব্যাবহার হয়নি কথাটা ঠিক নয় । এইতো স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের সন্তানরা বেড়ে উঠছে এটাই তো আমার সার্টিফিকেটের সর্বোত্তম ব্যাবহার !

মা গলায় খানিকটা ক্লান্তির , খানিকটা অভিমানী গলায় বললেন
--আমাদের স্কুলের ফিজিক্সে নতুন জয়েন করা এনায়েত হায়দার তাঁর বাবার মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় দিব্যি চাকুরী পেয়ে ফেললো । দেশে একটি মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট থাকা কতো সুযোগ সুবিধার অথচ তোমার ছেলেকে তুমি মুক্তিযোদ্ধা কোঠা কোনদিন ব্যাবহার করতে দাওনি । স্কুলে না , কলেজে না ভার্সিটিতে না । এখন চাকুরিতেও না !

বাবা রকিং চেয়ারে হেলান দিলেন । লম্বা একটা বাতাস বুকে টেনে নিলেন ।
--রেখা , আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে , আমার একুশ বছর যেদিন হল , মা সেদিন রাতে মুরগীর ঝোল রান্না করেছিলেন আমার জন্য । গঞ্জে যাবার আগে আমি কথা দিয়েছিলাম রাতে এসে ভাত খাবো । মাকে দেয়া সেই কথা রাখা হয়নি । গঞ্জ থেকেই দল বেধে রফিক ওস্তাদ নেতৃত্বে দেমাগ্রী প্রশিক্ষণ সেন্টারের উদ্দ্যোশে রওনা দিয়েছিলাম । তখন আমার মাথায় কেবল একটা কথা বেজে যাচ্ছিল
“ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। । জয় বাঙলা “ ।

সেদিন কোন সার্টিফিকেটের লোভ ঐ ঘর পালানো ২১ বছরের তরুনের ছিল না । বিজয়ের মাত্র কয়েকদিন আগে ভোরে রাজশাহী আপারেশনে হটাৎ গোলার একটি আঘাত আমার পা দুটো উড়িয়ে নেয় । জানো পা হারানোর মুহূর্তেও আমার আফসোস হয়নি কেন যুদ্ধে আসলাম । মুক্তিযুদ্ধে তো আমাদের কোন কিছু পাবার বা হারাবার ছিল না । ছিল শুধু একটা আত্নবিশ্বাস । এই দেশ মুক্ত করবো । ব্যাস , এইতো !

মা কিছুটা মরিয়া হয়েই যেন বললেন
--কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তোমার অধিকার আছে দেশের প্রতি । এই দেশেরও কিছুটা হলেও দায়িত্ব আছে তোমার প্রতি ! এইটা কি অস্বীকার করতে পারবে ?

-- অধিকার ! দায়িত্ব ! বাবা মাথা ডান পাশে একটু বাঁকা করে মা’র দিকে তাকালেন ।

--যুদ্ধ তো আমি একা করিনি । আমার মতো লাখো বাঙলার সন্তান জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর নিয়ে এসেছে । বলতে পারবে রেখা , কতোজন মুক্তিযোদ্ধা আজ তাদের অধিকার আদায় করতে পেরেছে ? রাষ্ট্র কতোজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতি কর্তব্য পালন করেছে ?

আমি আর মা কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম । গ্রিলে একটি চড়ুই বসেছে । মিহি স্বরে ডেকে যাচ্ছে অনবরত । বাবা বলে যাচ্ছেন উনার দীর্ঘদিনের জমানো আক্ষেপ ।

--জানি কেউ আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না । কেউ বলতে পারবে না কেন জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী-কন্যার পতিতালয়ে বসবাস করতে হয় । কেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রোস্তম আলীকে দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় ! মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুল ছালামকে একটি সার্টিফিকেটের জন্য কেন আজও অপেক্ষা হয় ! কেন ? কেউ বলতে পারবে না অথচ দেখো সেইদিনের সুবিধাভোগী নরপশু রাজাকার, আলবদরবাহিনী আজ বাঙলার পতাকা উড়িয়ে বাঙলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ! তুমি তাহলে আমায় কোন অধিকারের কথা বলছ রেখা ! কোথায় অধিকার , কোথায় দায়িত্ববোধ ?

বাবার চোখ ভিজে যাচ্ছে । যুদ্ধের কথা যতবার বাবার মুখে এসেছে বাবা গর্ব করে মুক্তিযুদ্ধোকালীন বিভিন্ন অপারেশনের কথা আমাদের বলেছেন কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রাপ্য সম্মাণের বিপরীতে রাজাকারদের প্রসঙ্গ আসলে প্রতিবার বাবা অঝোরে কাঁদেন ! হয়তো এই কান্না হতাশার ! প্রাপ্য সম্মান না পাবার । হয়তো সুদীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছরেও বাংলাদেশ অ-স্বীকারকারী সমস্ত রাজাকারের সর্বোচ্চ বিচার দেখতে না পারার আক্ষেপে বাবার এ কান্না ।

আমি বাবার কাঁধ জড়িয়ে ধরলাম । আমার হাতে বাবার ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু ঝড়ে পড়ছে । অশ্রুফোঁটায় এতো উত্তাপ কেন ? যেন মনে হচ্ছে আমার হাত পুড়ে যাবে বাবার প্রতিটি অশ্রু বিন্ধুতে ।

--খোকা , হয়তো তোর মনে হতে পারে কেন আমি আমার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে রাষ্ট্রীয় সুবিধা আদায় করছি না !

আমি জোরে জোরে মাথা নেড়ে না বলতে চাইলাম কিন্তু আমাকে বাবা কিছু বলার সুযোগ না দিলেন না । বাবা আপন মনে বলে যাচ্ছেন । মনের সব কথা যেন তাঁর চালানো ৭১ র বুলেটের মতো বেড়িয়ে আসচ্ছে ।

--সত্যি কথা বলতে আমি মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটের অধিকার ভোগ করতে পারি না রে খোকা ! যখন দেখি রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীন দেশে নতুন দল গঠন করে ; টিভি খুললে যখন দেখি আমাদের বোন অঞ্জলিকে ধর্ষণের জন্য উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া কিম্বা মাধব চন্দ্র বিশ্বাসের হত্যাকারী সেই চিহ্নিত রাজাকার আজ ধর্মের কথা প্রচার করে । যখন নিজ কানে শুনি নতুন চন্দ্র সিংহের হত্যাকারীর রাষ্ট্রক্ষমতার বসে হাসছে তখন নিজেকে খুব ছোট মনে হয় রে ! মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেটটা যেন আমার দিকে কুটুক্তি ছুড়ে দেয় । আমায় নিয়ে তামাশা করে । এ অভিশাপ মেনে নিতে পারি না রে !

আমি হাঁটু মুড়ে বসে বাবার কোলে মাথা রাখলাম পড়লাম । মা বাবার ডান হাত জড়িয়ে ধরে বসে আছে । মধ্যবিত্ত ছাপোষা এক বাঙ্গালী পরিবার কাঁদছে । তারা লোকলজ্জার ভয় ভুলে চিৎকার করে কাঁদছে !


বহুক্ষন কেউ আর কোন কথা বলেনি । চুপচাপ আমরা বসে ছিলাম টিনশেডের সেই বারান্দায় । পাশেই বকুলের গন্ধ আমাদের চারপাশ মমতার মায়া বুলিয়ে দিচ্ছিল ।
--খোকা তোর দেরী হয়ে যাচ্ছে আর মাস্টারনী তো মনে হয় আবার হাত ধরে ঘুমিয়েই পড়লো ! বাবা ভেজা চোখে মুচকি মুচকি হেঁসে কথা বলে উঠলো ।
মা আদুরে মুখ ভেংচি কেটে বাবার হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো । আমি বাবাকে বললাম – বাবা আসি , দোয়া করবেন !
--খোকা ! শুধু একটি কথাই মনে রাখিস কক্ষনো বিশ্বাস হারানো যাবে না । কক্ষনো না । এই বিশ্বাসের জোরেই একাত্তুরে আমাদের বিজয় হয়েছিল । বিশ্বাস রাখ , তোদেরও বিজয় হবেই হবে ।

আমি বাবার হাতে চুমু খেলাম । মা বাবার হাতে বাসার চাবি গুজে দিতে গেলে বাবা দুষ্টুমি ভঁরা চোখে করে ফিসফিস করে করে মাকে কি যেন বলছে । হয়তো বাবার পছন্দের রোমান্টিক কোন গানের দুটি লাইন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীকে শুনাচ্ছেন ! মা খিল খিল করে হাসচ্ছে । এই দুই প্রেমযুগলকে সময় দিতে ফাইল হাতে আমি বাইরে বেড়িয়ে এলাম । রাস্তায় নেমে সিনা টানটান করে দাঁড়ালাম ।

যতদিন পর্যন্ত দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের ধারাবাহিকতা আমাদের শরীররে বইবে ততদিন এই দেশের সকল সন্তানদের গর্বের সাথে সিনা টান টান করে রাখতে হবে । তাদের মাথা সর্বদা থাকবে উঁচুতে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×