মানুষ চলে যায়, রেখে যায় তার স্মৃতি। স্মৃতি কখনো হাসায়, আবার কখনো কাঁদায়। কিছু স্মৃতি মানুষকে অন্য এক জগতের সন্ধান দেয়। আর! কিছু স্মৃতি মানুষকে পোড়াতে থাকে, খুবলে খেতে থাকে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। আর যারা স্মৃতির সাথে অবিরাম যুদ্ধে পরাজিত হয় তারা সময় হবার আগেই এমন এক শক্তির ওষ্ঠে চুম্বনা আঁকে যে শক্তির কাছে আমরা মানবজাতি শৃঙ্খলে আবদ্ধ। তার নাম মৃত্যু। মৃত্যুকে যারা আপন করে নেয় তাদের কি বলবো? কাপুরুষ? যাদের বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার শক্তি নেই তাদের কি বলবো? প্রশ্নটা আজ অনেকদিন ধরে মাথায় ঘুরছে। কি বলবো অরণ্যকে? ভীতু? কিন্তু কিভাবে বলি? সে তো পালাতে চায় নি, চায় নি এই পৃথিবীর কাছে হার মানতে। কিন্তু তাকে যে আমরা বাধ্য করলাম। আমরা সভ্য, নগর কেন্দ্রিক অতিমানবেরা। না, জ্ঞান বাক্য লিখছি না। লিখছি অরণ্যের কথা। আমার বন্ধুটি যখন চলেই গেল তার যাওয়া নিয়ে আমরা কি প্রশ্ন তুলবো? হ্যাঁ, তুলবো। অন্তত আমি তুলবো। এটা ঠিক না অরণ্য এভাবে চলে যেতে হয় না। এভাবে সবাইকে ধোঁকা দিয়ে না জানিয়ে যেতে হয় না।
আমার ভাগ্য কিংবা কপাল যাই বলিনা কেন জিনিসটা খুব ভালোর দলে নেই। আজ মিতাকে রাস্তায় দেখলাম। দেখে কিছুটা অবাক হয়ে উঠলাম। এতটা খুশি কিভাবে মানুষ হয়? এটা কি সময়ের তালে বদলে যাওয়া? নাকি তীব্র দুঃখ ঢেকে রাখা? মিতাকে দেখার পর প্রশ্নের মহামারিতে আমি আক্রান্ত। এত প্রশ্ন কিন্তু উত্তর কোথায়? আজ কোথায় অরণ্য? কোথায় তার অস্তিত্ত? আর যে মানুষটি একটা সময় তার অস্তিত্বকে অরণ্যের অস্তিত্ব বলতো আজ সে মুক্ত বিহঙ্গ। অনেক খুশি মিতা। মুঠোফোনে সেলফি নামক দুরারোগ্য ব্যাধি তে আঁকে আক্রান্ত দেখলাম, আরও দেখলাম তার ভুবন ভোলানো এক হাসি। যে হাসি একদিন শুধু ছিল অরণ্য নামক এক বোকার সকল সুখের উৎস। এত বোকা ছিল আমাদের অরণ্য। সত্যি বোকা ছিল অরণ্য, অনেক বোকা। ফিরে যাই আজ থেকে তিন বছর আগের সেই দিনটিতে যেদিন অরণ্য ছয়মাস পর মিতার দেখা পেয়েছিল। এবার নাটকীয় ভাবে। অরণ্য তার নিজস্ব আচরণ ভুলে কথা বলতে থাকল। একবার কানে কানে বল্লাম, বন্ধু আস্তে, আস্তে বন্ধু। কিন্তু সে কথা শুনতে রাজি নয়। তার মন শুধু মিতার কথায় মশগুল। ছয়মাস ধরে সবধরনের সামাজিক যোগাযোগ দিয়ে খুজে সে মিতাকে পায় নি সেই মিতা আজ তার সামনে।
“আজ ছয়মাস পর খুজে পেলাম। খুজে পেলাম তার ঠিকানা। মিতা তোমায় খুজেছি গত ছয়মাস ধরে। পাইনি খুজে কোথাও। নাম জানিনা যে তোমার। শুধু চেহারা জানি। ফেসবুকের প্রতিটা ক্লিক খুজেছে তোমায়। খুজেছি সব পরিচিতের তালিকায়। পেলাম না। পেলাম অনেকদিন পর। সে কি? তুমি আমাকে চিনলে না? কেন করছনা একসেপ্ট? আছি বিপদে আর দুশ্চিন্তায়। কই পাবো তোমায়? আমার চাইতো তোমায়। আমিও খুঁজবো, খুজে যাব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। ছয় মাস কেটে গেল মিতা। পাইনা কেন? নামও তো জানিনা। হবে কি এখন?
কি নামে ডাকব তোমায়?
অপ্সরী না মেঘবালিকা?
কি উপমা দেব?
লাস্যময়ী নাকি অপরাজিতা?
ফুলের ঈর্ষা তোমার নিত্যসঙ্গী,
দিখল কালো চুল তোমার আকর্ষণ।
কিন্তু কোথায় তুমি?
কেন পাইনা তোমায়?
নাকি কাছে থেকেও পথভ্রষ্ট আমি?
হাসির মায়াতে পরেছি বাঁধা,
তাই তো করে চলেছি,
তাকে পাওয়ার এক নিস্ফল অভিযান চলছে,
চলবে আরও।“
(চলবে)...