♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ধর্মীয় বিষয় কষ্ট দিলে আন্তরিকভাবে অনুরোধ থাকবে আমার লিখা এড়িয়ে যাবার।
(ছবি নেট হতে নিয়ে এডিট করা)
প্রিয় সোনা ভাই,
মনে হয় আমার উপর বড্ড রেগে আছেন। রাগ নয়, হয়তো অভিমান করে আছেন যে কেনো আপনি বারবার বলার পরও আমি মৌলিক তথা আমার নিজস্ব স্টাইল ফলো করে লিখিনা। কেনো ক্যাঁচাল করি। কিন্তু হয়তো আপনি খেয়াল করেননি যে, আমি প্রায়ই ক্যাঁচাল না করেলেও অনেকে আমাকে জড়িয়ে ক্যাঁচাল করে! ব্লগে অনুপস্থিত থেকেও শুনতে হয় বিভিন্ন কুকথা। একজন নিয়মিত ব্লগার হিসেবে বিষয়গুলো আপনার চোখ এড়িয়ে যাবার কথা নয়। বলতে পারেন কে কি করে বা বলে তা এড়িয়ে যেতে।
প্রিয় অগ্রজ,
এই মর্মে ক্ষমা চাচ্ছি যে এখনের যুগোপযোগী ততোটা ভাল মানুষ আমি নই। এখন ভালো মানুষ মানে চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে কালা, আর বাক থাকতে বোবা। তাছাড়া ততোটা মহান এখনো হতে পারিনি যে শত লাঞ্ছনা মুখ বুজে সইবো। আপনারা ব্লগের আলো তাই নির্বিঘ্নে জ্বলছেন। কিন্তু আমরাতো আর আলোক বর্তিকা নই! তাই হয়তো এভাবে হঠাৎ জ্বলা আর নিভে যাওয়াই আমাদের ভাগ্যের লিখন।
হে প্রিয় ধুলোবালিছাই,
নিশ্চই জানেন যে নিজের সৃষ্টিকর্ম সন্তানের চাইতে কোনো অংশে কম নয়! কেউ সুস্থ্য হলে নিজের সন্তানকে চায় না অনাদরে, অযত্নে, অবহেলায় ফেলে রাখতে। সবাই চায় তার সন্তানের একটা নিরাপদ অবস্থান। সবাই সন্তানের জন্য একটা মনোরম পরিবেশ চায় যেখানে সন্তান সঠিকটি শিখে হেসে-খেলে বড় হবে। একজন লেখকও ঠিক সেইভাবে এমন একটি স্থানে তার সৃষ্টিকর্মের অবস্থান দিতে চায় যেখান হতে শিখে সে তার সৃষ্টির মান আরো সমৃদ্ধ করতে পারে।
হে গানেরপাখি,
প্রতিনিয়তইতো কতো কষ্ট করে গীতমালা তৈরী করে গেয়ে চলেছেন। এর পেছনে কি আশা নেই যে আগামীর বুকে লালিত হোক এই সৃষ্টি? কিন্তু বর্তমানে কি এমন সৃষ্টি ততোটা মূল্যায়িত হয় যখন আমাদের রুচি চলে এসেছে "কুত্তার বাচ্চা ফুটফুটে সুন্দর" এই ধরণের লিরিকের প্রতি? গানের ভাবার্থ দিয়ে যা বুঝাতে চাওয়া হয়েছে সেটা কি ভদ্রভাবেও বুঝানো যায় না? গীতিকার বুঝে গেছে যে ভদ্রভাবে বললে আমরা সেটা সেভাবে মূল্যায়ণ করবো না। তাই আমাদের রুচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তার পথ বেছে নিয়েছে। এখানে অযথা গীতিকারকে দোষী করে লাভ নেই যেখানে আমাদের রুচির পচন ধরেছে। তাছাড়া গীতিকার তার বাকস্বাধীনতার সদ্ব্যবহার করেছে। বরং এটা নিয়ে কথা বলাটা আমার বোকামি। শ্রুতিকটু লাগাটা আমার অনাধুনিকতার প্রকাশ। তাইতো এই সমাজে এখন আমরা আধুনিকতার জন্য কীটসম।
হে মহাজ্ঞানী,
আধুনিকতার এই সমাজে ধর্ম পাশে ফেলে নির্বিঘ্নে সুশীল হয়ে বাঁচা সম্ভব। কিন্তু ধর্ম রাখলে ইচ্ছেমত কিছুই করা সম্ভব নয় কারণ ধর্ম আমাদের প্রতি নিঃস্বার্থভাবে খেয়াল রাখছে। তাইতো গাত্রোত্থান হতে পতন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রতিটি বিষয়ের নিয়ম-কানুন ধর্মে বিবৃত আছে যা আপাত দৃষ্টিতে অতিরঞ্জিত মনে হলেও সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারলে বুঝা সম্ভব যে এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তখন প্রগতিবাদের শুভঙ্করের ফাঁকিটা খুব সহজেই চোখে ধরা খায়। তাই যারা ধর্মের নৌকায় চড়েছে তাদের পক্ষে চাইলেও অনেককিছু করা সম্ভব হয় না যার ফল হিসেবে মানব কল্যাণই নিহিত রয়েছে।
হে গাতক,
আমার-আপনার এই যে চাওয়া আমাদের সৃষ্টিকর্ম অমর হোক, আমাদের অগ্রজ সৃষ্টিকারদের সৃষ্টিকর্ম কি আমরা সেভাবে অমর করতে পেরেছি? নাকি এখন প্রতি পদে-পদে তাঁদের সেসকল সৃষ্টকর্মকে লাঞ্ছিত করছি? ফেলি দিচ্ছি আস্তাকুঁড়ে? অনলাইন মিডিয়ায় ট্রল করছি তাদের নিয়ে? কিন্তু আমরা কি জানি আমাদের এসব দিয়ে ঊনারা পরপারে কিভাবে আছেন? তারচেয়ে আমাদের জন্য সময় না দিয়ে যদি নিজের আখের গোছাতেন তবে কি তা উত্তম ছিলো না? যদি পরপারে কিছু নাও পেতেন, তবুওতো আজকের এই ট্রলবাজি হতে মুক্ত থাকতেন।
হে সরলমনা,
কথা বললে শেষ হবেনা। তাই আর কথা বাড়াতে চাইনা। জানি আপনি অল্পেই তুষ্ট। যা করেন সব নিজের খুশিতে। কিন্তু অন্যকে খুশি করতে চাওয়াটাও নিজের খুশিরই অংশ। নয়তো আমরা পাবলিক মিডিয়ায় কখনও এসব নিয়ে হাজির হতাম না। একান্ত ব্যক্তিগতভাবেই রেখে দিতাম। কিন্তু এখন হয়তো কতিপয়ের জন্য তা প্রকাশ্যে আনছি কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে কতিপয় তা কখনও পৌঁছাবে না কিংবা পৌঁছে দিতে পারবে না। বরং ভবিষ্যত প্রজন্ম এটাকে আস্তাকুঁড় হতে বের করে নিয়ে এমন ট্রল করবে যা মৃত আমিকে বারবার মেরে ফেলবে। এই খ্যাতির বিরম্বনা দরকার নেই তাই সময় থাকতে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়াই উত্তম মনে করি।
প্রিয়,
অনেক কথাই বলে ফেললাম। সেজন্যে করজোড়ে ক্ষমা চাচ্ছি। আশা রাখি ভুল-ত্রুটিগুলো নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন। আপনার আদেশ বারবার অমান্য করার কারণ জানাতেই এই পত্র লিখা। আপনাকে পরামর্শ দেওয়া উদ্দেশ্য নয়, কিংবা সেই ধৃষ্টতা দেখাবার দুঃসাহসও নেই। শুধু মনের তাড়না হতে কথাগুলো লিখলাম। দয়া করে আমাদের মত আগাছাসম অখ্যাতদের নিয়ে ব্যাথিত হবেন না। আপনারা ফুলেরা শোভিত করে রাখুন এই প্রত্যাশা ছিলো, আছে, থাকবে। পরিশেষে আবারো ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিচ্ছি।
সপরিবার ভালো থাকুন।