somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধ জোনাকি (১ম পর্ব):

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্ট একটা রাস্তা । অথচ এটুকু পেরোতেই ঘামে ভিজে যায় শরীর । এমনিতে রাস্তার দুপাশে প্রচুর গাছপালা । অনেক আগে ঢাকার সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য লাগানো কালের সাক্ষী সেই মেহগনি গাছগুলো । হাঁটার সময় পাতা গায়ের উপর এসে এসে পড়ে । শীতকাল এসে যাচ্ছে । তাই এখন ঝরা পাতার দিন । আজকের পত্রিকাটা ব্যাগে যত্ন করে রেখে দিয়েছে কুসুম । সার্কুলারগুলো সময় নিয়ে দেখবে । আজকাল দীর্ঘশ্বাসগুলো বেশ ঘন ঘন আসছে । এটা কি হাঁপানির লক্ষণ ? শীতকালটাকে বড় ভয় কুসুমের । এই সময়টার সাথে হাঁপানির একটা আন্তরিক সম্পর্ক আছে ।

গলির মুখেই সিয়ামদের বাসা, “জয়নাব মঞ্জিল”। সিয়ামের মার নাম রোকসানা । বাড়িটা খুব সম্ভবত সিয়ামের দাদির নামে নামকরণ হয়েছে ।
দোতালার কলিংবেলটা অনেকদিন যাবতই নষ্ট । প্রথমদিন কুসুম এটাতে হাত দিয়ে একটা ঝিরঝিরে অনুভূতি পাবার পর থেকে দ্বিতীয়বার আর হাত দেয় নি । শুধু কলিংবেলই না বাড়ির গেটটার অবস্থাও বেশ ঝরঝরে । যেকোনো সময়ে গেটের কোনও একটা অংশ খুলে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে । কুসুম যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন স্কুল থেকে আসার সময় একবার একটা পাগলা কুকুর ওর পিছু নিয়েছিল । তখন সে উপায়ান্তর না দেখে এই “জয়নাব মঞ্জিল”এর গেট খুলে ঢুকে পড়েছিল । গেটের ভিতরে পাতাবাহার আর দোলনচাঁপার ঝাড়ের মধ্যে গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে থাকা কুসুমকে দেখে ফেলেছিল তারই বয়সী আরেকটা মেয়ে । ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে থাকা দুই বেণী করা সেই মেয়েটির চাহনিটা আজও ভোলেনি সে । হঠাৎ সামনে পড়ে যাওয়া শুঁয়োপোকার দিকে মানুষ যেরকম ভাবে তাকায় ঠিক ওরকমই ছিল দৃষ্টিটা । খানিকক্ষণ পর ঘৃণাদৃষ্টিময়ীকে তার মা যখন উচ্চস্বরে ভিতরের ঘরে খাবার খেতে ডাকলেন, কুসুম জানতে পারল ঐ মেয়েটার নামও কুসুম ।
আজ এতদিন পর কথাটা মনে পড়ে কুসুমের খুব হাসি পেল । হাসি পাওয়ার একটা বড় কারণ হচ্ছে সে মনে মনে মেয়েটার নাম দিয়েছিল কুসুমকুমারী । কেন যেন ওর মনে হয়েছিল মেয়েটার বাবা ওকে অফিস থেকে ফিরে ব্যাগ ভর্তি হাতে ওকে ঘরময় খুঁজে বেড়াচ্ছেন আর ডাকছেন, “কুসুমকুমারী কই গেলি, দ্যাখ তোর জন্য কি কি নিয়ে এসেছি ।”
নিজের বাবার কথা কুসুমের মনে পড়ে না বললেই চলে । ছয় বছরে হাতে গোনা কয়েকটা দিন বাবার কোলে ওঠার স্মৃতি এখনো তাকে কষ্ট দেয় । মূলত বাবা মারা যাওয়ার পরই সে অতিরিক্ত কল্পনাপ্রবণ হয়ে গেছে বলে তার নিজের ধারণা । কখনো বাবাকে নিয়ে, আবার কখনো অন্য মানুষের বাবাকে নিজের বাবা মনে করে অদ্ভুত অদ্ভুত সব ছায়া কল্পনা করত সে । আর উনার অফিস থেকে ফেরার সময়টাতে সে ছাদে গিয়ে বসে থেকেছে অনেকদিন । নামত ঠিক সন্ধ্যার পর ।

পুরনো দিনের বাড়ির সিঁড়িগুলোর মত উঁচু উঁচু সিঁড়ি এদের । প্রথমদিন শাড়ি পড়ে ডিঙাতে অনেক কষ্ট হয়েছিল কুসুমের । অথচ ভেতরের বাড়িটা নতুনই বলা যায় । সিঁড়ি শেষ হয়ে লম্বা করিডোর । তারপর দরজা । ঘেমে নেয়ে একাকার আর জর্জেট শাড়িতে লেপটে যাওয়া কুসুম কোনমতে দরজা অব্দি পৌঁছেছিল ।
রোকসানা সোফার পিছনে লুকিয়ে থাকা সিয়ামকে ডেকে এনে কুসুমের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল ।
“ইনি তোমার নতুন টিচার, সালাম দাও ।”
কুসুমকে অবাক করে দিয়ে সিয়াম হঠাৎ বলে বসল,
“টিচার তোমার নাম কি ?”
ঘটনার আকস্মিকতায় কুসুম হেসে উঠল । রোকসানা রীতিমত বিব্রত ।
“কি কাণ্ড দ্যাখো । সিয়াম, উনি তোমার টিচার, তুমি তাকে আপনি বলবে, মনে থাকবে তোমার ?”
কথাটা বলেই রোকসানা দ্বিতীয়বার বিব্রত হল ।
“ওহ, কি কাণ্ড দ্যাখো, তোমার নামটাই তো জানলাম না এখনো ।”
“আমার নাম কুসুম ।”
“সে কি কাণ্ড ? আমার একমাত্র ননদ লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়ে, সামনের সপ্তাহে দেশে ফিরছে, ওর নামও কুসুম ।”
কথায় কথায় ‘কাণ্ড’ বলাটা মনে হয় ওর মুদ্রাদোষ । যাই হোক, কথাটা শুনে কুসুম স্মিত হাসি হাসল,
“আমি জানি ।”
রোকসানা অবাক-বিস্ময় চেহারা নিয়ে কিছু বলতে গিয়ে মাঝপথে আটকে গেল । বুয়া এসে খবর দিল ভিতরের ঘরে সিয়ামের দাদি তাকে ডেকেছেন । অগত্যা উঠল সে ।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:০৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×