somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বজন হারানোর ব্যথা তাঁর মুখে সত্যিই বেমানান ; মোস্তফা হোসাইন (শাহীন)

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আওয়ামীলীগ বা তার অঙ্গ সংগঠনের কেউ নিহত কিংবা মারা গেলে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রায়শই বলতে শোনা যায় "স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি" এ ধরনের মানবিক অনুভূতি সকল মানবতাবাদী মানুষের মধ্যেই থাকা একেবারেই স্বাভাবিক আর সেটা রাষ্ট্রের নির্বাহীর মুখ থেকে বের হওয়া মানেই প্রমাণ করে জনগণ অন্তত তাদের রাষ্ট্র প্রধানের কাছে ন্যায় বিচার পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিতভাবেই শতভাগ আশাবাদী।

কিন্তু আমাদের মধ্যে শেখ হাসিনার এই মমতার বাণী যতটুকুন বিশ্বাসের দৃঢ়তা সৃষ্টি করে তার চেয়ে কোটি গুণ বেশী অবিশ্বাসের প্রাচীর তৈরি করে দেয়। এমন অবিশ্বাস তৈরি হওয়ার পিছনে আমাদের প্রত্যেকের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী যতটা না দায়ী তার চেয়ে বেশী দায়ী শেখ হাসিনার একদেশদর্শীতা আর সংকীর্ণ দলীয় মানসিকতার পরিচয় দেয়া।

গত কয়েকদিন আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী পাঁচ আসামির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে, এতে শেখ মুজিব মৃত্যুর পর সারাদেশের মানুষ যেমনিভাবে শুকরিয়ার নামাজ আদায় আর মিষ্টি বিতরণ করেছিল ঠিক একইভাবে ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামীলীগ ও সারাদেশে শুকরিয়ার নামাজ আদায়, সংসদে বিশেষ মুনাজাত আর মিষ্টি বিতরণ করে এতবছর পর খানিকটা হলেও স্বজন হারানোর বেদনা প্রশমিত করেছে।

আমার আলোচনার বিষয় মূলত শেখ হাসিনার সেই স্বজন হারানোর বেদনাকে কেন্দ্র করে। আজ শেখ হাসিনার সামনে যেভাবে তার সোনার ছেলেরা ঠান্ডা মাথায় একের পর এক পেশাদারী কায়দায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের হাতে নিহতদের জন্য শেখ হাসিনার ততটুকুন হারানোর বেদনা জন্মেনা যতটুকু তার নিজ দলের কেউ মারা গেলে জন্ম নেয়। শেখ হাসিনার এই সংকীর্ণতাকে স্বভাবতই মেনে নেয়া যেত যদি না তিনি রাষ্ট্রের অধিপতি হতেন, আজ শেখ হাসিনা যখন রাষ্ট্রের নির্বাহীর পদে সমাসীন সেক্ষেত্রে স্বভাবতই রাষ্ট্রের সকল মানুষের জান মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব তিনি কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না। অথচ আজ সে দায়িত্ব পালনে তিনি শতভাগ ব্যর্থ এক প্রধানমন্ত্রী।

সাধারণ মানুষের কথা না হয় আপাতত বাদই দিলাম, কারণ তারা তো আর শেখ হাসিনার বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা অন্য কোন আত্মীয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয় যে তাদের হত্যাকারীদের বিচার যথাযথভাবে করতে হবে।

কিন্তু যখন একের পর এক বিভৎস আর পাশবিক হত্যাকান্ডের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সোনার ছেলেরা একটি দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যার উল্লাসে মেতে উঠে তখন ও কি শেখ হাসিনার স্বজন হারানোর বেদনা জাগ্রত হয়না?

একজন ছাত্রের উপর নির্ভর করে অনেক লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন, একটি পরিবার যেমনি ভাবে স্বপ্ন দেখে তাকে নিয়ে, তেমনি তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে একটি সমাজ, একইভাবে একটি দেশ ও তাকে নিয়েই আগামীর স্বপ্ন দেখে।

সবকিছু বাদ দিলেও আজ ছাত্র লীগের হাতে যারা খুন হচ্ছে কিংবা তাদের অন্তর্কোন্দলে যারা প্রাণ হারাচ্ছে তারাওতো কারো ছেলে কারো ভাই কারো প্রিয় চাচ্চু কিংবা কারো সংসারের হাল ধরার একমাত্র মাধ্যম। তাদের জন্য ও তাদের আদরের ছোট ভাইটি কিংবা বোনটি অপেক্ষা করে এই ভেবে যে, ভাইয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার জন্য দারুন একটা ছড়ার বই সাথে একটা ক্রিকেট ব্যাট অথবা ছোট্ট বোনটি অপেক্ষা করে একটি লাল টুকটুকে পুতুলের জন্য।

সময়ের খানিকটা ব্যবধানে সবগুলো স্বপ্নকে ভেঙ্গে খাঁন খাঁন করে দেয় একটি বুলেট কিংবা মানুষ নামের কিছু হায়েনার উন্মত্ত লগি-বৈঠার নির্মম তান্ডব আর ভয়ানক সব অস্ত্রের আঘাত।

ক্রিকেট ব্যাট কিংবা লাল টুকটুকে পুতুলের পরিবর্তে তারা উপহার পায় টপটপ করে পড়া কাঁচা রক্তে মাখানো একটি কফিন যেখানে তাদের সব স্বপ্নগুলো ও বন্দী হয়ে যায় চিরদিনের জন্য। আহ কি জঘন্য নির্মমতা আর পাশবিকতার প্রদর্শনী।

শেখ হাসিনার পরিবার নিহত হওয়াতে তার মনে যতটুকুন কষ্টের পাহাড় জমেছিল তার চেয়ে কোন অংশেই কম নয় আবূ বকর অথবা শরীফুজ্জামান নোমানীর বাবা-মা, ভাই-বোনদের কাছে বরং তার চেয়েও অনেক বেশী তাদের কষ্ট কারণ তখন শেখ হাসিনাদের আশ্রয় ছিল কিংবা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল পরিবারের ভবিষ্যত হাল ধরার একমাত্র মাধ্যম। সেক্ষেত্রে পরিবারটি তাদের সামনে অমানিশার ঘোর অন্ধকার ছাড়া আর কিইবা দেখতে পায়?

শেখ হাসিনা এইসব হত্যাকান্ডের বিচার করাতো দূরের কথা খানিকটা সমবেদনা প্রকাশ করার সৎসাহস কিংবা খানিকটা উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়ে পরিবারগুলোকে সান্তনার পরিবর্তে তিনি এবং তার নেতানেত্রীরা অনেক সময় সেসব ছাত্র হত্যা নিয়ে নিকৃষ্ট রাজনীতি আর পৈশাচিকতার পরিচয় দিয়ে হাসি তামাশা করেছেন। ২৮ শে অক্টোবর শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজপথে লগি বৈঠা দিয়ে সাপের মত পিটিয়ে ছাত্র হত্যার উল্লাসে সেদিন মেতে উঠেছিল শেখ হাসিনা ও তার দোসররা আর সেদিনের নিহতদের নিয়ে হাসিনা ও তার নেতানেত্রীরা নানাধরনের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও করেছিল।

সেই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীর পলিটেকনিকেলের ছাত্র মৈত্রির কর্মী হত্যা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শরীফুজ্জামান নোমানী, জামালপুরের রমজার আলী আর সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু বকরের হত্যায় আজ পুরো জাতি হতবাক এবং শঙ্কিত। মানুষ গড়ার আঙ্গীনায় এসে যদি লাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় তাহলে জাতি ক্রমেই মেধাহীন হয়ে পড়বে এতে কোনই সন্দেহ নেই।
আজ সব কিছু বাদ দিয়ে একজন মা হিসেবে যদি শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা হয় তাহলে তিনি কি উত্তর দিবেন আমাদেরকে? আর যদি প্রধান মন্ত্রী হিসেবে একজন মাকে প্রশ্ন করা হয় হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া ছাড়া কি অন্য কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন তিনি?
আজ যদি বকর, মুজাহিদ আর নোমানীরা শেখ হাসিনার পুত্র "জয়" হতো তাহলে কি তিনি হত্যাকারীদের বিচার না করে তাদেরকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে দিতেন? আজ যদি হাসিনাকে প্রশ্ন করা হয় ধরুন একদল মানুষ নামের হায়েনা আপনার ছেলে জয়কে প্রকাশ্য দিবালোকে লগি বৈঠা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করার পর লাশের উপর উঠে উল্লাস নৃত্য প্রদর্শন করছে এটি যেমনিভাবে তার জন্য মা হিসেবে মেনে নেয়া অসম্ভব একিভাবে বকর, মুজাহিদদের মায়েদের পক্ষে মেনে নেয়াও অসম্ভব। তবুও তারা বিচারের প্রত্যাশায় আজো অঝর ধারায় কেঁদে চলছে, নোনা জলের স্রোত আজ তাদের মা বোনদের চোখের কোনায় বিষময় ক্ষতের সৃষ্টি করেছে।

আমরা আজ শেখ হাসিনার কাছে এতটুকুন জানতে চাই আজ কি পারবেন সংকীর্ণ দলীয় মানসিকতার উর্ধ্ধে উঠে দেশের আগামীর স্বপ্ন "ছাত্র" হত্যায় যারা মেতে উঠেছে তাদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে একজন প্রধানমন্ত্রীর যথাযথ ভূমিকা পালন করতে? পারবেন কি বকর, নোমানীদের হত্যাকারী ছাত্র লীগের সন্ত্রাসীদের বিচার করে নিহতদের মায়েদের বুকে চাপা পড়া কষ্টের পাথর খানিকটা অপসারণ করতে? কিংবা মিষ্টি বিতরণ নয়, শুধু দুই রাকাত শুকরিয়ার নামাজ আদায় করার সুযোগ করে দিতে?

আমরা এখানেও আশাহত, কারণ সন্ত্রাস আর অস্ত্র নির্ভর যাদের রাজনীতি তাদের কাছে থেকে দলীয় সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে হত্যার বিচার পাওয়া বালখিল্যতা বৈ আর কিছুই না। সিরাজ শিকদারকে হত্যা করে যারা সদম্ভে ঘোষণা দিয়ে এদেশে হত্যার রাজনীতি শুরু করেছিল সময়ের ধারাবাহিকতায় হাজার হাজার ছাত্র হত্যার রক্তের দাগ এখনো হাসিনা, তোফায়েল আর নানকদের হাতে লেগে আছে। যারা মানুষ হত্যা করে স্বদম্ভে স্বীকৃতি দেয়াকে রাজনৈতিক কৃতিত্ব মনে করে তাদের কাছে "বিচার" এতো অমাবস্যার চাঁদই নয় বরং অমাবশ্যার সূর্য।

তবুও আমরা আশাবাদী শেখ হাসিনা দেশের সকল মানুষের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ সকল হত্যার বিচার করে একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত জাতির কাছে উপস্হাপন করে আজীবন দেশের মানুষের কাছে স্মরনীয় আর বরনীয় হয়ে থাকবেন।

আর যদি তাই না হয় তাহলে শেখ হাসিনা ও কিন্তু আল্লাহতে আর আখেরাতে বিশ্বাস স্হাপন করেন। তিনি যদি রাষ্ট্র প্রধান আর দলীয় প্রধান হিসেবে দুনিয়ার আদালতে এইসব ছাত্র হত্যার বিচার করতে ব্যর্থ হন তাহলে সেদিন আল্লাহর আদালত থেকে কিন্তু নিজেকে রক্ষা করার কোনই সুযোগ থাকবে না ।

৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×