পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ইউনিভার্সিটি , প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিশরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মনিত গ্রান্ড শাইখ, সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ আলেমের শিক্ষক, সাড়া জাগানো তাফসীর গ্রন্হ "তাফসীরে ওয়াসীত'র লেখক ,বিশিশ্ট ইসলামী গবেষক, মিশরের সাবেক গ্রান্ড মুফতি, ছয় লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর বর্তমান অভিভাবক আল্লামা শাইখ ত্বানত্বায়ী(৮২) সৌদি আরবের রিয়াদের এক হসপিটালে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ সকালে ইন্তিকাল করেন। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। তিনি কয়েকদিন আগে সৌদি সরকারের আমন্ত্রনে একটি অনুষ্টানে যোগ দিতে সেখানে যান। আজ (১০/০৩/২০১০) সকালে মিশর ফেরার উদ্দেশে বিমান বন্দরে আসার পথে হঠাৎ অসুস্হ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষনা করেন। আজ বাদ এশা মসজিদে নববীতে জানাজা নামাযের পর জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে আল আযহার ইউনিভার্সিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।এই পদের অধিষ্টিত ব্যাক্তির উপাধি হলো "শায়খুল আযহার"।এবং তিনি ছিলেন মিশরের প্রধানমন্ত্রী সমপর্যায়ের ক্ষমতাধর। মিষ্টভাষী সদা হাস্ব্যোজ্জল "শায়খুল আযহার" প্রতি জুমাবার আমাদের (ইসলামিক ফরেন স্টুডেন্ট সিটি) হোষ্টেলের মসজিদে আমাদের সাথে জুমার নামাজ আদায় করতেন। কোন কারণে জুমাবার আসতে না পারলে শনিবার আসতেন। প্রতি জুমাবার তিনি আল কুরআনের ধারাবাহিক তাফসীর করতেন। যা মিশরের একটি টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রপ্রচার করতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ধারাবাহিক তাফসীর সূরা ফাতিহা থেকে অনেক অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ২৫তম পারার সূরা যূখরোফের মাঝামাঝিতে এসে তাঁর জীবনের অবসান ঘটার মাধ্যমে তাঁর তাফসীরের অবসান ঘটে।।আজ সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে সেদিনের কথা , যেদিন প্রথম তাঁর সাথে অফিসে সাক্ষাত করি। আমি প্রথম মিশরে এসে হোষ্টেলের বাইরে ছিলাম। চিন্তা করছিলাম কিভাবে হোষ্টেলে ঢুকা যায়, যেখানে বাস করে বিশ্বের ১০৬ টি দেশের ছাত্র।এক জনের পরামর্শে শায়খুল আযহারের অফিসে গেলাম তাঁর সাথে দেখা করতে। বিশাল অফিস। মনে মনে ভাবছিলাম শায়খুল আযহার আমাকে সাক্ষাত দিবেতো ! আশংকা করছিলাম এই জন্য যে,উনার সাথে সাক্ষাত করাটা ছিলো টাফ ব্যাপার। অনেক আগে সিরিয়াল নিয়ে দেশ-বিদেশী বিশিষ্ট মেহমানদের জন্যও তাঁর সাথে দেখা করা ছিলো কষ্টসাধ্য । সেখানে আমি কি ছাই। কে একজন এসে আমাকে নিয়ে গেলো তাঁর নয়ানাভিরাম অফিস কক্ষে। হঠাৎ আমার সামনে আবিষ্কার করলাম শায়খুল আযহারকে। অবাক নেত্রে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন। ঊনার কন্ঠের আওয়াজে বাস্তবে ফিরে এলাম। আমাকে হাতের ঈশারায় কাছে ডেকে পাশে বসালেন। পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো-বাবা তোমার জন্য কি করতে পারি? আমি বললাম-হোস্টেলে উঠতে চাই। তিনি আমাকে বললেন-কোন চিন্তা করোনা। এর কয়েকদিন পর হোস্টেলে উঠলাম। প্রতি জুমাবার উনার সাথে দেখা হতো। তিনি বিভিন্ন বিষয়ের উপর শতাধিক বই লিখেছেন। তিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর গবেষনারত ছাত্রদের দশ বছর পরিচালক ছিলেন। ১৯৯৬ সনে তিনি আল আযহারের ৩৫তম "শায়খুল আযহার" পদে অধিষ্টিত হন। পাশাপাশি মিশরের তিনটি মন্ত্রলায়ের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি মিশরে "ফাদীলাতুল ইমামুল আকবার শায়খুল আযহার" উপাধিতে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁর মৃর্তুতে মুসলিম বিশ্ব,ছয় লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী ও মিশরবাসী অত্যাধিক শোকাহত। আমরা আমাদের পিতৃ সমতুল্য অভিভাবককে হারিয়ে আমরাই যেনো অতলান্ত শুন্যতার মহা সমুদ্রে হারিয়ে গেছি। আল্লাহ তুমি তাঁর সব গুনাহ ক্ষমা করে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নাও। আমিন, ছুম্মা আমিন।।