somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্যাটায়ারঃ একজন ফেসবুক সেলিব্রেটির একদিন

১৮ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে ঘুম হইতে উঠিতে উঠিতে সচরাচর সকাল দশটা বাজিয়া যায় পথিকের। কিন্ত গত কিছুদিন ধরিয়াই তাহাকে প্রতিদিন সকাল আটটার আগেই ঘুম হইতে উঠিতে হইতেছে। রাত জাগিয়া দেশ ও জাতির জন্য মহা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করায় এত তাড়াতাড়ি ঘুম হইতে উঠিতে সচরাচর কোন ইচ্ছাই হয় না পথিকের কিন্ত তাহার বড় বোন এই বাসায় বেড়াইতে আসিবার পর হইতে সে এই গভীর সমস্যায় পতিত। শুধু সমস্যা না , যাহাকে বলে গুরুতর সমস্যা। পথিকের বোনের ৪ বছর বয়সী ছেলে রুদ্র সকাল ৯টা হইতেই তাহার ঘরে প্রবেশ করিয়া “মামা মামা চকলেট খামু” বলিয়া চিৎকার শুরু করে। তা করুক, ইহা তাহার বাক স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার। কিন্তু সমস্যা হইল সেই চিৎকারে কর্ণপাত না করিলে রুদ্র তাহার মামার গায়ের উপর থাকা কাঁথাখান ধরিয়া টানা টানি শুরু করে। একদা কাঁথা ধরিয়া টানিতে টানিতে সামান্য ভুল করিয়া পথিকের পরনে থাকা একমাত্র লুঙ্গি খান ধরিয়া টান মারিয়াছিল রুদ্র। সে এক মহা কেলেঙ্কারি। রুদ্রের টানা টানি যে কখন কাঁথা ছাড়াইয়া তাহার পরনে থাকা একমাত্র লুঙ্গিখানের উপর পড়ে তাহা লইয়া পথিক ঘুমের মধ্যেও তটস্থ থাকে। অতঃপর রুদ্রের রুদ্র মূর্তি হইতে নিজের লুঙ্গি তথা ইজ্জত বাঁচাইবার নিমিত্তে পথিককে ঘুম হইতে উঠিতে হয়। ঘুম হইতে উঠিয়ায় রুদ্রের উদ্দেশ্যে পথিক যে বাক্যটি প্রথম বলে তাহা হইল- যা ভাগ হারামজাদা…ফাজিলের ফাজিল…

এরপর ব্রাশে কিছু পেষ্ট লাগাইয়া বাথরুমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় পথিক। মাঝে খানিকক্ষণ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার পর্বও চলে। অতঃপর প্রাতঃরাশ সারিয়া মাতার আহ্বানে উদর পূর্তির নিমিত্তে ডাইনিং টেবিলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় । সকালে ভোজনটা তাহার মন্দ হয় না। কিন্ত ভিন্ন এক কারনে সকালে এই প্রাতঃভোজের সময়টাকেই দিনের সবচাইতে কঠিন সময় বলিয়া মনে হয় তাহার কাছে। কারণ এই সময় তাহার পিতৃদেব সাইফুল হাওলাদার বাসায় থাকেন। সাইফুল হাওলাদার চাউলের আড়তদার। সকাল দশটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত ব্যবসার কাজে তিনি অতীব ব্যস্ত থাকেন। এর বাহিরে প্রতিদিন সকালে ঘড়ি ধরিয়া ৩০ মিনিট বিভিন্ন এজেন্ডা লইয়া চিৎকার চেঁচামেচি করিয়া থাকেন। দেশের রাজনীতি হইতে শুরু করিয়া কেন ৫ লিটার তেলে ১৫ দিনও যায় না সবই তাহার চিৎকার এজেন্ডা। তবে পথিককে দেখা মাত্রই তাহার এজেন্ডা নিমেষেই পাল্টাইয়া যায়। এত বড় জোয়ান ছেলে  কেন পড়াশোনা শেষ করিয়াও কোন কাজ কর্ম করে না, কেন এত বছর বয়সেও বাপের ঘাড়ে বসিয়া খায় ইহাই তখন তাহার মূল এজেণ্ডা হইয়া দাঁড়ায়। পথিক যেকোন কাজ কর্ম করে না এই কথার মধ্যে বিন্দুমাত্র সত্যতা নাই, বরং ইহাকে নির্লজ্জ মিথ্যাচারও বলা চলে। ইহা এমনই এক মিথ্যা প্রপাগান্ডা যে বাঁচিয়া থাকিলে স্বয়ং ডঃগোয়েবেলস সাহেবও কিঞ্চিৎ লজ্জা পাইতেন বলে পথিকের ধারণা। পথিক একজন লেখক, সোজা বাংলায় ফেসবুক লেখক। দেশ বিদেশের যে কোন ইস্যুতে এদেশে ফেসবুকে রীতিমত ঝড় বয়ে যায়। কে কত ব্যতিক্রমি ভাষায় , জ্বালাময়ী ষ্ট্যাটাস লিখিতে পারে তাহার প্রতিযোগিতা চলে। পথিক নিজেও এই বিপ্লবের এক দক্ষ সাহসী সহযোদ্ধা। ফেসবুকে “ছুটন্ত পথিক” নামে তাহার একখান একাউন্ট রইয়াছে। সেই একাউন্ট থেকে সেও প্রতিদিন বিভিন্ন ইস্যু লইয়া স্ট্যাটাস লেখে। মাঝে মধ্যে এই সকল ইস্যু লইয়া কারো কারো সঙ্গে বিবাদও জমাইয়া ফেলে। কত রঙের এই বঙ্গ দেশে ইস্যুর অভাব নাই মাশাল্লাহ। আওয়ামী লীগ -বিএনপি, আস্তিক-নাস্তিক, ইজরায়েল -ফিলিস্তিন, সাকিব-জলিল, রুবেল-হ্যাপি, রিয়াল-বার্সা, নারীবাদ, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, ভুমিকম্প, নায়লা নাইম কত ইস্যু যে এ বঙ্গ দেশে। পথিক তাহার পিতৃদেবকে বহুবার বোঝাইবার চেষ্টা করিয়াছে যে সে একজন লেখক। ফেসবুকে লেখালেখির মাধ্যমে দেশ ও জাতির সমস্যার সমাধানকেই সে তাহার জীবনের পরম লক্ষ্যহিসেবে ঠিক করিয়াছে। কিন্ত প্রতিবারই তাহার পিতৃদেব চোখ মুখ ভেংচাইয়া বলিয়াছে – কি বা’… লেখছ…

অতঃপর পিতৃদেবকে বোঝাইতে ব্যর্থ হইয়া মৌনব্রত পালনকেই উপযুক্ত পন্থা হিসেবে ঠিক করিয়াছে পথিক। পিতার চিৎকারের সময় কর্ণ যুগলকে যতটা সম্ভব নিঃস্পৃহ রাখার চেষ্টা করে সে। কিন্ত এতদাস্বত্তেও কিছু কথা যে কর্ণ গহ্বরে  প্রবেশ করে না, তাহা পথিক নিশ্চিত করিয়া বলিতে পারিবে না। পথিক চিন্তা করিয়া দেখে সে কত বড় একজন সেলিব্রেটি, ফেসবুকে তাহার প্রতি ষ্ট্যাটাসে কত লাইক, কত কমেন্ট অথচ নিজ গৃহের কোন   গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে তাহার কমেন্ট প্রদানের অধিকার নাই! এই সব ভাবিলেই সাধারণত মন খারাপ হয় পথিকের। অতঃপর মন ভাল করার নিমিত্তে ফেসবুকে লগইন করিয়া গত দিনের স্ট্যাটাস ও তাহার নিচে জমিয়া থাকা কমেন্টগুলো পড়িতে আরম্ভ করে পথিক। সেই সঙ্গে আজিকে কি বিষয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া যায় সেই ভাবনাটাও খেয়াল করে তাহার মনে। ষ্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য প্রথমেই যাহা করিতে হইবে তাহা হইলো আজকের হিট ইস্যু কি তাহা জানা। ইহার জন্য যাহা প্রয়োজন তাহা হইল পত্রিকা পড়া। পত্রিকার মধ্যে কোন হিট ইস্যুর সন্ধান না পাইলে সে যাহা করে তাহা হইল সালামত কাজী, জোবায়ের কাশেম সহ আরো কিছু সেলিব্রেটির প্রোফাইল ঘাঁটে। এইসব হইতেই সচরাচর স্ট্যাটাস লিখিবার মত কোন না কোন ইস্যু সে পাইয়া যায়। পত্রিকা অবশ্য বাসায় বসিয়াও পড়া যায় কিন্ত এর চেয়ে মহিলা কলেজের সামনে কুদ্দুসের চায়ের দোকানে বসিয়া কাগজ এবং অনলাইন দুটো ভার্সন একসঙ্গে পড়াকে তাহার কাছে অধিক সুবিধাজনক বলে মনে হয়। সেখানে পত্রিকা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সমমনাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় লইয়া লইয়া লইয়া আলাপ আলোচনাও যেমন করা যায় তেমনি কলেজে আগত সুদর্শনা তরুনীদের কিঞ্চিৎ দর্শনও হয়। সোজা বাংলায় যাহাকে বলে রথ দেখা এন্ড কলা বেচা। আর মলির সাথে যদি একবার দেখা হয় তাহলে তো কথাই নেই। একেবারে সোনায় সোহাগা। উল্লেখ্য মলি নামের এক তরুণী পথিকের হৃদয় হরণ করিয়াছে, পথিক তাহাকে দেখিবার জন্য কলেজের গেটের সামনে কবিতার বই লইয়া খাড়াইয়া থাকে। মাঝে মধ্যে জোর গলায় কবিতা পড়িতেও আরম্ভ করে কিন্ত এখন পর্যন্ত মলি সেসব শুনিয়াছে বলিয়া তাহার মনে হয় না। মাঝে কিছুদিন মলির বাসার আশেপাশে ঘুরঘুর করিয়াছে, ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও পাঠাইয়াছে কিন্ত কোনটাতেই কোন লাভ হয় নাই । পথিক ভাবিয়াছিল তাহার লেখালেখিতে মুগ্ধ হইয়া মলি হয়তো নিজ হইতেই তাহার দিকে এগিয়া আসিবে। এই ভাবনায় সে তাহার কিছু পোষ্টে মলিকে ট্যাগ মারিয়াছিল কিন্ত আফসোস পথিকের, ইহাতেও কোন লাভ হয় নাই। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া পথিক একদিন ষ্ট্যাটাস লিখিয়াছিল-

“হায়রে বাঙ্গালী মাইয়া, চিনলা শুধু তাহসান আর সাকিব আল হাসানরে… আমার মত একটা প্রতিভারে চিনলা না… আমারে চিনলা না…”

অতঃপর আজকের হিট ইস্যু খোঁজার নিমিত্তে ঘাড়ে একখান শান্তি নিকেতনী ব্যাগ ঝুলাইয়া রাস্তার মোড়ে অবস্থিত কোকিলা মহিলা কলেজের উদেশ্যে রওয়ানা দেয় পথিক।কলেজের গেটের সামনে চায়ের ষ্টলে এলাকার তরুণ যুবকেরা আড্ডা দেয় । পথিক সেই আড্ডার নিয়মিত মুখ। পথিককে দেখা মাত্রই চেয়ার ছাড়িয়া দেয় বেলতলার রকি ওরফে প্লেবয় রকি।বলে – আরে পথিক ভাই , আসেন বসেন। আপনের গতকালকের ষ্ট্যাটাস পড়লাম, জোশ হইছে…

- থ্যাঙ্কু, রকি। তবে ষ্ট্যাটাস শুধু পড়লেই হবে না সেটা ভালমতন বুঝতেও হবে বুঝলা।

- হ ভাই, ঠিকই কইছেন।

- তারপর আজকের খবর কি? দেখি পত্রিকাটা দাও।

রকি পত্রিকাখানা পথিকের দিকে আগাইয়া দেয়। পথিক পত্রিকার মধ্যে আজকের হিট ইস্যুর সন্ধান করিতে থাকে । মোটামুটি সব খবরই পড়ে সে, তবে তার বিশেষ আগ্রহ ধর্ষণ সংক্রান্ত খবরের প্রতি। ইদানীং ধর্ষণ সংক্রান্ত ষ্ট্যাটাস গুলো পাবলিকে খায় বেশি। সালামত কাজী গত কিছুদিন ধরিয়াই ধর্ষণ কেন হয়, ধর্ষণের পরে ধর্ষকের অনুভূতি কি এই জাতীয় বিষয়ে বিশ্লেষনী ষ্ট্যাটাস লিখিতেছে। বাঙ্গালী যৌন অবদমিত জাতি, বাঙ্গালী জাতি হিসেবে ধর্ষক এই জাতীয় কিছু মন্তব্যও থাকে তাহার লেখাতে যেন এই সব কথার মধ্য দিয়ে পরোক্ষভাবে সে বুঝাইতে চায় যে সেই একমাত্র সাধু আর সব বাঙ্গালী ধর্ষক, নির্যাতক। এই ষ্টাইল অবশ্য নুতুন কিছু না, ইহার নাম হুমায়ুন আজাদীয় ষ্টাইল। পথিক অবাক হইয়া আবিষ্কার করিয়াছে যে এই জাতীয় বিষয়ে ষ্ট্যাটাস লেখা শুরু করিবার পর হইতে সালামত কাজীর পোষ্টে লাইকের সংখ্যা ৫০০ হইতে বাড়িয়া ১০০০ হইয়াছে, ফলোয়ারও ৫ হাজার ছাড়াইয়াছে। ধর্ষণ, নারীর অধিকার এই সব বিষয় লইয়া পথিকও লিখিয়াছে কিন্ত সেগুলোতে এত বেশি সংখ্যক লাইক পড়ে নাই। সালামত কাজীকে টেক্কা দেওয়ার জন্য এই বিষয়ে যে আবার লিখিতে হবে তাহা মনঃস্থির করে পথিক । পত্রিকা গুটাইয়া কুদ্দুসকে এক কাপ চা দিতে বলে পথিক। দুপুর একটা তো প্রায় বাজিয়াই গিয়াছে। এই সময় মলির ক্লাস হইতে বাহির হইবার কথা। পথিক ইদানীং লক্ষ্য করিয়াছে যে মলিকে দেখিবার মাত্র রকিও কেমন যেন নড়া চড়া করে। ব্যাটা রকিরও নজর কি তবে মলির দিকে? যদি তাহাই হয় তাহলে রকিকে বেশ কড়া করে একখান ঝাড়ি দিতে হইবে। সোয়া একটার দিকে সাধারণত ক্লাস হইতে বাহির হয় মলি। কিন্ত আজ কেন জানি মলিকে দেখা যাইতেছে না । তাহলে কি মলি আজ কলেজে আসে নাই?

অনেক ক্ষণ বসিয়া থেকেও মলির দেখা না পাইয়া খানিকটা হতাশা নিয়েই বাসায় ফিরে পথিক। এরপর গোসল ও খাওয়া দাওয়া করে ইনবক্সের মেসেজ আর নিউজ ফিডে অন্যদের ষ্ট্যাটাস পড়িতে আরম্ভ করে । খানিক ক্ষণ পরে পথিক আবিষ্কার করে যে আজকে ফেসবুকে কোন কমন হিট ইস্যু নাই, যে যাহার মত ইস্যু তৈরী করিয়া মনের মাধুরী মিশাইয়া লিখিতেছে। রাকিব সাইফুদ্দিন লিখিয়াছে ধর্ম ও নাস্তিকতা নিয়ে। ইহাই তাহার প্রিয় বিষয়,সচরাচর এই বিষয় লইয়াই সে লেখে। পত্রিকার নাম আর বিদেশে এসাইলাম পাইবার পর থেকে তাহার পোষ্টে পাবলিকের লাইক আর মুমিনদের গালাগালি দুটোই আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাইয়াছে। নাস্তিকতার যখন স্বর্ণ যুগ ছিল তখন পথিক নিজেও এই সব বিষয় লইয়া লিখিয়াছে। কিন্ত সময়ের প্রেক্ষাপটে কল্লা বাঁচানোর তাগিদে নিজেকে সালাফী সেক্যুলার থেকে সুন্নী সেক্যুলারের পর্যায়ে নামিয়া আনিতে সে সক্ষম হইয়াছে। দিনশেষে যদি কল্লাটাই ঘাড়ের উপর না থাকে তাহলে আর লেখা লেখি করিয়া লাভ কি ? সবার উপরে কল্লা সত্য তাহার উপর নাই। সেলিব্রেটি তারিফ হোসেন লিখিয়াছে আমরা কি ধরি আর আমরা কি ধরি না তা নিয়ে। লেখাচোর জোবায়ের কাশেম লিখিয়াছে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান নিয়ে। ব্যাটা যে নিশ্চিত কোথাও হইতে লেখা চুরি করিয়াছে তাহা লইয়া পথিকের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। শওকত হোসেন ওরফে আল্লামা শওকত লিখিয়াছে “ঢিলা-কুলুবের বৈজ্ঞানিক কার্যকারিতা” এবং  “সবই ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্র” শিরোনামে দুটো আলাদা লেখা । ডাক্তার রথিন লিখিয়াছে যৌন সম্পর্কের পূর্বে মধু পানের উপকারিতা প্রসঙ্গে। কমরেড আব্দুল কাদের লিখিয়াছে “কনডম ব্যবসাঃ পুজিবাদীদের নুতুন অস্ত্র” শিরোনামে। কবি রাহাত আলমগীর তাহার ফ্রেন্ড লিষ্ট ৩ হাজার পূর্ণ হওয়ায় সকল ফ্রেন্ডকে অভিনন্দন জানাইয়াছে। পথিক মনে মনে বলে – ব্যাটা আবাল। ৩ হাজার ফ্রেন্ড হইছে , সেইটাও আবার সবাইরে জানাইতে হবে। আমার ফ্রেন্ড তো ৪ হাজার। ফেসবুকে খানিক ক্ষন ঘাটা ঘাঁটি করে পথিক আবিষ্কার করে যে ফেসবুকে আজ কোন কমন হিট ইস্যু নাই , এমনকি চ্যাট লিষ্টেও কোন রমণী নাই। ( হায় হায়….এইটা কোন কথা হইল?) আজ একখান জোশ লেখা লিখিয়া নিজের ফ্রেন্ড ফলোয়ারস বাড়াইতে হবে (রমণী হইলে ভাল হয়)। দরকার হইলে অটোলাইকও ব্যবহার করা যাইতে পারে। তবে পথিক অটোলাইক ব্যবহার করিতে চায় না, নিজের কাছে সে সৎ থাকিতে চায়। অতঃপর হতাশা কাটাইবার নিমিত্তে ফেসবুক ছাড়িয়া টিভি অন করে পথিক। রিমোটের বোতাম টিপিতে টিপিতে নাইনএক্সএম চ্যানেলের একটি গানে নজর আটকাইয়া গেলে মুহূর্তেই মন ভাল হইয়া যায় পথিকের। হিন্দী গানের এ এক দারুণ সুবিধা। এক সঙ্গে গানও শোনা যায় , পাশাপাশি গানের তালে তালে সুন্দরী রমনীদের মোহনীয় নৃত্য দর্শনও হয়। আর সেই রমনী যদি হয় রোদেলা (সানি) আপু তাহলে তো কথাই নেই । পথিকও টিভির তালে তালে গুনগুনিয়ে গায় -ইয়ে দুনিয়া … দুনিয়া পিত্তল দি … দুনিয়া পিত্তল দি …

বিকেলে রবীন্দ্র সরবোরে রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় যোগ দেয় পথিক। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা বিরক্তি নিয়ে শোনে সে আর মনে মনে বলে -”ব্যাটা তুই কি জানস, তোর থেকে তো আমিই ভাল জানি”। সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করিয়া বাসায় ফিরিতে ফিরিতে প্রায় রাত হইয়া যায় পথিকের। বাসায় ফিরিয়া পথিক তাহার আজকের ষ্ট্যাটাসটি লিখিতে বসে। প্রথমেই সালামত কাজীর ধর্ষণ সংক্রান্ত ষ্ট্যাটাস গুলো আবার পড়ে। এর পর আজকের পত্রিকায় পড়া ধর্ষণসংক্রান্ত খবরগুলো মনে করিবার চেষ্টা করে। এরপর নিজের সকল জ্ঞান প্রয়োগ করিয়া আজকের যুগান্তকারী ষ্ট্যাটাসটি লিখেই ফেলে।

“ধর্ষণ এক গুরুতর সামাজিক অপরাধ। ইহাকে কঠোর হস্তে দমন করিতে হইবে। লিঙ্গ কর্তনই ধর্ষণের একমাত্র সহীহ শাস্তি, ইহা ছাড়া আর কোন কিছুই নারী জাতির জন্য কল্যাণকর নহে।”

লেখাটি ফেসবুক পোস্ট করিতেই কয়েকটি লাইক পায় পথিক। ষ্ট্যাটাসের শুভ সুচনা দেখিয়া খুশি হয় সে। তাহার এই ষ্ট্যাটাস যে সালামত কাজীর ষ্ট্যাটাসের চাইতে অনেক ভাল হইয়াছে তাহা লইয়া বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই পথিকের। এখন বাকি শুধু লাইকের সংখ্যা দ্বারা সালামত কাজীকে পিছনে ফেলা। পথিক আশাবাদী। মিনিট বিশেক পর প্রথম কমেন্ট পড়ে তাহার এই ষ্ট্যাটাসে। তাসনীয়া নামের এক রমণী লিখেছে- “ভাইয়া অসাধারন লিখেছেন, পৃথিবীর সব পুরুষ যদি আপনার মত ভাবত। আর ভাইয়া আমি ঠিক করেছি এখন থেকে আমার হ্যান্ড ব্যাগে ধারলো ছুরি রাখব”।  তার জবাবে পথিক লেখে- “সাহসী মেয়ে তাসনীয়া , অভিনন্দন তোমাকে। জেনে রেখো একদিন তোমার পথ ধরেই এগোবে পৃথিবী”।

ইনবক্সে তাসনীয়ার ফোন নাম্বার চাওয়ার ভাবনাটা মাথায় আসে পথিকের কিন্ত যে রমণী হ্যান্ডব্যাগে ধারালো ছুরি রাখে তাহার কাছে ফোন নাম্বার চাওয়াটা ঠিক হবে কি না তানিয়ে কিছুটা শংকায় ভোগে সে। রাত বারোটা পর্যন্ত পথিক ফেসবুকে সময় দেয়। পোষ্টের নিচে জমা পড়া মন্তব্যগুলোর মধ্য হইতে বাছিয়া বাছিয়া শুধু মেয়েদের মন্তব্যগুলোর জবাব দেয়। ( ছেলেদের মন্তব্যের জবাব দিয়ে লাভ কি? শুধু শুধু সময়ের অপচয়) যে সকল মেয়ে মন্তব্য করিয়াছে তাহাদের প্রোফাইলে একবার ঢু মারিতেও ভোলে না সে। ইহাদের মধ্যে যাহাদের প্রোফাইল পিকচার সুন্দর তাহাদের নাম পথিক আলাদা করিয়া মস্তিষ্কে গাথিয়া রাখে। সময় সুযোগ মত এদের সহিত যে চ্যাট করিতে হইবে এরকমটিও মনঃস্থির করে সে। পথিকের যা ধারনা ছিল এই পোষ্টে লাইক , কমেন্ট, শেয়ারের সংখ্যা তাহার চাইতে অনেক বেশি হইয়াছে। পথিকের আনন্দ রীতি মত রীতিমত হিমালয়ীয় উচ্চতাকে ছাড়াইয়া যায় যখন সে আবিস্কার করে যে এই পোষ্টে পড়া সাড়ে বারোশ লাইকের একটি এঞ্জেল মাহিয়া মলির। এতদিনে তাহার লেখা নজরে পড়িয়াছে মলির ভাবিলেই অন্য রকম একটা অনুভূতি হয় পথিকের। অন্তত আজকের জন্য তাহার লেখক জন্ম স্বার্থক। লেখালেখিতে অর্গাজমের অনুভূতি লইয়া পথিক ঘুমাইবার  আয়োজন করিতে থাকে। কিন্ত পর মুহূর্তেই পরদিন সকালের কথা চিন্তা করিয়া আঁতকিয়া উঠে সে। আবার সেই রুদ্রর চিৎকার চেঁচামেচি, আবার সেই কাঁথা ধরিয়া টানাটানি, আবার সেই ইজ্জত লইয়া আশঙ্কা। নাহ…অনেক হইয়াছে। এবার  রুদ্রের একটা দ্রুত ব্যবস্থা তাহাকে করিতেই হইবে…

(পূর্বে অন্য ব্লগে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×