এই পৃথিবীটা খুব সুন্দর ।চারিদিকের মানুষগুলো খারাপ না কিন্তু এই পৃথিবীরই কিছু কিছু মানুষের জন্য হঠাৎ করে এই সুন্দর পৃখিবীটা কুৎসিত রূপ ধারণ করে।তখন আর পৃথিবীটাকে আর সুন্দর মনে হয়না । অসহ্য লাগে , দম বন্ধ হয়ে আসে। নিঃশ্বাস নিতে ইচ্ছা করে না ।কষ্ট হয় ।মরে যেতে ইচ্ছা করে । জোছনার আজ মরে যেতে ইচ্ছা করছিলো।কতবার ভেবেছে হারপিক খাবে আবার ভেবেছে চারতলার এই বাসা থেকে ঝাঁপ দেবে। কিন্তু একমাত্র ছোট্ট ভাইটার মুখ বার বার ভেসে ওঠায় সেটা সে কার্যকর করতে পারেনি ।
জোছনা আজ সারাদিন একমনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে । দেখলে মনে হবে সে বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করছে হয়তো । আসলেই কি সে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছে ? না ,সে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করছে না ।সেই অবস্থা বা মনমানসিকতা তার বর্তমানে নেই । সে বসে আছে উদাস ব্যথিত ভাঙা মন নিয়ে ।তার মুখে এক রাশ কষ্টের ছাপ ।চোখ ছলছল।
বুকে রয়েছে অচেনা চিনচিনে এক ধরনের সুক্ষ ব্যাথা । অতি প্রিয় কিছু হঠাৎ করে হারিয়ে ফেলার জ্বালা ।কিন্তু সে কথা সে কা্উকে না পারছে বলতে ,না পারছে সহ্য করতে। কাল থেকে কত বার মনে হয়েছে মৃত্যুই তার একমাত্র পরিণতি মৃত্যুই তার একমাত্র আশ্রয় স্থল কিন্তু না সে হেরে য়াওয়া মেয়ে নয় সে হেরে যাবে না সে পৃথিবীকে দেখিয়ে দেবে সে পারে সে পারবে।ছোট্ট বাবা মা হারা মেয়েকে কেউ হারাতে পারবেনা ।কিন্তু আবার যখনই অতীত স্মৃতি ফিরে আসে মনে তখন তার বুক বেয়ে একরাশ দুঃখ উথলে উঠছে ।কান্না গুলো গলার কাছে দলা হয়ে পাকিয়ে যাচ্ছে ।…….
জাহিদ সদ্য ইঞ্জিননিয়ারিং পাশ করেছে। জোছনা এই জাহিদ নামের ছেলেটাকে অসম্ভব ভালোবাসতো এখনও সে ভালোবাসে।এই ভালোবাসাবাসি প্রায় আট বছর ধরে । কত প্রমে কত খোঁজ খবর ।কতনা উপহার উপঢৌকন। জাহিদের মতো এতটা কেয়ারিং ছেলে খুব একটা দেখা যায় না ।বন্ধুদরে মধ্যে জোছনাকে নিয়ে একটা সুক্ষ হিংসা কাজ করতো বরাবর । জোছনাও এটা উপভোগ করতো ।
কিন্তু পাশ করার পর জাহিদ যেন রাতারাতি বদলে গেল ।আস্তে আস্তে শোনা যেতে লাগরো সে আরো একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছে মেয়েটি তার বাবার একমাত্র মেয়ে এবং বিত্তশালী । জোছনা প্রথম প্রখম বিশ্বাসই করেনি এটা কখনও হয় !সব বানানো বন্ধুদের হিংসা !!
জাহিদও ক্রমশ অস্বীকার করে এসেছে না সে এসব কিছু করছেনা্ এমনকি বিয়ের আগের রাতেও সে আর জাহিদ অনেক রাত জেগে কতনা আলাপ …..জোছনা চোখের জল মুছলো । না সে আর কাঁদবে না সে হেরে যাবেনা । সে মেয়ে হতে পারে কিন্তু অসহায় নয় তার আত্মমর্যাদা আত্মসন্মানবোধ আছে । সে ঠুনকো একটা প্রেমের জন্য এত সহজে নিজের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছিলো।এটা ভাবতেই নিজের উপরই তার নিজের রাগ হচ্ছে এখন।
সে বড় হবে ।অনেক বড় মাপের মানুষ হবে ।মানুষের জন্য তার এই একজীবনে অনেক কিছু করার আছে । জোছনা চোখের জল মুছে ফেলল ।সে দৃপ্ত শপথ নিলো। সে তার এ জীবনটা পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর মানুষের জন্য কিছু একটা করবে ।ছোট ভাইকে মানুষের মত মানুষ করবে ।এই সমাজের মানুষগুলোর মতো অমানুষ বানাবে না ।পৃথিবীতে স্বার্থই সব নয়।....।
আসলে এই পৃথিবীতে ত্যাগের মতো সুখ আর কিছুতে নেই ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:০৭