ছেলেটির নাম ইভান । খুবই মিষ্টি একটা ছেলে । সবার আদরের । সারাদিন তার একমাত্র কাজ হচ্ছে নানা ব্যঞ্জনের রকমারী দুষ্টুমী করা ।এত দুষ্টুমিতে সবাই কম বেশী অস্থির কিন্তু কেউ তেমন একটা বিরক্ত হয় না কারণ তার মিষ্টি মিষ্টি দুষ্টুমি সবাই কম বেশী উপভোগ করে।
একদিন হলো কি ইভানের সখ হলো সে একটা টিকটিকি মারবে । যেই ভাবা সেই কাজ সে দৌড়ে দৌড়ে এক সময় একটা টিকটিকিকে ঠিক ধরে ফেলল । টিকটিকি তো ভয়ে অস্থির । ইভান যেই টিকটিকিকে মারার জন্য হাত তুলল অমনি সে কাতর স্বরে মিনতি করলো “আমায় মেরো না ইভান ,দয়া করো । “
ইভান বলল "কেন তোমাকে মারবো না কেন ? কোন কাজটা তোমার দ্বারা হয় শুনি ?"
-"আমি তোমাদের কত সাহায্য কর এই দেখনা তোমাদের আশেপাশের সব মশাদের আমি ধরে ধরে খাই ।এভাবে আমি তোমাদের ম্যালেরিয়া ডেঙ্গু ইত্যাদি মশা বাহিত রোগ থেকে বাঁচাই ।আমি তোমাদের পরিবেশে পরিচ্ছন্ন রাখতে সহায়তা করি । যাও না যাও এত যদি মারার ইচ্ছা তো ব্যাঙদের গিয়ে মারো গে যাও ।"
ইভান টিকটিকিকে ছেড়ে দিলো । সে ঠিক করলো ব্যাঙ মারবে । সে সারাদিন ঘুরে ঘুরে এবার একটা ব্যাঙ ধরে ফেলল ।
ব্যাঙটা বেশ সাহসী ও প্রতিবাদী ছিলো।সে বলল "ইভান ভালো হবে না বলছি ,আমায় তাড়াতাড়ি ছাড়ো কাজ আছে ।"
-"কাজ আছে তো আমার বয়েই গেছে । আমি তোমায় এখন মারবো !!"
-"তোমার মাথায় আবার এ বুদ্ধি কোথেকে এলো ।তুমি আমায় মারবে কেন তুমি কি জানো আমি তোমাদের কত উপকার করি । খোঁজ রাখো কিছু ?"
-"ইশ তুমি আবার কি উপকার করো বললেই হবে নাকি !"
-"তোমার হয়তো জানা নেই আমি তোমাদের বন্ধু ।আমি তোমাদের যাবতীয় ফসলের কীটপতঙ্গ খেয়ে সাফ করি । তোমাদের ফসলের সুরক্ষা করি । যদি মারতেই হয় তবে যাও গিয়ে ওই দুষ্টু কাকগুলোকে মারো গিয়ে যাও । কাজ নেই কর্ম নেই সারাদিন শুধু চিৎকার কা কাআআআ্ ....।"
ইভান ঠিক করলো সে কাকই মারবে ।বড় বেশী জ্বালাতন করে এই প্রানীগুলো সেদিন তো তার হাত থেকে এত সুন্দর চিকেন ফ্রাইটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিলো । ভীষণ বেয়াদব হয় এই কাকগুলো । তবে এদের ধরা অত সহজ নয়........।
অনেক খাটা খটুনির পর ইভান অবশ্য একটা কাককে ধরতে পারলো । কাক বেচারা তো দূর থেকে খুবই দাপাদাপি করে, ধরা পড়ে সে মিন মিন স্বরে বলল ”আমায় কেন মারবে ভাইয়া ,তুমি কি একটু ভেবে দেখেছো আমি তোমাদের পরিবেশের কত উপকার করি ! কত ময়লা খেয়ে তোমাদের শহরটাকে পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি । মারতে হলে মারো গিয়ে ওই চড়ুইকে ....।”
ইভান ভাবলো তাইতো এ তো উপকারী পাখি একে আর মেরে কাজ নেই ,সে গেল চড়ুই ধরতে । চড়ুই বেচারাতো ভয়েই আধমরা সে বলল "মেরোনা আমায় আমি তো তোমার কোন ক্ষতি করিনি ? বরং আমি তোমাদের কত না উপকার করি !!”
ইভান বলল "তা শোনাও দেখি তোমার দ্বারা কি কি উপকার হয়।"
চড়ুই বেশ গর্ব ভরে বলল “আমি মাটিতে বীজ ফেলি, এ থেকে গাছপালা জন্ম হয়, সেই গাছপালা থেকে তোমরা বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাও এবং খাদ্য পাও । যদি মারতে হয় যাও মৌমাছিদের কাছে...”
অগত্য ইভান মৌমাছি মারতে দৌড়ে গেল । মৌমাছি বলল” শোনো ইভান তোমার বয়স অল্প তোমার জানার কথা নয় ,তুমি কি জানো আমি ফুলে পরাগায়ন ঘটাই । আমি ফুল খেকে মধু সংগ্রহ করি আর সেই মধু আমি মৌচাকে জমা করি এবং তোমরা তা থেকে মধু পাও যদি আমাকে মারো তবে তোমরা আর মধু পাবেনা “
হঠাৎ ইভানের মাথায় এলো তাইতো এ জগতে কোন প্রাণি ই অপ্রয়োজনীয় নয় ।সব প্রাণি একে অন্যের পরিপুরক । তাহলে কেন সে অকারনে এদের সে হত্যা করবে ?
তাই সে ঠিক করলো সে আর কোন প্রাণিকে হত্যা করবে না । সব প্রাণিকে সে এখন থেকে ভালোবাসবে ।